ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : পৌর শহরের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ডিপোঘাট ও বিএডিসির সার গুদাম এলাকার ভাঙনের দৃশ্য -সংবাদ
মেঘনা নদীর দফায় দফায় ভাঙনে ভৈরবের বাগানবাড়ি ও ডিপো এলাকার কয়েকশ গজ এলাকা রাইছমিল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘরসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বেশ কিছু অংশসহ পৌরসভার একটি সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও ভাঙনের শঙ্কায় স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই ভাঙনরোধে তাই তারা দ্রুত স্থায়ী শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, প্রথম ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয় ১৯৮৮ সালে। ভয়াবহ সেই ভাঙনে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের কন্ট্রোলরুম, একটি বিশাল খেলার মাঠ, আম বাগান, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাইস্কুল, রেলওয়ের কলোনীসহ বিশাল অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। তখন থেকেই একটি স্থায়ী শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছে এলাকাবাসী।
এরপর ১৯৯০, ৯৪ ও ৯৮ সালে ধারাবাহিকভাবে নদী বন্দরের দক্ষিণপ্রান্ত টিনপট্টি, কাঠপট্টি ও ঋষিপট্টি এলাকায় ভাঙ্গনে বিশাল অংশ বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘর-বাড়িসহ মেঘনায় চলে যায়। কিন্তু কাক্সিক্ষত বাঁধ আর নির্মাণ হয়নি।
এরপর ২০২২ সালের ১৯ জুন বাগানবাড়ি এলাকার একটি রাইছ মিলের শ্রমিকদের থাকার ঘরসহ বেশ কিছু এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে দুই শ্রমিকের করুণ মৃত্যু ঘটে। পরে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রোববার ওই ভাঙ্গন এলাকা থেকে ১শ গজ উত্তরে ডিপোঘাট এলাকায় নদীভাঙনে বেশ কিছু স্থাপনাসহ পৌরসভার একটি সংযোগ সড়ক নদীতে তলিয়ে যায়। ওই ভাঙনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ১০ হাজার মেট্টিকটন ধারণক্ষমতার দুটি সার গুদাম ও সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ের প্রতিরক্ষা দেয়ালসহ বেশ কিছু অংশ, যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপো ইনচার্জের অফিসরুম ভাঙ্গনে তলিয়ে যায়। হুমকির মুখে পড়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ভাসমান ডিপো ও মেঘনা পেট্টোলিয়ামের ডিপোসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এই ভাঙনরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রুত জিওব্যাগ ফেলা হয়।
এরপর চলতি ২০২৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোমবার রাত ৮টার দিকে হঠাৎ ফের ভাঙন শুরু হয় বাগানবাড়ি এলাকায়। এ ভাঙনে একটি আধা-পাকা ঘর, বাল্কহেড নির্মাণের কয়েক লাখ টাকার মালামাল এবং একটি ডকইয়ার্ডের প্রতিরক্ষা দেয়ালের কিছু অংশ নদীতে তলিয়ে যায়।
হুমকির মুখে পড়ে নদী পাড়ের একটি বাল্কহেড নির্মাণ কারখানা, একটি ডকইয়ার্ড, একটি বয়লার, একটি দুগ্ধ খামারসহ শ্রমিক বসবাসের কিছু ঘর। এবারও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হয়।
ভাঙন দেখা দিলে ঘটনাস্থলে জিওব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে ভাঙ্গনরোধে সন্তুষ্ট নন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা। তাদের দাবি, জানমাল রক্ষায় দ্রুত স্থায়ী শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের। নতুবা এই এলাকায় উপস্থিত একটি সড়ক ও ২টি রেলওয়ে সেতু ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির সুইচরুমটিও এক সময় ভাঙনের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা।
যমুনা অয়েল কোম্পানির স্থানীয় ম্যানেজার ইনচার্জ মো. মতিউর রহমান বলেন, এই এলাকার কয়েকদফা ভাঙনের পর আমরা সব সময় আতঙ্কের মাঝে আছি। ইতোমধ্যে আমাদের ডিপোর কিছু অংশ ভাঙনে তলিয়ে গেছে। আবার ভাঙন দেখা দিলে আর রক্ষা হবে না। হয়তো পুরোটাই তলিয়ে যাবে। এতে করে এখান থেকে দেশের প্রায় ১০টিরও বেশি জেলায় তেল সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে -যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সার) সিপন চন্দ্র সরকার বলেন, এখানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি জেলায় সরবরাহকৃত সারের ৫ হাজার মেট্টিক টন ধারণক্ষমতার দুটি গুদাম রয়েছে। ২০২৪ সালের ভাঙনে গুদাম এলাকার প্রতিরক্ষা দেয়ালসহ সামনের অংশের অনেকটুকু এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এখন সব সময় ভাঙ্গন আতংকে শঙ্কিত থাকি। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে, এই গুরুতপূর্ণ স্থাপনাটি হয়তো রক্ষা হবে না।
উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান আল মামুন বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু হয়ে যতোবার ভাঙ্গন হয়েছে, ততবারই ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক সরকারগুলো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কোনো সরকারই এর বাস্তবায়ন করেননি। ফলে ভাঙতে ভাঙতে ভৈরব নদীবন্দরের আয়তন ছোট হয়ে আসছে।
ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া বলেন, সরকারের মিথ্যা আশ্বাসে আমরা আশায় বুক বাধলেও, বাস্তবায়ন দেখতে পেলাম না দীর্ঘ ৩৭ বছরেও। এদিকে ভাঙনের কবলে পড়ে বহু মানুষ আজ নিঃস্ব, ক্ষতিগ্রস্ত।
ধারাবাহিক ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের সরকারি পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন জানান, ভৈরব যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। সেই বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন ভাঙ্গন এলাকায় ভাঙনের কারণ অনুসন্ধানে চলমান জরিপে ভৈরবকেও অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ টিমের সেই জরিপের ফলাফল পাওয়ার পর দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : পৌর শহরের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ডিপোঘাট ও বিএডিসির সার গুদাম এলাকার ভাঙনের দৃশ্য -সংবাদ
বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫
মেঘনা নদীর দফায় দফায় ভাঙনে ভৈরবের বাগানবাড়ি ও ডিপো এলাকার কয়েকশ গজ এলাকা রাইছমিল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘরসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বেশ কিছু অংশসহ পৌরসভার একটি সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও ভাঙনের শঙ্কায় স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই ভাঙনরোধে তাই তারা দ্রুত স্থায়ী শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, প্রথম ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয় ১৯৮৮ সালে। ভয়াবহ সেই ভাঙনে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের কন্ট্রোলরুম, একটি বিশাল খেলার মাঠ, আম বাগান, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাইস্কুল, রেলওয়ের কলোনীসহ বিশাল অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। তখন থেকেই একটি স্থায়ী শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছে এলাকাবাসী।
এরপর ১৯৯০, ৯৪ ও ৯৮ সালে ধারাবাহিকভাবে নদী বন্দরের দক্ষিণপ্রান্ত টিনপট্টি, কাঠপট্টি ও ঋষিপট্টি এলাকায় ভাঙ্গনে বিশাল অংশ বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘর-বাড়িসহ মেঘনায় চলে যায়। কিন্তু কাক্সিক্ষত বাঁধ আর নির্মাণ হয়নি।
এরপর ২০২২ সালের ১৯ জুন বাগানবাড়ি এলাকার একটি রাইছ মিলের শ্রমিকদের থাকার ঘরসহ বেশ কিছু এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে দুই শ্রমিকের করুণ মৃত্যু ঘটে। পরে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রোববার ওই ভাঙ্গন এলাকা থেকে ১শ গজ উত্তরে ডিপোঘাট এলাকায় নদীভাঙনে বেশ কিছু স্থাপনাসহ পৌরসভার একটি সংযোগ সড়ক নদীতে তলিয়ে যায়। ওই ভাঙনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ১০ হাজার মেট্টিকটন ধারণক্ষমতার দুটি সার গুদাম ও সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ের প্রতিরক্ষা দেয়ালসহ বেশ কিছু অংশ, যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপো ইনচার্জের অফিসরুম ভাঙ্গনে তলিয়ে যায়। হুমকির মুখে পড়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ভাসমান ডিপো ও মেঘনা পেট্টোলিয়ামের ডিপোসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এই ভাঙনরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রুত জিওব্যাগ ফেলা হয়।
এরপর চলতি ২০২৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোমবার রাত ৮টার দিকে হঠাৎ ফের ভাঙন শুরু হয় বাগানবাড়ি এলাকায়। এ ভাঙনে একটি আধা-পাকা ঘর, বাল্কহেড নির্মাণের কয়েক লাখ টাকার মালামাল এবং একটি ডকইয়ার্ডের প্রতিরক্ষা দেয়ালের কিছু অংশ নদীতে তলিয়ে যায়।
হুমকির মুখে পড়ে নদী পাড়ের একটি বাল্কহেড নির্মাণ কারখানা, একটি ডকইয়ার্ড, একটি বয়লার, একটি দুগ্ধ খামারসহ শ্রমিক বসবাসের কিছু ঘর। এবারও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হয়।
ভাঙন দেখা দিলে ঘটনাস্থলে জিওব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে ভাঙ্গনরোধে সন্তুষ্ট নন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা। তাদের দাবি, জানমাল রক্ষায় দ্রুত স্থায়ী শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের। নতুবা এই এলাকায় উপস্থিত একটি সড়ক ও ২টি রেলওয়ে সেতু ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির সুইচরুমটিও এক সময় ভাঙনের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা।
যমুনা অয়েল কোম্পানির স্থানীয় ম্যানেজার ইনচার্জ মো. মতিউর রহমান বলেন, এই এলাকার কয়েকদফা ভাঙনের পর আমরা সব সময় আতঙ্কের মাঝে আছি। ইতোমধ্যে আমাদের ডিপোর কিছু অংশ ভাঙনে তলিয়ে গেছে। আবার ভাঙন দেখা দিলে আর রক্ষা হবে না। হয়তো পুরোটাই তলিয়ে যাবে। এতে করে এখান থেকে দেশের প্রায় ১০টিরও বেশি জেলায় তেল সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে -যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সার) সিপন চন্দ্র সরকার বলেন, এখানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি জেলায় সরবরাহকৃত সারের ৫ হাজার মেট্টিক টন ধারণক্ষমতার দুটি গুদাম রয়েছে। ২০২৪ সালের ভাঙনে গুদাম এলাকার প্রতিরক্ষা দেয়ালসহ সামনের অংশের অনেকটুকু এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এখন সব সময় ভাঙ্গন আতংকে শঙ্কিত থাকি। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে, এই গুরুতপূর্ণ স্থাপনাটি হয়তো রক্ষা হবে না।
উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান আল মামুন বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু হয়ে যতোবার ভাঙ্গন হয়েছে, ততবারই ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক সরকারগুলো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কোনো সরকারই এর বাস্তবায়ন করেননি। ফলে ভাঙতে ভাঙতে ভৈরব নদীবন্দরের আয়তন ছোট হয়ে আসছে।
ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া বলেন, সরকারের মিথ্যা আশ্বাসে আমরা আশায় বুক বাধলেও, বাস্তবায়ন দেখতে পেলাম না দীর্ঘ ৩৭ বছরেও। এদিকে ভাঙনের কবলে পড়ে বহু মানুষ আজ নিঃস্ব, ক্ষতিগ্রস্ত।
ধারাবাহিক ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের সরকারি পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন জানান, ভৈরব যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। সেই বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন ভাঙ্গন এলাকায় ভাঙনের কারণ অনুসন্ধানে চলমান জরিপে ভৈরবকেও অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ টিমের সেই জরিপের ফলাফল পাওয়ার পর দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।