সিরাজগঞ্জ : কাজিপুরে জমে উঠেছে পাটের হাট -সংবাদ
সিরাজগঞ্জে পাটের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে পেয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে পাটের ভালো দাম পেয়ে জেলার কৃষকরা আবারো পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই জেলার হাটগুলোতে নতুন পাট বেচা কেনা শুরু হয়েছে। এসেই সঙ্গে জমে উঠেছে যমুনা নদীবেষ্ঠিত কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া নৌকায় ভাসমান পাটের হাট। জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাট বিক্রী হলেও কাজিপুরের ভাসমান পাটের হাট বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে শুধু কাজিপুর নয় আশপাশ জেলার থেকেও পাট বিক্রীর জন্য আসে কৃষকরা ।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় বেশি পাট উৎপাদনকারী কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা। এই দুটি উপজেলায় পাট উৎপাদন হয়েছে যথাক্রমে ৪২৫০ ও ৩০৫০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যেই কাজিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাটুয়াপাড়া হাটে যমুনা নদীতে নৌকার ওপরে জমে উঠেছে সোনালী আঁশ পাট বেচা-কেনা।
কাজিপুর ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার পাট চাষি ও ব্যাপারীরা এই হাটে বেচা কেনা করতে আসেন। বর্তমানে বাজারে পাটের ভালো দাম থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। যমুনা নদীর পাড়ে চরাঞ্চলে একমাত্র নাটুয়াপাড়া হাটটি সপ্তাহে দু্ইদিন শনিবার ও বুধবার ভোরে পাটের হাট জমে উঠে। বিক্রি উপযোগী সোনালী আশে উপজেলার চরাঞ্চলের জমিতে পাট উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষক ও ক্রেতাদের হাঁক ডাকে জমে উঠেছে বেচাকেনা। প্রতি মণ পাট জাত ও মানভেদে তিন থেকে চার হাজার টাকা বেচা কেনা হচ্ছে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, নৌকা করে জামালপুরের সরিষাবাড়ি, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, শেরপুর, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয় করতে পাইকাররা আসে এ হাটে। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেড়েছে চাহিদা ও দাম। মণ প্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এ সব তথ্য।
সরিষাবাড়ি থেকে আসা পাটের পাইকার সাইফুল ইসলাম বলেন, পাট কিনে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় তোলা সহজ হয়। যোগাযোগের সুবিধা হয় ও পরিবহন খরচ কম। প্রতিহাটে তিনি ৪০/৬০ মণ পাট নৌকা থেকে ক্রয় করেন বলে জানান। চরগিরিশের পাটের ব্যাপারি রুবেল আলম বলেন, পাট টানে থেকে কিনে নৌকায় তোলা অসুবিধা হয়। তাই নৌকা থেকে পাট কিনি। তিনি প্রতিহাটে ৬০/৭০ মণ পাট ক্রয় করেন।
চরনাটিপাড়ার কৃষক আব্দুর রশিদ মন্ডল বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম ফলন ভালো হয়েছে, বিক্রি করে বেশ দাম পেয়েছি।
হাট কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, পাট কিনতে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে অনেক পাইকার পাট কিনতে আসে। প্রতি হাটে ১ থেকে ২ হাজার মন পাট ক্রয়-বিক্রয় হয়।
হাটের ইজারাদার আব্দুল মান্নান চান বলেন, এ হাটে কাজিপুরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয়- বিক্রয় করতে পাইকাররা আসে। প্রতি হাটে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মণ পাট ক্রয়-বিক্রয় করে। এবারের পাটের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, এ বছর বন্যায় পাটের তেমন ক্ষতি হয়নি। এই উজেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে । পাটের জাত ও মানভেদে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা মন বিক্রী হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ২ মেট্রিক টন পাটের উৎপাদন হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, জেলার একমাত্র ভাসমান নাটুয়া পাড়া পাটের হাটে বেচা কেনা শুরু হয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন এই হাট বসে এবং বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এখানে পাট কিনতে আসে।
সিরাজগঞ্জ : কাজিপুরে জমে উঠেছে পাটের হাট -সংবাদ
বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫
সিরাজগঞ্জে পাটের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে পেয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে পাটের ভালো দাম পেয়ে জেলার কৃষকরা আবারো পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই জেলার হাটগুলোতে নতুন পাট বেচা কেনা শুরু হয়েছে। এসেই সঙ্গে জমে উঠেছে যমুনা নদীবেষ্ঠিত কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া নৌকায় ভাসমান পাটের হাট। জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাট বিক্রী হলেও কাজিপুরের ভাসমান পাটের হাট বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে শুধু কাজিপুর নয় আশপাশ জেলার থেকেও পাট বিক্রীর জন্য আসে কৃষকরা ।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় বেশি পাট উৎপাদনকারী কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা। এই দুটি উপজেলায় পাট উৎপাদন হয়েছে যথাক্রমে ৪২৫০ ও ৩০৫০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যেই কাজিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাটুয়াপাড়া হাটে যমুনা নদীতে নৌকার ওপরে জমে উঠেছে সোনালী আঁশ পাট বেচা-কেনা।
কাজিপুর ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার পাট চাষি ও ব্যাপারীরা এই হাটে বেচা কেনা করতে আসেন। বর্তমানে বাজারে পাটের ভালো দাম থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। যমুনা নদীর পাড়ে চরাঞ্চলে একমাত্র নাটুয়াপাড়া হাটটি সপ্তাহে দু্ইদিন শনিবার ও বুধবার ভোরে পাটের হাট জমে উঠে। বিক্রি উপযোগী সোনালী আশে উপজেলার চরাঞ্চলের জমিতে পাট উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষক ও ক্রেতাদের হাঁক ডাকে জমে উঠেছে বেচাকেনা। প্রতি মণ পাট জাত ও মানভেদে তিন থেকে চার হাজার টাকা বেচা কেনা হচ্ছে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, নৌকা করে জামালপুরের সরিষাবাড়ি, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, শেরপুর, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয় করতে পাইকাররা আসে এ হাটে। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেড়েছে চাহিদা ও দাম। মণ প্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এ সব তথ্য।
সরিষাবাড়ি থেকে আসা পাটের পাইকার সাইফুল ইসলাম বলেন, পাট কিনে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় তোলা সহজ হয়। যোগাযোগের সুবিধা হয় ও পরিবহন খরচ কম। প্রতিহাটে তিনি ৪০/৬০ মণ পাট নৌকা থেকে ক্রয় করেন বলে জানান। চরগিরিশের পাটের ব্যাপারি রুবেল আলম বলেন, পাট টানে থেকে কিনে নৌকায় তোলা অসুবিধা হয়। তাই নৌকা থেকে পাট কিনি। তিনি প্রতিহাটে ৬০/৭০ মণ পাট ক্রয় করেন।
চরনাটিপাড়ার কৃষক আব্দুর রশিদ মন্ডল বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম ফলন ভালো হয়েছে, বিক্রি করে বেশ দাম পেয়েছি।
হাট কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, পাট কিনতে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে অনেক পাইকার পাট কিনতে আসে। প্রতি হাটে ১ থেকে ২ হাজার মন পাট ক্রয়-বিক্রয় হয়।
হাটের ইজারাদার আব্দুল মান্নান চান বলেন, এ হাটে কাজিপুরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয়- বিক্রয় করতে পাইকাররা আসে। প্রতি হাটে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মণ পাট ক্রয়-বিক্রয় করে। এবারের পাটের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, এ বছর বন্যায় পাটের তেমন ক্ষতি হয়নি। এই উজেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে । পাটের জাত ও মানভেদে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা মন বিক্রী হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ২ মেট্রিক টন পাটের উৎপাদন হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, জেলার একমাত্র ভাসমান নাটুয়া পাড়া পাটের হাটে বেচা কেনা শুরু হয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন এই হাট বসে এবং বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এখানে পাট কিনতে আসে।