ডিমলা (নীলফামারী) : অভিযানের মাধ্যমে সাড়ে ৫ হাজার সিএফটি পাথর জব্দ করেন জেলা প্রশাসক -সংবাদ
কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তিস্তা হতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকরী সক্রিয় সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটিকে। মানছেনা প্রশাসনের বাধা নিষেধ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পাথর জব্দ করা হলেও এতটুকু প্রভাব পড়েনি চক্রটির অবৈধ কর্মকান্ডে। আরো বেপরোয়া হয়ে তিস্তা নদী হতে পাথর উত্তলোন মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে অব্যাহত রেখে নতুন জনবল নিয়োগ করেছে। বলা চলে প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে পাথর উত্তোলনকারী চক্রটি।
দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ‘ডিমলায় তিস্তা নদীতে চলছে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে উপজেলা প্রশাসন গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাড়ে ৫ হাজার সিএফটি পাথর জব্দ করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান এ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোছা. ফারজানা আক্তার ও ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফজলে এলাহী।
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে পাথর উত্তোলনের কারণে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতির শিকার হচ্ছে তিস্তা পাড়ের নদীভাঙ্গা সর্ববস্ব হারা বাসিন্দারা। স্থানীয়রা বলছেন, একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে নদী থেকে পাথর তুলে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।নির্বিচারে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীভাঙনসহ বর্ষাকালে আকস্মিক বন্যা এবং ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে যাছে প্রতিনিয়ত ।
জানা যায়, প্রায় দুই মাস যাবত তিস্তা নদী ও সংলগ্ন এলাকায় মহাউৎসবে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজ। অবৈধ এই কর্মকান্ডের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এই চক্রের হাতে নাজেহাল হয়েছেন অনেক সংবাদকর্মী। প্রশাসনকে জানিয়েও থামানো যায়নি তাদের দৌরাত্ব।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। ভাঙন এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লোহার তৈরি যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করছে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় শ্রমিকরা।
তিস্তা ব্যারাজের আশপাশ, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার, চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ, ভেন্ডাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর উত্তোলনে প্রায় ১৫টি প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে। সম্প্রতি তিস্তা ব্যারেজের উজানে তেলির বাজার, ছোটখাতা ও ভাটিতে ডালিয়া বাইশপুকুর এলাক দেখা যায়, শ্রমিকেরা বেলচা, কোদাল ও শাবল ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করে অন্তত অর্ধশতাধিক নৌকায় বোঝাই করেছেন। পরে সে সব পাথর বিক্রির জন্য ট্রাক্ট্ররে করে নিয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে তিস্তা সেচনালার ধারে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানান, নৌকা চলন্ত অবস্থায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাখা দিয়ে নদীর তলদেশের বালু সরিয়ে পাথর তুলে পানির ওপরে নিয়ে আসা হয়। এভাবেই নদীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সক্রিয় টিম পাথর উত্তোলন করছে। উত্তোলিত পাথর ৪০-৫০ টাকা সিএফটি দরে স্থানীয় সিন্ডিকেটটি ক্রয় করে জমজমাট ব্যবসা করে আসছে।
আর সিন্ডিকেটের এসব পাথর চরা মূল্যে ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি করে পাথর ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের কাছে বলে জানান পাথর শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পাথর পরিবহনকারী একটি ট্রাক্টরের চালক রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁরা ভাড়া চুক্তিতে ৩ মাস ধরে পাথর পরিবহন করছেন। ডালিয়া বাজারের আঃ করিম তাদের নিযুক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে করিম বলেন, যারা নৌকার মালিক তারাই পাথর তুলছে। আমি বিভিন্ন দলের কাছে প্রতি সিএফটি পাথর ৬৯ টাকায় কিনে ৭১ টাকা দরে ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। আমার মতো অনেকেই তিস্তা নদীর পাথর প্রতিদিন উত্তোলনকারী দলগুলোর কাছ থেকে কিনে নেন। তিনি জানান, গত ৫ বছর নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আবার জোরে সোরে শুরু হয়েছে।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, অবৈধভাবে পাথর-বালু উত্তোলণ করে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। কিন্তু আমরা নি:স্ব সর্বস্বান্ত হয়েছি। আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। তাছাড়া পাথর পরিবহনের ট্রাক্টর থেকে পানি পড়ার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ও স্থানীয় সড়কের বেহাল অবস্থা হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শুটিবাড়ি বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার সিএফটি পাথর জব্দ করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, নদীর বালু, পাথরের উত্তোলনের বিষয়ে দেখার দায়িত্ব আমাদের না উপজেলা প্রশাসনের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান বলেন, নদী বা মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনের আইনগতভাবে কোন সুযোগ নেই তাই অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পাথরগুলো জব্দ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিস্তা নদী হতে অবৈধ পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। থেমে নেই পাথর খেকো সঙ্গবদ্ধ সক্রিয় চক্রটি। মানছে না তারা আদেশ-নিষেধ। অনেকটাই তারা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে।
ডিমলা (নীলফামারী) : অভিযানের মাধ্যমে সাড়ে ৫ হাজার সিএফটি পাথর জব্দ করেন জেলা প্রশাসক -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তিস্তা হতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকরী সক্রিয় সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটিকে। মানছেনা প্রশাসনের বাধা নিষেধ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পাথর জব্দ করা হলেও এতটুকু প্রভাব পড়েনি চক্রটির অবৈধ কর্মকান্ডে। আরো বেপরোয়া হয়ে তিস্তা নদী হতে পাথর উত্তলোন মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে অব্যাহত রেখে নতুন জনবল নিয়োগ করেছে। বলা চলে প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে পাথর উত্তোলনকারী চক্রটি।
দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ‘ডিমলায় তিস্তা নদীতে চলছে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে উপজেলা প্রশাসন গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাড়ে ৫ হাজার সিএফটি পাথর জব্দ করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান এ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোছা. ফারজানা আক্তার ও ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফজলে এলাহী।
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে পাথর উত্তোলনের কারণে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতির শিকার হচ্ছে তিস্তা পাড়ের নদীভাঙ্গা সর্ববস্ব হারা বাসিন্দারা। স্থানীয়রা বলছেন, একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে নদী থেকে পাথর তুলে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।নির্বিচারে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীভাঙনসহ বর্ষাকালে আকস্মিক বন্যা এবং ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে যাছে প্রতিনিয়ত ।
জানা যায়, প্রায় দুই মাস যাবত তিস্তা নদী ও সংলগ্ন এলাকায় মহাউৎসবে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজ। অবৈধ এই কর্মকান্ডের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এই চক্রের হাতে নাজেহাল হয়েছেন অনেক সংবাদকর্মী। প্রশাসনকে জানিয়েও থামানো যায়নি তাদের দৌরাত্ব।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। ভাঙন এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লোহার তৈরি যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করছে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় শ্রমিকরা।
তিস্তা ব্যারাজের আশপাশ, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার, চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ, ভেন্ডাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর উত্তোলনে প্রায় ১৫টি প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে। সম্প্রতি তিস্তা ব্যারেজের উজানে তেলির বাজার, ছোটখাতা ও ভাটিতে ডালিয়া বাইশপুকুর এলাক দেখা যায়, শ্রমিকেরা বেলচা, কোদাল ও শাবল ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করে অন্তত অর্ধশতাধিক নৌকায় বোঝাই করেছেন। পরে সে সব পাথর বিক্রির জন্য ট্রাক্ট্ররে করে নিয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে তিস্তা সেচনালার ধারে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানান, নৌকা চলন্ত অবস্থায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাখা দিয়ে নদীর তলদেশের বালু সরিয়ে পাথর তুলে পানির ওপরে নিয়ে আসা হয়। এভাবেই নদীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সক্রিয় টিম পাথর উত্তোলন করছে। উত্তোলিত পাথর ৪০-৫০ টাকা সিএফটি দরে স্থানীয় সিন্ডিকেটটি ক্রয় করে জমজমাট ব্যবসা করে আসছে।
আর সিন্ডিকেটের এসব পাথর চরা মূল্যে ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি করে পাথর ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের কাছে বলে জানান পাথর শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পাথর পরিবহনকারী একটি ট্রাক্টরের চালক রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁরা ভাড়া চুক্তিতে ৩ মাস ধরে পাথর পরিবহন করছেন। ডালিয়া বাজারের আঃ করিম তাদের নিযুক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে করিম বলেন, যারা নৌকার মালিক তারাই পাথর তুলছে। আমি বিভিন্ন দলের কাছে প্রতি সিএফটি পাথর ৬৯ টাকায় কিনে ৭১ টাকা দরে ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। আমার মতো অনেকেই তিস্তা নদীর পাথর প্রতিদিন উত্তোলনকারী দলগুলোর কাছ থেকে কিনে নেন। তিনি জানান, গত ৫ বছর নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আবার জোরে সোরে শুরু হয়েছে।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, অবৈধভাবে পাথর-বালু উত্তোলণ করে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। কিন্তু আমরা নি:স্ব সর্বস্বান্ত হয়েছি। আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। তাছাড়া পাথর পরিবহনের ট্রাক্টর থেকে পানি পড়ার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ও স্থানীয় সড়কের বেহাল অবস্থা হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শুটিবাড়ি বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার সিএফটি পাথর জব্দ করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, নদীর বালু, পাথরের উত্তোলনের বিষয়ে দেখার দায়িত্ব আমাদের না উপজেলা প্রশাসনের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান বলেন, নদী বা মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনের আইনগতভাবে কোন সুযোগ নেই তাই অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পাথরগুলো জব্দ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিস্তা নদী হতে অবৈধ পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। থেমে নেই পাথর খেকো সঙ্গবদ্ধ সক্রিয় চক্রটি। মানছে না তারা আদেশ-নিষেধ। অনেকটাই তারা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে।