সুবর্ণচর উপজেলায় কোন নদী নেই। তবে উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে মেঘনা নদী অবস্থিত। ফলে একটি শাখা নদী সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়াতে দুটি উপজেলা আলাদা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলে চরমজিদ ভূঞারহাট বাজার সরকারি খাস জলমহাল থেকে মেঘনার শাখা নদী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার খাল দীর্ঘ দিন ধরে দখলের মহোৎসব চলছে।
সুবর্ণচরের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষির উপর নির্ভর। এখানের কৃষকেরা ধান, ডাল, চীনা বাদাম, মুগ, সয়াবিন, সরিষা, মরিচ, টমেটো, লেবু, শষা, বেগুন, তরমুজ, বিভিন্ন জাতের তরকারিসহ নানা কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশে ও রপ্তানি হয় সুবর্ণচরের উৎপাদিত কৃষি পণ্য। তাই সুবর্ণচরকে বলা হয় নোয়াখালীর শষ্য ভান্ডার।
সুবর্ণচরের চাষাবাদ উপযোগী প্রায় লক্ষাধিক একর জায়গায় ত্রিফসলী চাষাবাদে খুবই উর্বর। চাষাবাদের জন্য ভু-উপরিস্থ পানি অপরিহার্য। ভু-উপরিস্থ খালের পানির প্রবাহ নিয়মিতকরণ, সংরক্ষণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো সংস্কার ও উদ্ধার অনিবার্য।
বিগত কয়েক দশকে স্থানীয় ও বহিরাগত কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিজাত দস্যুরা নানাভাবে কিছু খাল দখল করতে সহায়তা করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহম্মেতের নির্দেশে সুবর্ণচরে হাবুর খাল, চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া এলাকার মারদোনা খাল সংষ্কার ও দখল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছেনমং রাখাইন। এছাড়াও অভিযান সূত্রে জানা যায়, পূর্ব চরবাটার চর নাঙ্গলিয়া খালের আংশিক, ২নং চরবাটার কাজল মার্কেটে সংলগ্ন আংশিক দখল উদ্ধার করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সহযোগিতায় এ অপকর্মটি সফল হয়েছে অনেক সময়। তাই উপজেলার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের এসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ অঞ্চলে জলাবন্ধতায় দূরীকরণে ‘পিঠার খাল’ বাঁশখালী খাল, বোটখালী খাল এবং শাখাগুলো বেদখল করে সংষ্কার জরুরি বলে নিশ্চিত করেন সচেতন নাগরিক মহল। প্রশাসনের নাকের ডগায় ৩ যুগ ধরে দখল হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
উপজেলা (ভূমি) অফিস সূত্রে জানা যায়, পিএস ১৯৮৮ জরিপে ২১০৯ দাগের অন্তরের ২১২৭ দাগে চরমজিদ ভূঞারহাট জামে মসজিদের আওতায় জলমহালটির পাশে দিয়ে খালটি মেঘনার শাখা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এক সময় সড়ক পথে চলাচলের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বর্ষা মৌসুমে মানুষ ছোট-বড় পালতোলা নৌকায় ছড়ি খালটি দিয়ে বাজারে পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসতেন। কৃষকের শস্য উৎপাদনে এ খালের ভূমিকা ছিল। সেই খাল দখলদারের কবলে পড়ে হারিয়েছে গতি।
হাতিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার ‘পিঠার’ খালে মেঘনার শাখা নদীর রামগতি উপজেলার জোয়ারের পানি। চরমজিদ গ্রামের একাধিক নাগরিক এই প্রতিদেককে বলেন, আগে বর্ষা মৌসুমে খালে জোয়ার আসতো । এখন খালটি বাঁধ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ‘পিঠার খাল’ বাঁশখালী খাল, পূর্ব চরবাটার যোবায়ের বাজার রাস্তার মাথা ছড়া খাল, ওয়ালি উল্ল্যাহ মিয়ার বাজার (ভাংচুর) ছড়া খাল,মঞ্জু চেয়ারম্যান বাজার রাস্তার মাথা ছড়া খালটির দুপাশে অবৈধ স্থাপনা দিয়ে মাসিক ভাড়া আদায় করেন। খালের দুই পাড়ের বসবাসকারীরা এক সময় বাশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতো। এরপর তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করেন। দুই কিলোমিটার খালের মধ্যে প্রায় অনেক বাঁধ দিয়ে মুখে পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থান পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ফলে খালের পানি দুগন্ধ হয়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয় সাংবাদকর্মী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় খাল গুলো দখল হচ্ছে। এর আশপাশ দিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চলাচল করেন। ভূমি অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিষয়টি জানলেও তারা দখলদারের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে নিরব থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আসফার সায়মা বলেন, দক্ষিণ অঞ্চলের খাল গুলো আমরা এখনও সংষ্কার বা উদ্ধারে কার্যক্রম হাতে নেয়নি। কেউ যদি খালের ওপর অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে থাকলে সেটা অপরাধ।
এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক তা উচ্ছেদ করা হবে বলে নিশ্চিত করেন এই প্রতিবেদককে।
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
সুবর্ণচর উপজেলায় কোন নদী নেই। তবে উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে মেঘনা নদী অবস্থিত। ফলে একটি শাখা নদী সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়াতে দুটি উপজেলা আলাদা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলে চরমজিদ ভূঞারহাট বাজার সরকারি খাস জলমহাল থেকে মেঘনার শাখা নদী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার খাল দীর্ঘ দিন ধরে দখলের মহোৎসব চলছে।
সুবর্ণচরের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষির উপর নির্ভর। এখানের কৃষকেরা ধান, ডাল, চীনা বাদাম, মুগ, সয়াবিন, সরিষা, মরিচ, টমেটো, লেবু, শষা, বেগুন, তরমুজ, বিভিন্ন জাতের তরকারিসহ নানা কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশে ও রপ্তানি হয় সুবর্ণচরের উৎপাদিত কৃষি পণ্য। তাই সুবর্ণচরকে বলা হয় নোয়াখালীর শষ্য ভান্ডার।
সুবর্ণচরের চাষাবাদ উপযোগী প্রায় লক্ষাধিক একর জায়গায় ত্রিফসলী চাষাবাদে খুবই উর্বর। চাষাবাদের জন্য ভু-উপরিস্থ পানি অপরিহার্য। ভু-উপরিস্থ খালের পানির প্রবাহ নিয়মিতকরণ, সংরক্ষণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো সংস্কার ও উদ্ধার অনিবার্য।
বিগত কয়েক দশকে স্থানীয় ও বহিরাগত কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিজাত দস্যুরা নানাভাবে কিছু খাল দখল করতে সহায়তা করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহম্মেতের নির্দেশে সুবর্ণচরে হাবুর খাল, চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া এলাকার মারদোনা খাল সংষ্কার ও দখল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছেনমং রাখাইন। এছাড়াও অভিযান সূত্রে জানা যায়, পূর্ব চরবাটার চর নাঙ্গলিয়া খালের আংশিক, ২নং চরবাটার কাজল মার্কেটে সংলগ্ন আংশিক দখল উদ্ধার করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সহযোগিতায় এ অপকর্মটি সফল হয়েছে অনেক সময়। তাই উপজেলার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের এসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ অঞ্চলে জলাবন্ধতায় দূরীকরণে ‘পিঠার খাল’ বাঁশখালী খাল, বোটখালী খাল এবং শাখাগুলো বেদখল করে সংষ্কার জরুরি বলে নিশ্চিত করেন সচেতন নাগরিক মহল। প্রশাসনের নাকের ডগায় ৩ যুগ ধরে দখল হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
উপজেলা (ভূমি) অফিস সূত্রে জানা যায়, পিএস ১৯৮৮ জরিপে ২১০৯ দাগের অন্তরের ২১২৭ দাগে চরমজিদ ভূঞারহাট জামে মসজিদের আওতায় জলমহালটির পাশে দিয়ে খালটি মেঘনার শাখা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এক সময় সড়ক পথে চলাচলের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বর্ষা মৌসুমে মানুষ ছোট-বড় পালতোলা নৌকায় ছড়ি খালটি দিয়ে বাজারে পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসতেন। কৃষকের শস্য উৎপাদনে এ খালের ভূমিকা ছিল। সেই খাল দখলদারের কবলে পড়ে হারিয়েছে গতি।
হাতিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার ‘পিঠার’ খালে মেঘনার শাখা নদীর রামগতি উপজেলার জোয়ারের পানি। চরমজিদ গ্রামের একাধিক নাগরিক এই প্রতিদেককে বলেন, আগে বর্ষা মৌসুমে খালে জোয়ার আসতো । এখন খালটি বাঁধ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ‘পিঠার খাল’ বাঁশখালী খাল, পূর্ব চরবাটার যোবায়ের বাজার রাস্তার মাথা ছড়া খাল, ওয়ালি উল্ল্যাহ মিয়ার বাজার (ভাংচুর) ছড়া খাল,মঞ্জু চেয়ারম্যান বাজার রাস্তার মাথা ছড়া খালটির দুপাশে অবৈধ স্থাপনা দিয়ে মাসিক ভাড়া আদায় করেন। খালের দুই পাড়ের বসবাসকারীরা এক সময় বাশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতো। এরপর তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করেন। দুই কিলোমিটার খালের মধ্যে প্রায় অনেক বাঁধ দিয়ে মুখে পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থান পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ফলে খালের পানি দুগন্ধ হয়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয় সাংবাদকর্মী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় খাল গুলো দখল হচ্ছে। এর আশপাশ দিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চলাচল করেন। ভূমি অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিষয়টি জানলেও তারা দখলদারের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে নিরব থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আসফার সায়মা বলেন, দক্ষিণ অঞ্চলের খাল গুলো আমরা এখনও সংষ্কার বা উদ্ধারে কার্যক্রম হাতে নেয়নি। কেউ যদি খালের ওপর অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে থাকলে সেটা অপরাধ।
এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক তা উচ্ছেদ করা হবে বলে নিশ্চিত করেন এই প্রতিবেদককে।