নরসিংদী : আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা -সংবাদ
দেশে বোরোর পরে চালের সবচেয়ে বেশি জোগান আসে আমন থেকে। বোরো সেচনির্ভর হলেও আমন পুরোটাই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। আবাদে তাই খরচ কম লাগে। আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নরসিংদীর কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন। আবার কেউ কেউ জমিতে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করছেন। অনেক মাঠে কৃষক ও শ্রমিকরা চারা রোপণে ব্যস্ত।
জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে চলছে আমন রোপণের ধুম। কৃষকদের একটুখানি বিশ্রামের অবকাশ নেই। শুধুই কাজ আর কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কাজ।
জমি চাষ, আগাছা পরিষ্কার ও দলবদ্ধভাবে চারা রোপণে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের ভেতর লাগানো শেষ হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন। বৃষ্টির পানিতে আমন ধানের চাষ ভালো হয়।আমনে সেচ,সার, শ্রমিক খরচ সাধারণত কম লাগে। ফলে অল্প খরচে বেশি লাভবান হন কৃষকরা। দেশিজাত ছাড়া ব্রি ধান ৪৯,৭৫,৮০,৮৭,৯৩,৯৫ ১০৩,বিনা ধান ৭,১৭,২৬ ও হাইব্রিড (ধানী গোল্ড) চাষ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৪১ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান রোপন শেষ হয়েছে। আবাদ চলমান রয়েছে। জেলায় খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত ৩৫০টি সেচযন্ত্রের চালু রয়েছে।
জেলার শিবপুর উপজেলা দুলাপুর ইউনিয়নের দরগাবন্দ গ্রামের কৃষক জহির বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাত নেই, যার প্রভাব পড়েছে ধান রোপণে। তীব্র গরমের কারণে শ্রমিকদের কাজে ধীরগতি এসেছে। হাল খরচ, সেচ খরচ ও শ্রমিক খরচ বেশি পড়ছে। বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা না করে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহেই দুই বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছি, যেখানে ৩ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৬ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। বেলাব উপজেলার আমলাব গ্রামের কৃষক শওকত হোসেন জানান, এবার মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় দেড়িতে ধানের চারা রোপন কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখন প্রায় প্রতিদিনই কম-বেশি বৃষ্টি হওয়ায় আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চলতি মৌসুমের আমন ধানের চারা রোপনের কাজ শেষ হবে বলে তারা আশা করেন।
রায়পুরা উপজেলা মরজাল গ্রামের কৃষক জসিম বলেন, যেসব ধানের ফলন বেশি হয়, এমন উন্নত জাতের ধানের বীজ উৎপাদন করে রোপণ করছি। নিজের জমিতে যে পরিমাণ চারার প্রয়োজন তার চেয়ে দ্বিগুণ চারা উৎপাদন করেছি। সেই চারা বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা আয় হবে। আর ওই টাকা দিয়েই জমিতে সারের খরচ বহন করব বলে আশা করছি।
শিবপুর উপজেলার বান্দারদীয়া গ্রামে ধানের চারা রোপন করছিলেন কৃষি শ্রমিক নুর মোহাম্মদ জানান, আমরা এক সাথে ৩-৪ জন শ্রমিক জমিতে ধানের চারা রোপণ করছি। এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ২হাজার ৬শ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত ১-২ বিঘা জমি রোপণ করা হচ্ছে। আবার কোনো দিন ৩ বিঘাও রোপণ করা যায়। নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড.মুহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, জেলার আমন ধান রোপন উপযোগী সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে ও আমন ধান উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সঠিকভাবে চাষাবাদ ও রোগবালাই প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন সময় কৃষক-কৃষাণীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা পরিচালনা করা হয়েছে,কৃষি উপ-সহকারীরা কৃষকদের কল্যাণে মাঠে দিনভর কাজ করে যাচ্ছে। উপ সহকারীদের মাধ্যমে কৃষকদের লাইনে ধান রোপনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন,আমন ধানের উৎপাদন ভালো হলে কৃষকদের আয় বাড়াবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান সরবরাহ করা হবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
নরসিংদী : আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
দেশে বোরোর পরে চালের সবচেয়ে বেশি জোগান আসে আমন থেকে। বোরো সেচনির্ভর হলেও আমন পুরোটাই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। আবাদে তাই খরচ কম লাগে। আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নরসিংদীর কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন। আবার কেউ কেউ জমিতে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করছেন। অনেক মাঠে কৃষক ও শ্রমিকরা চারা রোপণে ব্যস্ত।
জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে চলছে আমন রোপণের ধুম। কৃষকদের একটুখানি বিশ্রামের অবকাশ নেই। শুধুই কাজ আর কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কাজ।
জমি চাষ, আগাছা পরিষ্কার ও দলবদ্ধভাবে চারা রোপণে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের ভেতর লাগানো শেষ হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন। বৃষ্টির পানিতে আমন ধানের চাষ ভালো হয়।আমনে সেচ,সার, শ্রমিক খরচ সাধারণত কম লাগে। ফলে অল্প খরচে বেশি লাভবান হন কৃষকরা। দেশিজাত ছাড়া ব্রি ধান ৪৯,৭৫,৮০,৮৭,৯৩,৯৫ ১০৩,বিনা ধান ৭,১৭,২৬ ও হাইব্রিড (ধানী গোল্ড) চাষ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৪১ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান রোপন শেষ হয়েছে। আবাদ চলমান রয়েছে। জেলায় খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত ৩৫০টি সেচযন্ত্রের চালু রয়েছে।
জেলার শিবপুর উপজেলা দুলাপুর ইউনিয়নের দরগাবন্দ গ্রামের কৃষক জহির বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাত নেই, যার প্রভাব পড়েছে ধান রোপণে। তীব্র গরমের কারণে শ্রমিকদের কাজে ধীরগতি এসেছে। হাল খরচ, সেচ খরচ ও শ্রমিক খরচ বেশি পড়ছে। বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা না করে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহেই দুই বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছি, যেখানে ৩ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৬ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। বেলাব উপজেলার আমলাব গ্রামের কৃষক শওকত হোসেন জানান, এবার মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় দেড়িতে ধানের চারা রোপন কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখন প্রায় প্রতিদিনই কম-বেশি বৃষ্টি হওয়ায় আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চলতি মৌসুমের আমন ধানের চারা রোপনের কাজ শেষ হবে বলে তারা আশা করেন।
রায়পুরা উপজেলা মরজাল গ্রামের কৃষক জসিম বলেন, যেসব ধানের ফলন বেশি হয়, এমন উন্নত জাতের ধানের বীজ উৎপাদন করে রোপণ করছি। নিজের জমিতে যে পরিমাণ চারার প্রয়োজন তার চেয়ে দ্বিগুণ চারা উৎপাদন করেছি। সেই চারা বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা আয় হবে। আর ওই টাকা দিয়েই জমিতে সারের খরচ বহন করব বলে আশা করছি।
শিবপুর উপজেলার বান্দারদীয়া গ্রামে ধানের চারা রোপন করছিলেন কৃষি শ্রমিক নুর মোহাম্মদ জানান, আমরা এক সাথে ৩-৪ জন শ্রমিক জমিতে ধানের চারা রোপণ করছি। এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ২হাজার ৬শ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত ১-২ বিঘা জমি রোপণ করা হচ্ছে। আবার কোনো দিন ৩ বিঘাও রোপণ করা যায়। নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড.মুহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, জেলার আমন ধান রোপন উপযোগী সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে ও আমন ধান উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সঠিকভাবে চাষাবাদ ও রোগবালাই প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন সময় কৃষক-কৃষাণীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা পরিচালনা করা হয়েছে,কৃষি উপ-সহকারীরা কৃষকদের কল্যাণে মাঠে দিনভর কাজ করে যাচ্ছে। উপ সহকারীদের মাধ্যমে কৃষকদের লাইনে ধান রোপনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন,আমন ধানের উৎপাদন ভালো হলে কৃষকদের আয় বাড়াবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান সরবরাহ করা হবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।