ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রংপুরের তারাগঞ্জে মুচি সম্প্রদায়ের রুপলাল দাস ও প্রদীপ লাল মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। মামলার বাদী নিহত রুপলাল দাসের স্ত্রী মালতী ওরফে ভারতী রানীর নাম উল্লেখ করা হলেও পুলিশ নিজেরাই এজাহার লিখে এনে তার স্বাক্ষর নেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
যা বললনে রূপলালরে স্ত্রী
এজাহারে কী লিখেছে
পুলিশ তা জানায়নি; বাসায় এসে স্বাক্ষর নিয়ে গেছে
মামলায় বাদীর মোবাইল ফোন নম্বরটিও ভুয়া
নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ- পুলিশ পুরো ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এবং নিজেদের রক্ষা করার কৌশল হিসেবে পুরো ঘটনাকে বিকৃত করে তাদের মনমতো এজাহার তৈরি করেছে। শুধু তাই নয়, মামলার এজাহারে বাদী হিসেবে মালতী ওরফে ভারতী রানীর যে মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করেছে সেটাও ভুয়া। পুলিশের উল্লেখ করা নম্বরটি মালতীর নয় বরং ওই নম্বরটি টাঙ্গাইলের একজনের বলেও নিশ্চিত হয়েছে স্বজনরা। অন্যদিকে মামলায় ৫-৭শ’ অজ্ঞাত নামাদের কথা উল্লেখ করা হলেও এ ধরনের কোনো কথাই বাদী বলেননি।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে- মামলার এজাহারে কী উল্লেখ করা হয়েছে তা মামলার বাদী নিহত রুপলাল দাসের স্ত্রী মালতী ওরফে ভারতী রানী জানেন না। বরং মামলার বিষয়টি জানতে পেরে এজাহারের কপি সংগ্রহ করে জানতে পারেন তার বাড়িতে পুলিশ গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে একটি ভুয়া গল্প বানিয়ে এজাহার তৈরি করেছে পুলিশ।
তারাগঞ্জ থানা পুলিশের তৈরি করা একতরফা অভিযোগসংবলিত এজাহার তৈরি করার বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
পুলিশের তৈরি করা মামলার এজাহারে পুলিশ যা বলেছে, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৯ আগস্ট রাতে মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া এলাকা থেকে প্রদীপ লাল ও রুপলাল ভ্যান নিয়ে তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর গ্রামে রুপলালের বাড়িতে আসছিলেন। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা মোড়ে পৌঁছালে তাদের সন্দেহ করে ওই এলাকার লোকজন। তাদের ভ্যান দাঁড় করান। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রুপলাল ও প্রদীপের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে স্পিড ক্যানের বোতলে দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় ও কিছু ওষুধ পান।
মামলায় ভারতী রানীর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, তার স্বামী রুপলাল ও জামাতা প্রদীপের সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতরে স্পিড ক্যানের বোতল খুললে মেহেদী হাসানসহ পিতা ইছাহাক বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলার ফরিদাবাদ গ্রামে তিনিসহ তাৎক্ষণিক কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন উত্তেজিত জনতা তাদের রাত ৯টার দিকে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে গিয়ে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন। একপর্যায়ে তাদের দুই কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। তাদের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে চিকিৎসক রুপলালকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠান।
প্রকৃতপক্ষে বুড়িরহাট থেকে রুপলাল ও প্রদীপকে উদ্ধার করা হলেও পুলিশ মামলায় বলেছে, ঘটনার খবর পেয়ে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ দ্রুত তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে রুপলালের মৃতদেহ দেখে সুরতহাল করে। স্থানীয় লোকজনের সাক্ষ্য নেয়। পরে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ রুপলালের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। অন্যদিকে ভোর ৪টার দিকে প্রদীপ দাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তবে নিহত রুপলালের ছেলে জয়দাস অভিযোগ করেন, মব তৈরি করে তার বাবা রুপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে পেটানো হচ্ছিল খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল বুড়িরহাট স্কুলের সামনে আসে। তাদের সামনেই মব তৈরি করে অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। এ সময় দুই হাত জোর করে তারা মুচি, চোর নয় বলে বার বার আকুতি জানাচ্ছিলেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। তখনও তারা দু’জনেই বেঁচে ছিলেন। এরপর তার বাবা ও দাদাকে পেটাতে পেটাতে বুড়িরহাট স্কুলমাঠে নিয়ে গিয়ে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
অথচ পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে তারা যে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তাদের সামনে পেটানো হচ্ছিল, তারা দেখেও উদ্ধার না করে চলে এসেছিল, সেসব কথা মামলায় উল্লেখ করেনি পুলিশ। উল্টো মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে রুপলাল ও প্রদীপ দাসকে যখন তাদের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসার খবর পায় তখন পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে এসে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে।
জয়দাস আরও অভিযোগ করেছেন, তার বাবা ও দাদাকে পিটিয়ে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসে। পুলিশের এসব কর্মকাণ্ডে আমরা এখন সন্দিহান- আমরা ন্যায়বিচার পাব কিনা। কেননা মামলার শুরুতেই পুরো ঘটনাকে গল্প বানিয়েছে নিজেদের মতো করে।
ভাইরাল ভিডিওতে যা দেখা গেছে, রুপলাল ও প্রদীপ দাসের ভ্যান আটকিয়ে মব তৈরি করে মারধর করা হচ্ছে। এ সময় দুজন হাত জোড় করে মারধর না করার অনুরোধ করে। বলে, তারা মুচি সম্প্রদায়ের জুতা, স্যান্ডেল সেলাই করে জীবিকা চালায়। তারপরও তাদের মারধর করার একটি ভিডিও প্রথমে ভাইরাল হয়। দ্বিতীয় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের নিষ্ঠুরভাবে পেটানো হচ্ছে, তারা ভ্যান থেকে পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের গণপিটুনি দেয়া হয়। এ সময় মব তৈরিকারীদের উল্লাস, এমনকি কারা কারা ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছিল তাদের ছবিও ভিডিওতে দেখা গেছে।
এই ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরেই সারাদেশ ও বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করে। তারই অংশ হিসেবে দুই এসআইসহ ৮ পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু এটা ছিল পুরোটাই একটি সাজানো নাটক, অভিযোগ স্বজনদের।
রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর যা বললো, লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন রুপলালের মেয়ে নুপুর রানী। তিনি বলেন, বুড়িরহাট স্কুলমাঠে তার বাবা ও দাদা পড়ে ছিলেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেখান থেকে তাদের লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসে। অথচ মামলায় লেখা হয়েছে, ওরা বাবার লাশ পুলিশ হাসপাতালে পেয়েছে। এটা তো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। তিনি বলেন ‘মামলার বিষয়ে আমার মা কিছু জানেন না। ওরা নিজেরাই মামলার ৫/৭ শ’ আসামি করেছে।
নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী অভিযোগ করেন, ‘আমার স্বামী নিহত হওয়ার পর পুলিশ থানা থেকে তাদের বাড়িতে কম্পোজ করা কাগজ নিয়ে আসে আমার সহি নিয়ে গেছে কিন্তু কাগজে কী লেখা আছে, আমি সেটা জানি না। পরে শুনি আমি বাদী, আমি মামলা করছি।’
মামলার বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুখ বলেন ‘মামলা কি পুলিশ করে না বাদী করে? অভিযোগটা কে দেয়? বাদী তো সব সময় এই কথাই বলে, এটা তো স্বাভাবিক। এইটা কোনো কথা হইল? মামলায় আসামি যতই যতই করুক প্রকৃত আসামির ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
রংপুরের তারাগঞ্জে মুচি সম্প্রদায়ের রুপলাল দাস ও প্রদীপ লাল মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। মামলার বাদী নিহত রুপলাল দাসের স্ত্রী মালতী ওরফে ভারতী রানীর নাম উল্লেখ করা হলেও পুলিশ নিজেরাই এজাহার লিখে এনে তার স্বাক্ষর নেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
যা বললনে রূপলালরে স্ত্রী
এজাহারে কী লিখেছে
পুলিশ তা জানায়নি; বাসায় এসে স্বাক্ষর নিয়ে গেছে
মামলায় বাদীর মোবাইল ফোন নম্বরটিও ভুয়া
নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ- পুলিশ পুরো ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এবং নিজেদের রক্ষা করার কৌশল হিসেবে পুরো ঘটনাকে বিকৃত করে তাদের মনমতো এজাহার তৈরি করেছে। শুধু তাই নয়, মামলার এজাহারে বাদী হিসেবে মালতী ওরফে ভারতী রানীর যে মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করেছে সেটাও ভুয়া। পুলিশের উল্লেখ করা নম্বরটি মালতীর নয় বরং ওই নম্বরটি টাঙ্গাইলের একজনের বলেও নিশ্চিত হয়েছে স্বজনরা। অন্যদিকে মামলায় ৫-৭শ’ অজ্ঞাত নামাদের কথা উল্লেখ করা হলেও এ ধরনের কোনো কথাই বাদী বলেননি।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে- মামলার এজাহারে কী উল্লেখ করা হয়েছে তা মামলার বাদী নিহত রুপলাল দাসের স্ত্রী মালতী ওরফে ভারতী রানী জানেন না। বরং মামলার বিষয়টি জানতে পেরে এজাহারের কপি সংগ্রহ করে জানতে পারেন তার বাড়িতে পুলিশ গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে একটি ভুয়া গল্প বানিয়ে এজাহার তৈরি করেছে পুলিশ।
তারাগঞ্জ থানা পুলিশের তৈরি করা একতরফা অভিযোগসংবলিত এজাহার তৈরি করার বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
পুলিশের তৈরি করা মামলার এজাহারে পুলিশ যা বলেছে, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৯ আগস্ট রাতে মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া এলাকা থেকে প্রদীপ লাল ও রুপলাল ভ্যান নিয়ে তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর গ্রামে রুপলালের বাড়িতে আসছিলেন। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা মোড়ে পৌঁছালে তাদের সন্দেহ করে ওই এলাকার লোকজন। তাদের ভ্যান দাঁড় করান। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রুপলাল ও প্রদীপের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে স্পিড ক্যানের বোতলে দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় ও কিছু ওষুধ পান।
মামলায় ভারতী রানীর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, তার স্বামী রুপলাল ও জামাতা প্রদীপের সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতরে স্পিড ক্যানের বোতল খুললে মেহেদী হাসানসহ পিতা ইছাহাক বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলার ফরিদাবাদ গ্রামে তিনিসহ তাৎক্ষণিক কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন উত্তেজিত জনতা তাদের রাত ৯টার দিকে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে গিয়ে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন। একপর্যায়ে তাদের দুই কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। তাদের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে চিকিৎসক রুপলালকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠান।
প্রকৃতপক্ষে বুড়িরহাট থেকে রুপলাল ও প্রদীপকে উদ্ধার করা হলেও পুলিশ মামলায় বলেছে, ঘটনার খবর পেয়ে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ দ্রুত তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে রুপলালের মৃতদেহ দেখে সুরতহাল করে। স্থানীয় লোকজনের সাক্ষ্য নেয়। পরে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ রুপলালের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। অন্যদিকে ভোর ৪টার দিকে প্রদীপ দাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তবে নিহত রুপলালের ছেলে জয়দাস অভিযোগ করেন, মব তৈরি করে তার বাবা রুপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে পেটানো হচ্ছিল খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল বুড়িরহাট স্কুলের সামনে আসে। তাদের সামনেই মব তৈরি করে অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। এ সময় দুই হাত জোর করে তারা মুচি, চোর নয় বলে বার বার আকুতি জানাচ্ছিলেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। তখনও তারা দু’জনেই বেঁচে ছিলেন। এরপর তার বাবা ও দাদাকে পেটাতে পেটাতে বুড়িরহাট স্কুলমাঠে নিয়ে গিয়ে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
অথচ পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে তারা যে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তাদের সামনে পেটানো হচ্ছিল, তারা দেখেও উদ্ধার না করে চলে এসেছিল, সেসব কথা মামলায় উল্লেখ করেনি পুলিশ। উল্টো মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে রুপলাল ও প্রদীপ দাসকে যখন তাদের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসার খবর পায় তখন পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে এসে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে।
জয়দাস আরও অভিযোগ করেছেন, তার বাবা ও দাদাকে পিটিয়ে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসে। পুলিশের এসব কর্মকাণ্ডে আমরা এখন সন্দিহান- আমরা ন্যায়বিচার পাব কিনা। কেননা মামলার শুরুতেই পুরো ঘটনাকে গল্প বানিয়েছে নিজেদের মতো করে।
ভাইরাল ভিডিওতে যা দেখা গেছে, রুপলাল ও প্রদীপ দাসের ভ্যান আটকিয়ে মব তৈরি করে মারধর করা হচ্ছে। এ সময় দুজন হাত জোড় করে মারধর না করার অনুরোধ করে। বলে, তারা মুচি সম্প্রদায়ের জুতা, স্যান্ডেল সেলাই করে জীবিকা চালায়। তারপরও তাদের মারধর করার একটি ভিডিও প্রথমে ভাইরাল হয়। দ্বিতীয় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের নিষ্ঠুরভাবে পেটানো হচ্ছে, তারা ভ্যান থেকে পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের গণপিটুনি দেয়া হয়। এ সময় মব তৈরিকারীদের উল্লাস, এমনকি কারা কারা ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছিল তাদের ছবিও ভিডিওতে দেখা গেছে।
এই ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরেই সারাদেশ ও বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করে। তারই অংশ হিসেবে দুই এসআইসহ ৮ পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু এটা ছিল পুরোটাই একটি সাজানো নাটক, অভিযোগ স্বজনদের।
রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর যা বললো, লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন রুপলালের মেয়ে নুপুর রানী। তিনি বলেন, বুড়িরহাট স্কুলমাঠে তার বাবা ও দাদা পড়ে ছিলেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেখান থেকে তাদের লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসে। অথচ মামলায় লেখা হয়েছে, ওরা বাবার লাশ পুলিশ হাসপাতালে পেয়েছে। এটা তো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। তিনি বলেন ‘মামলার বিষয়ে আমার মা কিছু জানেন না। ওরা নিজেরাই মামলার ৫/৭ শ’ আসামি করেছে।
নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী অভিযোগ করেন, ‘আমার স্বামী নিহত হওয়ার পর পুলিশ থানা থেকে তাদের বাড়িতে কম্পোজ করা কাগজ নিয়ে আসে আমার সহি নিয়ে গেছে কিন্তু কাগজে কী লেখা আছে, আমি সেটা জানি না। পরে শুনি আমি বাদী, আমি মামলা করছি।’
মামলার বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুখ বলেন ‘মামলা কি পুলিশ করে না বাদী করে? অভিযোগটা কে দেয়? বাদী তো সব সময় এই কথাই বলে, এটা তো স্বাভাবিক। এইটা কোনো কথা হইল? মামলায় আসামি যতই যতই করুক প্রকৃত আসামির ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’