ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
গুমনির্যাতনের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করে পিরোজপুরের সুখরঞ্জন বালি। অভিযোগে আরও অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে বিবাদী করা হয়েছে ১০ থেকে ১৫ জনকে। সুখরঞ্জন বালি জামায়াতে ইসলামীর নেতা প্রয়াত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার সাক্ষী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। অভিযোগের সাক্ষী করা হয়েছে আইনজীবী তানভীর আল আমিন, মনজুর আহমেদ আনসারী, আবু বকর সিদ্দিক, হাসানুল বান্না সোহাগ ও মাসুদ সাঈদীকে।
পরে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের জানান, সুখরঞ্জন বালি চিফ প্রসিকিউটর অফিসে অভিযোগ দাখিল করতে এসেছেন। তার অভিযোগ, তাকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়। এছাড়া গুম-নির্যাতনেরও অভিযোগ করেছেন। ৫ বছর অবৈধভাবে ভারতের কারাগারে তাকে আটক রাখা হয় বলে অভিযোগ এনেছেন।
সুখরঞ্জন বালি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক সদস্য বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক এমপি এ কে এম আউয়াল, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, সাবেক প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সাবেক প্রধান মো. সানাউল হক, তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
এ সময় সুখরঞ্জন বালির আইনজীবী পারভেজ হোসেন বলেন, ?‘২০১২ সালে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা চলছিল। তখন এই সুখরঞ্জন বালিকে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নেয়া হয়েছিল পিরোজপুর থেকে। তাকে সাক্ষী দেয়ার জন্য নানাভাবে চাপ ও লাঞ্ছনা করা হয়েছিল। সুখরঞ্জন বালি বলেছেন, তার ভাইকে যারা মেরেছিল তখন সেখানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন না।’
সুখরঞ্জন বালী তার অভিযোগে বলেন, ‘আমার ভাই বিশাবালীকে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাকে পিরোজপুরের পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলে ডেকে ৭১-এ আমার ভাই বিশাবালীর হত্যাকা-ের বিষয়ে জানতে চান। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। কিন্তু হেলাল উদ্দিন আমাকে ভাইয়ের হত্যাকারী হিসেবে প্রকৃত হত্যাকারীদের নামের সঙ্গে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামও বলতে বলেন এবং তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাকে তখনই জানাই, সাঈদী হুজুর আমার ভাই বিশাবালী হত্যাকা-ের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিন আমাকে জোরপূর্বক রাজি করাতে সেখানেই আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকেন। আমাকে হত্যার হুমকি দেন। আমি তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আত্মগোপনে চলে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে নির্যাতনের অনেক দিন পর সাঈদী হুজুরের ছেলে মাসুদ সাঈদী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আমার ভাই বিশাবালী হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে চান। এরপর ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় আসি এবং মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি পরদিন ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী মিজানুল ইসলামের কাছে নিয়ে যান। এরপর ৫ নভেম্বর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম আমাকে তার গাড়িতে করে ট্রাইব্যুনালের দিকে রওনা দেন।’
সুখরঞ্জনের আইনজীবী বলেন, ‘সে সময় ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে সুখরঞ্জন বালিকে সাদা পোশাকধারী পুলিশের সদস্যরা জোরপূর্বক তুলে একটি প্রাইভেটকারে উঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। তারপর তাকে একটা বদ্ধ রুমে তিন মাস আটকে রাখা হয়। এরপর তাকে সেখান থেকে সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের কাছে সুখরঞ্জন বালিকে হস্তান্তর করা হয়।’ পারভেজ হোসেন আরও বলেন, ‘সুখরঞ্জন বালি জানিয়েছেন, পরে তিনি যে স্থানটি আবিষ্কার করেছিলেন তা হলো ভারতের কলকাতার বশিরহাট। সেখানে তাকে আটক রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর জেল জীবন কাটাতে হয়। পরে তিনি মুক্তি পান।’
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
গুমনির্যাতনের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করে পিরোজপুরের সুখরঞ্জন বালি। অভিযোগে আরও অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে বিবাদী করা হয়েছে ১০ থেকে ১৫ জনকে। সুখরঞ্জন বালি জামায়াতে ইসলামীর নেতা প্রয়াত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার সাক্ষী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। অভিযোগের সাক্ষী করা হয়েছে আইনজীবী তানভীর আল আমিন, মনজুর আহমেদ আনসারী, আবু বকর সিদ্দিক, হাসানুল বান্না সোহাগ ও মাসুদ সাঈদীকে।
পরে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের জানান, সুখরঞ্জন বালি চিফ প্রসিকিউটর অফিসে অভিযোগ দাখিল করতে এসেছেন। তার অভিযোগ, তাকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়। এছাড়া গুম-নির্যাতনেরও অভিযোগ করেছেন। ৫ বছর অবৈধভাবে ভারতের কারাগারে তাকে আটক রাখা হয় বলে অভিযোগ এনেছেন।
সুখরঞ্জন বালি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক সদস্য বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক এমপি এ কে এম আউয়াল, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, সাবেক প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সাবেক প্রধান মো. সানাউল হক, তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
এ সময় সুখরঞ্জন বালির আইনজীবী পারভেজ হোসেন বলেন, ?‘২০১২ সালে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা চলছিল। তখন এই সুখরঞ্জন বালিকে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নেয়া হয়েছিল পিরোজপুর থেকে। তাকে সাক্ষী দেয়ার জন্য নানাভাবে চাপ ও লাঞ্ছনা করা হয়েছিল। সুখরঞ্জন বালি বলেছেন, তার ভাইকে যারা মেরেছিল তখন সেখানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন না।’
সুখরঞ্জন বালী তার অভিযোগে বলেন, ‘আমার ভাই বিশাবালীকে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাকে পিরোজপুরের পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলে ডেকে ৭১-এ আমার ভাই বিশাবালীর হত্যাকা-ের বিষয়ে জানতে চান। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। কিন্তু হেলাল উদ্দিন আমাকে ভাইয়ের হত্যাকারী হিসেবে প্রকৃত হত্যাকারীদের নামের সঙ্গে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামও বলতে বলেন এবং তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাকে তখনই জানাই, সাঈদী হুজুর আমার ভাই বিশাবালী হত্যাকা-ের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিন আমাকে জোরপূর্বক রাজি করাতে সেখানেই আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকেন। আমাকে হত্যার হুমকি দেন। আমি তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আত্মগোপনে চলে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে নির্যাতনের অনেক দিন পর সাঈদী হুজুরের ছেলে মাসুদ সাঈদী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আমার ভাই বিশাবালী হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে চান। এরপর ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় আসি এবং মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি পরদিন ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী মিজানুল ইসলামের কাছে নিয়ে যান। এরপর ৫ নভেম্বর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম আমাকে তার গাড়িতে করে ট্রাইব্যুনালের দিকে রওনা দেন।’
সুখরঞ্জনের আইনজীবী বলেন, ‘সে সময় ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে সুখরঞ্জন বালিকে সাদা পোশাকধারী পুলিশের সদস্যরা জোরপূর্বক তুলে একটি প্রাইভেটকারে উঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। তারপর তাকে একটা বদ্ধ রুমে তিন মাস আটকে রাখা হয়। এরপর তাকে সেখান থেকে সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের কাছে সুখরঞ্জন বালিকে হস্তান্তর করা হয়।’ পারভেজ হোসেন আরও বলেন, ‘সুখরঞ্জন বালি জানিয়েছেন, পরে তিনি যে স্থানটি আবিষ্কার করেছিলেন তা হলো ভারতের কলকাতার বশিরহাট। সেখানে তাকে আটক রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর জেল জীবন কাটাতে হয়। পরে তিনি মুক্তি পান।’