alt

news » bangladesh

৮৩ বছর বয়সে ২২ কিমি. পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিলি করে রবীন্দ্র মিত্র

প্রতিনিধি, পটিয়া : শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

চোখে মুখে বয়সের ছাপ, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ আর হাতে ছাতা তবে শরীরে নেই ক্লান্তির ছাপ। নাম রবীন্দ্র লাল মিত্র। জন্ম তার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সমুরা গ্রামে। তার আট বছর বয়সে বাবা নিরঞ্জন লাল মিত্রকে হারান। বাবা না থাকার পরও কোনো রকমে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্য তিনি দ্বিতীয়। বড় ভাই পরিমল লাল মিত্র চট্টগ্রামের কেসিদে রোডে পত্রিকা বিক্রি করতেন। তাকেও কাজে লেগে পড়তে হয় কিশোর বয়সেই। চট্টগ্রামের একটি প্রেসে চাকরি নেন মাত্র পাঁচ টাকা বেতনে। বিয়ে করেন সে সময়ই।

রবীন্দ্র মিত্রর চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়েন পত্রিকা বিলি করতে। হাঁটেন প্রায় ২২ কিলোমিটার, কখনও রোদের মধ্যে, কখনও ঝুঁম বৃষ্টিতে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী (এনআইডি) তার বয়স ৮৩ বছর। তবে বয়স্ক ভাতার বই অনুযায়ী আরও বেশি। তিনি নিজে বলেন, এনআইডির তথ্যে ভুল আছে, তার প্রকৃত বয়স ৯৩ বছর। ৮৩ বছর বয়সি রবীন্দ্র মিত্র দীর্ঘ ছয় দশক ধরে করছেন এই কাজ। ছাপা পত্রিকার গ্রাহক কমায় তার আয়ও কমেছে। মুঠোফোনে মানুষ সংবাদ পেয়ে যাওয়ায় হতাশ তিনি। তার মতে, পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দ থেকে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টার আগেই পটিয়ার গৈড়লার টেকে পৌঁছান রবীন্দ্র মিত্র। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে গৈড়লা হাইস্কুল, ঘোষের হাট, তেকোটা, মুকুটনাইট, ধলঘাট ক্যাম্প, খানমোহনা হয়ে কেলিশহর ভট্টাচার্য হাট, দারোগাহাট পর্যন্ত অন্তত ২২ কিলোমিটার হাঁটেন। এক হাতে থাকে পত্রিকা, আরেক হাতে ছাতা রোদ হোক বা বৃষ্টি। কাঁধে একটি কালো ব্যাগ। পরনে ধূসর হাফ শার্ট ও লুঙ্গি। লম্বা সাদা চুল আর গোঁফ-দাড়ির কারণে মানুষ রবীন্দ্র মিত্রকে সাধু বলে ডাকে।

রবীন্দ্র মিত্র জানান, তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর প্রেসের চাকরিতে কাটানোর পর বাধ্য হয়ে তা ছেড়ে দেন, এ কাজ খুবই কষ্টের ছিল। এরপর পত্রিকার হকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই শুরু হয় গ্রামে গ্রামে হেঁটে পত্রিকা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব। বৃদ্ধ রবীন্দ্র মিত্র এখন থাকেন চট্টগ্রাম শহরে মেয়ের বাসায়। সেখান থেকে বাস ধরে ছুটে যান পটিয়ায়। এরপর শুরু হয় হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি। যেভাবে পত্রিকার সঙ্গে রবীন্দ্র মিত্রর বড় ভাই পরিমল লাল মিত্র চট্টগ্রামের কেসিদে রোডে পত্রিকা বিক্রি করতেন। ভাইয়ের কাছ থেকেই প্রথমে ৩০-৩৫টি পত্রিকা নিয়ে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে তা বেড়ে এক সময় দাঁড়ায় ২৫০টিতে। মাস শেষে তার আয় হতো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। একসময় ভালো আয় হলেও এখন ছাপা পত্রিকার দুর্দিনে রবীন্দ্র মিত্রর আয় কমেছে। এখন তিনি জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি পত্রিকা বিক্রি করেন। কিন্তু মাস শেষে হাতে থাকে মাত্র আট হাজার টাকার মতো।

তিনি বলেন, অনলাইন চালু হওয়ায় এখন অনেকে আর পত্রিকা কেনেন না। কিন্তু গ্রামের মানুষ এখনও খাঁটি খবর ছাপা কাগজেই খোঁজে। তাই চট্টগ্রাম শহর থেকে বাস ধরে পটিয়া গিয়ে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করেন। এটা এখন তার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের পথে পথে হাঁটতে ভালো লাগে তার।

রবীন্দ্র মিত্রর পাঁচ মেয়ে। কোনো ছেলে নেই। স্ত্রী বেলু মিত্র তিন বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মেজ মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। রবীন্দ্র মিত্র থাকেন তৃতীয় মেয়ের বাসায় চট্টগ্রাম শহরে। প্রতিদিন সেখান থেকে উঠে কেসিদে রোড থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে ছুটে যান পটিয়ায়।

রবীন্দ্র মিত্র বলেন, মেয়েরা বাবার খোঁজ রাখে। কিন্তু ওদেরও সংসারে ব্যস্ততা আছে। আমার যত দিন শরীর চলবে, তত দিন পত্রিকা বিক্রি করে নিজের খাবারটুকু নিজেই জোগাড় করব। খবরের কাগড়ের প্রতি একটা আলাদা টান আছে রবীন্দ্র মিত্রর। পত্রিকা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে প্রতিটি সংবাদপত্র তিনি উল্টে দেখেন। কত রকমের খবর সেখানে। মানুষের কাছে সেই খবর পৌঁছে দিতে পেরে ভালো লাগে ভীষণ। তবে মুঠোফোনের কারণে এখন বেশির ভাগ মানুষ পত্রিকা কেনেন না। তিনি বলেন, পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দ এখন আর পায় না মানুষ।

পটিয়ার সাবেক ধলঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ও মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা ছালামত উল্লাহ মল্লর সহায়তায় বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম ওঠে বলে রবীন্দ্র মিত্র জানায়। তিনি ভাতা পাই ৬০০ টাকা। এতে এক সপ্তাহও চলে না। সরকার যদি অন্তত এক হাজার টাকার মতো ভাতা দিত, তবে হয়তো এতা কষ্ট করে পথ হাঁটতে হতো না।

রবীন্দ্র মিত্রর নিজ গ্রামে থাকা ভাঙাচোরা ঘরটি নিয়েও আক্ষেপ করে বলেন, আমি বাড়িতে না থাকায় যে যার মতো করে জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। এখন আর নিজের বলতে তেমন কিছু নেই।

ইউপি সদস্য সাইফুদ্দিন মল্ল ও সমাজসেবক শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, আমরা ৫০ বছর ধরে দেখছি, উনি প্রতিদিন পত্রিকা বিলি করেন। কখনো গাড়িতে দেখিনি। বরাবরই হাঁটেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের কমে না।

পটিয়া হকার্স কল্যাণ সমিতির নেতা মো. সেলিম জানান, এই বয়সেও উনি যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেটা নতুনদের জন্য অনুপ্রেরণা। উনি আমাদের গর্ব। উনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

ছবি

ফটিকছড়িতে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে কিশোর নিহত

ছবি

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও অনুপস্থিত: জামায়াত

ছবি

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া বৃদ্ধি, ক্ষুব্ধ নারায়ণগঞ্জবাসী

ছবি

চকরিয়া থানার হাজতে যুবকের ঝুলন্ত লাশ

ছবি

চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

জাতিসংঘের জুলাই প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণার নির্দেশ হাইকোর্টের

ছবি

রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করুন: তারেক রহমান

ছবি

চান্দিনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মহাসড়ক অবরোধ, উপজেলা ও থানা কমপ্লেক্সে বিক্ষোভ

ছবি

মাদারগঞ্জে গ্রাহকের ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, আল আকাবা সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

হবিগঞ্জে কৃষকের রোপণ করা আমন চারা বিনষ্ট করেছে প্রভাবশালীরা

ছবি

নিকলীতে গাঁজাসহ তিন মাদক কারবারি আটক

ছবি

দোহারে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

অভয়নগরে ভ্যানচালক লিমন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

ছবি

রানীনগরে জমি বিবাদে নারীকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল

ছবি

মাদারগঞ্জে রাস্তায় ভয়াবহ ভাঙন, যান চলাচল বন্ধ

ছবি

আসামি ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতাসহ গ্রেপ্তার ৫

ছবি

ঘোড়াশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যু

ছবি

বরিশালের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের আন্দোলনের সুফল পাচ্ছেন রোগীরা

ছবি

কালীগঞ্জে ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব শিক্ষকের বিচারের দাবিতে এলাকা উত্তাল

ছবি

বেগমগঞ্জে মাছের পোনা অবমুক্ত

ছবি

রাজবাড়ীতে পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী

ছবি

সিলেটের নাগা মরিচ ঝালের জন্য বিশ্বখ্যাত

ছবি

রাজবাড়ীতে তিন হোটেলকে জরিমানা

ছবি

সাগরলতা সৈকতে সৌন্দর্যের সবুজ কার্পেট

ছবি

যুব অধিকার পরিষদের নেতাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা

ছবি

চকরিয়ায় পুলিশের হেফাজতে যুবকের মৃত্যু

ছবি

বোয়ালখালীতে মাদক সেবনে ৩ জনের জেল-জরিমানা

ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে ইয়াবাসহ আটক ৪

ছবি

পুত্রবধূকে ধর্ষণের দায়ে শ্বশুরের জেল

ছবি

মোল্লাহাটে স্ত্রীর আত্মহত্যা

ছবি

স্কুলের অফিস সহকারীর আত্মহত্যা

ছবি

মাদারীপুরে পারিবারিক বিরোধে আহত ৪

ছবি

সরকারি অর্থ আত্মসাতের দায়ে সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

বন্যাকবলিতদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

ছবি

শ্রীমঙ্গল : বাংলাদেশের চা-রাজ্য ও প্রাকৃতিক স্বর্গ

ছবি

অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচি

tab

news » bangladesh

৮৩ বছর বয়সে ২২ কিমি. পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিলি করে রবীন্দ্র মিত্র

প্রতিনিধি, পটিয়া

শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

চোখে মুখে বয়সের ছাপ, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ আর হাতে ছাতা তবে শরীরে নেই ক্লান্তির ছাপ। নাম রবীন্দ্র লাল মিত্র। জন্ম তার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সমুরা গ্রামে। তার আট বছর বয়সে বাবা নিরঞ্জন লাল মিত্রকে হারান। বাবা না থাকার পরও কোনো রকমে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্য তিনি দ্বিতীয়। বড় ভাই পরিমল লাল মিত্র চট্টগ্রামের কেসিদে রোডে পত্রিকা বিক্রি করতেন। তাকেও কাজে লেগে পড়তে হয় কিশোর বয়সেই। চট্টগ্রামের একটি প্রেসে চাকরি নেন মাত্র পাঁচ টাকা বেতনে। বিয়ে করেন সে সময়ই।

রবীন্দ্র মিত্রর চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়েন পত্রিকা বিলি করতে। হাঁটেন প্রায় ২২ কিলোমিটার, কখনও রোদের মধ্যে, কখনও ঝুঁম বৃষ্টিতে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী (এনআইডি) তার বয়স ৮৩ বছর। তবে বয়স্ক ভাতার বই অনুযায়ী আরও বেশি। তিনি নিজে বলেন, এনআইডির তথ্যে ভুল আছে, তার প্রকৃত বয়স ৯৩ বছর। ৮৩ বছর বয়সি রবীন্দ্র মিত্র দীর্ঘ ছয় দশক ধরে করছেন এই কাজ। ছাপা পত্রিকার গ্রাহক কমায় তার আয়ও কমেছে। মুঠোফোনে মানুষ সংবাদ পেয়ে যাওয়ায় হতাশ তিনি। তার মতে, পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দ থেকে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টার আগেই পটিয়ার গৈড়লার টেকে পৌঁছান রবীন্দ্র মিত্র। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে গৈড়লা হাইস্কুল, ঘোষের হাট, তেকোটা, মুকুটনাইট, ধলঘাট ক্যাম্প, খানমোহনা হয়ে কেলিশহর ভট্টাচার্য হাট, দারোগাহাট পর্যন্ত অন্তত ২২ কিলোমিটার হাঁটেন। এক হাতে থাকে পত্রিকা, আরেক হাতে ছাতা রোদ হোক বা বৃষ্টি। কাঁধে একটি কালো ব্যাগ। পরনে ধূসর হাফ শার্ট ও লুঙ্গি। লম্বা সাদা চুল আর গোঁফ-দাড়ির কারণে মানুষ রবীন্দ্র মিত্রকে সাধু বলে ডাকে।

রবীন্দ্র মিত্র জানান, তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর প্রেসের চাকরিতে কাটানোর পর বাধ্য হয়ে তা ছেড়ে দেন, এ কাজ খুবই কষ্টের ছিল। এরপর পত্রিকার হকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই শুরু হয় গ্রামে গ্রামে হেঁটে পত্রিকা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব। বৃদ্ধ রবীন্দ্র মিত্র এখন থাকেন চট্টগ্রাম শহরে মেয়ের বাসায়। সেখান থেকে বাস ধরে ছুটে যান পটিয়ায়। এরপর শুরু হয় হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি। যেভাবে পত্রিকার সঙ্গে রবীন্দ্র মিত্রর বড় ভাই পরিমল লাল মিত্র চট্টগ্রামের কেসিদে রোডে পত্রিকা বিক্রি করতেন। ভাইয়ের কাছ থেকেই প্রথমে ৩০-৩৫টি পত্রিকা নিয়ে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে তা বেড়ে এক সময় দাঁড়ায় ২৫০টিতে। মাস শেষে তার আয় হতো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। একসময় ভালো আয় হলেও এখন ছাপা পত্রিকার দুর্দিনে রবীন্দ্র মিত্রর আয় কমেছে। এখন তিনি জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি পত্রিকা বিক্রি করেন। কিন্তু মাস শেষে হাতে থাকে মাত্র আট হাজার টাকার মতো।

তিনি বলেন, অনলাইন চালু হওয়ায় এখন অনেকে আর পত্রিকা কেনেন না। কিন্তু গ্রামের মানুষ এখনও খাঁটি খবর ছাপা কাগজেই খোঁজে। তাই চট্টগ্রাম শহর থেকে বাস ধরে পটিয়া গিয়ে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করেন। এটা এখন তার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের পথে পথে হাঁটতে ভালো লাগে তার।

রবীন্দ্র মিত্রর পাঁচ মেয়ে। কোনো ছেলে নেই। স্ত্রী বেলু মিত্র তিন বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মেজ মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। রবীন্দ্র মিত্র থাকেন তৃতীয় মেয়ের বাসায় চট্টগ্রাম শহরে। প্রতিদিন সেখান থেকে উঠে কেসিদে রোড থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে ছুটে যান পটিয়ায়।

রবীন্দ্র মিত্র বলেন, মেয়েরা বাবার খোঁজ রাখে। কিন্তু ওদেরও সংসারে ব্যস্ততা আছে। আমার যত দিন শরীর চলবে, তত দিন পত্রিকা বিক্রি করে নিজের খাবারটুকু নিজেই জোগাড় করব। খবরের কাগড়ের প্রতি একটা আলাদা টান আছে রবীন্দ্র মিত্রর। পত্রিকা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে প্রতিটি সংবাদপত্র তিনি উল্টে দেখেন। কত রকমের খবর সেখানে। মানুষের কাছে সেই খবর পৌঁছে দিতে পেরে ভালো লাগে ভীষণ। তবে মুঠোফোনের কারণে এখন বেশির ভাগ মানুষ পত্রিকা কেনেন না। তিনি বলেন, পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দ এখন আর পায় না মানুষ।

পটিয়ার সাবেক ধলঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ও মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা ছালামত উল্লাহ মল্লর সহায়তায় বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম ওঠে বলে রবীন্দ্র মিত্র জানায়। তিনি ভাতা পাই ৬০০ টাকা। এতে এক সপ্তাহও চলে না। সরকার যদি অন্তত এক হাজার টাকার মতো ভাতা দিত, তবে হয়তো এতা কষ্ট করে পথ হাঁটতে হতো না।

রবীন্দ্র মিত্রর নিজ গ্রামে থাকা ভাঙাচোরা ঘরটি নিয়েও আক্ষেপ করে বলেন, আমি বাড়িতে না থাকায় যে যার মতো করে জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। এখন আর নিজের বলতে তেমন কিছু নেই।

ইউপি সদস্য সাইফুদ্দিন মল্ল ও সমাজসেবক শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, আমরা ৫০ বছর ধরে দেখছি, উনি প্রতিদিন পত্রিকা বিলি করেন। কখনো গাড়িতে দেখিনি। বরাবরই হাঁটেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের কমে না।

পটিয়া হকার্স কল্যাণ সমিতির নেতা মো. সেলিম জানান, এই বয়সেও উনি যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেটা নতুনদের জন্য অনুপ্রেরণা। উনি আমাদের গর্ব। উনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

back to top