alt

news » bangladesh

জাতিসংঘের জুলাই প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণার নির্দেশ হাইকোর্টের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

হাইকোর্ট গত বছর জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে নিপীড়ন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলি নিয়ে তৈরি করা জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা দিয়ে গেজেট জারির জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে ।

একটি রিট আবেদনে দেয়া রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের বেঞ্চ শুক্রবার এ রায় দেয়। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

আদালতের নির্দেশের পর সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদনকে ‘জুলাই রেভোলিউশন-২০২৪’ হিসেবে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীতে নির্বাচিত সরকার এসে বিচারের প্রক্রিয়াকে যাতে প্রভাবিত করতে না পারে, সেজন্য এ রিট মামলাটি চলমান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’

তানভীর আহমেদ বলেন, ‘গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দায়ীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন তিনি।

এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ এবং গুরুতর আহতসহ অনেক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিবেদন দেয় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দল।ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মে মাসে একটি সম্পূরক আবেদন করেন রিট আবেদনকারী। ১৪ মে অন্য সম্পূরক আবেদনে জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণার আর্জি জানানো হয়। সে সময় হাইকোর্ট রুল জারি করে। ওই প্রতিবেদনকে কেন ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় সেই রুলে।

ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করেই শুক্রবার রায় দিল হাইকোর্ট বেঞ্চ।

জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধান দল বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী ‘পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে’ বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল, এর মধ্যে এমন ঘটনাও ছিল যেখানে একদম সামনে থেকে গুলি করা হয়েছিল।

‘সংগৃহীত সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং মুক্তভাবে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআরের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে যে সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহিংস উপায়গুলো ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে, শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বলপ্রয়োগ করা হয়। নির্বিচারে আটক, এবং নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের নিগ্রহের ঘটনা ঘটে।

‘অধিকন্তু ওএইচএসিএইচআর যৌক্তিক কারণে মনে করে যে, বিক্ষোভ এবং ভিন্নমত দমনের কৌশল হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অবগতি, সমন্বয় এবং নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে। এসব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগজনক। তাই, কোন মাত্রার মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং নির্যাতন (স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে) ও দেশীয় আইনের অধীন গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।’

বিভিন্ন ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া’ মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে ধারণা দেয়া হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র, সামরিক রাইফেল এবং শটগানের গুলিতে নিহত হন।

হাজার হাজার মানুষ যে সময় গুরুতরভাবে আহত হন। পুলিশ ও র‌্যাবের দেয়া তথ্যানুসারে ১১ হাজার ৭শ’ জনের বেশি মানুষকে তখন গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়।

নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু ছিল জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও শিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। শিশুরা হত্যা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পঙ্গু, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিক পরিস্থিতিতে আটক, নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের বিরূপ আচরণের শিকার।’

জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন বলছে, বিক্ষোভে প্রথম দিকের অগ্রভাগে থাকার কারণে নারী ও মেয়েরাও নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলার শিকার হন। তারা বিশেষভাবে ‘যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার’ শিকার হন। যার মধ্যে রয়েছে শারীরিক সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি। কিছু নথিভুক্ত ঘটনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হাতে যৌন নির্যাতনের তথ্যও এসেছে।

‘সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণ নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করার জন্য ব্যাপকভিত্তিক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করেছিল। এমন নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির কারণে বিরোধীরাও সরকারের প্রতি বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে প্রতিবাদ সহিংসতার দিকে ধাবিত হয়।’

আওয়ামী লীগ সরকার সে সময় বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসন যন্ত্রকে কীভাবে ব্যবহার করেছে, সেই বিবরণও এসেছে প্রতিবেদনে।

‘ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি এবং পুলিশের বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, সিটিটিটিসি প্রতিবাদকারীদের দমনের নামে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তারা গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে নজরদারির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করে এবং জুলাইয়ের শেষের দিকে ব্যাপকহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের পক্ষে প্রচার চালায়।’

‘গোয়েন্দা শাখা বন্দীদের কাছ থেকে তথ্য ও স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নিয়মিত ও নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়। সিটিটিসির সদর দপ্তর বন্দীশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোয়েন্দা পুলিশ এবং ডিজিএফআই যৌথভাবে ছাত্রনেতাদের সেখানে আটকে রেখে আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপ দেয়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিএফআই, এনএসআই ও গোয়েন্দা পুলিশ আহতদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত করে, হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখায়।

ছবি

সংবাদের প্রবীণ সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ মারা গেছেন

ছবি

কুমিল্লায় লরির চাপায় প্রাইভেট কারে একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যু, তিনজন আহত

ছবি

ফটিকছড়িতে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে কিশোর নিহত

ছবি

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও অনুপস্থিত: জামায়াত

ছবি

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া বৃদ্ধি, ক্ষুব্ধ নারায়ণগঞ্জবাসী

ছবি

চকরিয়া থানার হাজতে যুবকের ঝুলন্ত লাশ

ছবি

চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করুন: তারেক রহমান

ছবি

চান্দিনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মহাসড়ক অবরোধ, উপজেলা ও থানা কমপ্লেক্সে বিক্ষোভ

ছবি

মাদারগঞ্জে গ্রাহকের ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, আল আকাবা সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

হবিগঞ্জে কৃষকের রোপণ করা আমন চারা বিনষ্ট করেছে প্রভাবশালীরা

ছবি

নিকলীতে গাঁজাসহ তিন মাদক কারবারি আটক

ছবি

দোহারে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

অভয়নগরে ভ্যানচালক লিমন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

ছবি

রানীনগরে জমি বিবাদে নারীকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল

ছবি

মাদারগঞ্জে রাস্তায় ভয়াবহ ভাঙন, যান চলাচল বন্ধ

ছবি

আসামি ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতাসহ গ্রেপ্তার ৫

ছবি

ঘোড়াশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যু

ছবি

বরিশালের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের আন্দোলনের সুফল পাচ্ছেন রোগীরা

ছবি

কালীগঞ্জে ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব শিক্ষকের বিচারের দাবিতে এলাকা উত্তাল

ছবি

বেগমগঞ্জে মাছের পোনা অবমুক্ত

ছবি

রাজবাড়ীতে পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী

ছবি

সিলেটের নাগা মরিচ ঝালের জন্য বিশ্বখ্যাত

ছবি

রাজবাড়ীতে তিন হোটেলকে জরিমানা

ছবি

সাগরলতা সৈকতে সৌন্দর্যের সবুজ কার্পেট

ছবি

যুব অধিকার পরিষদের নেতাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা

ছবি

চকরিয়ায় পুলিশের হেফাজতে যুবকের মৃত্যু

ছবি

বোয়ালখালীতে মাদক সেবনে ৩ জনের জেল-জরিমানা

ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে ইয়াবাসহ আটক ৪

ছবি

৮৩ বছর বয়সে ২২ কিমি. পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিলি করে রবীন্দ্র মিত্র

ছবি

পুত্রবধূকে ধর্ষণের দায়ে শ্বশুরের জেল

ছবি

মোল্লাহাটে স্ত্রীর আত্মহত্যা

ছবি

স্কুলের অফিস সহকারীর আত্মহত্যা

ছবি

মাদারীপুরে পারিবারিক বিরোধে আহত ৪

ছবি

সরকারি অর্থ আত্মসাতের দায়ে সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

বন্যাকবলিতদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

tab

news » bangladesh

জাতিসংঘের জুলাই প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণার নির্দেশ হাইকোর্টের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

হাইকোর্ট গত বছর জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে নিপীড়ন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলি নিয়ে তৈরি করা জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা দিয়ে গেজেট জারির জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে ।

একটি রিট আবেদনে দেয়া রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের বেঞ্চ শুক্রবার এ রায় দেয়। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

আদালতের নির্দেশের পর সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদনকে ‘জুলাই রেভোলিউশন-২০২৪’ হিসেবে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীতে নির্বাচিত সরকার এসে বিচারের প্রক্রিয়াকে যাতে প্রভাবিত করতে না পারে, সেজন্য এ রিট মামলাটি চলমান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’

তানভীর আহমেদ বলেন, ‘গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দায়ীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন তিনি।

এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ এবং গুরুতর আহতসহ অনেক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিবেদন দেয় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দল।ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মে মাসে একটি সম্পূরক আবেদন করেন রিট আবেদনকারী। ১৪ মে অন্য সম্পূরক আবেদনে জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণার আর্জি জানানো হয়। সে সময় হাইকোর্ট রুল জারি করে। ওই প্রতিবেদনকে কেন ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় সেই রুলে।

ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করেই শুক্রবার রায় দিল হাইকোর্ট বেঞ্চ।

জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধান দল বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী ‘পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে’ বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল, এর মধ্যে এমন ঘটনাও ছিল যেখানে একদম সামনে থেকে গুলি করা হয়েছিল।

‘সংগৃহীত সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং মুক্তভাবে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআরের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে যে সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহিংস উপায়গুলো ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে, শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বলপ্রয়োগ করা হয়। নির্বিচারে আটক, এবং নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের নিগ্রহের ঘটনা ঘটে।

‘অধিকন্তু ওএইচএসিএইচআর যৌক্তিক কারণে মনে করে যে, বিক্ষোভ এবং ভিন্নমত দমনের কৌশল হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অবগতি, সমন্বয় এবং নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে। এসব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগজনক। তাই, কোন মাত্রার মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং নির্যাতন (স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে) ও দেশীয় আইনের অধীন গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।’

বিভিন্ন ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া’ মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে ধারণা দেয়া হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র, সামরিক রাইফেল এবং শটগানের গুলিতে নিহত হন।

হাজার হাজার মানুষ যে সময় গুরুতরভাবে আহত হন। পুলিশ ও র‌্যাবের দেয়া তথ্যানুসারে ১১ হাজার ৭শ’ জনের বেশি মানুষকে তখন গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়।

নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু ছিল জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও শিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। শিশুরা হত্যা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পঙ্গু, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিক পরিস্থিতিতে আটক, নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের বিরূপ আচরণের শিকার।’

জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন বলছে, বিক্ষোভে প্রথম দিকের অগ্রভাগে থাকার কারণে নারী ও মেয়েরাও নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলার শিকার হন। তারা বিশেষভাবে ‘যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার’ শিকার হন। যার মধ্যে রয়েছে শারীরিক সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি। কিছু নথিভুক্ত ঘটনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হাতে যৌন নির্যাতনের তথ্যও এসেছে।

‘সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণ নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করার জন্য ব্যাপকভিত্তিক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করেছিল। এমন নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির কারণে বিরোধীরাও সরকারের প্রতি বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে প্রতিবাদ সহিংসতার দিকে ধাবিত হয়।’

আওয়ামী লীগ সরকার সে সময় বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসন যন্ত্রকে কীভাবে ব্যবহার করেছে, সেই বিবরণও এসেছে প্রতিবেদনে।

‘ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি এবং পুলিশের বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, সিটিটিটিসি প্রতিবাদকারীদের দমনের নামে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তারা গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে নজরদারির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করে এবং জুলাইয়ের শেষের দিকে ব্যাপকহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের পক্ষে প্রচার চালায়।’

‘গোয়েন্দা শাখা বন্দীদের কাছ থেকে তথ্য ও স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নিয়মিত ও নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়। সিটিটিসির সদর দপ্তর বন্দীশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোয়েন্দা পুলিশ এবং ডিজিএফআই যৌথভাবে ছাত্রনেতাদের সেখানে আটকে রেখে আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপ দেয়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিএফআই, এনএসআই ও গোয়েন্দা পুলিশ আহতদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত করে, হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখায়।

back to top