রাস্তা থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকার -সংবাদ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় একটি ইউটার্নে সিমেন্টবোঝাই একটি কাভার্ডভ্যানের চাপায় একই পরিবারের প্রাইভেট কারের ৪ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার আরও ৩ যাত্রী। শুক্রবার,(২২ আগস্ট ২০২৫) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের সন্নিকটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ফলে প্রাইভেটকার ও অটোরিক্সাটি দুমরে মুচড়ে যায়। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তা আবুল হাসেম। এ সময় মহাসড়কের উভয় লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। নিহতরা হলেন- জেলার বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোহাম্মদ ওমর আলী (৮০), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৫), ওমর আলীর দুই ছেলে আবুল হাশেম স্বপন (৫০) ও আবুল কাশেম মামুন (৪৫)। প্রাইভেট কারের চালক ছিলেন ওমর আলীর বড় ছেলে আবুল হাশেম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার চাঁদপুর সড়কে যেতে ইউটার্ন করছিল। এ সময় ঢাকাগামী সিমেন্টবোঝাই কাভার্ডভ্যানটি উল্টোপথে আসা চট্টগ্রামগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে উল্টে যায়। এ সময় কাভার্ডভ্যানের নিচে চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট ও অটোরিকশা। এতে স্থানীয় লোকজন অটোরিকশার ভেতর থেকে আহতদের উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে কাউকে বের করতে পারেনি। মহাসড়কের উত্তর রামপুর এলাকায় ইউটার্নে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টা পথে এসে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই কাভার্ডভ্যান ওই বাসটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পড়ে পেছনে থাকা প্রাইভেটকার ও সিএনজিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের চালকসহ ৪ জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় সিএনজির ৩ যাত্রী গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা জামাল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার এক মিনিটের মধ্যেই আমরা অন্তত শতাধিক লোক অনেক চেষ্টা করেও প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে কাউকে বের করতে পারিনি। কিছু সময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শোনা গিয়ে ছিল। ২টার দিকে
হাইওয়ে পুলিশের রেকার ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে এবং ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত ওমর আলী এবং নুরজাহান বেগম বরুড়ায় নিজ বাড়িতেই বসবাস করতেন। মাস দুয়েক আগে ওমর আলী চিকিৎসার জন্য স্ত্রীসহ ঢাকায় বড় ছেলের বাসায় যান। চিকিৎসা শেষে শুক্রবার, সকালে বাবা ওমর আলী ও নুরজাহান বেগমকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তাদের দুই ছেলে। পথিমধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান সবাই।
শুক্রবার, সন্ধ্যায় ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার সামনে নিহত ওমর আলীর বড় মেয়ের স্বামী দেলোয়ার হোসেন জানান, নিহত ওমর আলীর বড় ছেলে আবুল হাসেম স্বপনের বাসা রাজধানীর কল্যাণপুরে। নিজ ফ্ল্যাটেই থাকতেন স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে। ব্যাংক এশিয়ার মিরপুর রুপনগর ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক ছিলেন তিনি। দুই সন্তানের জনক তিনি। বড় মেয়ে রাজধানীর আজিমপুর ভিকারুন্নেসা স্কুল থেকে এবারে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। একমাত্র ছেলে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে আবুল কাশেম মামুন রাজধানীর মানিকগর এলাকার নিজ ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। তিনি এমএনজি নামক একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। আবুল কাশেম মামুন দুই ছেলের জনক। তার বড় ছেলে শাহির আহমেদ আয়ান ৬ষ্ঠ শ্রেণীতো এবং ছোট ছেলে সাজিল আহমেদ আবরান প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। ওমর আলীর বড় মেয়ে হাসিনা আক্তার যমুনা ব্যাংকের দোলাইখাল শাখায় কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে রোকসানা আক্তার বিথি ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের শ্যামলী ব্রাঞ্চে কর্মরত। এদিকে শুক্রবার, বিকেলে ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানায় নিহতদের স্বজনরা লাশ গ্রহণ করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারীতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এমন মৃত্যু তারা কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছেন না।
ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার এসআই আনিসুর রহমান বলেন, কাভার্ডভ্যানটি সিমেন্টবোঝাই ছিল। হাইওয়ে পুলিশের কম ধারণ ক্ষমতার ক্রেন (রেকার) আছে। কাভার্ডভ্যানটি বেশি ওজনের হওয়ায় উদ্ধার কাজ চালাতে বেশি ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ভাড়া করে আনতে হয়েছে। এতে উদ্ধার কাজ বিলম্ব হয়েছে। তবে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই সবার মৃত্যু হয়।
শুক্রবার, সন্ধ্যায় ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, নিহতরা একই পরিবারের সদস্য। মরদেহগুলো বিকেলে তাদের স্বজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। রেকার দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন সরিয়ে নেয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
রাস্তা থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকার -সংবাদ
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় একটি ইউটার্নে সিমেন্টবোঝাই একটি কাভার্ডভ্যানের চাপায় একই পরিবারের প্রাইভেট কারের ৪ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার আরও ৩ যাত্রী। শুক্রবার,(২২ আগস্ট ২০২৫) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের সন্নিকটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ফলে প্রাইভেটকার ও অটোরিক্সাটি দুমরে মুচড়ে যায়। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তা আবুল হাসেম। এ সময় মহাসড়কের উভয় লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। নিহতরা হলেন- জেলার বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোহাম্মদ ওমর আলী (৮০), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৫), ওমর আলীর দুই ছেলে আবুল হাশেম স্বপন (৫০) ও আবুল কাশেম মামুন (৪৫)। প্রাইভেট কারের চালক ছিলেন ওমর আলীর বড় ছেলে আবুল হাশেম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার চাঁদপুর সড়কে যেতে ইউটার্ন করছিল। এ সময় ঢাকাগামী সিমেন্টবোঝাই কাভার্ডভ্যানটি উল্টোপথে আসা চট্টগ্রামগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে উল্টে যায়। এ সময় কাভার্ডভ্যানের নিচে চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট ও অটোরিকশা। এতে স্থানীয় লোকজন অটোরিকশার ভেতর থেকে আহতদের উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে কাউকে বের করতে পারেনি। মহাসড়কের উত্তর রামপুর এলাকায় ইউটার্নে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টা পথে এসে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই কাভার্ডভ্যান ওই বাসটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পড়ে পেছনে থাকা প্রাইভেটকার ও সিএনজিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের চালকসহ ৪ জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় সিএনজির ৩ যাত্রী গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা জামাল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার এক মিনিটের মধ্যেই আমরা অন্তত শতাধিক লোক অনেক চেষ্টা করেও প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে কাউকে বের করতে পারিনি। কিছু সময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শোনা গিয়ে ছিল। ২টার দিকে
হাইওয়ে পুলিশের রেকার ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে এবং ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত ওমর আলী এবং নুরজাহান বেগম বরুড়ায় নিজ বাড়িতেই বসবাস করতেন। মাস দুয়েক আগে ওমর আলী চিকিৎসার জন্য স্ত্রীসহ ঢাকায় বড় ছেলের বাসায় যান। চিকিৎসা শেষে শুক্রবার, সকালে বাবা ওমর আলী ও নুরজাহান বেগমকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তাদের দুই ছেলে। পথিমধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান সবাই।
শুক্রবার, সন্ধ্যায় ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার সামনে নিহত ওমর আলীর বড় মেয়ের স্বামী দেলোয়ার হোসেন জানান, নিহত ওমর আলীর বড় ছেলে আবুল হাসেম স্বপনের বাসা রাজধানীর কল্যাণপুরে। নিজ ফ্ল্যাটেই থাকতেন স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে। ব্যাংক এশিয়ার মিরপুর রুপনগর ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক ছিলেন তিনি। দুই সন্তানের জনক তিনি। বড় মেয়ে রাজধানীর আজিমপুর ভিকারুন্নেসা স্কুল থেকে এবারে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। একমাত্র ছেলে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে আবুল কাশেম মামুন রাজধানীর মানিকগর এলাকার নিজ ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। তিনি এমএনজি নামক একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। আবুল কাশেম মামুন দুই ছেলের জনক। তার বড় ছেলে শাহির আহমেদ আয়ান ৬ষ্ঠ শ্রেণীতো এবং ছোট ছেলে সাজিল আহমেদ আবরান প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। ওমর আলীর বড় মেয়ে হাসিনা আক্তার যমুনা ব্যাংকের দোলাইখাল শাখায় কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে রোকসানা আক্তার বিথি ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের শ্যামলী ব্রাঞ্চে কর্মরত। এদিকে শুক্রবার, বিকেলে ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানায় নিহতদের স্বজনরা লাশ গ্রহণ করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারীতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এমন মৃত্যু তারা কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছেন না।
ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার এসআই আনিসুর রহমান বলেন, কাভার্ডভ্যানটি সিমেন্টবোঝাই ছিল। হাইওয়ে পুলিশের কম ধারণ ক্ষমতার ক্রেন (রেকার) আছে। কাভার্ডভ্যানটি বেশি ওজনের হওয়ায় উদ্ধার কাজ চালাতে বেশি ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ভাড়া করে আনতে হয়েছে। এতে উদ্ধার কাজ বিলম্ব হয়েছে। তবে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই সবার মৃত্যু হয়।
শুক্রবার, সন্ধ্যায় ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, নিহতরা একই পরিবারের সদস্য। মরদেহগুলো বিকেলে তাদের স্বজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। রেকার দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন সরিয়ে নেয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।