alt

সারাদেশ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ’র কেন্দ্রস্থল দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়া

এক-দেড় মাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১

হাসপাতালের পথে করোনা রোগীর অক্সিজেনসহ আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা অ্যাম্বুলেন্সেই -সংবাদ

করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। গত এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী শনাক্ত হচ্ছে এ অঞ্চলে। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে একযোগে করোনা মহামারীর ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ চলছে। মার্চের প্রথমদিকে এই তিন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে এক-দেড় মাসের মাথায় তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) করোনায় ৯৮ জনের মৃত্যু এবং চার হাজার ১৪ জন ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে অধিকতর সংক্রামক ও প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে করোনা মহামারী। দ্বিতীয় ঢেউয়ে তরুণ ও যুবকদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। দ্রুত মারা যাচ্ছেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি ও অক্সিজেন সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে বিশেষ করে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও রোগী ভর্তির চাপ বাড়ছে। তবে সংক্রমণ মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও টিকা নেয়াকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে করোনা সংক্রমণ বিপর্যয়ে রূপ নেয়ায় তাতে বাংলাদেশে ঝুঁকি রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সব দেশের ভাইরাসই সব দেশের জন্য হুমকি। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। সচেতন না থাকলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এই হুমকি মোকাবিলা করা কঠিন।’

সব দেশেই ভাইরাসের মিউটেট (রূপান্তর) হয় উল্লেখ করে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের ভাইরাসেরও বাংলাদেশে মিউটেট হয়ে থাকতে পারে; আবার বাংলাদেশের ভাইরাসেরও ভারতে মিউটেট হয়ে থাকতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাস, যুক্তরাজ্যের ভাইরাস, ব্রাজিলের ভাইরাসও এখানে মিউটেট করে থাকতে পারে। এখন সব ভাইরাসই একাকার হয়ে গেছে।’

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দেশে করোনা সংক্রমণের ‘তৃতীয় ঢেউয়ের’ শঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বলেছেন, বারবার এমন পরিস্থিতি হলে সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কত চিকিৎসা দেব? কত বেড, কত হাইফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা বাড়াব? কত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করব? হাসপাতাল ও হাসপাতালের বেড রাতারাতি বাড়ানো যায় না। তারপরও আমরা আড়াই হাজার বেড থেকে ৭-৮ হাজার বেডে উন্নীত করেছি। যার ফলে দশগুণ রোগীও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি কিন্তু বারবার এটা সম্ভব হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যানভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’র তথ্যানুযায়ী, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বব্যাপী দৈনিক সাড়ে সাত লাখ থেকে সোয়া আট লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশেই দৈনিক তিন লাখ মানুষের (প্রায় ৪০ শতাংশ) করোনা শনাক্ত হয়ে আসছিল।

২২ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ভারতে একদিনেই রেকর্ড তিন লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়; এটি শুধু ভারতে নয়, এটি বিশ্বের যে কোন দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। ওইদিন দেশটিতে মৃত্যুও হয়েছে দুই হাজার একশ’জনেরও বেশি। ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার উপক্রম।

‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’র তথ্যানুযায়ী, গত ৮ জুন যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ তিন লাখ সাত হাজার ৫৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

পাকিস্তানেও বৃহস্পতিবার প্রায় ছয় হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত এবং ৯৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত সাত লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ১৬ হাজার সাতশ’জন।

ভারতে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’

ভারতের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, দেশটিতে করোনাভাইরাসের ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই এবার ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। দেশটির পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতেও এই ট্রিপল মিউট্যান্টের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তাদের ধারণা, কোভিড-১৯ ভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেন মিলে তৈরি ভাইরাসের এই নয়া ভ্যারিয়েন্টের সংক্রামক ক্ষমতাও প্রায় তিন গুণ।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী, ঠিক সময় লাগাম পরানো না গেলে ‘এবার সংক্রমণ সুনামির আকার ধারণ করতে পারে।’

সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরার উপায় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপাতত এর বিরুদ্ধে একের পর এক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে যাওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। তবে সবার আগে প্রয়োজন এর চরিত্র বিশ্লেষণ। প্রয়োজন নিয়মিত জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের। তবে দেশটিতে যখানে মোট আক্রান্তের মাত্র ১ শতাংশের ওপর এই জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে।

ভারতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক কোটি ৫৯ লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রাণহানি ও শনাক্তের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পরই ভারতের অবস্থান। ভারতে করোনায় এ পর্যন্ত এক লাখ ৮৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটি এখন করোনা মহামারীর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।

২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু ও শনাক্ত

বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৬২ জন ও নারী ৩৬ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ৯২ জন এবং বাসায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশে করোনায় ১০ হাজার ৭৮১ জনের মৃত্যু হলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, গত একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ১৪ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো সাত লাখ ৩৬ হাজার ৭৪ জনে।

গত পহেলা মার্চ দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এরপর গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল দেশে করোনায় ১০১ জন করে ও ১৮ এপ্রিল ১০২ জন মারা যান। গত ১৯ এপ্রিল একদিনে রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর ২১ এপ্রিল দেশে ৯৫ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৩৪৯টি সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে মোট ২৭ হাজার ৪২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ওই ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হিসাবে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের গড় হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ২৬৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট ছয় লাখ ৪২ হাজার ৪৪৯ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। গত একদিনে সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

চার জেলায় সড়কে ঝরল স্কুলছাত্রীসহ ৪ প্রাণ

নবীনগরে মালবাহী নৌকা ডুবে শিশুর মৃত্যু

সিংগাইর থানার ফেইসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য শেয়ার

মোংলা বন্দরে পাকিস্তান থেকে এলো চিটাগুড়

ছবি

হাইটেক পার্কের আওতায় চাকরি হারালেন ২০ যুবক

ঘোড়াঘাটে চেতনানাশক স্প্রে করে বাড়িতে চুরি

ধনবাড়ীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা

বিষ দেয়া বাঁধাকপি খেয়ে ৭ গরুর মৃত্যু

বকেয়া টাকা চাওয়ায় চায়ের দোকানিকে কুপিয়ে জখম

সুন্দরগঞ্জে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার

বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরি করতে গিয়ে মৃত্যু ১

ছবি

বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ, স্থবির নৌবন্দর

নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন

ছবি

মোরেলগঞ্জে অফিস না করেই বেতন তুলছেন পরিবার কল্যাণ সহকারী

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস পালিত

শাহজাদপুরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

সিলেটে জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৬

রায়পুরায় নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ

বাউফলে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০

দশমিনায় গলাকাটা যুবকের পরিচয় শনাক্ত

মান্দায় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ১

ছবি

প্রায় ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে গড়ে উঠবে ৩০৬ শিল্প প্লট

ছবি

মাদারীপুরের ‘ভূঁইয়ার মাঠ’ খাল ময়লার ভাগাড়, পানি চলাচল বন্ধ

ছবি

কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

ছবি

নোয়াখালীতে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

ছবি

১২৩ ফুট উঁচু মুজিব ম্যুরাল ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

ছবি

বগুড়ায় ৩টি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

ছবি

নারায়ণগঞ্জে দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত

রংপুর থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য সনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

সিলেটে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ চারজন আটক

ছবি

জামালপুরে অভিনেত্রী শাওন ও মির্জা আজমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

ছবি

এক্সক্যাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলীর বাড়ি

ছবি

নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর

ছবি

দুর্নীতির সাজা বাড়ানো প্রয়োজন: ঢাকা মহানগর দায়রা জজ

ছবি

গাজীপুরে ঝুট নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মহড়া, ৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নি সংযোগ

tab

সারাদেশ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ’র কেন্দ্রস্থল দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়া

এক-দেড় মাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

হাসপাতালের পথে করোনা রোগীর অক্সিজেনসহ আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা অ্যাম্বুলেন্সেই -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১

করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। গত এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী শনাক্ত হচ্ছে এ অঞ্চলে। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে একযোগে করোনা মহামারীর ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ চলছে। মার্চের প্রথমদিকে এই তিন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে এক-দেড় মাসের মাথায় তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) করোনায় ৯৮ জনের মৃত্যু এবং চার হাজার ১৪ জন ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে অধিকতর সংক্রামক ও প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে করোনা মহামারী। দ্বিতীয় ঢেউয়ে তরুণ ও যুবকদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। দ্রুত মারা যাচ্ছেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি ও অক্সিজেন সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে বিশেষ করে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও রোগী ভর্তির চাপ বাড়ছে। তবে সংক্রমণ মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও টিকা নেয়াকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে করোনা সংক্রমণ বিপর্যয়ে রূপ নেয়ায় তাতে বাংলাদেশে ঝুঁকি রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সব দেশের ভাইরাসই সব দেশের জন্য হুমকি। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। সচেতন না থাকলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এই হুমকি মোকাবিলা করা কঠিন।’

সব দেশেই ভাইরাসের মিউটেট (রূপান্তর) হয় উল্লেখ করে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের ভাইরাসেরও বাংলাদেশে মিউটেট হয়ে থাকতে পারে; আবার বাংলাদেশের ভাইরাসেরও ভারতে মিউটেট হয়ে থাকতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাস, যুক্তরাজ্যের ভাইরাস, ব্রাজিলের ভাইরাসও এখানে মিউটেট করে থাকতে পারে। এখন সব ভাইরাসই একাকার হয়ে গেছে।’

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দেশে করোনা সংক্রমণের ‘তৃতীয় ঢেউয়ের’ শঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বলেছেন, বারবার এমন পরিস্থিতি হলে সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কত চিকিৎসা দেব? কত বেড, কত হাইফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা বাড়াব? কত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করব? হাসপাতাল ও হাসপাতালের বেড রাতারাতি বাড়ানো যায় না। তারপরও আমরা আড়াই হাজার বেড থেকে ৭-৮ হাজার বেডে উন্নীত করেছি। যার ফলে দশগুণ রোগীও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি কিন্তু বারবার এটা সম্ভব হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যানভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’র তথ্যানুযায়ী, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বব্যাপী দৈনিক সাড়ে সাত লাখ থেকে সোয়া আট লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশেই দৈনিক তিন লাখ মানুষের (প্রায় ৪০ শতাংশ) করোনা শনাক্ত হয়ে আসছিল।

২২ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ভারতে একদিনেই রেকর্ড তিন লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়; এটি শুধু ভারতে নয়, এটি বিশ্বের যে কোন দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। ওইদিন দেশটিতে মৃত্যুও হয়েছে দুই হাজার একশ’জনেরও বেশি। ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার উপক্রম।

‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’র তথ্যানুযায়ী, গত ৮ জুন যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ তিন লাখ সাত হাজার ৫৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

পাকিস্তানেও বৃহস্পতিবার প্রায় ছয় হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত এবং ৯৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত সাত লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ১৬ হাজার সাতশ’জন।

ভারতে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’

ভারতের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, দেশটিতে করোনাভাইরাসের ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই এবার ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। দেশটির পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতেও এই ট্রিপল মিউট্যান্টের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তাদের ধারণা, কোভিড-১৯ ভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেন মিলে তৈরি ভাইরাসের এই নয়া ভ্যারিয়েন্টের সংক্রামক ক্ষমতাও প্রায় তিন গুণ।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী, ঠিক সময় লাগাম পরানো না গেলে ‘এবার সংক্রমণ সুনামির আকার ধারণ করতে পারে।’

সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরার উপায় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপাতত এর বিরুদ্ধে একের পর এক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে যাওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। তবে সবার আগে প্রয়োজন এর চরিত্র বিশ্লেষণ। প্রয়োজন নিয়মিত জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের। তবে দেশটিতে যখানে মোট আক্রান্তের মাত্র ১ শতাংশের ওপর এই জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে।

ভারতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক কোটি ৫৯ লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রাণহানি ও শনাক্তের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পরই ভারতের অবস্থান। ভারতে করোনায় এ পর্যন্ত এক লাখ ৮৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটি এখন করোনা মহামারীর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।

২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু ও শনাক্ত

বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৬২ জন ও নারী ৩৬ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ৯২ জন এবং বাসায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশে করোনায় ১০ হাজার ৭৮১ জনের মৃত্যু হলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, গত একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ১৪ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো সাত লাখ ৩৬ হাজার ৭৪ জনে।

গত পহেলা মার্চ দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এরপর গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল দেশে করোনায় ১০১ জন করে ও ১৮ এপ্রিল ১০২ জন মারা যান। গত ১৯ এপ্রিল একদিনে রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর ২১ এপ্রিল দেশে ৯৫ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৩৪৯টি সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে মোট ২৭ হাজার ৪২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ওই ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হিসাবে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের গড় হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ২৬৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট ছয় লাখ ৪২ হাজার ৪৪৯ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। গত একদিনে সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

back to top