পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তার (এসিএফ) বিরুদ্ধে অভয়ারণ্যের গোলপাতা সাবাড় করার সুযোগ দিয়ে লাখ টাকা ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত অভয়ারণ্য শরণখোলা হতে টাকার বিনিময়ে যেসব বাওয়ালী গোলপাতা সংগ্রহ করেছেন তারাই পরবর্তীতে ঘুষ লেনদেনের এমন অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জেলে, মৌয়াল সহ বনের উপর নির্ভরশীল গোষ্ঠীর কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে ঘুষ বানিজ্য চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তার এই অর্থ আদায়ের প্রধান সিপাহসালার হিসেবে বনজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারই আশির্বাদ পুষ্ট বোটম্যান শামীম ও আনিসুর রহমান নামের দুই বনরক্ষী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকার শরণখোলা রেঞ্জে বাওয়ালীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বনের প্রায় নব্বই ভাগ এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা করেন। ফলে চলতি বছরে বাওয়ালীরা চাঁদপাই রেঞ্জে গোলপাতা কাটার পারমিট নেন। কিন্তু চাঁদপাই রেঞ্জে গোলপাতার সংকট ও সাইজে ছোট হওয়ার কারণে বাওয়ালীদের টার্গেট পড়ে শরনখোলা রেঞ্জের অভয়ারণ্যের গোলপাতার দিকে। এসিএফ জয়নাল আবেদীনকে নৌকাপ্রতি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে এই সুযোগ নেয় বাওয়ালীরা। তিনি প্রায় শতাধিক নৌকা হতে সরাসরি এ টাকা গ্রহণ করেন বলে ভুক্তভোগীদের সুত্র জানায়। বাওয়ালীরা বলেন, এত বেশি টাকা দিয়ে গোলপাতা সংগ্রহ করে তাদের পোষায় না বলে গোলঝাড়ের ঠেকাপাতা ও অভয়ারণ্যের জ্বালানী কাটতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
উপজেলার সাউথখালীর এলাকার বাওয়ালী শাহ আলম মোল্লা (৫৫) ও আ. মান্নান হাওলাদার (৬০), খুড়িয়াখালীর রফিক হাওলাদার (৪৫), শরণখোলার নজরুল হাওলাদার (৬০) দাবি করেন, অভয়ারণ্য এলাকাগুলো পরিদর্শণ করলে বন উজাড়ের প্রমাণ মিলবে।
এছাড়া এসিএফ মো. জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে জেলেদের কাছ থেকে গোনে নৌকাপ্রতি পাঁচশত টাকা করে আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। সুন্দরবনের বিশেষ বাহিনী স্মার্ট এর কর্মী বোটম্যান আনিস এই টাকা আদায়ের কাজে নিয়োজিত। শরণখোলা গ্রামের জেলে কামরুল ইসলাম, আ. আব্দুস সালাম, আব্দুল মালেকসহ অনেকে বলেন, স্মার্ট বাহিনীকে গোনে নৌকা প্রতি কমপক্ষে পাঁচশত টাকা দিতে হয় অনুমতি থাকা এলাকায় মাছ ধরতে গেলেও এবং তিন থেকে চার হাজার টাকা দিলে নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ ধরা যায়। শরণখোলা বাজারের ডিপো মালিক মিজান খান ও রিয়াদুল পহলান একই অভিযোগ করেন।
তাছাড়া এবার মৌয়ালদের দুই কেজি করে দিতে হচ্ছে। শরণখোলা এলাকার সোনাতলা গ্রামের মৌয়াল মো. শহীদ হাওলাদার ও ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, অন্যান্য বছর আধা কেজি করে মধু নিলেও কোকিলমনি ক্যাম্প কর্মকর্তা আবুল হোসেন এ বছর এসিএফএর নির্দেশে দুই কেজি করে মধু জোর করে আদায় করে নিয়েছেন। এছাড়া জয়নাল সাহেব বনের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নমুলক প্রকল্প করতে গিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন।
সুন্দরবন সংশ্লিষ্টদের দাবি এসিএফ জয়নাল আবেদীনসহ অন্যরা দীর্ঘদিন একই এলাকায় থাকার কারণে এ ধরনের অনিয়ম হচ্ছে। জানা যায়, এসিএফ জয়নাল আবেদীন শরণখোলা রেঞ্জে দুই বছর, ইঞ্জিনম্যান শামীম দশ বছর, বোর্টম্যান আনিস দশ বছর, বোর্টম্যান তৈয়ব পাটোয়ারী পঁচিশ বছর, বিএম মাহবুব বিশ বছর ধরে শরণখোলা রেঞ্জে চাকরি করায় দুর্নীতির শিকড় বেশ পাকাপুক্ত করে নিয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে (এসিএফ) জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, অভয়ারণ্যে গোলপাতা কাটার সুযোগ নেই। জেলে বা মৌয়ালদের কাছ থেকে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে সে দায়িত্ব আমার না, আমি কোন টাকা নেইনি।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকতা (ডিএফও) মুহম্মদ বেলায়েত হোসেন অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মঈনুদ্দিন খান বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। তারপরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তার (এসিএফ) বিরুদ্ধে অভয়ারণ্যের গোলপাতা সাবাড় করার সুযোগ দিয়ে লাখ টাকা ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত অভয়ারণ্য শরণখোলা হতে টাকার বিনিময়ে যেসব বাওয়ালী গোলপাতা সংগ্রহ করেছেন তারাই পরবর্তীতে ঘুষ লেনদেনের এমন অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জেলে, মৌয়াল সহ বনের উপর নির্ভরশীল গোষ্ঠীর কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে ঘুষ বানিজ্য চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তার এই অর্থ আদায়ের প্রধান সিপাহসালার হিসেবে বনজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারই আশির্বাদ পুষ্ট বোটম্যান শামীম ও আনিসুর রহমান নামের দুই বনরক্ষী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকার শরণখোলা রেঞ্জে বাওয়ালীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বনের প্রায় নব্বই ভাগ এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা করেন। ফলে চলতি বছরে বাওয়ালীরা চাঁদপাই রেঞ্জে গোলপাতা কাটার পারমিট নেন। কিন্তু চাঁদপাই রেঞ্জে গোলপাতার সংকট ও সাইজে ছোট হওয়ার কারণে বাওয়ালীদের টার্গেট পড়ে শরনখোলা রেঞ্জের অভয়ারণ্যের গোলপাতার দিকে। এসিএফ জয়নাল আবেদীনকে নৌকাপ্রতি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে এই সুযোগ নেয় বাওয়ালীরা। তিনি প্রায় শতাধিক নৌকা হতে সরাসরি এ টাকা গ্রহণ করেন বলে ভুক্তভোগীদের সুত্র জানায়। বাওয়ালীরা বলেন, এত বেশি টাকা দিয়ে গোলপাতা সংগ্রহ করে তাদের পোষায় না বলে গোলঝাড়ের ঠেকাপাতা ও অভয়ারণ্যের জ্বালানী কাটতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
উপজেলার সাউথখালীর এলাকার বাওয়ালী শাহ আলম মোল্লা (৫৫) ও আ. মান্নান হাওলাদার (৬০), খুড়িয়াখালীর রফিক হাওলাদার (৪৫), শরণখোলার নজরুল হাওলাদার (৬০) দাবি করেন, অভয়ারণ্য এলাকাগুলো পরিদর্শণ করলে বন উজাড়ের প্রমাণ মিলবে।
এছাড়া এসিএফ মো. জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে জেলেদের কাছ থেকে গোনে নৌকাপ্রতি পাঁচশত টাকা করে আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। সুন্দরবনের বিশেষ বাহিনী স্মার্ট এর কর্মী বোটম্যান আনিস এই টাকা আদায়ের কাজে নিয়োজিত। শরণখোলা গ্রামের জেলে কামরুল ইসলাম, আ. আব্দুস সালাম, আব্দুল মালেকসহ অনেকে বলেন, স্মার্ট বাহিনীকে গোনে নৌকা প্রতি কমপক্ষে পাঁচশত টাকা দিতে হয় অনুমতি থাকা এলাকায় মাছ ধরতে গেলেও এবং তিন থেকে চার হাজার টাকা দিলে নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ ধরা যায়। শরণখোলা বাজারের ডিপো মালিক মিজান খান ও রিয়াদুল পহলান একই অভিযোগ করেন।
তাছাড়া এবার মৌয়ালদের দুই কেজি করে দিতে হচ্ছে। শরণখোলা এলাকার সোনাতলা গ্রামের মৌয়াল মো. শহীদ হাওলাদার ও ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, অন্যান্য বছর আধা কেজি করে মধু নিলেও কোকিলমনি ক্যাম্প কর্মকর্তা আবুল হোসেন এ বছর এসিএফএর নির্দেশে দুই কেজি করে মধু জোর করে আদায় করে নিয়েছেন। এছাড়া জয়নাল সাহেব বনের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নমুলক প্রকল্প করতে গিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন।
সুন্দরবন সংশ্লিষ্টদের দাবি এসিএফ জয়নাল আবেদীনসহ অন্যরা দীর্ঘদিন একই এলাকায় থাকার কারণে এ ধরনের অনিয়ম হচ্ছে। জানা যায়, এসিএফ জয়নাল আবেদীন শরণখোলা রেঞ্জে দুই বছর, ইঞ্জিনম্যান শামীম দশ বছর, বোর্টম্যান আনিস দশ বছর, বোর্টম্যান তৈয়ব পাটোয়ারী পঁচিশ বছর, বিএম মাহবুব বিশ বছর ধরে শরণখোলা রেঞ্জে চাকরি করায় দুর্নীতির শিকড় বেশ পাকাপুক্ত করে নিয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে (এসিএফ) জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, অভয়ারণ্যে গোলপাতা কাটার সুযোগ নেই। জেলে বা মৌয়ালদের কাছ থেকে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে সে দায়িত্ব আমার না, আমি কোন টাকা নেইনি।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকতা (ডিএফও) মুহম্মদ বেলায়েত হোসেন অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মঈনুদ্দিন খান বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। তারপরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।