সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে যখন দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচী চলছিলো, তখন জনগণের টিকা গ্রহণের আগ্রহ বেশি ছিলো। যদিও টিকাদানের ক্ষেত্রে শহরের বস্তি এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলের অংশগ্রহণকারীদের মাঝে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান ছিলো। গত ১৭ জুন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এর গবেষকবৃন্দ “কোভিড ১৯ ভ্যাক্সিনেশনঃ উইলিংনেস অ্যান্ড প্র্যাকটিস ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তাদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন।
জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে করা তিনটি জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি করা হয়। জাতীয় পর্যায়, তরুণ জনগোষ্ঠী ও শহুরে বস্তিবাসীদের মধ্যে করোনা টিকা নেয়ার আগ্রহ কেমন সে বিষয়ে জানতে এ ই-জরীপ পরিচালিত হয়। শহরের বস্তিবাসী এবং গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ভ্যাক্সিনের রেজিস্ট্রেশন করার ধরণ এবং এ সংক্রান্ত আচরণ পর্যালোচনা করাও গবেষণার একটি লক্ষ্য ছিলো। যারা ভ্যাক্সিন নিতে অনাগ্রহী তাদের অধিকাংশই জানিয়েছেন, ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন না। এমন ধারণা শহরের বস্তিবাসীদের মধ্যেই সবচেয়ে প্রকট।
জরিপে অংশ নেয়া শহরের বস্তি ও গ্রামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ করোনা ভ্যাক্সিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। এদের মধ্যে যারা ব্যাপারটি জানতেন, তারা অনেকেই বুঝতে পারেননি ভ্যাক্সিন নেয়ার জন্য তারা উপযুক্ত কি না। তাই তারা রেজিস্ট্রেশন করেননি।
বিআইজিডির রিসার্চ ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (আরপিজি) প্রধান গবেষক মেহনাজ রাব্বানী, গবেষণা সহযোগী অভিন্ন ফারুক এবং ইশমাম আল কুদ্দুস ওয়েবিনারে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর ওয়েবিনারে অংশগ্রহনকারীরা আলোচনায় অংশ নেন। এই ভার্চুয়াল ইভেন্টের উদ্দেশ্য ছিলো টিকাদানের ক্ষেত্রে কোন গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বা টিকার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু এবং এ সম্পর্কিত ব্যাপারে কিভাবে কাজ করা যেতে পারে তা সম্পর্কে নীতিনির্ধারকদের ধারণা দেয়া।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের গ্লোবাল আরবানিজমের প্রফেসর ড. ডায়ানা মিটলিন বলেন, “আমরা জানি যারা সমাজ-কাঠামোর নিচের দিকে থাকেন তারা প্রায়ই অবহেলার সম্মুখীন হন, তারা তাদের প্রয়োজনীয় সেবাটুকুও পান না, ফলে সন্দেহ তৈরি হয়। তাই স্বাস্থ্যসেবাকে ঘিরে বার্তা প্রদান এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরির বেশ ব্যাপক একটি গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এটি ভ্যাক্সিন নিয়ে মানুষের মাঝে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও নেতিবাচক মনোভাব কমাতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, এই জনগোষ্ঠীর সাথে সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নেও এধরণের পদক্ষেপ কাজে লাগে।”
ডঃ শাকিলা সুলতানা, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশান (ইপিআই), স্বাস্থ্যসেবা মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানান, “রেজিস্ট্রেশান সংক্রান্ত যোগাযোগের গতি কমিয়ে আনাটা আমাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে নেয়া একটি সিদ্ধান্ত, যেহেতু আমাদের এখন ভ্যাক্সিন স্বল্পতা রয়েছে। ভ্যাক্সিন সরবরাহে বাধা দূর হওয়া মাত্রই আমরা সুষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন প্রদানের ব্যবস্থা নেবো।“
বিআইজিডি এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, “আমাদের গবেষণায় এটি দেখা গেছে যে শহরের বস্তি অঞ্চল এবং তরুণ জনগোষ্ঠী ভ্যাক্সিন রেজিস্ট্রেশান সংক্রান্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রে “হটস্পট” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আমরা যত সামনে যাবো, গণ-টিকাদান কর্মসূচির ওপরে কার্যকর গবেষণার প্রয়োজন হবে এবং বিআইজিডি সেই গবেষণার অংশ হতে খুবই আগ্রহী।”
রোববার, ২০ জুন ২০২১
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে যখন দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচী চলছিলো, তখন জনগণের টিকা গ্রহণের আগ্রহ বেশি ছিলো। যদিও টিকাদানের ক্ষেত্রে শহরের বস্তি এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলের অংশগ্রহণকারীদের মাঝে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান ছিলো। গত ১৭ জুন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এর গবেষকবৃন্দ “কোভিড ১৯ ভ্যাক্সিনেশনঃ উইলিংনেস অ্যান্ড প্র্যাকটিস ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তাদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন।
জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে করা তিনটি জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি করা হয়। জাতীয় পর্যায়, তরুণ জনগোষ্ঠী ও শহুরে বস্তিবাসীদের মধ্যে করোনা টিকা নেয়ার আগ্রহ কেমন সে বিষয়ে জানতে এ ই-জরীপ পরিচালিত হয়। শহরের বস্তিবাসী এবং গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ভ্যাক্সিনের রেজিস্ট্রেশন করার ধরণ এবং এ সংক্রান্ত আচরণ পর্যালোচনা করাও গবেষণার একটি লক্ষ্য ছিলো। যারা ভ্যাক্সিন নিতে অনাগ্রহী তাদের অধিকাংশই জানিয়েছেন, ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন না। এমন ধারণা শহরের বস্তিবাসীদের মধ্যেই সবচেয়ে প্রকট।
জরিপে অংশ নেয়া শহরের বস্তি ও গ্রামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ করোনা ভ্যাক্সিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। এদের মধ্যে যারা ব্যাপারটি জানতেন, তারা অনেকেই বুঝতে পারেননি ভ্যাক্সিন নেয়ার জন্য তারা উপযুক্ত কি না। তাই তারা রেজিস্ট্রেশন করেননি।
বিআইজিডির রিসার্চ ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (আরপিজি) প্রধান গবেষক মেহনাজ রাব্বানী, গবেষণা সহযোগী অভিন্ন ফারুক এবং ইশমাম আল কুদ্দুস ওয়েবিনারে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর ওয়েবিনারে অংশগ্রহনকারীরা আলোচনায় অংশ নেন। এই ভার্চুয়াল ইভেন্টের উদ্দেশ্য ছিলো টিকাদানের ক্ষেত্রে কোন গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বা টিকার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু এবং এ সম্পর্কিত ব্যাপারে কিভাবে কাজ করা যেতে পারে তা সম্পর্কে নীতিনির্ধারকদের ধারণা দেয়া।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের গ্লোবাল আরবানিজমের প্রফেসর ড. ডায়ানা মিটলিন বলেন, “আমরা জানি যারা সমাজ-কাঠামোর নিচের দিকে থাকেন তারা প্রায়ই অবহেলার সম্মুখীন হন, তারা তাদের প্রয়োজনীয় সেবাটুকুও পান না, ফলে সন্দেহ তৈরি হয়। তাই স্বাস্থ্যসেবাকে ঘিরে বার্তা প্রদান এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরির বেশ ব্যাপক একটি গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এটি ভ্যাক্সিন নিয়ে মানুষের মাঝে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও নেতিবাচক মনোভাব কমাতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, এই জনগোষ্ঠীর সাথে সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নেও এধরণের পদক্ষেপ কাজে লাগে।”
ডঃ শাকিলা সুলতানা, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশান (ইপিআই), স্বাস্থ্যসেবা মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানান, “রেজিস্ট্রেশান সংক্রান্ত যোগাযোগের গতি কমিয়ে আনাটা আমাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে নেয়া একটি সিদ্ধান্ত, যেহেতু আমাদের এখন ভ্যাক্সিন স্বল্পতা রয়েছে। ভ্যাক্সিন সরবরাহে বাধা দূর হওয়া মাত্রই আমরা সুষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন প্রদানের ব্যবস্থা নেবো।“
বিআইজিডি এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, “আমাদের গবেষণায় এটি দেখা গেছে যে শহরের বস্তি অঞ্চল এবং তরুণ জনগোষ্ঠী ভ্যাক্সিন রেজিস্ট্রেশান সংক্রান্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রে “হটস্পট” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আমরা যত সামনে যাবো, গণ-টিকাদান কর্মসূচির ওপরে কার্যকর গবেষণার প্রয়োজন হবে এবং বিআইজিডি সেই গবেষণার অংশ হতে খুবই আগ্রহী।”