গেজেটে নেই মুজিবনগর সরকারের ভাতাভোগীর নাম!
মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন সুলতান। যার পুরো নাম সুলতান উদ্দিন তালুকদার। মুক্তিযুদ্ধে রণাক্ষনের সাথী ছিলেন তিনি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিববাড়ি যুব অভ্যর্থনা ক্যাম্পে তিনি ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবক। সেই মুক্তিযোদ্ধার নাম আজও গেজেটভুক্ত হয়নি।
সুলতানের স্ত্রী আছিয়া সুলতানা বলেন, স্বামী চলে গেছে; আমিও চলে যাবো। অন্তত স্বামীর প্রাপ্য অধিকারটুকু নিয়ে মরতে চাই, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্ত হবে স্বামীর নাম, এটা কারো দয়া বা করুণা নয়, এটা হলো আমার স্বামীর কাজের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি না পেলে পহেলা মার্চ থেকে আমিও আন্দোলনে নামবো। স্বামী সেবা করতো, আমি আমরণ অনশন করবো। ওকে গিয়ে বলতে পারবো, তোমার স্বীকৃতির জন্য আমিও লড়াই করে এসেছি। এ কথাগুলো বলতে গিয়ে বারবার আঁচলে মুখ মুছেন আছিয়া সুলতানা।
যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে সুলতান ছিলেন সর্দাপ্রস্তত। ক্যাম্পে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট পরিচিত এক নাম ছিলো সুলতান। এ ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের জন্য মুজিবনগর সরকারের একজন ভাতা ভোগকারীও ছিলেন। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর ৭৫ টাকা ভাতাও উত্তোলন করেন তিনি। ভাতাভোগীর ১১ জনের মধ্যে তাঁর ক্রমিক নং ৯। এ তালিকার ১০ জনই মুক্তিযোদ্ধা। শুধু গেজেটভুক্ত হয়নি সুলতান উদ্দিন তালুকাদারের নাম!
এছাড়া ৪০ জনের আরো একটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা (অর্ন্তভূক্তি) প্রস্তুত হয়, সেখানে সুলতান উদ্দিন তালুকদারের নাম ১৫ নং ক্রমিকে। এ তালিকার অনেকেই গেজেটভুক্ত হয়েছেন। হয়নি সুলতান উদ্দিন তালুকদারের নাম।
স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য ২০০৬ সালে প্রথম আবেদন করেন আছিয়া সুলতানা। সাক্ষাতকার ও যাছাই বাচাইয়ের আসরে যেতে যেতে তিনিও হাঁপিয়ে উঠেছেন। আছিয়া সুলতানের বয়সও ৭০-এর কোটা ছাড়িয়েছে। শরীরে বাসা বেঁধেছে বার্ধ্যকজনিত নানা রোগ।
স্বামীর নামটি গেজেটভুক্ত করতে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২২ মে অনলাইনে আবেদন করেন আছিয়া সুলতানা। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ জুন যাছাই বাচাই হয়। সেই যাছাই-বাচাই কমিটিতে ছিলেন সাত জন সদস্য। এ কমিটি সাক্ষ্য, মুক্তিযোদ্ধার প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে ৬ জনকে তালিকাভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। এ তালিকার ১নং ক্রমিকে ছিলো সুলতান উদ্দিন তালুকাদারের নাম। অথচ অন্যদের হলেও এবারও বাদ পড়েছেন শুধু তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ বলেন, যে তালিকার ৫ জন হলো সেই তালিকার এক নম্বর ক্রমিকের নাম বাদ পড়ে কিভাবে? মুক্তিযুদ্ধ করার পরেও তালিকায় নাম উঠানোর জন্য আরেকটা যুদ্ধ করতে হবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনকও।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রহিম জানান, যাছাই-বাচাই কমিটি কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে তার স্বীকৃতির জন্য জোর সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি আপিল বিভাগে রয়েছে।
গেজেটে নেই মুজিবনগর সরকারের ভাতাভোগীর নাম!
শুক্রবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন সুলতান। যার পুরো নাম সুলতান উদ্দিন তালুকদার। মুক্তিযুদ্ধে রণাক্ষনের সাথী ছিলেন তিনি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিববাড়ি যুব অভ্যর্থনা ক্যাম্পে তিনি ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবক। সেই মুক্তিযোদ্ধার নাম আজও গেজেটভুক্ত হয়নি।
সুলতানের স্ত্রী আছিয়া সুলতানা বলেন, স্বামী চলে গেছে; আমিও চলে যাবো। অন্তত স্বামীর প্রাপ্য অধিকারটুকু নিয়ে মরতে চাই, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্ত হবে স্বামীর নাম, এটা কারো দয়া বা করুণা নয়, এটা হলো আমার স্বামীর কাজের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি না পেলে পহেলা মার্চ থেকে আমিও আন্দোলনে নামবো। স্বামী সেবা করতো, আমি আমরণ অনশন করবো। ওকে গিয়ে বলতে পারবো, তোমার স্বীকৃতির জন্য আমিও লড়াই করে এসেছি। এ কথাগুলো বলতে গিয়ে বারবার আঁচলে মুখ মুছেন আছিয়া সুলতানা।
যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে সুলতান ছিলেন সর্দাপ্রস্তত। ক্যাম্পে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট পরিচিত এক নাম ছিলো সুলতান। এ ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের জন্য মুজিবনগর সরকারের একজন ভাতা ভোগকারীও ছিলেন। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর ৭৫ টাকা ভাতাও উত্তোলন করেন তিনি। ভাতাভোগীর ১১ জনের মধ্যে তাঁর ক্রমিক নং ৯। এ তালিকার ১০ জনই মুক্তিযোদ্ধা। শুধু গেজেটভুক্ত হয়নি সুলতান উদ্দিন তালুকাদারের নাম!
এছাড়া ৪০ জনের আরো একটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা (অর্ন্তভূক্তি) প্রস্তুত হয়, সেখানে সুলতান উদ্দিন তালুকদারের নাম ১৫ নং ক্রমিকে। এ তালিকার অনেকেই গেজেটভুক্ত হয়েছেন। হয়নি সুলতান উদ্দিন তালুকদারের নাম।
স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য ২০০৬ সালে প্রথম আবেদন করেন আছিয়া সুলতানা। সাক্ষাতকার ও যাছাই বাচাইয়ের আসরে যেতে যেতে তিনিও হাঁপিয়ে উঠেছেন। আছিয়া সুলতানের বয়সও ৭০-এর কোটা ছাড়িয়েছে। শরীরে বাসা বেঁধেছে বার্ধ্যকজনিত নানা রোগ।
স্বামীর নামটি গেজেটভুক্ত করতে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২২ মে অনলাইনে আবেদন করেন আছিয়া সুলতানা। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ জুন যাছাই বাচাই হয়। সেই যাছাই-বাচাই কমিটিতে ছিলেন সাত জন সদস্য। এ কমিটি সাক্ষ্য, মুক্তিযোদ্ধার প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে ৬ জনকে তালিকাভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। এ তালিকার ১নং ক্রমিকে ছিলো সুলতান উদ্দিন তালুকাদারের নাম। অথচ অন্যদের হলেও এবারও বাদ পড়েছেন শুধু তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ বলেন, যে তালিকার ৫ জন হলো সেই তালিকার এক নম্বর ক্রমিকের নাম বাদ পড়ে কিভাবে? মুক্তিযুদ্ধ করার পরেও তালিকায় নাম উঠানোর জন্য আরেকটা যুদ্ধ করতে হবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনকও।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রহিম জানান, যাছাই-বাচাই কমিটি কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে তার স্বীকৃতির জন্য জোর সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি আপিল বিভাগে রয়েছে।