alt

সারাদেশ

যশোর শহরে ড্রেন নির্মাণের ১০০ কোটি টাকা ভেসে গেল

যশোর অফিস : মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

যশোর : মানুষের দুর্ভোগ

প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সোমবারের দিনভর টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকার বেশিরভাগ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে একপ্রকার বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জলাবদ্ধতার শিকার নগবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ এই জলাবদ্ধতার কারণ। বেশির ভাগ ড্রেনের স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। যে কারণে পানি নিষ্কাশন ঠিকমত হচ্ছে না।

দেশবন্ধু সড়কের টিবি ক্লিনিক মোড়ের বাসিন্দা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষার্থী বিদিশা মিত্র বলেন, বাড়ির সামনে দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে অপকল্পিত উন্নয়নের ‘ষোল আনা মিছে’!

যশোর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সাত বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে শহরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। সিআরডিপি (সিটি রিজন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) ও ইউজিপআইআই-৩ (তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ সেক্টর প্রকল্প) প্রকল্পের মাধ্যমে এই ড্রেন নির্মাণ হয়। এতে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাঁচা-পাকা মিলিয়ে শহরে প্রায় ২৪৬ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে।

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌরসভার এসব ড্রেনের বেশির ভাগেরই স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। তাই এগুলো দিয়ে পানি গড়ায় না। ড্রেনের ভেতর পানি স্থির হয়ে জমে থাকে। ফলে বৃষ্টি হলে ড্রেন উপচে পড়ে। বৃষ্টির ও ড্রেনের কাদাপানি একাকার হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে যায়। এ ছাড়া শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্যরে ট্যাংকিগুলো পাইপ দিয়ে ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে যখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তখন ড্রেন থেকে কাদা ও মল মিশ্রিত বর্জ্যে রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়।

যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্যমতে, ড্রেনের স্লাবের কোন সমস্যা নেই নির্মাণের সময়ই ড্রেনের ঢাল শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। যাতে ড্রেনে পানির প্রবাহ ঠিক থাকে।

তিনি বলেন, শহরের একটি অংশের পানি নিষ্কাশন হয় মুক্তেশরী নদী দিয়ে। কিন্তু এটির মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। চার থেকে পাঁচ বছর আগে একটি খাল কেটে এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ক্যানেলটি দিয়ে শহরের পানি মুক্তেশরীতে গিয়ে পড়ত। খালটি কেটে আবার সংস্কার করতে হবে। তাহলে পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান হবে।

শরীফ হাসান মনে করেন, নাগরিক অসচেতনতাও জলাবদ্ধাতার জন্য দায়ী। অনেকে ড্রেনে ময়লা ফেলেন। এ ছাড়া পাইলিংয়ের সময় পাইপ লাইন ড্রেনে যুক্ত করে দেন। বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ডেনে ফেলেন। ফলে ড্রেনের বেড উঁচু হয়ে যায়। এতে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হয়।

সারাদিনের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ১২১ মিলিমিটার। এতে শহরের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সড়ক, টিবি ক্লিনিক, ফুড গোডাউন, পিটিআই রোড, ছোটনের মোড়, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, খড়কির কলাবাগান, জেবিন মোড়, শংকরপুর ইসহাক সড়ক, নলডাঙারোডসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এখানকার রাস্তাগুলোয় গোড়ালি থেকে হাঁটুপানি জমে যায়। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানিও জমে। এখানকার বাসা-বাড়ির ভেতরও পানি ঢুকে যায়। ড্রেনে ফেলা ময়লা ও পয়োবর্জ্য মিশ্রিত পানিতে ভাসছে এসব এলাকা।

যশোর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ড্রেনেজ সমস্যা। খালধার রোডের বড় ড্রেনটি দিয়ে এখানকার পানি নিষ্কাশন হয়। আর সমস্যা এই দুই এলাকার দুটি ড্রেনে। ড্রেন দুটির সংযোগস্থল রবীন্দ্রনাথ সড়কে (আরএন রোড) রানা স্টিল প্লাজার পাশে। এখানটায় বেজপাড়ার ড্রেনটি নিচু। অন্যদিকে খালধার রোডের ড্রেনটি উঁচু। ফলে পানি বের হতে সমস্যা হয়।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার নাথ বাবলু ড্রেনের স্লাবের সমস্যার পাশাপাশি মানুষজনের অসচেতনা দায়ী বলে মনে করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের চারখাম্বা, রেলরোড টিবি ক্লিনিক, ফুড গোডাউন, আনসার ক্যাম্প এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি। এসব এলাকার অনেক বাড়ির ভেতরও জলমগ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, চারখাম্বা ও রেলরোডে আগে যখন ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না তখন কোন পানি জমত না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণের পর এখন দেখছি বৃষ্টি হলেই এই জায়গা যেন হয়ে ওঠে পদ্মা নদী। তিনি মনে করেন, অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণই এই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। ড্রেনগুলোর ঢাল ঠিক না থাকায় পানি গড়াচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার।

শহরের খড়কির কলাবাগান, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, জেবিন মোড়সহ আরও কয়েক জায়গায় জলাবদ্ধতার দৃশ্য চোখে পড়ে। এর মধ্যে কলাবাগান পাড়া, খড়কি জেবিন মোড় ও এমএম কলেজ দক্ষিণ গেটের আশপাশে জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। গোড়ালি থেকে হাঁটুঅবধি পানি জমেছে। বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে।

জলাবদ্ধতা নিয়ে যশোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল আলমও স্বীকার করেছেন, তার এলাকারও অনেক ড্রেনের স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। যার কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে ড্রেনের ভেতর বাসাবাড়ির ময়লা ফেলেন। যার কারণে পানি বের হতে সমস্যা হওয়ায় জলাবদ্ধতা হয়েছে।

রাজিবুল আলম আরও জানান, জিলা স্কুলের সামনে থেকে সিভিল কোর্ট মোড় পর্যন্ত ড্রেন পরিষ্কার করাতে গিয়ে দেখেন ভেতরে পরিষ্কার পানি। ড্রেনের মধ্যে ময়লাও তেমন ছিল না। তার ভাষ্যমতে, ড্রেনটি দিয়ে প্রকৃত অর্থে কোন পানিই নিষ্কাশন হয় না। ‘ওয়াটার লেভেল’ (পানির স্তর) ঠিক না থাকায় এমনটি হয়েছে। এর সমাধানে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অবহিত করেছেন।

যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেন, বিরতীহীন প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের কারণে শহরে প্রচুর পরিমাণ পানি জমেছে। ড্রেনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পানির কারণে নিষ্কাশন হতে সময় একটু বেশি লাগছে। বৃষ্টি কমে আসলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পানি বের হয়ে যাবে।

ছবি

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সুনামগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে দুই বাংলাদেশি নিহত

ছবি

আশুলিয়ায় সেপটিক ট্যাংক থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি ‘হত্যা’

ছবি

ফেনীতে বন্যার পর রান্নাঘরে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

ছবি

ফেনীতে বন্যা: ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৪ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরছেন

শ্রীনগরে ধর্ষণ মামলায় ইউপি সদস্য স্বপন মেম্বার গ্রেফতার হওয়ায় এলাকাবাসীর স্বস্তি! মিষ্টি বিতরণ

এবার ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি বিএনপির

ছবি

ছিনতাইয়ের ফোন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও প্রতিবেশী দেশে পাচার, চট্টগ্রামে অভিযান

ছবি

সন্ধান মেলেনি সাগরে নিখোঁজ চবি শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের

ছবি

তিস্তা-যমুনা চরের দারিদ্র্যতার ঝুঁকিতে ১৫ লাখ মানুষ

ছবি

বোয়ালখালীতে নিষিদ্ধ গাছের চারা ধ্বংস

নবাবগঞ্জে বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু

চট্টগ্রামে স্ত্রীকে খুন করে পালিয়ে গেল স্বামী

নিজ ঘরে স্টিলের বাক্সে গৃহবধূর মরদেহ, স্বামী পুলিশ হেফাজতে

যাত্রাবাড়ীতে কয়েল জ্বালানোর সময় বিস্ফোরণ, মারা গেলেন ইতি আক্তার

বোরকা পরে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে পোশাকশ্রমিক নিহত

ছবি

মোহনগঞ্জ সাধারণ পাঠাগার আলো ছড়ানোর ৩৭ বছর

হত্যার হুমকি দিয়ে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

কুষ্টিয়ায় অটোচালককে হত্যার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়ক অবরোধ

লালমাইয়ে চার মাদকসেবী দণ্ডিত

ছবি

যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে ভাঙন দিশাহারা নদীপাড়ের মানুষ

ছবি

চকরিয়ায় সওজের জমি থেকে অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ অভিযান

স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা পরিষ্কার করলো যুবসমাজ

বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ নিধনের অভিযোগ

ছবি

৪০ টাকার কাঁচা মরিচ এক সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁয় ২৪০ টাকা

শ্রীমঙ্গলে অবৈধ ভারতীয় চা পাতা উদ্ধার, জরিমানা

নিখোঁজ তানজিদের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

অবশেষে কাশিমপুর ক্রসবাঁধ অপসারিত

জীবন্ত গাছের নীরব কান্না পেরেক ঢুকিয়ে ফেস্টুন টাঙিয়ে প্রচার-প্রচারণা

৯ মাস পর লিবিয়া থেকে ফিরলেন সাগর, মানবপাচারের ফাঁদ থেকে মুক্ত

সুন্দরবনে ৩টি ট্রলারসহ ২৭ জেলে আটক

১১ বছর পরে ফরিদপুরে রাজন হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাচ্ছে মধুপুর শালবন

শেরপুরে নবম শ্রেণীর ছাত্রকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল

দৌলতপুরের সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

ছবি

দশমিনার সবুজবাগে সরকারি খালটি মৃতপ্রায় জলাবদ্ধ শত শত পরিবার

tab

সারাদেশ

যশোর শহরে ড্রেন নির্মাণের ১০০ কোটি টাকা ভেসে গেল

যশোর অফিস

যশোর : মানুষের দুর্ভোগ

মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সোমবারের দিনভর টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকার বেশিরভাগ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে একপ্রকার বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জলাবদ্ধতার শিকার নগবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ এই জলাবদ্ধতার কারণ। বেশির ভাগ ড্রেনের স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। যে কারণে পানি নিষ্কাশন ঠিকমত হচ্ছে না।

দেশবন্ধু সড়কের টিবি ক্লিনিক মোড়ের বাসিন্দা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষার্থী বিদিশা মিত্র বলেন, বাড়ির সামনে দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে অপকল্পিত উন্নয়নের ‘ষোল আনা মিছে’!

যশোর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সাত বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে শহরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। সিআরডিপি (সিটি রিজন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) ও ইউজিপআইআই-৩ (তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ সেক্টর প্রকল্প) প্রকল্পের মাধ্যমে এই ড্রেন নির্মাণ হয়। এতে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাঁচা-পাকা মিলিয়ে শহরে প্রায় ২৪৬ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে।

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌরসভার এসব ড্রেনের বেশির ভাগেরই স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। তাই এগুলো দিয়ে পানি গড়ায় না। ড্রেনের ভেতর পানি স্থির হয়ে জমে থাকে। ফলে বৃষ্টি হলে ড্রেন উপচে পড়ে। বৃষ্টির ও ড্রেনের কাদাপানি একাকার হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে যায়। এ ছাড়া শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্যরে ট্যাংকিগুলো পাইপ দিয়ে ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে যখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তখন ড্রেন থেকে কাদা ও মল মিশ্রিত বর্জ্যে রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়।

যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্যমতে, ড্রেনের স্লাবের কোন সমস্যা নেই নির্মাণের সময়ই ড্রেনের ঢাল শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। যাতে ড্রেনে পানির প্রবাহ ঠিক থাকে।

তিনি বলেন, শহরের একটি অংশের পানি নিষ্কাশন হয় মুক্তেশরী নদী দিয়ে। কিন্তু এটির মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। চার থেকে পাঁচ বছর আগে একটি খাল কেটে এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ক্যানেলটি দিয়ে শহরের পানি মুক্তেশরীতে গিয়ে পড়ত। খালটি কেটে আবার সংস্কার করতে হবে। তাহলে পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান হবে।

শরীফ হাসান মনে করেন, নাগরিক অসচেতনতাও জলাবদ্ধাতার জন্য দায়ী। অনেকে ড্রেনে ময়লা ফেলেন। এ ছাড়া পাইলিংয়ের সময় পাইপ লাইন ড্রেনে যুক্ত করে দেন। বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ডেনে ফেলেন। ফলে ড্রেনের বেড উঁচু হয়ে যায়। এতে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হয়।

সারাদিনের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ১২১ মিলিমিটার। এতে শহরের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সড়ক, টিবি ক্লিনিক, ফুড গোডাউন, পিটিআই রোড, ছোটনের মোড়, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, খড়কির কলাবাগান, জেবিন মোড়, শংকরপুর ইসহাক সড়ক, নলডাঙারোডসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এখানকার রাস্তাগুলোয় গোড়ালি থেকে হাঁটুপানি জমে যায়। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানিও জমে। এখানকার বাসা-বাড়ির ভেতরও পানি ঢুকে যায়। ড্রেনে ফেলা ময়লা ও পয়োবর্জ্য মিশ্রিত পানিতে ভাসছে এসব এলাকা।

যশোর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ড্রেনেজ সমস্যা। খালধার রোডের বড় ড্রেনটি দিয়ে এখানকার পানি নিষ্কাশন হয়। আর সমস্যা এই দুই এলাকার দুটি ড্রেনে। ড্রেন দুটির সংযোগস্থল রবীন্দ্রনাথ সড়কে (আরএন রোড) রানা স্টিল প্লাজার পাশে। এখানটায় বেজপাড়ার ড্রেনটি নিচু। অন্যদিকে খালধার রোডের ড্রেনটি উঁচু। ফলে পানি বের হতে সমস্যা হয়।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার নাথ বাবলু ড্রেনের স্লাবের সমস্যার পাশাপাশি মানুষজনের অসচেতনা দায়ী বলে মনে করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের চারখাম্বা, রেলরোড টিবি ক্লিনিক, ফুড গোডাউন, আনসার ক্যাম্প এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি। এসব এলাকার অনেক বাড়ির ভেতরও জলমগ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, চারখাম্বা ও রেলরোডে আগে যখন ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না তখন কোন পানি জমত না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণের পর এখন দেখছি বৃষ্টি হলেই এই জায়গা যেন হয়ে ওঠে পদ্মা নদী। তিনি মনে করেন, অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণই এই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। ড্রেনগুলোর ঢাল ঠিক না থাকায় পানি গড়াচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার।

শহরের খড়কির কলাবাগান, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, জেবিন মোড়সহ আরও কয়েক জায়গায় জলাবদ্ধতার দৃশ্য চোখে পড়ে। এর মধ্যে কলাবাগান পাড়া, খড়কি জেবিন মোড় ও এমএম কলেজ দক্ষিণ গেটের আশপাশে জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। গোড়ালি থেকে হাঁটুঅবধি পানি জমেছে। বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে।

জলাবদ্ধতা নিয়ে যশোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল আলমও স্বীকার করেছেন, তার এলাকারও অনেক ড্রেনের স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। যার কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে ড্রেনের ভেতর বাসাবাড়ির ময়লা ফেলেন। যার কারণে পানি বের হতে সমস্যা হওয়ায় জলাবদ্ধতা হয়েছে।

রাজিবুল আলম আরও জানান, জিলা স্কুলের সামনে থেকে সিভিল কোর্ট মোড় পর্যন্ত ড্রেন পরিষ্কার করাতে গিয়ে দেখেন ভেতরে পরিষ্কার পানি। ড্রেনের মধ্যে ময়লাও তেমন ছিল না। তার ভাষ্যমতে, ড্রেনটি দিয়ে প্রকৃত অর্থে কোন পানিই নিষ্কাশন হয় না। ‘ওয়াটার লেভেল’ (পানির স্তর) ঠিক না থাকায় এমনটি হয়েছে। এর সমাধানে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অবহিত করেছেন।

যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেন, বিরতীহীন প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের কারণে শহরে প্রচুর পরিমাণ পানি জমেছে। ড্রেনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পানির কারণে নিষ্কাশন হতে সময় একটু বেশি লাগছে। বৃষ্টি কমে আসলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পানি বের হয়ে যাবে।

back to top