ময়মনসিংহে ‘অপারেশন নবদিগন্ত’
রাত থেকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নে উদ্ভেগ। এ ইউনিয়নের দানাকুড়া গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। শক্রদেশের সেনাদের সমরাস্ত্র আক্রমণ। ভুখন্ড রক্ষায় রাতভর প্রস্তুতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। রাতের আধার কেটে ভোরের আলো ফুটতেই সেই প্রস্তুতি যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক, এপিসিসহ সাজোয়া যানগুলো। আকাশে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার মহড়া। প্রতিপক্ষ শত্রু দেশের সেনা দলকে পরাস্ত করে রক্ষা করতে হবে ভুখন্ড।
সকাল ১০ টায় আক্রমন শুরু হয়। সেনাবাহিনীর যোদ্ধারা প্রথমে পুতে রাখা মাইনগুলো বিস্ফোরণ ঘটান। এরপর আসতে থাকে ট্যাঙ্ক ও এপিসিসহ সাজোয়া যানের বহর। ট্যাঙ্কে করে টার্গেট পয়েন্টে আসেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এরপরই আক্রমন শুরু করে চুড়ান্ত আক্রমন শুরু করে সেনাবাহিনী। কামানের গোলা, ট্যাঙ্ক থেকে শক্র দলকে লক্ষ করে গুলি চালিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এভাবে চূড়ান্ত আক্রমণে বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার দানাকুড়া গ্রামে প্রকৃত যুদ্ধের আদলেই আয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন প্রশিক্ষণ ‘এক্সারসাইজ নব দিগন্ত’ শেষ হয়েছে।
সেনাবাহিনীর এ যুদ্ধ মহড়ায় বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দিনটি অন্যরকম ছিলো স্থানীয় গ্রামবাসির কাছে। স্বাধীনতার পর (৫০ বছরে) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এমন যুদ্ধাবস্থায় দেখেনি গ্রামবাসি। শীতকালীণ প্রশিক্ষন মহড়া এক্সারসাই নব দিগন্তের সুবাধে সেনাবাহিনীর সক্ষমতাও দারুনভাবে উপভোগ করেছে গ্রামবাসী। বললেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে কঠোর প্রশিক্ষন দেখলাম তাতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে তারা খুবই পরিশ্রমী এবং দেশরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর কাল্পনিক এ যুদ্ধে যুক্ত হয়েছে প্যারা কমান্ডো বাহিনীসহ শক্তিশালী বিভিন্ন বাহিনী। চুড়ান্ত আক্রমনের শুরুতে বিমান থেকে প্যারাসুটে জ্যাম্প করে ভুমিতে নামের প্যারাকমান্ডো বাহিনী। পৌনে ১২ টার দিকে সাজোয়া যানের বহর নিয়ে এগিয়ে যান সেনা প্রধান এস এম শফিউল হক। যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেণ সেনাপ্রধা নিজেই। যুদ্ধে সেনাপ্রধানকে সরাসরি নেতৃত্ব দিতে দেখে মনোবল বেড়ে যায় সেনাবাহিনীর যুদ্ধাদেরও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অনুশীলনে সাঁজোয়া বহর, এপিসি, দুরপাল্লার এমএলআরএস এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ছত্রীসেনা এবং বিমান বাহিনীর মিগ-২৯ জঙ্গী বিমানও অংশগ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর কাসা ২৯৫এ বিমান থেকে নেমে আসে প্যারাট্রূপাররা। সেনাবাহিনীর প্যারাট্রূপাররা বিমান থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়েন যুদ্ধের ময়দানে। শুরু হয় তুমুল লড়াই। এক পর্যায়ে সেনাপ্রধানসহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্মকর্তারা চলে আসেন ময়দানে। সেনা প্রধানের নির্দেশে চৌকস সেনাদের কৌশলে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয় শত্রুপক্ষ।
এক মাসব্যাপী এ এই শীতকালীন অনুশীলন চলে এবারে ঢাকার সাভারসহ সারাদেশে। সেনাবাহিনীর লজিস্টিকস এর উপরে ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ (এফটিএক্স) এবারই প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশনা মোতাবেক এবার সারাদেশেই সেনাবাহিনীর সকল স্তরের সদস্য অংশ নেয়। এমনকি সেনাসদরে বহিরাঙ্গন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল।
গতকাল সকালে মুক্তাগাছায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত অনুশীলন পর্বে অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশন। এর আগে সেনা সদরের আর্মি কমান্ড পোস্ট ও সাপোর্ট সেন্টার পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান এবং ডিফেন্স জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিজাব) সদস্যরা।
গত ৯ জানুয়ারি সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জলসিঁড়ি আবাসন এলাকায় প্রকৃত যুদ্ধ পরিস্থিতি আদলেই তৈরি করা হয় সাপোর্ট সেন্টার। সেখানে মাটির নিচে বাঙ্কার কক্ষ স্থাপন। মাটির নিচে বিশাল এলাকাজুড়ে যুদ্ধবন্দিদের রাখার জায়গা। এমনকি সেখানে বন্দিদের জন্য জেনেভা কনভেনশন অনুসারে নেওয়া হয় সার্বিক উদ্যোগ। সেখানে সেনাসদর দফতরের প্রতিটি উইংয়ের ফিল্ড কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছিল।
সাভারে মিলিটারী ফার্মে মাটির নিচে বিশেষ প্রযুক্তিতে সামরিক কায়দায় বিশাল আয়তনে স্থাপন করা হয় সেনা সদর। সেনা সদরে যেসব কর্মকান্ড পরিচালিত হয় তার একটি বহিরাঙ্গন চিত্র দেখা যায় সেখানে।
গতকাল শীতকালীন অনুশীলনের সমাপনীতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতিহাসে প্রথমবারের মত লজিস্টিকস উপরে ‘এফটিএক্স’ পরিচালনা করল। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে এটা সেনাবাহিনীর জন্য একটি মাইলফলক। আমরা সক্ষমতার একটা ধাপে আাগালাম। ভবিষ্যতে এটাকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবো।
সেনাপ্রধান বলেন, আমরা ওই মন্ত্রে গভীরভাবে বিশ্বাস করি, ‘কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ’। আমরা বর্তমানে প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও প্রশিক্ষণের উপরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা পেয়েছি। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে শান্তিরক্ষা মিশনের কর্মকান্ড গুলির সবারই জানা। সেই সমস্ত জায়গায়, বিশেষ করে চ্যালেঞ্জিং জায়গাগুলোর দায়িত্ব পালন করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নাই।
এক প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উড়োজাহাজ কিন্তু এই আবহাওয়ার মধ্যেই ৩৬ সেনাসদস্য এখানে এসেছে ও অবতরণ করলো। এই আবহাওয়ায় অনেক সময় অনেক ফ্লাইট চলাচল করে না। বাংলাদেশের এভিযয়েশন কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে গেছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাইবার ‘ক্যাপাবিলিটি’ বাড়ানোর ব্যাপারে ফোর্সেস গোল ২০৩০ এ আমাদের পরিকল্পনায় আছে। সেই অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আপনারা মনে রাখবেন একটা প্রশিক্ষণেই সমস্ত কিছু ধারণ করা যায় না। এবারের প্রশিক্ষণ আমাদের লজিস্টিকসের উপর। অর্থাৎ আমাদের লজিস্টিকসের সক্ষমতাটা কেমন। সে দিক থেকে আমি অত্যন্ত খুশি, অনেক ভালো হয়েছে। এই লজিস্টিকের এফটিএক্সের সঙ্গে কিন্তু ‘অটোমেটিক্যালি’ অপারেশন পরিকল্পনাও চলে আসে।
সেনাবাহিনী সদর দফতরের সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন-উর-রশিদ বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ শীতকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সেনাসদর ও সেনাবাহিনীর সকল ফরমেশন পূর্ণাঙ্গরূপে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫০ বছর পূর্তিতে এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রথমবারের মত লজিস্টিকস্ ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ পরিচালনা করে। সাম্প্রতিককালে নতুন সংযোজিত অস্ত্র ও সরঞ্জাম এবারের অনুশীলনে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর লজিস্টিকসের স্থাপনাসমূহ প্রথমবারের মত বহিরঙ্গনে মোতায়েন হয়। সব মিলিয়ে সেনাবাহিনীর এবারের শীতকালীন প্রশিক্ষণ ছিল অনেক অভিনব ও বাস্তবধর্মী। সেনাবাহিনীর সকল সদস্য ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে এই শীতকালীন অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে।
এদিকে ‘অনুশীলন নব দিগন্ত’ শেষ হলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মুক্তাগাছার চেচুয়া বাজারের পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার অধীনস্থ হরিণা কান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন । এরপর সেখানে সেনাবাহিনী কর্তৃক স্থানীয়দের মাঝে চিকিৎসা সেবা প্রদানের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।
সেনাবাহিনীর প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা মানুষদের পাশে আছি। গরীবদের মাঝে কম্বল বিতরণ করছি। চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করছি। চিকিৎসা সহায়তা করছি। গবাদিপশুরও চিকিৎসা করছি। তাদের জন্য চিকিৎসাসামগ্রী দিচ্ছি। আমরা যখন মাঠে এসেছি তখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এবারে এখন পর্যন্ত আমরা এক লাখের বেশি কম্বল বিতরণ করেছি। ইনশাআল্লাহ এটা আমরা আরো করবো।
সমাপনী এই আয়োজনে সেনাসদস্যদের পাশে থেকে এই অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন সেনাসদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারবৃন্দ, জিওসি আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি সাভারে সেনাসদর ফিল্ড কমান্ড পোষ্টে চলমান অভিযানের অগ্রগতির উপর সেনা প্রধানকে বিস্তারিত ব্রিফ করেন সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেঃ জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান এবং লজিষ্টিকস কর্মকান্ডের উপর ব্রিফ করেন কোয়াার্টার মাষ্টার জেনারেল লেঃ জেনারেল মোঃ সাইফুল আলম। এসময় ডিফেন্স জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাংবাদিকবৃন্দ এবং অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে আর্মি ফিল্ড হেডকোয়ার্টার মিডিয়া সেলে’ শীতকালীন প্রশিক্ষণের উপর প্রেস ব্রিফিং শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সেনা প্রধান।
ময়মনসিংহে ‘অপারেশন নবদিগন্ত’
শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২
রাত থেকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নে উদ্ভেগ। এ ইউনিয়নের দানাকুড়া গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। শক্রদেশের সেনাদের সমরাস্ত্র আক্রমণ। ভুখন্ড রক্ষায় রাতভর প্রস্তুতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। রাতের আধার কেটে ভোরের আলো ফুটতেই সেই প্রস্তুতি যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক, এপিসিসহ সাজোয়া যানগুলো। আকাশে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার মহড়া। প্রতিপক্ষ শত্রু দেশের সেনা দলকে পরাস্ত করে রক্ষা করতে হবে ভুখন্ড।
সকাল ১০ টায় আক্রমন শুরু হয়। সেনাবাহিনীর যোদ্ধারা প্রথমে পুতে রাখা মাইনগুলো বিস্ফোরণ ঘটান। এরপর আসতে থাকে ট্যাঙ্ক ও এপিসিসহ সাজোয়া যানের বহর। ট্যাঙ্কে করে টার্গেট পয়েন্টে আসেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এরপরই আক্রমন শুরু করে চুড়ান্ত আক্রমন শুরু করে সেনাবাহিনী। কামানের গোলা, ট্যাঙ্ক থেকে শক্র দলকে লক্ষ করে গুলি চালিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এভাবে চূড়ান্ত আক্রমণে বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার দানাকুড়া গ্রামে প্রকৃত যুদ্ধের আদলেই আয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন প্রশিক্ষণ ‘এক্সারসাইজ নব দিগন্ত’ শেষ হয়েছে।
সেনাবাহিনীর এ যুদ্ধ মহড়ায় বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দিনটি অন্যরকম ছিলো স্থানীয় গ্রামবাসির কাছে। স্বাধীনতার পর (৫০ বছরে) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এমন যুদ্ধাবস্থায় দেখেনি গ্রামবাসি। শীতকালীণ প্রশিক্ষন মহড়া এক্সারসাই নব দিগন্তের সুবাধে সেনাবাহিনীর সক্ষমতাও দারুনভাবে উপভোগ করেছে গ্রামবাসী। বললেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে কঠোর প্রশিক্ষন দেখলাম তাতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে তারা খুবই পরিশ্রমী এবং দেশরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর কাল্পনিক এ যুদ্ধে যুক্ত হয়েছে প্যারা কমান্ডো বাহিনীসহ শক্তিশালী বিভিন্ন বাহিনী। চুড়ান্ত আক্রমনের শুরুতে বিমান থেকে প্যারাসুটে জ্যাম্প করে ভুমিতে নামের প্যারাকমান্ডো বাহিনী। পৌনে ১২ টার দিকে সাজোয়া যানের বহর নিয়ে এগিয়ে যান সেনা প্রধান এস এম শফিউল হক। যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেণ সেনাপ্রধা নিজেই। যুদ্ধে সেনাপ্রধানকে সরাসরি নেতৃত্ব দিতে দেখে মনোবল বেড়ে যায় সেনাবাহিনীর যুদ্ধাদেরও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অনুশীলনে সাঁজোয়া বহর, এপিসি, দুরপাল্লার এমএলআরএস এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ছত্রীসেনা এবং বিমান বাহিনীর মিগ-২৯ জঙ্গী বিমানও অংশগ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর কাসা ২৯৫এ বিমান থেকে নেমে আসে প্যারাট্রূপাররা। সেনাবাহিনীর প্যারাট্রূপাররা বিমান থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়েন যুদ্ধের ময়দানে। শুরু হয় তুমুল লড়াই। এক পর্যায়ে সেনাপ্রধানসহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্মকর্তারা চলে আসেন ময়দানে। সেনা প্রধানের নির্দেশে চৌকস সেনাদের কৌশলে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয় শত্রুপক্ষ।
এক মাসব্যাপী এ এই শীতকালীন অনুশীলন চলে এবারে ঢাকার সাভারসহ সারাদেশে। সেনাবাহিনীর লজিস্টিকস এর উপরে ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ (এফটিএক্স) এবারই প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশনা মোতাবেক এবার সারাদেশেই সেনাবাহিনীর সকল স্তরের সদস্য অংশ নেয়। এমনকি সেনাসদরে বহিরাঙ্গন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল।
গতকাল সকালে মুক্তাগাছায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত অনুশীলন পর্বে অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশন। এর আগে সেনা সদরের আর্মি কমান্ড পোস্ট ও সাপোর্ট সেন্টার পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান এবং ডিফেন্স জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিজাব) সদস্যরা।
গত ৯ জানুয়ারি সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জলসিঁড়ি আবাসন এলাকায় প্রকৃত যুদ্ধ পরিস্থিতি আদলেই তৈরি করা হয় সাপোর্ট সেন্টার। সেখানে মাটির নিচে বাঙ্কার কক্ষ স্থাপন। মাটির নিচে বিশাল এলাকাজুড়ে যুদ্ধবন্দিদের রাখার জায়গা। এমনকি সেখানে বন্দিদের জন্য জেনেভা কনভেনশন অনুসারে নেওয়া হয় সার্বিক উদ্যোগ। সেখানে সেনাসদর দফতরের প্রতিটি উইংয়ের ফিল্ড কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছিল।
সাভারে মিলিটারী ফার্মে মাটির নিচে বিশেষ প্রযুক্তিতে সামরিক কায়দায় বিশাল আয়তনে স্থাপন করা হয় সেনা সদর। সেনা সদরে যেসব কর্মকান্ড পরিচালিত হয় তার একটি বহিরাঙ্গন চিত্র দেখা যায় সেখানে।
গতকাল শীতকালীন অনুশীলনের সমাপনীতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতিহাসে প্রথমবারের মত লজিস্টিকস উপরে ‘এফটিএক্স’ পরিচালনা করল। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে এটা সেনাবাহিনীর জন্য একটি মাইলফলক। আমরা সক্ষমতার একটা ধাপে আাগালাম। ভবিষ্যতে এটাকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবো।
সেনাপ্রধান বলেন, আমরা ওই মন্ত্রে গভীরভাবে বিশ্বাস করি, ‘কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ’। আমরা বর্তমানে প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও প্রশিক্ষণের উপরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা পেয়েছি। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে শান্তিরক্ষা মিশনের কর্মকান্ড গুলির সবারই জানা। সেই সমস্ত জায়গায়, বিশেষ করে চ্যালেঞ্জিং জায়গাগুলোর দায়িত্ব পালন করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নাই।
এক প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উড়োজাহাজ কিন্তু এই আবহাওয়ার মধ্যেই ৩৬ সেনাসদস্য এখানে এসেছে ও অবতরণ করলো। এই আবহাওয়ায় অনেক সময় অনেক ফ্লাইট চলাচল করে না। বাংলাদেশের এভিযয়েশন কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে গেছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাইবার ‘ক্যাপাবিলিটি’ বাড়ানোর ব্যাপারে ফোর্সেস গোল ২০৩০ এ আমাদের পরিকল্পনায় আছে। সেই অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আপনারা মনে রাখবেন একটা প্রশিক্ষণেই সমস্ত কিছু ধারণ করা যায় না। এবারের প্রশিক্ষণ আমাদের লজিস্টিকসের উপর। অর্থাৎ আমাদের লজিস্টিকসের সক্ষমতাটা কেমন। সে দিক থেকে আমি অত্যন্ত খুশি, অনেক ভালো হয়েছে। এই লজিস্টিকের এফটিএক্সের সঙ্গে কিন্তু ‘অটোমেটিক্যালি’ অপারেশন পরিকল্পনাও চলে আসে।
সেনাবাহিনী সদর দফতরের সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন-উর-রশিদ বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ শীতকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সেনাসদর ও সেনাবাহিনীর সকল ফরমেশন পূর্ণাঙ্গরূপে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫০ বছর পূর্তিতে এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রথমবারের মত লজিস্টিকস্ ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ পরিচালনা করে। সাম্প্রতিককালে নতুন সংযোজিত অস্ত্র ও সরঞ্জাম এবারের অনুশীলনে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর লজিস্টিকসের স্থাপনাসমূহ প্রথমবারের মত বহিরঙ্গনে মোতায়েন হয়। সব মিলিয়ে সেনাবাহিনীর এবারের শীতকালীন প্রশিক্ষণ ছিল অনেক অভিনব ও বাস্তবধর্মী। সেনাবাহিনীর সকল সদস্য ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে এই শীতকালীন অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে।
এদিকে ‘অনুশীলন নব দিগন্ত’ শেষ হলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মুক্তাগাছার চেচুয়া বাজারের পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার অধীনস্থ হরিণা কান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন । এরপর সেখানে সেনাবাহিনী কর্তৃক স্থানীয়দের মাঝে চিকিৎসা সেবা প্রদানের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।
সেনাবাহিনীর প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা মানুষদের পাশে আছি। গরীবদের মাঝে কম্বল বিতরণ করছি। চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করছি। চিকিৎসা সহায়তা করছি। গবাদিপশুরও চিকিৎসা করছি। তাদের জন্য চিকিৎসাসামগ্রী দিচ্ছি। আমরা যখন মাঠে এসেছি তখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এবারে এখন পর্যন্ত আমরা এক লাখের বেশি কম্বল বিতরণ করেছি। ইনশাআল্লাহ এটা আমরা আরো করবো।
সমাপনী এই আয়োজনে সেনাসদস্যদের পাশে থেকে এই অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন সেনাসদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারবৃন্দ, জিওসি আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি সাভারে সেনাসদর ফিল্ড কমান্ড পোষ্টে চলমান অভিযানের অগ্রগতির উপর সেনা প্রধানকে বিস্তারিত ব্রিফ করেন সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেঃ জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান এবং লজিষ্টিকস কর্মকান্ডের উপর ব্রিফ করেন কোয়াার্টার মাষ্টার জেনারেল লেঃ জেনারেল মোঃ সাইফুল আলম। এসময় ডিফেন্স জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাংবাদিকবৃন্দ এবং অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে আর্মি ফিল্ড হেডকোয়ার্টার মিডিয়া সেলে’ শীতকালীন প্রশিক্ষণের উপর প্রেস ব্রিফিং শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সেনা প্রধান।