কাড়াকাড়ি অবস্থা হয়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ঘেচুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে। একশ গজের মধ্যে পাশাপাশি অবস্থিত এই দুই স্কুলের শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সময় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয় টানা হেঁচড়া। প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে শিক্ষার্থীদের পরিবার ও বিদ্যালয় স্থানান্তর করায় এখন দুটি স্কুল পাশাপাশি অবস্থান করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত ব্রহ্মপুত্র নদের দেড়শ গজ পূর্বে ঘেচুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত স্কুলটিতে কোন খেলার মাঠ নেই। মাত্র ২২ শতক জমির ওপর স্কুলটির অবস্থান। মাঠটাই ব্যক্তি মালিকানায়। ফলে সেখানে চাষ করা হয়েছে বেগুন। শিক্ষার্থীদের শরীর ঘোরানোর কোন জায়গা নেই। এই স্কুলের একশ গজ পশ্চিম-উত্তর কোনে অবস্থিত নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাস্তার দু’পাড়ে অবস্থিত স্কুল দুটির আশেপাশে মাত্রা ১১টি পরিবারের অবস্থান। ঘেচুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রাস্তা সংলগ্ন উঁচু জায়গায় অবস্থিত। অপরদিকে নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি খোলা ধান ক্ষেতের মাঝে অবস্থিত।
মাত্র ১৬ শতক জায়গা নিয়ে নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। শুরু থেকেই এই স্কুলটি মেইনল্যান্ডেই ছিল। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। নদী ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলটিও পর্যায়ক্রমে পশ্চিম দিকে সড়ে আসে। স্কুলটি ভোট সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে নদী ভাঙনের পর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নীচু ধানখেতে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয়।
দুপুর দেড়টায় সময় গিয়ে দুটো স্কুল বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে কতজন শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করে তা সরেজমিন দেখা সম্ভব হয়নি। তবে স্কুল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয়া কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তাদের মধ্যে পার্শ্ববর্তী অনন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং ওই এলাকার ফজলুল হকের ছেলে আসাদুজ্জামান ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে জিম খাতুন এবং এতিমখানা মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী নুর ইসলামের পুত্র সাদেকুল ইসলাম জানান, দুই স্কুল মিলিয়ে ১২০-১৩০ জন শিক্ষার্থী আছে। এরমধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা ৫০ থেকে ৮০ জন। এখন ক্লাস কম থাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এগারোটার দিকে শিক্ষকরা এসে আবার দুপুর ১২টা থেকে ১টার দিকে চলে যান।
নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম জানান, হাতিয়া গ্রাম, নয়াদাড়া পাড়া ও কামাতটারী পাড়ার একাংশ নিয়ে হাতিয়া বকসী মৌজা আমার ক্যাচমেন্ট এরিয়া। স্কুলটি ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। আমি ১৯৯৩ সালে যোগদান করার পর ২০০৭ সাল এবং ২০২০ সালে দু’বার স্কুলটি নদী ভাঙনের শিকার হয়। গত ১০ বছরে হাতিয়া বকসী মৌজার ৩ গ্রামের ৬ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনে স্থানান্তরিত হয়ে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে হাতিয়া ভবেশ ও বাঁধের সেøøাপে আশ্রয় নিয়েছে। এখন কিছুটা শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। ৩ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।
অপরদিকে ঘেচুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, আমাদের স্কুলটি দশ কিলোমিটার পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ঘেচুডাঙ্গা চরে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত ৮ বার নদী ভাঙনের শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ভাঙনের পর আমরা চর থেকে মেইনল্যান্ডে স্কুলভবন শিফট করি। আমাদের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নদী ভাঙনে বিলিন হওয়ায় বর্তমানে কামারটারী গ্রামের অর্ধেক অংশ এবং পাশর্^বর্তী চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াবশ গ্রাম থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়ে প্রায় ১৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সমাপনী পরীক্ষায় ১৮ জন অংশগ্রহণ করেছিল। পাশাপাশি স্কুল হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল আলম জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় এ রকম সমস্যা মাঝে মধ্যেই হয়ে থাকে। অনেক সময় জায়গা সঙ্কুলান ও স্থানীয়দের চাপে বিদ্যালয় সঠিক জায়গায় স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না। যার ফলে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২
কাড়াকাড়ি অবস্থা হয়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ঘেচুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে। একশ গজের মধ্যে পাশাপাশি অবস্থিত এই দুই স্কুলের শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সময় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয় টানা হেঁচড়া। প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে শিক্ষার্থীদের পরিবার ও বিদ্যালয় স্থানান্তর করায় এখন দুটি স্কুল পাশাপাশি অবস্থান করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত ব্রহ্মপুত্র নদের দেড়শ গজ পূর্বে ঘেচুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত স্কুলটিতে কোন খেলার মাঠ নেই। মাত্র ২২ শতক জমির ওপর স্কুলটির অবস্থান। মাঠটাই ব্যক্তি মালিকানায়। ফলে সেখানে চাষ করা হয়েছে বেগুন। শিক্ষার্থীদের শরীর ঘোরানোর কোন জায়গা নেই। এই স্কুলের একশ গজ পশ্চিম-উত্তর কোনে অবস্থিত নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাস্তার দু’পাড়ে অবস্থিত স্কুল দুটির আশেপাশে মাত্রা ১১টি পরিবারের অবস্থান। ঘেচুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রাস্তা সংলগ্ন উঁচু জায়গায় অবস্থিত। অপরদিকে নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি খোলা ধান ক্ষেতের মাঝে অবস্থিত।
মাত্র ১৬ শতক জায়গা নিয়ে নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। শুরু থেকেই এই স্কুলটি মেইনল্যান্ডেই ছিল। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। নদী ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলটিও পর্যায়ক্রমে পশ্চিম দিকে সড়ে আসে। স্কুলটি ভোট সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে নদী ভাঙনের পর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নীচু ধানখেতে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয়।
দুপুর দেড়টায় সময় গিয়ে দুটো স্কুল বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে কতজন শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করে তা সরেজমিন দেখা সম্ভব হয়নি। তবে স্কুল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয়া কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তাদের মধ্যে পার্শ্ববর্তী অনন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং ওই এলাকার ফজলুল হকের ছেলে আসাদুজ্জামান ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে জিম খাতুন এবং এতিমখানা মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী নুর ইসলামের পুত্র সাদেকুল ইসলাম জানান, দুই স্কুল মিলিয়ে ১২০-১৩০ জন শিক্ষার্থী আছে। এরমধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা ৫০ থেকে ৮০ জন। এখন ক্লাস কম থাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এগারোটার দিকে শিক্ষকরা এসে আবার দুপুর ১২টা থেকে ১টার দিকে চলে যান।
নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম জানান, হাতিয়া গ্রাম, নয়াদাড়া পাড়া ও কামাতটারী পাড়ার একাংশ নিয়ে হাতিয়া বকসী মৌজা আমার ক্যাচমেন্ট এরিয়া। স্কুলটি ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। আমি ১৯৯৩ সালে যোগদান করার পর ২০০৭ সাল এবং ২০২০ সালে দু’বার স্কুলটি নদী ভাঙনের শিকার হয়। গত ১০ বছরে হাতিয়া বকসী মৌজার ৩ গ্রামের ৬ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনে স্থানান্তরিত হয়ে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে হাতিয়া ভবেশ ও বাঁধের সেøøাপে আশ্রয় নিয়েছে। এখন কিছুটা শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। ৩ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।
অপরদিকে ঘেচুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, আমাদের স্কুলটি দশ কিলোমিটার পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ঘেচুডাঙ্গা চরে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত ৮ বার নদী ভাঙনের শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ভাঙনের পর আমরা চর থেকে মেইনল্যান্ডে স্কুলভবন শিফট করি। আমাদের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নদী ভাঙনে বিলিন হওয়ায় বর্তমানে কামারটারী গ্রামের অর্ধেক অংশ এবং পাশর্^বর্তী চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াবশ গ্রাম থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়ে প্রায় ১৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সমাপনী পরীক্ষায় ১৮ জন অংশগ্রহণ করেছিল। পাশাপাশি স্কুল হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল আলম জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় এ রকম সমস্যা মাঝে মধ্যেই হয়ে থাকে। অনেক সময় জায়গা সঙ্কুলান ও স্থানীয়দের চাপে বিদ্যালয় সঠিক জায়গায় স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না। যার ফলে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।