টিকা নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ভিড়, সংক্রমণ ঝুঁকির আশঙ্কা অভিভাবকদের মাঝে, তাই টিকাদান কেন্দ্র বাড়ানোর দাবি। লালবাগ সরকারি প্রাথমিক স্কুল কেন্দ্রের দৃশ্য -সংবাদ
একদিনে ৬৪ জেলাই করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি জেলায় কোভিড শনাক্ত হয়েছে দুই অঙ্কের নিচে। বাকি জেলাগুলোতে শনাক্তের সংখ্যা দুই অঙ্কের বেশি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে রোগী বৃদ্ধির পাশাপাশি পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড শনাক্তের হারও বেড়েছে। তবে মৃত্যু কমেছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় দেশে ১০ হাজার ৮৮৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিয়মিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। মোট শনাক্ত রোগীর মধ্যে মারা যাওয়া এবং সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা বাদ দিলে সারা দেশে এখন ‘অ্যাক্টিভ কেস’ বা চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৭০ হাজার ১৫৭ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার ৮৫০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুই হাজারের বেশি রোগী। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের মোট ১৩ হাজার ৪৯৮টি সাধারণ শয্যার মধ্যে বৃহস্পতিবার খালি ছিল ১১ হাজার ৬৪১টি। এ হিসাবে রোগী ভর্তি ছিল এক হাজার ৮৫৭ জন।
আর সারা দেশের মোট এক হাজার ২৩৭টি ‘আইসিইউ’ শয্যার মধ্যে খালি ছিল এক হাজার ১২টি। এ হিসাবে আইসিইউতে ছিল ২২৫ জন। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের দু’জন সিভিল সার্জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, কোভিড দ্রুত ছড়াচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। কেউই ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। হাসপাতালেও রোগীর ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। এখন কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
বেশি রোগী ঢাকা ও চট্টগ্রামে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীসহ ঢাকা জেলায় সাত হাজার ৮৪৩ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ঢাকায় ছয় হাজার ৯৫২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এ হিসাবে ঢাকায় একদিনে ৮৯১ জন রোগী বেড়েছে। একদিনে ঢাকায় ২৬ হাজার ৩১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় সাত হাজার ৩৭৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ০৪ শতাংশ। আগের দিন ঢাকায় শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
চট্টগ্রাম জেলায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত কমেছে। একদিনে বন্দরনগরীতে ৯৩০ জনের দেহে কোভিড শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন চট্টগ্রামে ৯৮৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল, ওইদিন নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধের মধ্যে বিয়ে-শাদিসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান এখন বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়গুলো ডিসিদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।’ এছাড়া কোয়ারেন্টিন বিষয়ে ডিসিদের বলা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোয়ারেন্টিন অনেক সময় স্ম্যাক (ঢিলেঢালা) হয়। কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন অনেক সময় ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যান এবং সংক্রমিত করে, এ বিষয়গুলো বলেছি আপনারা নজরদারিতে রাখবেন, যাতে কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো হয়। পাশাপাশি আমরা বলেছি, ল্যান্ডপোর্ট, সিপোর্ট, এয়ারপোর্টেও স্ক্রিনিং চলছে। সেগুলো যাতে ঠিকমতো দেখেন ও যাতে সেখানে ফাঁকি না দেয়া হয়।’
শনাক্তের হারে শীর্ষে বগুড়া
ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া একদিনে আরও ছয় জেলায় কোভিড শনাক্ত তিন অঙ্গে পৌঁছেছে। জেলাগুলো হলো গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, রাজশাহী, বগুড়া ও সিলেট। কোভিড শনাক্তের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হারে শীর্ষে রয়েছে বগুড়া। এই জেলায় একদিনে ৩১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে বগুড়ায় শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। রাজশাহীতে একদিনে ৩৯২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৫৬ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। এই হিসাবে শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
গাজীপুরে ২৪ ঘণ্টায় ৩৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২৯ জনের দেহে সংক্রমণ পেয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরীক্ষা অনুপাতে গাজীপুরে রোগী শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
নমুনা পরীক্ষা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও সিলেটে শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৭৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৭ জনের কোভিড পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। কক্সবাজারে ২৪ ঘণ্টায় ৯৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ১৪১ জনের দেহে জীবাণু পাওয়া গেছে। পরীক্ষা অনুপাতে কক্সবাজারে রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। সিলেট জেলায় একদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ৫৮৫ জনের। এর বিপরীতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২৯ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় সিলেটে কোভিড শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
পাঁচ মাস পর শনাক্ত ছাড়ালো ১০ হাজারের ঘর
পাঁচ মাস পর দেশে দৈনিক কোভিড শনাক্তের সংখ্যা আবার ১০ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেল। এই সময়ে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হারও বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪১ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৮৮৮ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আর এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ সাত হাজার ৫৮১টি। আর করোনায় একদিনে মারা গেছেন চারজন। একদিনে এর চেয়ে বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত বছরের ১০ অগাস্ট, ওইদিন ১১ হাজার ১৬৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল।
আগের দিন সারা দেশে ৯ হাজার ৫০০ জন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ হিসাবে একদিনে রোগী বেড়েছে এক হাজার ৩৮৮ জন, বা ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
একদিনে শনাক্ত হওয়া ১০ হাজার ৮৮৮ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জনে। আর একদিনে মৃত্যু হওয়া চারজনকে নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ২৮ হাজার ১৮০ জনের মৃত্যু হলো।
শনাক্ত রোগীর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জনে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর মোট শনাক্ত রোগী অনুপাতে মৃত্যু হার এক দশমিক ৭০ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক ০৫ শতাংশ।
একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে একজন পুরুষ এবং তিন জন নারী ছিলেন। এর মধ্যে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী একজন এবং আরেকজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগরী, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চারজনই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
টিকা নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ভিড়, সংক্রমণ ঝুঁকির আশঙ্কা অভিভাবকদের মাঝে, তাই টিকাদান কেন্দ্র বাড়ানোর দাবি। লালবাগ সরকারি প্রাথমিক স্কুল কেন্দ্রের দৃশ্য -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২২
একদিনে ৬৪ জেলাই করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি জেলায় কোভিড শনাক্ত হয়েছে দুই অঙ্কের নিচে। বাকি জেলাগুলোতে শনাক্তের সংখ্যা দুই অঙ্কের বেশি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে রোগী বৃদ্ধির পাশাপাশি পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড শনাক্তের হারও বেড়েছে। তবে মৃত্যু কমেছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় দেশে ১০ হাজার ৮৮৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিয়মিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। মোট শনাক্ত রোগীর মধ্যে মারা যাওয়া এবং সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা বাদ দিলে সারা দেশে এখন ‘অ্যাক্টিভ কেস’ বা চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৭০ হাজার ১৫৭ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার ৮৫০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুই হাজারের বেশি রোগী। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের মোট ১৩ হাজার ৪৯৮টি সাধারণ শয্যার মধ্যে বৃহস্পতিবার খালি ছিল ১১ হাজার ৬৪১টি। এ হিসাবে রোগী ভর্তি ছিল এক হাজার ৮৫৭ জন।
আর সারা দেশের মোট এক হাজার ২৩৭টি ‘আইসিইউ’ শয্যার মধ্যে খালি ছিল এক হাজার ১২টি। এ হিসাবে আইসিইউতে ছিল ২২৫ জন। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের দু’জন সিভিল সার্জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, কোভিড দ্রুত ছড়াচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। কেউই ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। হাসপাতালেও রোগীর ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। এখন কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
বেশি রোগী ঢাকা ও চট্টগ্রামে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীসহ ঢাকা জেলায় সাত হাজার ৮৪৩ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ঢাকায় ছয় হাজার ৯৫২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এ হিসাবে ঢাকায় একদিনে ৮৯১ জন রোগী বেড়েছে। একদিনে ঢাকায় ২৬ হাজার ৩১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় সাত হাজার ৩৭৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ০৪ শতাংশ। আগের দিন ঢাকায় শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
চট্টগ্রাম জেলায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত কমেছে। একদিনে বন্দরনগরীতে ৯৩০ জনের দেহে কোভিড শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন চট্টগ্রামে ৯৮৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল, ওইদিন নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধের মধ্যে বিয়ে-শাদিসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান এখন বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়গুলো ডিসিদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।’ এছাড়া কোয়ারেন্টিন বিষয়ে ডিসিদের বলা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোয়ারেন্টিন অনেক সময় স্ম্যাক (ঢিলেঢালা) হয়। কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন অনেক সময় ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যান এবং সংক্রমিত করে, এ বিষয়গুলো বলেছি আপনারা নজরদারিতে রাখবেন, যাতে কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো হয়। পাশাপাশি আমরা বলেছি, ল্যান্ডপোর্ট, সিপোর্ট, এয়ারপোর্টেও স্ক্রিনিং চলছে। সেগুলো যাতে ঠিকমতো দেখেন ও যাতে সেখানে ফাঁকি না দেয়া হয়।’
শনাক্তের হারে শীর্ষে বগুড়া
ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া একদিনে আরও ছয় জেলায় কোভিড শনাক্ত তিন অঙ্গে পৌঁছেছে। জেলাগুলো হলো গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, রাজশাহী, বগুড়া ও সিলেট। কোভিড শনাক্তের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হারে শীর্ষে রয়েছে বগুড়া। এই জেলায় একদিনে ৩১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে বগুড়ায় শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। রাজশাহীতে একদিনে ৩৯২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৫৬ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। এই হিসাবে শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
গাজীপুরে ২৪ ঘণ্টায় ৩৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২৯ জনের দেহে সংক্রমণ পেয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরীক্ষা অনুপাতে গাজীপুরে রোগী শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
নমুনা পরীক্ষা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও সিলেটে শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৭৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৭ জনের কোভিড পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। কক্সবাজারে ২৪ ঘণ্টায় ৯৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ১৪১ জনের দেহে জীবাণু পাওয়া গেছে। পরীক্ষা অনুপাতে কক্সবাজারে রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। সিলেট জেলায় একদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ৫৮৫ জনের। এর বিপরীতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২৯ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় সিলেটে কোভিড শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
পাঁচ মাস পর শনাক্ত ছাড়ালো ১০ হাজারের ঘর
পাঁচ মাস পর দেশে দৈনিক কোভিড শনাক্তের সংখ্যা আবার ১০ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেল। এই সময়ে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হারও বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪১ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৮৮৮ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আর এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ সাত হাজার ৫৮১টি। আর করোনায় একদিনে মারা গেছেন চারজন। একদিনে এর চেয়ে বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত বছরের ১০ অগাস্ট, ওইদিন ১১ হাজার ১৬৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল।
আগের দিন সারা দেশে ৯ হাজার ৫০০ জন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ হিসাবে একদিনে রোগী বেড়েছে এক হাজার ৩৮৮ জন, বা ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
একদিনে শনাক্ত হওয়া ১০ হাজার ৮৮৮ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জনে। আর একদিনে মৃত্যু হওয়া চারজনকে নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ২৮ হাজার ১৮০ জনের মৃত্যু হলো।
শনাক্ত রোগীর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জনে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর মোট শনাক্ত রোগী অনুপাতে মৃত্যু হার এক দশমিক ৭০ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক ০৫ শতাংশ।
একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে একজন পুরুষ এবং তিন জন নারী ছিলেন। এর মধ্যে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী একজন এবং আরেকজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগরী, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চারজনই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।