বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে চলছে গ্যাস সংযোগের রমরমা বাণিজ্য। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একশ্রেণীর রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধি অবৈধভাবে পাইপলাইন সংযোগের মাধ্যমে ‘ওপেন সিক্রেট’ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট তিতাস গ্যাস বিতরণ সংস্থার একশ্রেণীর কর্মকর্তা। প্রায় ১০ বছর ধরে এই অবৈধ গ্যাস বাণিজ্যের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। মূল্যবান গ্যাস অনুৎপাদন খাতে ব্যবহারে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের জ্বালানি নিরাপত্তা। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। অন্যদিকে এই অবৈধ বাণিজ্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গড়ে উঠছে তাদের বহুতল অট্টালিকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে এলপিজিকে গ্রাহকের কাছে প্রাকৃতিক গ্যাসের মতোই সহজলভ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। গৃহস্থালি গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করে অবৈধ গ্যাস বাণিজ্যের অরাজকতা বন্ধ করতে হবে।
সদর উপজেলায় অনেক বাসায় দিনের বেলায় গ্যাস না থাকলেও গভীর রাতে গ্যাসের চাপ বাড়ছে। আবার ভোরের আগে কমে যাচ্ছে চাপ। আবার কিছু বাসায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টাই গ্যাস থাকছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। গ্যাসের তীব্র সঙ্কটের কারণে অনেকে সিলিন্ডার গ্যাস ও কেরোসিনের স্টোভে রান্না করছেন। কিন্তু এতে তাদের খরচ অনেকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
দেওভোগের আবুল হোসেন জানান, প্রতি মাসে সাড়ে ৯শ’ টাকা গ্যাসের বিল দেই। গ্যাস না থাকায় সিলিন্ডারে রান্না করতে হয়। এতে খরচ তিনগুণ বেড়ে গেছে। নয়াগাঁও এলাকার অধিকাংশ গ্যাস ব্যবহারকারী জানান, ‘আমরা যারা তিতাস গ্যাসের বৈধ গ্রাহক তারা ঠিক মতো গ্যাস পাচ্ছি না। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়ার কারণে আমাদের চুলায় গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাসে মাসে বিল দিচ্ছি আবার ভোগান্তিও পোহাচ্ছি।’
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করলে বেশিরভাগ মানুষের মতামত হলো শহরে অনেক নতুন ফ্ল্যাট হয়েছে, যাদের দুইটি, কারও চারটি চুলার অনুমতি রয়েছে। দুইটি বা চারটির চুলার অনুমতি নিয়ে তারা ৮টি, কেউ ১০টি কেউবা ১২টি চুলা ব্যবহার করছে। বৈধভাবে সংযোগ নিয়ে সুবিধা পাচ্ছে না গ্রাহকগণ। এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করলে গ্যাস ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কখনোই কমবে না। এসব সংযোগের কারণে প্রচুর গ্যাস অপচয় হচ্ছে।
পঞ্চসার ইউনিয়নের অধিকাংশ বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের এলাকা ও মুক্তারপুরে অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ আছে। যেগুলো তিতাসের আঞ্চলিক অফিসের এক কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান আসলে, ওই ব্যক্তি যাদের কাছ থেকে সুবিধা নেন তাদের ফোন করে চুলা সরিয়ে রাখতে বলেন। কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
ইদ্রাকপুর এলাকার অধিকাংশ গ্যাস সংযোগ অবৈধ। একটি রাইজার নিয়ে একটি লাইন বৈধ, কিন্তু একাধিক লাইন অবৈধ হিসেবে চলে, যার টাকা তিতাস কোম্পানির নামধারী ঠিকাদারের পকেটে চলে যায়। ক্ষেত্র বিশেষে প্রতি অবৈধ লাইন থেকে পায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। ইদ্রাকপুরের কথিত নামধারী ঠিকাদার গ্যাস দেলোয়ার এর অধীনে রয়েছে দুই শতাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ। যার মাধ্যমে তার মাসিক আয় আনুমানিক লক্ষাধিক টাকা। নামধারী ঠিকাদারগণও তাদের আড়াল রেখে গ্যাসের বিল আদায়ের জন্য একাধিক লোক নিয়োগ দেয়া রয়েছে। তাদের মধ্যে পেটুয়া দেলোয়ার, মনির (নতুন গাও) এদের নাম সামনে এসেছে। এরা গ্যাস দেলোয়ারের নিকটাত্মীয়।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ম্যানেজার মেসবাহউদ্দিন বলেন,গ্যাস লাইনের যে মেইন পাইপ সেখানে গ্যাস না থাকার কারনে এ সমস্যা হচ্ছে। এটাা একটা জাতীয় সমস্যা। গত ১৩ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে এ সমস্যা আগামী মাসের ১২ অথবা ১৪ তারিখ পর্যন্ত থাকবে এরপর ঠিক হয়ে যাবে।
বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি
সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে চলছে গ্যাস সংযোগের রমরমা বাণিজ্য। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একশ্রেণীর রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধি অবৈধভাবে পাইপলাইন সংযোগের মাধ্যমে ‘ওপেন সিক্রেট’ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট তিতাস গ্যাস বিতরণ সংস্থার একশ্রেণীর কর্মকর্তা। প্রায় ১০ বছর ধরে এই অবৈধ গ্যাস বাণিজ্যের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। মূল্যবান গ্যাস অনুৎপাদন খাতে ব্যবহারে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের জ্বালানি নিরাপত্তা। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। অন্যদিকে এই অবৈধ বাণিজ্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গড়ে উঠছে তাদের বহুতল অট্টালিকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে এলপিজিকে গ্রাহকের কাছে প্রাকৃতিক গ্যাসের মতোই সহজলভ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। গৃহস্থালি গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করে অবৈধ গ্যাস বাণিজ্যের অরাজকতা বন্ধ করতে হবে।
সদর উপজেলায় অনেক বাসায় দিনের বেলায় গ্যাস না থাকলেও গভীর রাতে গ্যাসের চাপ বাড়ছে। আবার ভোরের আগে কমে যাচ্ছে চাপ। আবার কিছু বাসায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টাই গ্যাস থাকছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। গ্যাসের তীব্র সঙ্কটের কারণে অনেকে সিলিন্ডার গ্যাস ও কেরোসিনের স্টোভে রান্না করছেন। কিন্তু এতে তাদের খরচ অনেকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
দেওভোগের আবুল হোসেন জানান, প্রতি মাসে সাড়ে ৯শ’ টাকা গ্যাসের বিল দেই। গ্যাস না থাকায় সিলিন্ডারে রান্না করতে হয়। এতে খরচ তিনগুণ বেড়ে গেছে। নয়াগাঁও এলাকার অধিকাংশ গ্যাস ব্যবহারকারী জানান, ‘আমরা যারা তিতাস গ্যাসের বৈধ গ্রাহক তারা ঠিক মতো গ্যাস পাচ্ছি না। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়ার কারণে আমাদের চুলায় গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাসে মাসে বিল দিচ্ছি আবার ভোগান্তিও পোহাচ্ছি।’
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করলে বেশিরভাগ মানুষের মতামত হলো শহরে অনেক নতুন ফ্ল্যাট হয়েছে, যাদের দুইটি, কারও চারটি চুলার অনুমতি রয়েছে। দুইটি বা চারটির চুলার অনুমতি নিয়ে তারা ৮টি, কেউ ১০টি কেউবা ১২টি চুলা ব্যবহার করছে। বৈধভাবে সংযোগ নিয়ে সুবিধা পাচ্ছে না গ্রাহকগণ। এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করলে গ্যাস ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কখনোই কমবে না। এসব সংযোগের কারণে প্রচুর গ্যাস অপচয় হচ্ছে।
পঞ্চসার ইউনিয়নের অধিকাংশ বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের এলাকা ও মুক্তারপুরে অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ আছে। যেগুলো তিতাসের আঞ্চলিক অফিসের এক কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান আসলে, ওই ব্যক্তি যাদের কাছ থেকে সুবিধা নেন তাদের ফোন করে চুলা সরিয়ে রাখতে বলেন। কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
ইদ্রাকপুর এলাকার অধিকাংশ গ্যাস সংযোগ অবৈধ। একটি রাইজার নিয়ে একটি লাইন বৈধ, কিন্তু একাধিক লাইন অবৈধ হিসেবে চলে, যার টাকা তিতাস কোম্পানির নামধারী ঠিকাদারের পকেটে চলে যায়। ক্ষেত্র বিশেষে প্রতি অবৈধ লাইন থেকে পায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। ইদ্রাকপুরের কথিত নামধারী ঠিকাদার গ্যাস দেলোয়ার এর অধীনে রয়েছে দুই শতাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ। যার মাধ্যমে তার মাসিক আয় আনুমানিক লক্ষাধিক টাকা। নামধারী ঠিকাদারগণও তাদের আড়াল রেখে গ্যাসের বিল আদায়ের জন্য একাধিক লোক নিয়োগ দেয়া রয়েছে। তাদের মধ্যে পেটুয়া দেলোয়ার, মনির (নতুন গাও) এদের নাম সামনে এসেছে। এরা গ্যাস দেলোয়ারের নিকটাত্মীয়।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ম্যানেজার মেসবাহউদ্দিন বলেন,গ্যাস লাইনের যে মেইন পাইপ সেখানে গ্যাস না থাকার কারনে এ সমস্যা হচ্ছে। এটাা একটা জাতীয় সমস্যা। গত ১৩ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে এ সমস্যা আগামী মাসের ১২ অথবা ১৪ তারিখ পর্যন্ত থাকবে এরপর ঠিক হয়ে যাবে।