alt

সারাদেশ

সীমান্ত জেলাগুলো ফের সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে

এসব অঞ্চলে শনাক্তের হার সাড়ে ৫১ শতাংশ

রাকিব উদ্দিন : সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২

আবারও সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। সেখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে গত বছরের জুলাই-আগস্টে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোই প্রথমে হটস্পটে রূপ নিয়েছিল। এরপর সারাদেশেই করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে।

রাজশাহী জেলা ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন। এই জেলায় একদিনে ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ২৩৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রাজশাহীতে কোভিড শনাক্তের হার প্রায় ৫৯ শতাংশ।

যশোরে একদিনে ৩৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯৫ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় সীমান্তবর্তী এই জেলায় শনাক্তের হার প্রায় সাড়ে ৫১ শতাংশ।

জানতে চাইলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সংবাদকে বলেন, কোভিড রোগী বাড়ছে। এর ৯০ শতাংশই যশোর শহরের। তবে এখানে সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে সীমান্তের কোন প্রভাব নেই।

তিনি জানান, সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে যারা আসছেন-যাচ্ছেন তাদের সবারই কোভিড টেস্ট করা হয়েছে। তাতে নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে না। কোভিড ছড়িয়ে পড়ার কারণ জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, ‘অন্য জেলা থেকেই এখানে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।’ অন্য সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে এদিন ১৭১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৮ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ঝিনাইদহে রোগী শনাক্তের হার ৫৭ শতাংশের ওপরে।

এই তিন জেলা ছাড়াও সীমান্তবর্তী অন্য জেলায় প্রায় একই গতিতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বাংলাদেশের মোট ৩২টি সীমান্তবর্তী জেলা রয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, সারাদেশেই রোগী বাড়ছে। যেভাবে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে, তাতে নমুনা পরীক্ষা বাড়ালে রোগীও অনেক বেড়ে যাবে।

মৃত্যু আরও বাড়তে পারে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যারা মারা যাচ্ছেন তা গত তিন সপ্তাহ আগের সংক্রমণের প্রভাবে। কিন্তু এখন যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে কত লোকের মৃত্যু হবে তা বোঝা যাবে তিন সপ্তাহ পর।

জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন আরও বলেন, আমাদের টিকা নেয়ার হার কম, এ কারণে মৃত্যু বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে যেসব দেশ টিকা ভালোভাবে নিয়েছে সেসব দেশে মৃত্যুর হার কম।

দৈনিক শনাক্ত ছাড়ালো ৩২ শতাংশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৪৫ হাজার ৮০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪ হাজার ৮২৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একদিনে এত সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছিল প্রায় ২৫ সপ্তাহ আগে। এক দিনে সর্বশেষ এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৩ আগস্ট, ওইদিন ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছিল। তার আগে একই বছরের ২৮ জুলাই একদিনে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একদিনে তা গত ছয়মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ। কোভিড শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল সর্বশেষ গত বছরের ২৪ জুলাই, ওইদিন তা ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল ২০২০ সালের ১২ জুলাই, ওইদিন কোভিড পজেটিভ হার ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশের। আর এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

একদিনে নতুন শনাক্ত রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ জনে।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে করোনায় দেশে মোট ২৮ হাজার ২৩৮ জন মারা গেছেন। মোট শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শনাক্ত রোগীর মধ্যে এক দিনে দেশে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৯৮ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৯ জন সুস্থ হয়েছেন। মোট শনাক্ত অনুপাতে সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

মোট শনাক্ত রোগী থেকে সুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যা বাদ দিলেও এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ১১ হাজার ৮৬৭ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আগের দিন এই সংখ্যা এক লাখ ৫২ জন ছিল। অথচ গত ১ জানুয়ারি দেশে সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ছিল আট হাজার ৫২৬ জন।

এক সপ্তাহে শনাক্ত ১৮১ শতাংশ বেড়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে দেশে মোট ৬৭ হাজার ৪২৫ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে, আগের সপ্তাহে তা ছিল ২৪ হাজার ১১ জন। এ হিসাবে এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত বেড়েছে ১৮১ শতাংশ।

গত এক সপ্তাহে করোনায় মারা গেছেন ৭৯ জন, আগের সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল ৪২ জন। এ হিসাবে এক সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যু ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। সাতদিনে মারা যাওয়া ৭৯ জনের মধ্যে ৫২ জনেরই কোন না কোন ধরনের কোমরবিডিটি বা দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি ছিল। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে এবং ৫১ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।

একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৫ জনের মধ্যে পুরুষ নয় জন এবং নারী ছিলেন ছয় জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় চারজন ও ময়মনসিংহে দু’জন এবং ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ, মাগুরা, বরিশাল, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে নয় জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, তিন জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং দুই জনের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।

শনাক্তের শীর্ষে ঢাকা

মহানগরীসহ ঢাকা জেলায় একদিনে ২৯ হাজার ৯৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নয় হাজার ৪২৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে ঢাকায় রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তবে মহানগরীসহ ঢাকা বিভাগে একদিনে শনাক্ত হয়েছে দশ হাজার ১৬৫ জন। এটি মোট শনাক্তের ৬৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এছাড়া এই বিভাগের গাজীপুরে ১২২ জন ও নারায়ণগঞ্জে ২২২ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। বাকি জেলাগুলোতে শনাক্ত দুই অঙ্কের মধ্যে ছিল।

ময়মনসিংহ জেলায় ২৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগের অন্য তিন জেলায় শনাক্ত দুই অঙ্কের মধ্যে ছিল।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় একদিনে দুই হাজার ৪৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৮৮ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ৪০ শতাংশ।

এছাড়া কক্সবাজারে ২৪১ জন, পাবনায় ১৪১ জন, বগুড়ায় ১৬৮ জন, খুলনায় ১৫২ জন, কুষ্টিয়ায় ১৩০ জন, সিলেটে ৩২৫ জন এবং বরিশালে ১১৩ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

ছবি

বগুড়ায় শ্বশুর ও পুত্রবধূকে হাত-পা বেঁধে খুন

সিলেটেে আ.লীগ নেতাকে মারধর করে থানায় হস্তান্তর

ছবি

কক্সবাজারে সাগরে আরেক চবি ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, এখনো নিখোঁজ ১

ছবি

মুরাদনগরে ধর্ষণ: ১২ দিন পর ভুক্তভোগী নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা

ছবি

ফেনীতে দুদিনে ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধে ভাঙন

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে আধিপত্য দ্বন্দ্বে নিহতের পর ৪০টি ঘরবাড়ি-পসরা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ

ছবি

কুলাউড়ায় কিশোরীকে ধর্ষণ ও মুক্তিপণ দাবি, চালক গ্রেপ্তার

সাটুরিয়া থানা থেকে ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে থানা সড়ক অবরোধ, আটক ৪

পতেঙ্গা সৈকতে চসিকের অভিযানে ১২টি অবৈধ দোকান উচ্ছেদ

প্রবল বর্ষণে জনজীবন অচল, ব্যাহত চাষাবাদ

ছবি

দুর্গাপুরে নীল কুঠির ধ্বংসস্তূপে হারাচ্ছে ইতিহাস

ছবি

সিলেট এমসি কলেজের নতুন অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম আহম্মদ খান

কুইচ্চা মাছ বিক্রি করে চলে খোকনের সংসার

ছবি

প্রতিনিধি, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

শার্শা সীমান্তে ভারতীয় চিংড়ির রেণু পোনাসহ আটক ১

ছবি

সিরাজগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় খাদ্যশস্য কাউন

বৃত্তি পেল মুনতাহা টাকা পাচ্ছে প্রিয়ন্তী!

নবীনগরে কচু আবাদ করে অনেকে লাভবান

নাশকতার মামলায় সাংবাদিক শিশির কারাগারে

আন্তঃজেলা ডাকাত দলের মূলহোতা গ্রেপ্তার

ছবি

সৈয়দপুরে খড়খড়িয়া নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন, ভাঙনের কবলে আবাদি জমি

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ট্রাক চাপায় বাবা ছেলের মৃত্যু

শৈলকুপায় অস্ত্রসহ সাবেক সেনা সদস্য গ্রেপ্তার

বদরগঞ্জ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন বিলীন বসতবাড়ি, দোকানপাট

রাউজানে প্রকৌশলী বকুল হত্যা, মাসহ দুই ভাই গ্রেপ্তার

সাঘাটায় ২৪০ লিটার মদসহ আটক ৩

ছবি

দোহারে বিএনপি নেতা হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

চুনারুঘাটে মহিলার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

বিয়ের দাবিতে ধর্ষকের বাড়িতে তরুণী, অভিযুক্ত পালিয়েছে ইতালি

ছবি

বেতাগীতে সুইসগেট নির্মাণ শেষ না হওয়ায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত

সাংবাদিক রুবেল হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদকসহ গ্রেপ্তার ২

ছবি

সাতক্ষীরায় বৃষ্টি হলেই শহরে হাঁটুপানি চরম ভোগান্তিতে শহরবাসী

পরলোকে ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক মেয়রের মা

‘প্রান্তিক পর্যায় থেকে বিদেশে রপ্তানি হবে দেশীয় মাছ’

tab

সারাদেশ

সীমান্ত জেলাগুলো ফের সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে

এসব অঞ্চলে শনাক্তের হার সাড়ে ৫১ শতাংশ

রাকিব উদ্দিন

সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২

আবারও সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। সেখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে গত বছরের জুলাই-আগস্টে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোই প্রথমে হটস্পটে রূপ নিয়েছিল। এরপর সারাদেশেই করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে।

রাজশাহী জেলা ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন। এই জেলায় একদিনে ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ২৩৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রাজশাহীতে কোভিড শনাক্তের হার প্রায় ৫৯ শতাংশ।

যশোরে একদিনে ৩৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯৫ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় সীমান্তবর্তী এই জেলায় শনাক্তের হার প্রায় সাড়ে ৫১ শতাংশ।

জানতে চাইলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সংবাদকে বলেন, কোভিড রোগী বাড়ছে। এর ৯০ শতাংশই যশোর শহরের। তবে এখানে সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে সীমান্তের কোন প্রভাব নেই।

তিনি জানান, সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে যারা আসছেন-যাচ্ছেন তাদের সবারই কোভিড টেস্ট করা হয়েছে। তাতে নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে না। কোভিড ছড়িয়ে পড়ার কারণ জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, ‘অন্য জেলা থেকেই এখানে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।’ অন্য সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে এদিন ১৭১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৮ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ঝিনাইদহে রোগী শনাক্তের হার ৫৭ শতাংশের ওপরে।

এই তিন জেলা ছাড়াও সীমান্তবর্তী অন্য জেলায় প্রায় একই গতিতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বাংলাদেশের মোট ৩২টি সীমান্তবর্তী জেলা রয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, সারাদেশেই রোগী বাড়ছে। যেভাবে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে, তাতে নমুনা পরীক্ষা বাড়ালে রোগীও অনেক বেড়ে যাবে।

মৃত্যু আরও বাড়তে পারে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যারা মারা যাচ্ছেন তা গত তিন সপ্তাহ আগের সংক্রমণের প্রভাবে। কিন্তু এখন যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে কত লোকের মৃত্যু হবে তা বোঝা যাবে তিন সপ্তাহ পর।

জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন আরও বলেন, আমাদের টিকা নেয়ার হার কম, এ কারণে মৃত্যু বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে যেসব দেশ টিকা ভালোভাবে নিয়েছে সেসব দেশে মৃত্যুর হার কম।

দৈনিক শনাক্ত ছাড়ালো ৩২ শতাংশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৪৫ হাজার ৮০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪ হাজার ৮২৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একদিনে এত সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছিল প্রায় ২৫ সপ্তাহ আগে। এক দিনে সর্বশেষ এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৩ আগস্ট, ওইদিন ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছিল। তার আগে একই বছরের ২৮ জুলাই একদিনে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একদিনে তা গত ছয়মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ। কোভিড শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল সর্বশেষ গত বছরের ২৪ জুলাই, ওইদিন তা ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল ২০২০ সালের ১২ জুলাই, ওইদিন কোভিড পজেটিভ হার ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশের। আর এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

একদিনে নতুন শনাক্ত রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ জনে।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে করোনায় দেশে মোট ২৮ হাজার ২৩৮ জন মারা গেছেন। মোট শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শনাক্ত রোগীর মধ্যে এক দিনে দেশে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৯৮ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৯ জন সুস্থ হয়েছেন। মোট শনাক্ত অনুপাতে সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

মোট শনাক্ত রোগী থেকে সুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যা বাদ দিলেও এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ১১ হাজার ৮৬৭ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আগের দিন এই সংখ্যা এক লাখ ৫২ জন ছিল। অথচ গত ১ জানুয়ারি দেশে সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ছিল আট হাজার ৫২৬ জন।

এক সপ্তাহে শনাক্ত ১৮১ শতাংশ বেড়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে দেশে মোট ৬৭ হাজার ৪২৫ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে, আগের সপ্তাহে তা ছিল ২৪ হাজার ১১ জন। এ হিসাবে এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত বেড়েছে ১৮১ শতাংশ।

গত এক সপ্তাহে করোনায় মারা গেছেন ৭৯ জন, আগের সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল ৪২ জন। এ হিসাবে এক সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যু ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। সাতদিনে মারা যাওয়া ৭৯ জনের মধ্যে ৫২ জনেরই কোন না কোন ধরনের কোমরবিডিটি বা দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি ছিল। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে এবং ৫১ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।

একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৫ জনের মধ্যে পুরুষ নয় জন এবং নারী ছিলেন ছয় জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় চারজন ও ময়মনসিংহে দু’জন এবং ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ, মাগুরা, বরিশাল, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে নয় জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, তিন জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং দুই জনের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।

শনাক্তের শীর্ষে ঢাকা

মহানগরীসহ ঢাকা জেলায় একদিনে ২৯ হাজার ৯৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নয় হাজার ৪২৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে ঢাকায় রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তবে মহানগরীসহ ঢাকা বিভাগে একদিনে শনাক্ত হয়েছে দশ হাজার ১৬৫ জন। এটি মোট শনাক্তের ৬৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এছাড়া এই বিভাগের গাজীপুরে ১২২ জন ও নারায়ণগঞ্জে ২২২ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। বাকি জেলাগুলোতে শনাক্ত দুই অঙ্কের মধ্যে ছিল।

ময়মনসিংহ জেলায় ২৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগের অন্য তিন জেলায় শনাক্ত দুই অঙ্কের মধ্যে ছিল।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় একদিনে দুই হাজার ৪৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৮৮ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ৪০ শতাংশ।

এছাড়া কক্সবাজারে ২৪১ জন, পাবনায় ১৪১ জন, বগুড়ায় ১৬৮ জন, খুলনায় ১৫২ জন, কুষ্টিয়ায় ১৩০ জন, সিলেটে ৩২৫ জন এবং বরিশালে ১১৩ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

back to top