দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমাগত বেড়ে এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে সংক্রমণ হার ৪০% অতিক্রম করেছে। সোমবার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই হার ছিল ৩৪%-এর ওপরে। এই অঞ্চলের ৬টি জেলাতেই প্রায় সমানভাবে প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলছে। সোমবার দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের করোনা শনাক্তের সংখ্যা প্রায় ট্রিপল সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে গেছে।
এ সময়ে করোনার আতুড় ঘর বরিশাল মহানগরীতে ৭৭ জন জন সহ এ অঞ্চলে শনাক্তের সংখ্যা ২৫৭ জন। মহানগরীসহ বরিশাল জেলাতেই সংখ্যাটা ১১৩। এ নিয়ে মহানগরিতে সাড়ে ১১ হাজার সহ বরিশাল জেলায় মোট সংক্রমণ সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ৭৮২ জনে। সোমবারের সংক্রমণ গতবছরের ১৯ আগস্টের পরে সর্বোচ্চ। এছাড়া প্রথম দিকে ডেল্টা ভ্যারাইটি থাকলেও এখন আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনের সংখ্যাও অনেক।
কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে করোনা নতুন করে থাবা বসালেও নূন্যতম কোন স্বাস্থ্যবিধি কোথাও লক্ষণীয় নয়। বরিশালের নগর ভবনসহ প্রায় সব জেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও মেরিন একাডমির শিক্ষার্থীদের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে বলে জানা গেছে। ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের হিজলা ও মুলাদীতে ১০ জন করে এবং গৌরনদীতে ৮ জন, বাকেরগঞ্জে ৩ জন, বাবুগঞ্জ ও আগৈলঝাড়ায় দুজন করে আর বানরীপাড়ায় ১ জনের দেহে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলে মোট শনাক্তের সংখ্যাও ৪৬ হাজার অতিক্রম করে আরো ৩৬৬ যুক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৭৯ জন। যার মধ্যে মহানগরীতে ১০২ জনসহ বরিশাল জেলায় সংখ্যাটা ২৩০।
এদিকে খুলনা-বাগেরহাটের সীমান্তবর্তী পিরোজপুরের পরিস্থিতি ক্রমশই নাজুক আকার ধারন করছে। সোমবার দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের পরেই সংক্রমণের হারে এগিয়ে আছে পিরোজপুর। জেলাটিতে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৮ জন সহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০৫ জনে উন্নীত হয়েছে। জেলাটিতে ইতোমধ্যে মারা গেছেন ৮৩ জন।
অন্যান্য জেলাগুলোর অবস্থাও ক্রমশ খারাপের দিকে গেলেও কোন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেই। ২৪ ঘণ্টায় দ্বীপজেলা ভোলাতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ জন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৯৮ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৯৩ জন। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠিতে ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধিক শনাক্ত হারের এ জেলাটিতে মোট ৪ হাজার ৭৩৭ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হল। মারা গেছেন ৯ জন।
পটুয়াখালীতেও ২৪ ঘণ্টায় ২৬ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ হাজার ৩২৬ জনে। মারা গেছেন ১০৯ জন। আর এ পর্যন্ত সর্বাধিক মৃত্যুর হার বরগুনাতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৬ জনের দেহে করোনা পাজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ফলে জেলাটিতে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৮ জনে। আর মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের।
ভোলায় শতভাগ টিকার পর নিবন্ধন ও সনদ অনিশ্চিত
ভোলা জেলায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের কোভিড ভ্যাকসিন প্রথম ডোজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) শতভাগ নেয়া নিশ্চিত হলেও এদের কোন নিবন্ধন করা হয়নি। এদের মধ্যে ২৩ হাজার ৭৫০ জন দ্বিতীয় ডোজও সম্পন্ন করেছে। নিবন্ধন না হওয়ায় এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৬১ জন শিক্ষার্থী টিকা নেয়ার কোন প্রমাণপত্র পাচ্ছে না। পাচ্ছে না কোন সনদ। নিবন্ধন করা বা টিকার সনদ প্রাপ্তির বিষয়ে যেমনি সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা কিছুই জানেন না। তেমনি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও কোন নির্দেশনা পাননি। স্বাস্থ্য বিভাগের কাছেও নেই সঠিক উত্তর। সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান জানান, যারা টিকা নিয়েছেন তাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট স্কুল ও শিক্ষা বিভাগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন ও সনদপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার কথা ছিল। বর্তমানে কিছু শিক্ষার্থী স-উদ্যোগ জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে টিকা নিবন্ধন করেছে। কিন্তু টিকা নেয়ার পর তা এন্টি করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি। ফলে সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরা। জেলা শিক্ষা বিভাগ থেকে টিকা তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা শিক্ষা গবেষণা কর্মকর্তা নুর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয় গেল বছরের ১৩ নভেম্বর। ৩ মাস ১২ দিনের মধ্যে জেলার ৭ উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনতে পেরেছেন। কারা টিকা নিচ্ছে তাদের জন্য শুধু প্রতিদিনের একটি রেজিস্টার রাখা হচ্ছে। হাতে লেখা টিকা কার্ডের একটি কপিও রাখা হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধন করা বা টিকা প্রাপ্তির পর তা অন লাইনে নিশ্চয়ন করা , এমন কোন কাজ করার নির্দেশনা ছিল না। এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশ পাননি বলেও জানান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা। জেলায় টিকার জন্য তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ভোলা সদর উপজেলায় ৪২ হাজার, দৌলতখানে ১৫ হাজার, বোরহানউদ্দিন ২০ হাজার ৭৬৭ জন, লালমোহনে ২৫ হাজার, চরফ্যাশনে ৪৫ হাজার, তজুমদ্দিনে ৯ হাজার ৯৯৪ জন ও মনপুরা উপজেলায় ৬ হাজার ১শ জন। সোমবার বিকেল পর্যন্ত টিকা নিয়ে ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৪৯ জন। টিকা না নেয়া ৪ হাজার ৫৭৯ জনের টিকা নিশ্চিত করতেও স্কুল স্কুল চিঠি পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে এদের টিকা নিয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলেও জানান শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি জানান, প্রথম ডোজ শতভাগ নেয়া হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছে। জেলার সেরা স্কুল ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম ছালেহউদ্দিন জানান, কারা টিকা নিয়েছে আর কারা নেয়নি, এমন কোন প্রমানপত্র তাদের কাছেও নেই। কারণ এদের নিবন্ধনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমন কি টিকা নেয়ার পর তা অন লাইন নিশ্চায়ন (পোস্টিং) করা হয়নি। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ফাইজারের টিকা নিয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজ টিকাও সম্পন্ন করবে। তাই দ্রুত এদের নিবন্ধন ও সনদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান প্রধান শিক্ষকরা। অভিভাক পলাশ চ্যাটার্জী, ব্যাংকার আবু ইউছুফ জানান, নিয়ম অনুযায়ী তাদের মেয়েরা দুটি টিকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু নিবন্ধন হয়নি। টিকার পোস্টিং হয়নি। এটা কী ধরনের নিয়ম এমন প্রশ্ন তোলেন অনেক অভিভাবক।
মানিকগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের ৩৯ জন
মানিকগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১০৯টি নমুনার প্রাপ্ত ফলাফলে ৩৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় ফলাফল হিসেবে আক্রান্তের হার ৩৬ শতাংশ। তবে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. কনক মাশরাফি জানান মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ জনের করোনা পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফলে ৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৩, সিংগাইর উপজেলায় ৭ জন, হরিরামপুর উপজেলায় ৪ জন, শিবালয় উপজেলায় ৩ জন, দৌলতপুর ও সাটুরিয়া উপজেলায় ১ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার চারশো ৮৪ জন। এদের মধ্যে ৮ হাজার একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে ও নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত জেলায় ১২৬ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
কিশোরগঞ্জে শনাক্ত ৮৮
কিশোরগঞ্জে নতুন ৮৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে। চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৪ শতক ছাড়িয়ে গেল। সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলামের মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে প্রকাশ করা জেলার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার করোনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৫৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় সদরে ৩৬ জন, ভৈরবে ২২ জন, কটিয়াদীতে ১৪ জন, কুলিয়ারচরে ৫ জন, বাজিতপুরে ৪ জন, পাকুন্দিয়ায় ৩ জন, করিমগঞ্জে ২ জন, আর হোসেনপুর ও মিঠামইনে একজন করে নতুন রোগি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া অন্য জেলায় আক্রন্ত ৩৯ জন এবং পুরনো ২ রোগির নমুনাও পুনরায় পজিটিভ হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জেলায় সর্বশেষ করোনায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪২৯ জন।
ঈশ্বরদীতে আক্রান্ত ৩৭
ঈশ্বরদীতে একদিনে ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিজেন র্যাপিড টেস্টে ৫০.৫০% শতাংশ মানুষের শরীরে করোনা উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসমা খান আজ সকাল ৮টায় জানান, ঈশ্বরদী উপজেলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিজেন র্যাপিড টেস্ট করান ৭৩ জন, তাদের মধ্যে ৩৭ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ এসেছে। তিনি আরও বলেন আক্রান্তের হার এত গতিতে বাড়লেও কারো মধ্যে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে কেউ কোন স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মঙ্গলবার টেস্টের অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ৫০.৫০% হয়েছে।
বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমাগত বেড়ে এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে সংক্রমণ হার ৪০% অতিক্রম করেছে। সোমবার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই হার ছিল ৩৪%-এর ওপরে। এই অঞ্চলের ৬টি জেলাতেই প্রায় সমানভাবে প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলছে। সোমবার দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের করোনা শনাক্তের সংখ্যা প্রায় ট্রিপল সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে গেছে।
এ সময়ে করোনার আতুড় ঘর বরিশাল মহানগরীতে ৭৭ জন জন সহ এ অঞ্চলে শনাক্তের সংখ্যা ২৫৭ জন। মহানগরীসহ বরিশাল জেলাতেই সংখ্যাটা ১১৩। এ নিয়ে মহানগরিতে সাড়ে ১১ হাজার সহ বরিশাল জেলায় মোট সংক্রমণ সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ৭৮২ জনে। সোমবারের সংক্রমণ গতবছরের ১৯ আগস্টের পরে সর্বোচ্চ। এছাড়া প্রথম দিকে ডেল্টা ভ্যারাইটি থাকলেও এখন আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনের সংখ্যাও অনেক।
কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে করোনা নতুন করে থাবা বসালেও নূন্যতম কোন স্বাস্থ্যবিধি কোথাও লক্ষণীয় নয়। বরিশালের নগর ভবনসহ প্রায় সব জেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও মেরিন একাডমির শিক্ষার্থীদের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে বলে জানা গেছে। ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের হিজলা ও মুলাদীতে ১০ জন করে এবং গৌরনদীতে ৮ জন, বাকেরগঞ্জে ৩ জন, বাবুগঞ্জ ও আগৈলঝাড়ায় দুজন করে আর বানরীপাড়ায় ১ জনের দেহে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলে মোট শনাক্তের সংখ্যাও ৪৬ হাজার অতিক্রম করে আরো ৩৬৬ যুক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৭৯ জন। যার মধ্যে মহানগরীতে ১০২ জনসহ বরিশাল জেলায় সংখ্যাটা ২৩০।
এদিকে খুলনা-বাগেরহাটের সীমান্তবর্তী পিরোজপুরের পরিস্থিতি ক্রমশই নাজুক আকার ধারন করছে। সোমবার দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের পরেই সংক্রমণের হারে এগিয়ে আছে পিরোজপুর। জেলাটিতে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৮ জন সহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০৫ জনে উন্নীত হয়েছে। জেলাটিতে ইতোমধ্যে মারা গেছেন ৮৩ জন।
অন্যান্য জেলাগুলোর অবস্থাও ক্রমশ খারাপের দিকে গেলেও কোন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেই। ২৪ ঘণ্টায় দ্বীপজেলা ভোলাতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ জন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৯৮ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৯৩ জন। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠিতে ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধিক শনাক্ত হারের এ জেলাটিতে মোট ৪ হাজার ৭৩৭ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হল। মারা গেছেন ৯ জন।
পটুয়াখালীতেও ২৪ ঘণ্টায় ২৬ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ হাজার ৩২৬ জনে। মারা গেছেন ১০৯ জন। আর এ পর্যন্ত সর্বাধিক মৃত্যুর হার বরগুনাতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৬ জনের দেহে করোনা পাজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ফলে জেলাটিতে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৮ জনে। আর মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের।
ভোলায় শতভাগ টিকার পর নিবন্ধন ও সনদ অনিশ্চিত
ভোলা জেলায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের কোভিড ভ্যাকসিন প্রথম ডোজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) শতভাগ নেয়া নিশ্চিত হলেও এদের কোন নিবন্ধন করা হয়নি। এদের মধ্যে ২৩ হাজার ৭৫০ জন দ্বিতীয় ডোজও সম্পন্ন করেছে। নিবন্ধন না হওয়ায় এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৬১ জন শিক্ষার্থী টিকা নেয়ার কোন প্রমাণপত্র পাচ্ছে না। পাচ্ছে না কোন সনদ। নিবন্ধন করা বা টিকার সনদ প্রাপ্তির বিষয়ে যেমনি সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা কিছুই জানেন না। তেমনি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও কোন নির্দেশনা পাননি। স্বাস্থ্য বিভাগের কাছেও নেই সঠিক উত্তর। সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান জানান, যারা টিকা নিয়েছেন তাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট স্কুল ও শিক্ষা বিভাগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন ও সনদপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার কথা ছিল। বর্তমানে কিছু শিক্ষার্থী স-উদ্যোগ জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে টিকা নিবন্ধন করেছে। কিন্তু টিকা নেয়ার পর তা এন্টি করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি। ফলে সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরা। জেলা শিক্ষা বিভাগ থেকে টিকা তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা শিক্ষা গবেষণা কর্মকর্তা নুর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয় গেল বছরের ১৩ নভেম্বর। ৩ মাস ১২ দিনের মধ্যে জেলার ৭ উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনতে পেরেছেন। কারা টিকা নিচ্ছে তাদের জন্য শুধু প্রতিদিনের একটি রেজিস্টার রাখা হচ্ছে। হাতে লেখা টিকা কার্ডের একটি কপিও রাখা হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধন করা বা টিকা প্রাপ্তির পর তা অন লাইনে নিশ্চয়ন করা , এমন কোন কাজ করার নির্দেশনা ছিল না। এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশ পাননি বলেও জানান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা। জেলায় টিকার জন্য তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ভোলা সদর উপজেলায় ৪২ হাজার, দৌলতখানে ১৫ হাজার, বোরহানউদ্দিন ২০ হাজার ৭৬৭ জন, লালমোহনে ২৫ হাজার, চরফ্যাশনে ৪৫ হাজার, তজুমদ্দিনে ৯ হাজার ৯৯৪ জন ও মনপুরা উপজেলায় ৬ হাজার ১শ জন। সোমবার বিকেল পর্যন্ত টিকা নিয়ে ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৪৯ জন। টিকা না নেয়া ৪ হাজার ৫৭৯ জনের টিকা নিশ্চিত করতেও স্কুল স্কুল চিঠি পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে এদের টিকা নিয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলেও জানান শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি জানান, প্রথম ডোজ শতভাগ নেয়া হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছে। জেলার সেরা স্কুল ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম ছালেহউদ্দিন জানান, কারা টিকা নিয়েছে আর কারা নেয়নি, এমন কোন প্রমানপত্র তাদের কাছেও নেই। কারণ এদের নিবন্ধনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমন কি টিকা নেয়ার পর তা অন লাইন নিশ্চায়ন (পোস্টিং) করা হয়নি। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ফাইজারের টিকা নিয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজ টিকাও সম্পন্ন করবে। তাই দ্রুত এদের নিবন্ধন ও সনদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান প্রধান শিক্ষকরা। অভিভাক পলাশ চ্যাটার্জী, ব্যাংকার আবু ইউছুফ জানান, নিয়ম অনুযায়ী তাদের মেয়েরা দুটি টিকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু নিবন্ধন হয়নি। টিকার পোস্টিং হয়নি। এটা কী ধরনের নিয়ম এমন প্রশ্ন তোলেন অনেক অভিভাবক।
মানিকগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের ৩৯ জন
মানিকগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১০৯টি নমুনার প্রাপ্ত ফলাফলে ৩৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় ফলাফল হিসেবে আক্রান্তের হার ৩৬ শতাংশ। তবে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. কনক মাশরাফি জানান মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ জনের করোনা পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফলে ৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৩, সিংগাইর উপজেলায় ৭ জন, হরিরামপুর উপজেলায় ৪ জন, শিবালয় উপজেলায় ৩ জন, দৌলতপুর ও সাটুরিয়া উপজেলায় ১ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার চারশো ৮৪ জন। এদের মধ্যে ৮ হাজার একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে ও নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত জেলায় ১২৬ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
কিশোরগঞ্জে শনাক্ত ৮৮
কিশোরগঞ্জে নতুন ৮৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে। চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৪ শতক ছাড়িয়ে গেল। সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলামের মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে প্রকাশ করা জেলার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার করোনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৫৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় সদরে ৩৬ জন, ভৈরবে ২২ জন, কটিয়াদীতে ১৪ জন, কুলিয়ারচরে ৫ জন, বাজিতপুরে ৪ জন, পাকুন্দিয়ায় ৩ জন, করিমগঞ্জে ২ জন, আর হোসেনপুর ও মিঠামইনে একজন করে নতুন রোগি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া অন্য জেলায় আক্রন্ত ৩৯ জন এবং পুরনো ২ রোগির নমুনাও পুনরায় পজিটিভ হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জেলায় সর্বশেষ করোনায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪২৯ জন।
ঈশ্বরদীতে আক্রান্ত ৩৭
ঈশ্বরদীতে একদিনে ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিজেন র্যাপিড টেস্টে ৫০.৫০% শতাংশ মানুষের শরীরে করোনা উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসমা খান আজ সকাল ৮টায় জানান, ঈশ্বরদী উপজেলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিজেন র্যাপিড টেস্ট করান ৭৩ জন, তাদের মধ্যে ৩৭ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ এসেছে। তিনি আরও বলেন আক্রান্তের হার এত গতিতে বাড়লেও কারো মধ্যে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে কেউ কোন স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মঙ্গলবার টেস্টের অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ৫০.৫০% হয়েছে।