বাল্যবিয়ে এ দেশের কিশোরীদের জন্য একটি বড় সমস্যা। কেননা এর ফলে তারা তাদের স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে। নিজেদের স্বাধীনতা বলতে তেমন কিছুই থাকে না। এছাড়া শিশু শ্রমসহ আরও নানা বাধার কারণে তাদের বিকাশ হয় না, বলে মন্তব্য করেছেন আমেরিকার পপুলেশন কাউন্সিলের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট সাজেদা আমিন।
বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘স্কিলস দ্যাট এমপাওয়ার: মেজারিং চেঞ্জ ইন দ্য কনটেক্স অব ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন এর সভাপতিত্বে এসব কথা বলেন সাজেদা আমিন।
কিশোরী ক্ষমতায়নের পথে বাল্যবিয়েকে অন্যতম বাধা বলে উঠে এসেছে এই গবেষণায়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও কিশোরীদের ক্ষমতায়িত করতে পারে। পাশাপাশি তাদের ক্ষমতায়িত করার ক্ষেত্রে সমাজিক পরিবেশ ও আশপাশের উদাহরণ বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সাজেদা আমিন বলেন, ‘এই জরিপ করতে গিয়ে কিশোরীদের বলেছি, তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে বা তাদের পাশাপাশি কিভাবে চলো। তাদের সাথে চলতে গেলে আরো দক্ষ হতে হবে এ বিষয়টি বোঝানোর দুই বছর পর দেখা যায় ৯ হাজার কিশোরীর মধ্যে ৩২% কিশোরী নিজেদের দক্ষ করে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
সাজেদা আমিন বলেন, শিক্ষার বাইরে গ্রামের কিশোরীদের বিভিন্ন রকম শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেমন তাদের সচেতন করে তোলা, জেন্ডার সমতা বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া এবং তাদের জীবনভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। রক্তচাপ পরিমাপ করা, মোবাইল সার্ভিসিং, খেলাধুলা, গান-বাজনা শেখানো ইত্যাদি বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
‘বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ফর লাইফস্কিল ইনকাম অ্যান্ড নলেজ ফর অ্যাডোলোসেন্স (বালিকা)’ প্রকল্পের আওতায় ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৯ হাজার কিশোরীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। গবেষণার সময়কাল ছিল ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল। সাতক্ষিরা, খুলনা ও নড়াইলের ১০টি উপজেলায় কিশোরীদের নিয়ে এই গবেষণা করা হয়।
সাজেদা আমিন বলেন, কিশোরীদের ক্ষমতায়িত করার ক্ষেত্রে সামাজিক সহায়তা, সামাজে অংশগহণ, স্বাধীন পারিবারিক পরিবেশ, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, পরিবার ও সমাজে কম বৈষম্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণাপত্র উপস্থাপনের সময় সাজেদা আমিন বলেন, তেমন কিছুই থাকে না। এছাড়া শিশু শ্রমসহ আরও নানা বাধার কারণে তাদের বিকাশ ঘটে না। তারা দেশের তিনটি জেলায় প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণা চালিয়েছি।
দেখা গেছে এসব শিক্ষার ফলে মেয়েরা নিজেদের গ্রামে মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে, যেটি আমরা প্রকল্প থেকে তাদের বলিনি। কোনো গ্রামে আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। এসব করতে গিয়ে গবেষণায় অংশ নেওয়া কিশোরীদের ৩১ শতাংশের ক্ষমতায়ন হয়েছে বলে উঠে এসছে। সেই সঙ্গে কিশোরীরা যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে তারা তাদের মা-বাবার মনোভাব পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখতে পারে।
সাজেদা আমিন আরও বলেন, গ্রামে যদি কোনো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে তাহলে সে মেন্টর হিসেবে কাজ করে। তখন অন্য মেয়েরা মনে করে, তিনি তো পড়ছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে আমরাও পড়ব। এভাবে তাদের মধ্যে সাহস তৈরি হয়। এছাড়া প্রকল্পটি দুই বছর পরিচালনার পর কিশোরীদের ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে প্রকল্প এলকায় বসবাসরত সমাজের ৩৭ শতাংশ মানুষের।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, এ গবেষণায় তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, শিক্ষা, জেন্ডার ও জীবনাচরণ। কিশোরীদের ক্ষতায়নে এনজিও, পাঠাগার, খেলার মাঠ, বাড়ি, বাজার ও ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরের যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাইরে খেলাধুলা ও সমাজের বিভিন্ন ইস্যুতে অংশগ্রহণ কাজে লাগে। এছাড়া সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার শিক্ষাও কিশোরীদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২
বাল্যবিয়ে এ দেশের কিশোরীদের জন্য একটি বড় সমস্যা। কেননা এর ফলে তারা তাদের স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে। নিজেদের স্বাধীনতা বলতে তেমন কিছুই থাকে না। এছাড়া শিশু শ্রমসহ আরও নানা বাধার কারণে তাদের বিকাশ হয় না, বলে মন্তব্য করেছেন আমেরিকার পপুলেশন কাউন্সিলের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট সাজেদা আমিন।
বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘স্কিলস দ্যাট এমপাওয়ার: মেজারিং চেঞ্জ ইন দ্য কনটেক্স অব ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন এর সভাপতিত্বে এসব কথা বলেন সাজেদা আমিন।
কিশোরী ক্ষমতায়নের পথে বাল্যবিয়েকে অন্যতম বাধা বলে উঠে এসেছে এই গবেষণায়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও কিশোরীদের ক্ষমতায়িত করতে পারে। পাশাপাশি তাদের ক্ষমতায়িত করার ক্ষেত্রে সমাজিক পরিবেশ ও আশপাশের উদাহরণ বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সাজেদা আমিন বলেন, ‘এই জরিপ করতে গিয়ে কিশোরীদের বলেছি, তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে বা তাদের পাশাপাশি কিভাবে চলো। তাদের সাথে চলতে গেলে আরো দক্ষ হতে হবে এ বিষয়টি বোঝানোর দুই বছর পর দেখা যায় ৯ হাজার কিশোরীর মধ্যে ৩২% কিশোরী নিজেদের দক্ষ করে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
সাজেদা আমিন বলেন, শিক্ষার বাইরে গ্রামের কিশোরীদের বিভিন্ন রকম শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেমন তাদের সচেতন করে তোলা, জেন্ডার সমতা বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া এবং তাদের জীবনভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। রক্তচাপ পরিমাপ করা, মোবাইল সার্ভিসিং, খেলাধুলা, গান-বাজনা শেখানো ইত্যাদি বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
‘বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ফর লাইফস্কিল ইনকাম অ্যান্ড নলেজ ফর অ্যাডোলোসেন্স (বালিকা)’ প্রকল্পের আওতায় ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৯ হাজার কিশোরীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। গবেষণার সময়কাল ছিল ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল। সাতক্ষিরা, খুলনা ও নড়াইলের ১০টি উপজেলায় কিশোরীদের নিয়ে এই গবেষণা করা হয়।
সাজেদা আমিন বলেন, কিশোরীদের ক্ষমতায়িত করার ক্ষেত্রে সামাজিক সহায়তা, সামাজে অংশগহণ, স্বাধীন পারিবারিক পরিবেশ, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, পরিবার ও সমাজে কম বৈষম্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণাপত্র উপস্থাপনের সময় সাজেদা আমিন বলেন, তেমন কিছুই থাকে না। এছাড়া শিশু শ্রমসহ আরও নানা বাধার কারণে তাদের বিকাশ ঘটে না। তারা দেশের তিনটি জেলায় প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণা চালিয়েছি।
দেখা গেছে এসব শিক্ষার ফলে মেয়েরা নিজেদের গ্রামে মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে, যেটি আমরা প্রকল্প থেকে তাদের বলিনি। কোনো গ্রামে আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। এসব করতে গিয়ে গবেষণায় অংশ নেওয়া কিশোরীদের ৩১ শতাংশের ক্ষমতায়ন হয়েছে বলে উঠে এসছে। সেই সঙ্গে কিশোরীরা যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে তারা তাদের মা-বাবার মনোভাব পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখতে পারে।
সাজেদা আমিন আরও বলেন, গ্রামে যদি কোনো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে তাহলে সে মেন্টর হিসেবে কাজ করে। তখন অন্য মেয়েরা মনে করে, তিনি তো পড়ছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে আমরাও পড়ব। এভাবে তাদের মধ্যে সাহস তৈরি হয়। এছাড়া প্রকল্পটি দুই বছর পরিচালনার পর কিশোরীদের ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে প্রকল্প এলকায় বসবাসরত সমাজের ৩৭ শতাংশ মানুষের।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, এ গবেষণায় তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, শিক্ষা, জেন্ডার ও জীবনাচরণ। কিশোরীদের ক্ষতায়নে এনজিও, পাঠাগার, খেলার মাঠ, বাড়ি, বাজার ও ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরের যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাইরে খেলাধুলা ও সমাজের বিভিন্ন ইস্যুতে অংশগ্রহণ কাজে লাগে। এছাড়া সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার শিক্ষাও কিশোরীদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।