alt

সারাদেশ

উজানে ঢল, টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল

সুনামগঞ্জে বন্যার পদধ্বনি

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট : শনিবার, ১৪ মে ২০২২

সুনামগঞ্জ : বন্যায় প্লাবিত নিম্নাঞ্চল -সংবাদ

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরে দ্রুত বাড়ছে পানি। এদিকে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানিও ক্রমেই বাড়ছে। কোন কোন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে গোলাপগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাব আর পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয়বাষ্পের সংমিশ্রণে বাংলাদেশ অঞ্চলে গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালার কারণে গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো মাঝারি, কখনো ভারী, আবার কখনো অতিভারী বৃষ্টি ঝরছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, সিলেট অঞ্চলে এই বৃষ্টির পানির সঙ্গে যোগ হচ্ছে উজানের ঢল। ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম (বরাক অববাহিকা) প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই-কংস, ধনু-বাউলাই, মনু ও খোয়াই নদীর পানি বেশ কিছুটা বেড়েছে। কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইনসহ সব নদীর পানি বাড়ছে। অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট এবং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। এসব গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। এ উপজেলায় ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে। একই অবস্থা গোয়াইনঘাটেও।

এদিকে আপাতত বৃষ্টি থামার কোন পূর্বাভাস নেই সিলেটে। ফলে বন্যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে ১৮ মে পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে রাতে বৃষ্টি বেশি হবে।

সিলেট পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ে। এটাই মূল প্রভাবক। এর সঙ্গে সিলেটে বৃষ্টিও যোগ হয়েছে। নদীর পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মনাবন্দ ইউনিয়নের চক্রবর্তী পাড়ায় পা আপু রুদ্র পাল (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার ভাই পাপ্পু পালসহ আহত হয়েছ আরও পাঁচজন।

শুক্রবার (১৩ মে) রাত ৩টার দিকে পাহাড় ধসে ঘরের উপর পড়লে ঘুমন্ত অবস্থায় মাটিচাপায় আপু রুদ্র পাল নিহত হন। তাকে আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা লক্ষ্মনাবন্দ ইউনিয়নের চক্রবর্তীপাড়ার ডাক্তার নুকুল রুদ্র পালের ছেলে।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ কানিশাইল এলাকায় পাহাড় ধসে ২০টি বাড়ির ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজু আহমদ।

এ সময় গ্রামের রাস্তায় গাছপালাসহ মাটি ধসেপড়ায় মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছ। অন্যদিকে অমুড়া ইউনিয়নের ধারাবহর নালিবাড়ি গ্রামের আফসর আহমদের ঘর পাহাড় ধসে মাটির নিচে চাপা পড়েছে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম কবীর লক্ষ্মনাবন্দ ইউনিয়নের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেছেন।

এদিকে প্রবল বর্ষণে ঢাকাদক্ষিণ বাজার প্লাবিত হয়েছে। বাজারের চতুর্দিকে থৈ থৈ করছে পানি। প্রায় ৯০ শতাংশ দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার (১৪ মে) ভোর রাত পৌনে ৪টা থেকে জলাবদ্ধতায় পানি ২ থেকে ৩ ফুট আবার কোথাও কোথাও এর বেশি উচ্চতায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বাজারের মসজিদ থেকে বার বার ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য আহ্বান করা হয়। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বাজার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

এছাড়া কানাইঘাটের লোভা ও বরাক নদীতে আসা পাহাড়ি ঢলে কানাইঘাটে ৫ হাজার বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ কানাইঘাট-শাহবাগ সড়ক তলিয়ে গেছে। সুরমা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে দ্রুত ডুবে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

সুনামগঞ্জ

সীমান্তের ওপাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা এবং অভ্যন্তরীণ নদী যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই কুশিয়ারা পাটলাইসহ সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে ভাটির উপজেলা তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশার পানি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাওর এলাকার নদনদীতে মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল প্রবল বেগে নেমে আসছে। তাহিরপুর উপজেলার রতনশ্রী, গোলাবাড়ি, মান্দিয়াতা, জয়পুরসহ টাংগুয়া ও মাটিয়ান হাওর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢলের পানিতে গ্রামের ছোট ছোট খালগুলো টইটুম্বুর হয়ে আছে। ঢলের পানিতে ভেসে আসা পলি মাটিতে হাওরের পানির রঙ বদলে গেছে। পানিশূন্য হাওরগুলোরে বিভিন্ন স্লুইসগেট রেগুলেটর ও বাঁধের ফাঁক-ফোকর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে স্লুইসগেটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।

মান্দিয়াতা গ্রামের আবদুল জলিল বলেন, এখন হাওরে পানি ঢুকলে মাছের উৎপাদন বাড়বে। হাওরে কোন ফসল নেই তাই ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাতের কারণে ধান চাল শুকাতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। গোলাবাড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, এতদিন পানি না হওয়ায় হেঁটে চলাচল করতে পারতাম এখন নৌকাছাড়া কোথাও যাওয়া যাবে না। তবে বালিজুড়ি গ্রামের কৃষকরা জানান, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে তাদের বাদাম খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে দ্রুত পানি সরে গেলে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

এদিকে তাহিরপুর আনোয়ারপুর সড়কের রক্তি নদীর তীরের সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে।

সিলেটে জুলাই যোদ্ধাকে নির্যাতন: এসআই জসিম বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

গরু ল্যাম্পিংস্কিন ডিজিজে আক্রান্ত, আতঙ্কে খামারিরা

ছবি

বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভালো সেবা পেয়ে খুশি এলাকাবাসী

জাল জন্ম নিবন্ধনে বাল্যবিয়ে, কনের মা ও কাজীকে জরিমানা

বিকটশব্দে আতঙ্ক সৃষ্টি করে মোটর বাইক চালাচ্ছে যুবকরা

‘বিএনপি সম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না’

পাথরঘাটায় ৪০ মণ ঝাটকা জব্দ

রাজশাহীতে ধর্ষণকারী আটক

ভালুকায় মানব কঙ্কালসহ আটক ১

চুয়াডাঙ্গায় পিস্তলসহ যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

জামালপুরে চাঁদাবাজির টাকাসহ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক

চকরিয়ায় সাবেক এমপির মুক্তির দাবিতে মিছিল, গ্রেপ্তার ৪

সুনামগঞ্জে বিএনপির কর্মিসভা অনুষ্ঠিত

চাঁদপুরে গরুর দুধ সংকটে ব্যাহত মিষ্টিজাত খাবার উৎপাদন

ছবি

আকস্মিক বন্যায় চলনবিলে ভাসছে কৃষকের বোরো ধান

ছবি

সরিষাবাড়ীতে শেয়ালের আক্রমণে আহত ৭

ছবি

ছাতকে পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে জটিলতা

সোনাইমুড়ীতে বৃদ্ধাকে জবাই করে হত্যা

ঘুমধুম সীমান্তে লক্ষাধিক ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আটক

সাদুল্লাপুরে মামলা করে উদ্বিগ্ন বাদীর পরিবার

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ সন্ত্রাসীদের হামলায় মামলা হলেও পুলিশ আসামি ধরছে না

বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত বেড়েছে

মোচিকের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ৫ শ্রমিকের বিরুদ্ধে তদন্ত

ফুলপুর-তারাকান্দায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১১

ছবি

গাইবান্ধায় তিনটি সেতুর অভাবে ৫০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার হুমকি

মাদ্রাসার শৌচাগারে ছাত্রের আত্মহত্যা

জাতীয় ফল মেলা উদ্যাপনে ফাঁকিবাজি

ছবি

সিরাজগঞ্জে বর্ষার আগমনে নৌকা তৈরির ধুম

ছবি

ঘোড়াশালে আনারসের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

কুষ্টিয়ার সড়কে দেড় মাসে নিহত ৯, শতাধিক আহত

গুরুদাসপুরে ৬ ডাকাত আটক

ছবি

কুলাউড়ায় প্রতিবন্ধী শিশুর পাশে উপজেলা প্রশাসন

‘ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকের পর কুৎসা রটাচ্ছে ভারত’

ছবি

দশমিনায় ঐতিহ্যবাহী আমির উল্লাহ মসজিদটি সংস্কারের পর দৃষ্টি কাড়ছে

ছবি

ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা—প্রশ্ন তোলা যাবে না, এমন দেশ গড়ার জন্য মানুষ জীবন দেয়নি

tab

সারাদেশ

উজানে ঢল, টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল

সুনামগঞ্জে বন্যার পদধ্বনি

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট

সুনামগঞ্জ : বন্যায় প্লাবিত নিম্নাঞ্চল -সংবাদ

শনিবার, ১৪ মে ২০২২

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরে দ্রুত বাড়ছে পানি। এদিকে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানিও ক্রমেই বাড়ছে। কোন কোন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে গোলাপগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাব আর পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয়বাষ্পের সংমিশ্রণে বাংলাদেশ অঞ্চলে গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালার কারণে গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো মাঝারি, কখনো ভারী, আবার কখনো অতিভারী বৃষ্টি ঝরছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, সিলেট অঞ্চলে এই বৃষ্টির পানির সঙ্গে যোগ হচ্ছে উজানের ঢল। ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম (বরাক অববাহিকা) প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই-কংস, ধনু-বাউলাই, মনু ও খোয়াই নদীর পানি বেশ কিছুটা বেড়েছে। কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইনসহ সব নদীর পানি বাড়ছে। অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট এবং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। এসব গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। এ উপজেলায় ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে। একই অবস্থা গোয়াইনঘাটেও।

এদিকে আপাতত বৃষ্টি থামার কোন পূর্বাভাস নেই সিলেটে। ফলে বন্যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে ১৮ মে পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে রাতে বৃষ্টি বেশি হবে।

সিলেট পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ে। এটাই মূল প্রভাবক। এর সঙ্গে সিলেটে বৃষ্টিও যোগ হয়েছে। নদীর পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মনাবন্দ ইউনিয়নের চক্রবর্তী পাড়ায় পা আপু রুদ্র পাল (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার ভাই পাপ্পু পালসহ আহত হয়েছ আরও পাঁচজন।

শুক্রবার (১৩ মে) রাত ৩টার দিকে পাহাড় ধসে ঘরের উপর পড়লে ঘুমন্ত অবস্থায় মাটিচাপায় আপু রুদ্র পাল নিহত হন। তাকে আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা লক্ষ্মনাবন্দ ইউনিয়নের চক্রবর্তীপাড়ার ডাক্তার নুকুল রুদ্র পালের ছেলে।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ কানিশাইল এলাকায় পাহাড় ধসে ২০টি বাড়ির ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজু আহমদ।

এ সময় গ্রামের রাস্তায় গাছপালাসহ মাটি ধসেপড়ায় মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছ। অন্যদিকে অমুড়া ইউনিয়নের ধারাবহর নালিবাড়ি গ্রামের আফসর আহমদের ঘর পাহাড় ধসে মাটির নিচে চাপা পড়েছে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম কবীর লক্ষ্মনাবন্দ ইউনিয়নের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেছেন।

এদিকে প্রবল বর্ষণে ঢাকাদক্ষিণ বাজার প্লাবিত হয়েছে। বাজারের চতুর্দিকে থৈ থৈ করছে পানি। প্রায় ৯০ শতাংশ দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার (১৪ মে) ভোর রাত পৌনে ৪টা থেকে জলাবদ্ধতায় পানি ২ থেকে ৩ ফুট আবার কোথাও কোথাও এর বেশি উচ্চতায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বাজারের মসজিদ থেকে বার বার ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য আহ্বান করা হয়। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বাজার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

এছাড়া কানাইঘাটের লোভা ও বরাক নদীতে আসা পাহাড়ি ঢলে কানাইঘাটে ৫ হাজার বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ কানাইঘাট-শাহবাগ সড়ক তলিয়ে গেছে। সুরমা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে দ্রুত ডুবে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

সুনামগঞ্জ

সীমান্তের ওপাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা এবং অভ্যন্তরীণ নদী যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই কুশিয়ারা পাটলাইসহ সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে ভাটির উপজেলা তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশার পানি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাওর এলাকার নদনদীতে মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল প্রবল বেগে নেমে আসছে। তাহিরপুর উপজেলার রতনশ্রী, গোলাবাড়ি, মান্দিয়াতা, জয়পুরসহ টাংগুয়া ও মাটিয়ান হাওর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢলের পানিতে গ্রামের ছোট ছোট খালগুলো টইটুম্বুর হয়ে আছে। ঢলের পানিতে ভেসে আসা পলি মাটিতে হাওরের পানির রঙ বদলে গেছে। পানিশূন্য হাওরগুলোরে বিভিন্ন স্লুইসগেট রেগুলেটর ও বাঁধের ফাঁক-ফোকর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে স্লুইসগেটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।

মান্দিয়াতা গ্রামের আবদুল জলিল বলেন, এখন হাওরে পানি ঢুকলে মাছের উৎপাদন বাড়বে। হাওরে কোন ফসল নেই তাই ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাতের কারণে ধান চাল শুকাতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। গোলাবাড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, এতদিন পানি না হওয়ায় হেঁটে চলাচল করতে পারতাম এখন নৌকাছাড়া কোথাও যাওয়া যাবে না। তবে বালিজুড়ি গ্রামের কৃষকরা জানান, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে তাদের বাদাম খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে দ্রুত পানি সরে গেলে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

এদিকে তাহিরপুর আনোয়ারপুর সড়কের রক্তি নদীর তীরের সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে।

back to top