শিক্ষাজীবন হতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলা, স্কুলজীবন থেকে ঝরেপড়া রোধ, নেতৃত্বের বিকাশ, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধসহ কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করতে বিশেষ প্রকল্প চালু করেছে সরকার। সারাদেশের মোট ৫৯ উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় দুটি করে মোট ১১৮ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুধু ছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই কিশোরী সংঘ। কিশোরী সংঘের স্কুলগুলোতে চলছে আনন্দপূর্ণ শিক্ষা।
কালীগঞ্জ পল্লী উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নারীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা এছাড়া স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল করে উন্নয়নে মূল ধারায় যুক্ত করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ। এটি প্রাথমিকভাবে চলছে পাইলটিং হিসেবে। এ সংঘের প্রতিটিতে ১০০ জন করে কিশোরী সদস্য হয়েছে। এরমধ্যে ঝিনাইদহ জেলার অন্য উপজেলার মতো কালীগঞ্জ উপজেলারও কোলাবাজার ইউনাইটেড হাইস্কুল ও বালিয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গঠন করা হয়েছে কিশোরী সংঘ। প্রধান উদ্দেশ শিক্ষার্থীরা সঞ্চয় করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং লেখাপড়া শিখে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থানের সহায়তা প্রকল্প-২য় পর্যায় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প পরিচালকেরা বলছেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ রোধকল্পে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে না করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে যৌতুক, নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে এ সংঘের সদস্যরা।
এছাড়া শিক্ষাজীবনেই সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তুলতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে মাসিক ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করতে পারবে। কিশোরীদের এই জমাকৃত সঞ্চয়ের ওপর প্রতি বছর সরকার ২০০% হারে প্রণোদনার বোনাস প্রদান করবে।
কিশোরীদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে জমাকৃত টাকার দুইগুণ ফেরত পাবে। তবে ১৮ বছরের আগে এ সঞ্চয় উত্তোলন করতে পারবে না। যদি করে তাহলে তার জমাকৃত ছাড়া সরকারের দেয়া প্রণোদনার কোন টাকা পাবে না।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইলটিংয়ে সফলতা পেলে প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হবে। দেশের সব উপজেলায় বিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের নিয়ে এ সংঘ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার কোলাবাজার ইউনাইটেড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুন কান্তি বিশ^াস জানান, কিশোরীদের নিয়ে গঠিত এ প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ সফল হবে বলে বিশ^াস করি। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন, কিশোরী বয়সে সঞ্চয় করছে। ১৮ বছরের নিচে সঞ্চয় তুলতে না পারার ফলে শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া ও বাল্যবিয়ে অনেকাংশে কমে আসবে। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা প্রতি মাসে একটি করে প্রশিক্ষণ পাবে। যেখানে তাদের পুষ্টি স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে একটি ট্রেনিং হয়েছে। আমি সেখানে উপস্থিত থেকে দেখেছি, আমাদের মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যায়ের এ বয়সে বিশেষ যত্ন ও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা হয়ে উঠে না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা তাদের সমস্যাগুলো নির্দ্বিধায় চিকিৎসককে বলছে এবং সমাধান পাচ্ছে ও সচেতন হচ্ছে।
উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কিশোরী সংঘের সভাপতি ও ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফসানা আক্তার হিরা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাস টাকা জমা দিয়েছি। আমার ৬০০ টাকা জমা হয়েছে। টাকা জমাতে পারছি এজন্য আমি খুশি, আমার খুব আনন্দ লাগছে। এরই মধ্যে আমরা একটি প্রশিক্ষণ পেয়েছি। কিছুই জানতাম না, অনেক জেনেছি। বিশেষ করে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে জেনেছি, যা জানা সব কিশোরীদের খুব প্রয়োজন। ১৮ বছরের আগে লেখাপড়া ছাড়বো না।
ঝিনাইদহ বিআরডিবি’র উপ-পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, পাইলটিং প্রোগাম হিসেবে সারাদেশে ৫৯ উপজেলার ১১৮টি বিদ্যালয়ে এ সংঘ গড়ে তোলার কাজ চলছে। ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এ সংঘের সদস্য হতে পারবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানান, কিশোরী সংঘ সরকারের একটি চমৎকার প্রকল্প। কিশোরী বয়সে একটি মেয়ে সঞ্চয় করার ফলে আত্মবিশ^াস গড়ে উঠবে। প্রকল্পের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে ১৮ বছরে আগে বিয়ে না করা বা টাকা উত্তোলন করতে না পারায় শিক্ষাজীবন থেকে ঝরেপড়া এবং বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া নেতৃত্বের বিকাশ, নারী নির্যাতন, যৌতুক ও ইভটিজিং প্রতিরোধসহ কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করা।
আমাদের মেয়েরা বিশেষ একটি সময়ে পারিবারিক বা সামাজিক কিছু দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দারুণ হিনমন্যতায় ভোগে। কিন্তু এ সংঘের মেয়েরা সে সমস্য কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আমি বিশ^াস করি। এ সংঘের সদস্যরা প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা সঞ্চয় করতে পারবে। বছর শেষে তাদের সঞ্চয়ে ২০০% প্রণোদনা হিসাবে সরকার দিচ্ছে। এভাবে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হলে তার টাকা উত্তোলন করতে পারবে। ইতোমধ্যে আমি দুটি স্কুলে এই কিশোরী সংঘ গঠন করেছি। আমরা মেয়েদের জন্য এ ধরনের একটি সুযোগ পেয়ে খুশি হয়েছি। মেয়েরাও খুব খুশি।
শনিবার, ২৮ মে ২০২২
শিক্ষাজীবন হতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলা, স্কুলজীবন থেকে ঝরেপড়া রোধ, নেতৃত্বের বিকাশ, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধসহ কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করতে বিশেষ প্রকল্প চালু করেছে সরকার। সারাদেশের মোট ৫৯ উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় দুটি করে মোট ১১৮ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুধু ছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই কিশোরী সংঘ। কিশোরী সংঘের স্কুলগুলোতে চলছে আনন্দপূর্ণ শিক্ষা।
কালীগঞ্জ পল্লী উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নারীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা এছাড়া স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল করে উন্নয়নে মূল ধারায় যুক্ত করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ। এটি প্রাথমিকভাবে চলছে পাইলটিং হিসেবে। এ সংঘের প্রতিটিতে ১০০ জন করে কিশোরী সদস্য হয়েছে। এরমধ্যে ঝিনাইদহ জেলার অন্য উপজেলার মতো কালীগঞ্জ উপজেলারও কোলাবাজার ইউনাইটেড হাইস্কুল ও বালিয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গঠন করা হয়েছে কিশোরী সংঘ। প্রধান উদ্দেশ শিক্ষার্থীরা সঞ্চয় করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং লেখাপড়া শিখে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থানের সহায়তা প্রকল্প-২য় পর্যায় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প পরিচালকেরা বলছেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ রোধকল্পে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে না করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে যৌতুক, নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে এ সংঘের সদস্যরা।
এছাড়া শিক্ষাজীবনেই সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তুলতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে মাসিক ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করতে পারবে। কিশোরীদের এই জমাকৃত সঞ্চয়ের ওপর প্রতি বছর সরকার ২০০% হারে প্রণোদনার বোনাস প্রদান করবে।
কিশোরীদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে জমাকৃত টাকার দুইগুণ ফেরত পাবে। তবে ১৮ বছরের আগে এ সঞ্চয় উত্তোলন করতে পারবে না। যদি করে তাহলে তার জমাকৃত ছাড়া সরকারের দেয়া প্রণোদনার কোন টাকা পাবে না।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইলটিংয়ে সফলতা পেলে প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হবে। দেশের সব উপজেলায় বিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের নিয়ে এ সংঘ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার কোলাবাজার ইউনাইটেড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুন কান্তি বিশ^াস জানান, কিশোরীদের নিয়ে গঠিত এ প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ সফল হবে বলে বিশ^াস করি। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন, কিশোরী বয়সে সঞ্চয় করছে। ১৮ বছরের নিচে সঞ্চয় তুলতে না পারার ফলে শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া ও বাল্যবিয়ে অনেকাংশে কমে আসবে। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা প্রতি মাসে একটি করে প্রশিক্ষণ পাবে। যেখানে তাদের পুষ্টি স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে একটি ট্রেনিং হয়েছে। আমি সেখানে উপস্থিত থেকে দেখেছি, আমাদের মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যায়ের এ বয়সে বিশেষ যত্ন ও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা হয়ে উঠে না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা তাদের সমস্যাগুলো নির্দ্বিধায় চিকিৎসককে বলছে এবং সমাধান পাচ্ছে ও সচেতন হচ্ছে।
উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কিশোরী সংঘের সভাপতি ও ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফসানা আক্তার হিরা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাস টাকা জমা দিয়েছি। আমার ৬০০ টাকা জমা হয়েছে। টাকা জমাতে পারছি এজন্য আমি খুশি, আমার খুব আনন্দ লাগছে। এরই মধ্যে আমরা একটি প্রশিক্ষণ পেয়েছি। কিছুই জানতাম না, অনেক জেনেছি। বিশেষ করে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে জেনেছি, যা জানা সব কিশোরীদের খুব প্রয়োজন। ১৮ বছরের আগে লেখাপড়া ছাড়বো না।
ঝিনাইদহ বিআরডিবি’র উপ-পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, পাইলটিং প্রোগাম হিসেবে সারাদেশে ৫৯ উপজেলার ১১৮টি বিদ্যালয়ে এ সংঘ গড়ে তোলার কাজ চলছে। ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এ সংঘের সদস্য হতে পারবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানান, কিশোরী সংঘ সরকারের একটি চমৎকার প্রকল্প। কিশোরী বয়সে একটি মেয়ে সঞ্চয় করার ফলে আত্মবিশ^াস গড়ে উঠবে। প্রকল্পের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে ১৮ বছরে আগে বিয়ে না করা বা টাকা উত্তোলন করতে না পারায় শিক্ষাজীবন থেকে ঝরেপড়া এবং বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া নেতৃত্বের বিকাশ, নারী নির্যাতন, যৌতুক ও ইভটিজিং প্রতিরোধসহ কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করা।
আমাদের মেয়েরা বিশেষ একটি সময়ে পারিবারিক বা সামাজিক কিছু দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দারুণ হিনমন্যতায় ভোগে। কিন্তু এ সংঘের মেয়েরা সে সমস্য কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আমি বিশ^াস করি। এ সংঘের সদস্যরা প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা সঞ্চয় করতে পারবে। বছর শেষে তাদের সঞ্চয়ে ২০০% প্রণোদনা হিসাবে সরকার দিচ্ছে। এভাবে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হলে তার টাকা উত্তোলন করতে পারবে। ইতোমধ্যে আমি দুটি স্কুলে এই কিশোরী সংঘ গঠন করেছি। আমরা মেয়েদের জন্য এ ধরনের একটি সুযোগ পেয়ে খুশি হয়েছি। মেয়েরাও খুব খুশি।