alt

সারাদেশ

ফের বন্যাতঙ্কে সিলেটবাসী, বিদ্যুতের মিটার উচুঁস্থানে স্থানান্তরের অনুরোধ

ভেসে গেছে বই, অনিশ্চিত পড়ালেখা

আকাশ চৌধুরী, সিলেট: : বুধবার, ২৯ জুন ২০২২

ফাইল ছবি

এখানে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ। বাড়িঘর তলিয়ে আছে পানির নিচে। কেউ কেউ উচুঁ স্থানের বাড়িতে ফিরে পরিস্কার-পরিচ্ছনার মধ্যে আবারও বাড়তে শুরু করেছে সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি। বুধবার সবগুলো পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কয়েক ইঞ্চি বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা এবং লোভা নদীর পানিও। এতে করে টানা দুই দফার পর তৃতীয় দফার বন্যা আতঙ্কে ভুগছে সিলেটবাসী। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত মানুষকে তাদের বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার উচুঁ স্থানে স্থানান্তরের অনুরােধ জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়াও বেশকিছু এলাকায় পানিতে বই ভেসে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় যে যার মতাে ত্রাণ বিতরণও অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পানি এখনো পুরো নামেনি। এখনো প্লাবিত জেলার বেশিরভাগ এলাকা। তবে গত কয়েকদিন ধরে পানি কমতে শুরু করে। আর বুধবার এসে ফের বাড়ছে নদীর পানি। পানি আবার বাড়তে শুরু করায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সিলেটে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে তিনঘন্টার বৃষ্টিতে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় হাঁটু পানির জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

উপশহর, তালতালা, তেররতণসহ, মির্জাজাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পরে। এতে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের।

তবে বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় নগরের পানি কিছুটা কমেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের, সিলেট কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে লোভা নদীর পানিও।

পাউবো, সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। একারণে নদনদীর পানি বাড়ছে।

মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পরে নগরের উপশহর এলাকা। এই এলাকার বাসিন্দা মাসুক আমিন বলেন, গতরাতে আতঙ্কে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। রাত জেগে পানি পাহারা দিয়েছি। রাতে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো।

তিনি বলেন, টানা ১০দিন পর মাত্র দুইদিন আগে ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখন আবার ঘরে পানি উঠলে দুর্ভোগের কোন সীমা থাকবে না।

মঙ্গলবার রাতে পানি ঢুকে পরে জামতলা এলাকার বাসিন্দা সাগর চৌধুরীর বাসায়। তিনি বলেন, বারবার এভাবে পানি ঢুকে পরছে। আমরা কি করবো, কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তবে বুধবার সকালে ঘর থেকে পানি নেমেছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাতে নগরের কালিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী নিলাঞ্জন দাশ টুকুর দোকানেও পানি ঢুকে পরে। টুকু বলেন, ৮/৯ দিন পর গত সোমবার দোকান থেকে পানি নেমেছিলো। গতরাতে আবার ঢুকে পরে। একমাসে এই তিনবার পানি ঢুকলো।

টুকু বলেন, কান্না করা ছাড়া এখন আর কিছুই করার নাই আসলে। কারো কাছে তো অভিযোগ জানানোরও নেই। আমাদের যে কি ক্ষতি হচ্ছে তা বলে বুঝানো যাবে না।

নদী, ড্রেন ও ছড়া পানিতে ভরাট হয়ে পরায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সব জলাধার পানিতে টুইটুম্বুর। নদী পানি টানতে পারছে না। ফলে বৃষ্টির পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। একারণে অল্প বৃষ্টিতেই মঙ্গলবার নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তবে বৃষ্টি থামার পর পানি নেমে গেছে।

বিদ্যুতের মিটার উচুঁতে স্থানান্তরের পরামর্শ

বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরসহ সকল নিচু এলাকাগুলোর সকল বাসিন্দাকে তাদের বিদ্যুতের মিটার উঁচুতে স্থানান্তরের পরামর্শন দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২।

বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সিলেট দপ্তরের আওতাধীন নগরীর শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, কালিঘাটসহ অন্যান্য নিচু এলাকায় যে সকল বাসাবাড়ির মিটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো সেসব বাসাবাড়ির মিটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিরাপদ উঁচু স্থানে স্থাপনের জন্য গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ করা হলো। এ ক্ষেত্রে মিটার সরানোর ব্যয় গ্রাহককে বহন করতে হবে।

তবে মিটার পুনঃসংযোগের জন্য টোকেন বা টেম্পার টোকেন বিদ্যুৎ বিভাগ বিনামূল্যে সরবরাহ করবে।

ভেসে গেছে বই, অনিশ্চিত পড়ালেখা

বন্যার কারণে বহু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বই-খাতা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের বিকল্প বই দেবে প্রশাসনের সে সুযোগও নেই। কারণ তাদের গুদামেও নেই পর্যাপ্ত বই।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্বল্প আয়ের পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত হলেও তারিখ দিলে পড়ার মতো বই কোথায় পাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই।

সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে তোফাজ্জল হোসেন। তার বইও ভেসে গেছে বানের জলে।

তোফাজ্জল বলে, ‘বন্যার কারণে কয়েক দিন ধরেই পড়ালেখা করতে পারছি না। পরিবারের সবার সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। এখন বাড়িতে এসে দেখি ঘরে বই-খাতা, জ্যামিতি বক্স কিছুই নেই। সব পানিতে ভেসে গেছে। যেকোনো দিন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। এখন আমি বই-খাতা পাব কোথায়?’

রায়েরগাঁও এলাকার বাসিন্দা শিহাব আহমদ রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গত ১৭ জুন পানি ঢুকে পড়ে শিহাবদের ঘরে। বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে তার সব বই-খাতা।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে কোনো রকমে দিন কাটছে শিহাবদের। তার কৃষক বাবা আব্দুল করিমের আয়ের উপায় এখন বন্ধ। পানি নেমে গেলে ঘর ঠিকঠাক করার পাশাপাশি চাষের জন্য পয়সা জোগাড় করাই এখন ভীষণ চ্যালেঞ্জ তার জন্য। বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে ছেলের বই-খাতা।

সিলেটে গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। ২১ লাখেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২৯ হাজার ঘরবাড়ি। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও প্লাবিত রয়েছে জেলার বেশির ভাগ এলাকা।

বন্যায় শিহাব, তোফাজ্জলের মতো অনেক শিক্ষার্থীই হারিয়ে ফেলেছে বই-খাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম। এতে শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। সরকার থেকে দেয়া পাঠ্যবই বাজারে কিনতে পাওয়া না যাওয়ায় এগুলো হারিয়ে সংকটে পড়েছে সব শিক্ষার্থী। তাদের বইসহ শিক্ষা সরঞ্জাম দেয়া না হলে এই সমস্যার সমাধান কঠিন।

তবে বন্যায় কী পরিমাণ শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে, সেটির তথ্য নেই শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া যে যে এলাকা উদ্বৃত্ত বই রয়েছে তা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রদানের ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

তবে এটি যে সমাধান নয়, সেটি তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এবার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। সুনামগঞ্জ তো পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত বইয়ে হবে না। আবার নতুন করে এখন বই ছাপানোও কঠিন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করব, সম্ভব হলে তারা যেন সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ম্যানেজ করে নেয়ার চেষ্টা করে।’

শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা বইও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মজুত থাকা বইয়েরও ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি জানিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘স্কুল খোলার আগে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে না।’

জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ‘আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা করছি। স্কুল ভবনের কেমন ক্ষতি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা কী পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করছি। কিন্তু অনেক জায়গা থেকে এখনও পানি নামেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’

ছবি

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সুনামগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে দুই বাংলাদেশি নিহত

ছবি

আশুলিয়ায় সেপটিক ট্যাংক থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি ‘হত্যা’

ছবি

ফেনীতে বন্যার পর রান্নাঘরে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

ছবি

ফেনীতে বন্যা: ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৪ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরছেন

শ্রীনগরে ধর্ষণ মামলায় ইউপি সদস্য স্বপন মেম্বার গ্রেফতার হওয়ায় এলাকাবাসীর স্বস্তি! মিষ্টি বিতরণ

এবার ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি বিএনপির

ছবি

ছিনতাইয়ের ফোন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও প্রতিবেশী দেশে পাচার, চট্টগ্রামে অভিযান

ছবি

সন্ধান মেলেনি সাগরে নিখোঁজ চবি শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের

ছবি

তিস্তা-যমুনা চরের দারিদ্র্যতার ঝুঁকিতে ১৫ লাখ মানুষ

ছবি

বোয়ালখালীতে নিষিদ্ধ গাছের চারা ধ্বংস

নবাবগঞ্জে বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু

চট্টগ্রামে স্ত্রীকে খুন করে পালিয়ে গেল স্বামী

নিজ ঘরে স্টিলের বাক্সে গৃহবধূর মরদেহ, স্বামী পুলিশ হেফাজতে

যাত্রাবাড়ীতে কয়েল জ্বালানোর সময় বিস্ফোরণ, মারা গেলেন ইতি আক্তার

বোরকা পরে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে পোশাকশ্রমিক নিহত

ছবি

মোহনগঞ্জ সাধারণ পাঠাগার আলো ছড়ানোর ৩৭ বছর

হত্যার হুমকি দিয়ে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

কুষ্টিয়ায় অটোচালককে হত্যার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়ক অবরোধ

লালমাইয়ে চার মাদকসেবী দণ্ডিত

ছবি

যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে ভাঙন দিশাহারা নদীপাড়ের মানুষ

ছবি

চকরিয়ায় সওজের জমি থেকে অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ অভিযান

স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা পরিষ্কার করলো যুবসমাজ

বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ নিধনের অভিযোগ

ছবি

৪০ টাকার কাঁচা মরিচ এক সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁয় ২৪০ টাকা

শ্রীমঙ্গলে অবৈধ ভারতীয় চা পাতা উদ্ধার, জরিমানা

নিখোঁজ তানজিদের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

অবশেষে কাশিমপুর ক্রসবাঁধ অপসারিত

জীবন্ত গাছের নীরব কান্না পেরেক ঢুকিয়ে ফেস্টুন টাঙিয়ে প্রচার-প্রচারণা

৯ মাস পর লিবিয়া থেকে ফিরলেন সাগর, মানবপাচারের ফাঁদ থেকে মুক্ত

সুন্দরবনে ৩টি ট্রলারসহ ২৭ জেলে আটক

১১ বছর পরে ফরিদপুরে রাজন হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাচ্ছে মধুপুর শালবন

শেরপুরে নবম শ্রেণীর ছাত্রকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল

দৌলতপুরের সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

ছবি

দশমিনার সবুজবাগে সরকারি খালটি মৃতপ্রায় জলাবদ্ধ শত শত পরিবার

tab

সারাদেশ

ফের বন্যাতঙ্কে সিলেটবাসী, বিদ্যুতের মিটার উচুঁস্থানে স্থানান্তরের অনুরোধ

ভেসে গেছে বই, অনিশ্চিত পড়ালেখা

আকাশ চৌধুরী, সিলেট:

ফাইল ছবি

বুধবার, ২৯ জুন ২০২২

এখানে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ। বাড়িঘর তলিয়ে আছে পানির নিচে। কেউ কেউ উচুঁ স্থানের বাড়িতে ফিরে পরিস্কার-পরিচ্ছনার মধ্যে আবারও বাড়তে শুরু করেছে সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি। বুধবার সবগুলো পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কয়েক ইঞ্চি বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা এবং লোভা নদীর পানিও। এতে করে টানা দুই দফার পর তৃতীয় দফার বন্যা আতঙ্কে ভুগছে সিলেটবাসী। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত মানুষকে তাদের বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার উচুঁ স্থানে স্থানান্তরের অনুরােধ জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়াও বেশকিছু এলাকায় পানিতে বই ভেসে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় যে যার মতাে ত্রাণ বিতরণও অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পানি এখনো পুরো নামেনি। এখনো প্লাবিত জেলার বেশিরভাগ এলাকা। তবে গত কয়েকদিন ধরে পানি কমতে শুরু করে। আর বুধবার এসে ফের বাড়ছে নদীর পানি। পানি আবার বাড়তে শুরু করায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সিলেটে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে তিনঘন্টার বৃষ্টিতে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় হাঁটু পানির জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

উপশহর, তালতালা, তেররতণসহ, মির্জাজাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পরে। এতে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের।

তবে বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় নগরের পানি কিছুটা কমেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের, সিলেট কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে লোভা নদীর পানিও।

পাউবো, সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। একারণে নদনদীর পানি বাড়ছে।

মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পরে নগরের উপশহর এলাকা। এই এলাকার বাসিন্দা মাসুক আমিন বলেন, গতরাতে আতঙ্কে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। রাত জেগে পানি পাহারা দিয়েছি। রাতে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো।

তিনি বলেন, টানা ১০দিন পর মাত্র দুইদিন আগে ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখন আবার ঘরে পানি উঠলে দুর্ভোগের কোন সীমা থাকবে না।

মঙ্গলবার রাতে পানি ঢুকে পরে জামতলা এলাকার বাসিন্দা সাগর চৌধুরীর বাসায়। তিনি বলেন, বারবার এভাবে পানি ঢুকে পরছে। আমরা কি করবো, কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তবে বুধবার সকালে ঘর থেকে পানি নেমেছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাতে নগরের কালিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী নিলাঞ্জন দাশ টুকুর দোকানেও পানি ঢুকে পরে। টুকু বলেন, ৮/৯ দিন পর গত সোমবার দোকান থেকে পানি নেমেছিলো। গতরাতে আবার ঢুকে পরে। একমাসে এই তিনবার পানি ঢুকলো।

টুকু বলেন, কান্না করা ছাড়া এখন আর কিছুই করার নাই আসলে। কারো কাছে তো অভিযোগ জানানোরও নেই। আমাদের যে কি ক্ষতি হচ্ছে তা বলে বুঝানো যাবে না।

নদী, ড্রেন ও ছড়া পানিতে ভরাট হয়ে পরায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সব জলাধার পানিতে টুইটুম্বুর। নদী পানি টানতে পারছে না। ফলে বৃষ্টির পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। একারণে অল্প বৃষ্টিতেই মঙ্গলবার নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তবে বৃষ্টি থামার পর পানি নেমে গেছে।

বিদ্যুতের মিটার উচুঁতে স্থানান্তরের পরামর্শ

বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরসহ সকল নিচু এলাকাগুলোর সকল বাসিন্দাকে তাদের বিদ্যুতের মিটার উঁচুতে স্থানান্তরের পরামর্শন দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২।

বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সিলেট দপ্তরের আওতাধীন নগরীর শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, কালিঘাটসহ অন্যান্য নিচু এলাকায় যে সকল বাসাবাড়ির মিটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো সেসব বাসাবাড়ির মিটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিরাপদ উঁচু স্থানে স্থাপনের জন্য গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ করা হলো। এ ক্ষেত্রে মিটার সরানোর ব্যয় গ্রাহককে বহন করতে হবে।

তবে মিটার পুনঃসংযোগের জন্য টোকেন বা টেম্পার টোকেন বিদ্যুৎ বিভাগ বিনামূল্যে সরবরাহ করবে।

ভেসে গেছে বই, অনিশ্চিত পড়ালেখা

বন্যার কারণে বহু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বই-খাতা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের বিকল্প বই দেবে প্রশাসনের সে সুযোগও নেই। কারণ তাদের গুদামেও নেই পর্যাপ্ত বই।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্বল্প আয়ের পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত হলেও তারিখ দিলে পড়ার মতো বই কোথায় পাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই।

সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে তোফাজ্জল হোসেন। তার বইও ভেসে গেছে বানের জলে।

তোফাজ্জল বলে, ‘বন্যার কারণে কয়েক দিন ধরেই পড়ালেখা করতে পারছি না। পরিবারের সবার সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। এখন বাড়িতে এসে দেখি ঘরে বই-খাতা, জ্যামিতি বক্স কিছুই নেই। সব পানিতে ভেসে গেছে। যেকোনো দিন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। এখন আমি বই-খাতা পাব কোথায়?’

রায়েরগাঁও এলাকার বাসিন্দা শিহাব আহমদ রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গত ১৭ জুন পানি ঢুকে পড়ে শিহাবদের ঘরে। বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে তার সব বই-খাতা।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে কোনো রকমে দিন কাটছে শিহাবদের। তার কৃষক বাবা আব্দুল করিমের আয়ের উপায় এখন বন্ধ। পানি নেমে গেলে ঘর ঠিকঠাক করার পাশাপাশি চাষের জন্য পয়সা জোগাড় করাই এখন ভীষণ চ্যালেঞ্জ তার জন্য। বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে ছেলের বই-খাতা।

সিলেটে গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। ২১ লাখেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২৯ হাজার ঘরবাড়ি। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও প্লাবিত রয়েছে জেলার বেশির ভাগ এলাকা।

বন্যায় শিহাব, তোফাজ্জলের মতো অনেক শিক্ষার্থীই হারিয়ে ফেলেছে বই-খাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম। এতে শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। সরকার থেকে দেয়া পাঠ্যবই বাজারে কিনতে পাওয়া না যাওয়ায় এগুলো হারিয়ে সংকটে পড়েছে সব শিক্ষার্থী। তাদের বইসহ শিক্ষা সরঞ্জাম দেয়া না হলে এই সমস্যার সমাধান কঠিন।

তবে বন্যায় কী পরিমাণ শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে, সেটির তথ্য নেই শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া যে যে এলাকা উদ্বৃত্ত বই রয়েছে তা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রদানের ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

তবে এটি যে সমাধান নয়, সেটি তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এবার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। সুনামগঞ্জ তো পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত বইয়ে হবে না। আবার নতুন করে এখন বই ছাপানোও কঠিন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করব, সম্ভব হলে তারা যেন সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ম্যানেজ করে নেয়ার চেষ্টা করে।’

শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা বইও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মজুত থাকা বইয়েরও ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি জানিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘স্কুল খোলার আগে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে না।’

জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ‘আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা করছি। স্কুল ভবনের কেমন ক্ষতি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা কী পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করছি। কিন্তু অনেক জায়গা থেকে এখনও পানি নামেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’

back to top