alt

সারাদেশ

মসজিদের নামে জায়গা দখল, পরে বহুতল ভবন নির্মাণ!

এসপি অফিসের সামনেই সরকারি কর্মচারিদের দখল যজ্ঞ

জেলা বার্তা পরিবেশক, কক্সবাজার: : শনিবার, ০৬ আগস্ট ২০২২

কক্সবাজার এসপি অফিসের সামনেই গণপূর্তের জমিতে প্রথমে মসজিদ নির্মাণের ব্যানার টাঙ্গিয়ে ভবণ নির্মাণের কাজ শুরু করেন জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি। পরে ভবণের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেই ব্যানার উঠিয়ে করা হয় মার্কেট। বর্তমানে ওই মাকের্টে ১১টি দোকান খোলা হয়েছে। রাখা হয়নি মসজিদের জন্য কোন স্থান।

দীর্ঘ ৬ মাস ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় এ মার্কেট নির্মাণ করা হলেও কার্যত কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার শহরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দেয়াল ঘেষে শহীদ স্মরণীতে গড়ে তোলা হয় মার্কেটটি। মার্কেটটি নির্মাণের সময় মসজিদের ব্যানার টাঙ্গিয়ে ব্যাক্তি বিশেষের কাজ থেকে মোটা অংকের টাকাও উত্তোলন করা হয়। কিন্তু, ভবণ নির্মাণ যখন শেষ পর্যায়ে তখন উধাও হয়ে যায় ব্যানারটি। একইভাবে আত্মসাত করা হয় মসজিদের জন্য উত্তেলিত টাকা।

গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্টরা কক্সবাজার সদর থানায় জিডি’র পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে দায় ছেড়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি।

সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের একটি দল অভিযান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। পরে দলটির নেতৃত্ব দানকারি দুদকের সহকারি পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন প্রধান কার্যালয়ে সরকারি জমি উদ্ধারে সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। তবে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোন ধরণের নির্দেশনা আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরের শহীদ সরণিস্থ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে রাস্তার পাশে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন ৭ শতক জমি রয়েছে। ওই জমি গত ২০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি।

গত বছর নভেম্বর মাসে দখলকৃত ওই জায়গায় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি পাকা স্থাপনার বহুতল ভবন নির্মাণকাজ শুরু করলে গণপূর্ত বিভাগ আপত্তি জানায়। এখন সেখানে পাকা স্থাপনার মার্কেট নির্মাণ করে বিভিন্ন লোকজনের নিকট দোকান ভাড়া দিয়েছে। আর প্রতিটি দোকান ভাড়ার চুক্তি বাবদ প্রতিজনের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।

এ নিয়ে গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টির ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান। তবে এ ব্যাপারে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন তিনি।

পরে যোগাযোগ করা হলে আরিফুর রহমান বলেন, কক্সবাজার শহরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন কিছু পরিমান জায়গা দীর্ঘ বছর ধরে অবৈধভাবে ভোগ দখলে রেখেছে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি। গত বছর নভেম্বর মাসে সমিতির উদ্যোগে সেখানে পাকা স্থাপনার বহুতল ভবন নির্মাণকাজ শুরু করে। বিষয়টি নজরে এলে গণপূর্ত বিভাগ আপত্তি জানায়। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি আপত্তি অমান্য করে বহুতল ভবনের পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর ৩০ নভেম্বর আমি (আরিফুর রহমান) বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগে সমিতির বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছি। এরপর জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি।

গণপূর্ত বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে দখলকৃত জায়গায় বহুতল ভবনের এক তলা পাকা স্থাপনার মার্কেট নির্মাণ কাজ শেষ করেছে জেলা চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি। মার্কেটে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নির্মিত দোকান ঘর বিভিন্ন লোকজনের কাছে ভাড়াও দিয়েছে। অথচ অভিযোগ জানানোর অন্তত ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা প্রশাসন ও কউক কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। এমন কি থানা পুলিশও ঘটনার ব্যাপারে কোন ধরণের প্রতিবেদন দেননি।

সচেতন মহল ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গণপূর্ত বিভাগের মালিকাধীন সরকারি মূল্যবান জায়গা দখলে নিতে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি বহুতল ভবন নির্মাণে অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সমিতির উদ্যোগে বিরোধীয় জায়গায় ‘মসজিদ স্থাপনের’ ব্যানার সাটাই করে। এমন কি সমিতির কর্তরা মসজিদ নির্মাণের নামে স্থানীয় বিশিষ্টজনের কাছ থেকে অনুদানের নগদ টাকাও সংগ্রহ করেছে। কিন্তু সরকারি ওই জায়গায় মসজিদ স্থাপিত না হলেও নির্মিত হয়েছে বাণ্যিজিক ভবনের মার্কেট। এখন ওই মার্কেটের দোকানগুলো মোটা অংকের টাকায় চুক্তি করে ভাড়া দেয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী সরকারি মূল্যবান জায়গা দখল করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অভিযোগে দুদকের কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের তদন্ত করে সত্যতা পায় কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন। এ নিয়ে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার শহরে পুলিশ সুপার কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় জেলা চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতির উদ্যোগে সরকারি জায়গা দখল করে বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগে দুদকের একটি দল অভিযান চালিয়েছিল।

এতে অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে জায়গা দখলের অভিযোগের সত্যতা পায়। এর পরপরই জেলা চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতির উদ্যোগে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সবধরণের স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ আকারে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু, প্রতিবেদন পাঠানোর প্রায় ৭ মাস অতিক্রান্ত হলেও দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এখনও পর্যন্ত কোন ধরণের নির্দেশনা পাননি বলে জানান দুদকের এ সহকারি পরিচালক।

অভিযোগের ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম গনমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোনভাবেই জড়িত নন। প্রস্তাবিত মসজিদ ও মার্কেট নির্মাণের জন্য সমিতির উদ্যোগে সভাপতিসহ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। সমিতির ওই কমিটির সদস্যরাই এ ব্যাপারে অভিযোগের সত্যতা ভাল বলতে পারেন বলে জানান কর্মচারি সমিতির এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আমিন আল পারভেজ বলেন, যেহেতু কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের, সেহেতু বিষয়টি আমাদের উপর বর্তায়। এজন্য আমি নিজে গিয়ে ভবণ নির্মাণ না করতে নিষেধ করেছি। আমি তাদের (কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) পরিস্কার করে বলে দিয়েছি জমিটি গণপূর্ত বিভাগের। গণপূর্ত অনুমতি ছাড়া কোন ধরণের বন্দোবস্তিও দেয়া যাবে না। বন্দোবস্তি পেতে হলে গণপূর্তের লিখিত অনুমতি লাগবে। তিনি আরও বলেন, গণপূর্ত বিভাগের জমিতে ভবণ নির্মাণের বিষয়টি একান্ত গণপূর্ত বিভাগ দেখভাল করবেন। এতে অনর্থক কক্সবাজার জেলা প্রশাসন দায় নেবে না।

ছবি

‘আনন্দে’ শুরুর পর সড়কের ঈদযাত্রা কেন ‘বিষাদে’

ছবি

ঘটনা চাপা দিতে ১৫০ বস্তা সিমেন্ট সরিয়ে ফেলার অভিযোগ

মীরসরাইয়ে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে

ছবি

মাধবপুরে বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার

ছবি

টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ১২টি খাদ্য গুদাম

ছবি

জলকেলি উৎসবে মুখরিত কক্সবাজরের রাখাইন পল্লী

শেরপুরে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ উদ্বোধন

কেশবপুরে সকাল-সন্ধ্যা বাজারের দখল নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি উচ্ছেদ আতঙ্কে অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে সরকারি রাস্তার ১২০টি গাছ কর্তনের অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে

পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করেন পুত্রবধূ

ছবি

মির্জাগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ছবি

নড়াইলের শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা

ছবি

প্রেমিকার ওপর অভিমান প্রেমিকের আত্মহত্যা

ছবি

শ্যামনগর পদ্মপুকুরের প্রধান সড়কের একাংশ যেন বালুর স্তুপে পরিণত

আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলায় নাই : তাহেরপুত্র বিপ্লব

ছবি

কক্সবাজারে রিসোর্টে পযটক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ছবি

ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা

ছবি

সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

টোলপ্লাজায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১৪

ছবি

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বেশিরভাগ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ

কোম্পানীগঞ্জে পর্যটকের সঙ্গে এএসপির মারামারি

ছবি

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ গোপালগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

শার্শায় সাংবাদিকের উপর হামলা

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সালথায় স্বামীর উপর অভিমান করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

শিবগঞ্জে পরিবারের উপর অভিমান করে কিশোরের আত্মহত্যা

ছবি

ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

ছবি

নরসিংদীতে বজ্রপাতে নিহত ১, আহত ২

ছবি

হাওরে বৃষ্টি জলাবদ্ধতায় দেড় হাজার একর বোরো জমি বিনষ্টের পথে, কৃষকের আহাজারি

ছবি

রংপুরে বাসের টিকেট বিক্রিতে নৈরাজ্য, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছবি

দর্শনার্থীতে মুখরিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

ছবি

গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজার

ছবি

রায়পুরায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০

tab

সারাদেশ

মসজিদের নামে জায়গা দখল, পরে বহুতল ভবন নির্মাণ!

এসপি অফিসের সামনেই সরকারি কর্মচারিদের দখল যজ্ঞ

জেলা বার্তা পরিবেশক, কক্সবাজার:

শনিবার, ০৬ আগস্ট ২০২২

কক্সবাজার এসপি অফিসের সামনেই গণপূর্তের জমিতে প্রথমে মসজিদ নির্মাণের ব্যানার টাঙ্গিয়ে ভবণ নির্মাণের কাজ শুরু করেন জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি। পরে ভবণের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেই ব্যানার উঠিয়ে করা হয় মার্কেট। বর্তমানে ওই মাকের্টে ১১টি দোকান খোলা হয়েছে। রাখা হয়নি মসজিদের জন্য কোন স্থান।

দীর্ঘ ৬ মাস ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় এ মার্কেট নির্মাণ করা হলেও কার্যত কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার শহরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দেয়াল ঘেষে শহীদ স্মরণীতে গড়ে তোলা হয় মার্কেটটি। মার্কেটটি নির্মাণের সময় মসজিদের ব্যানার টাঙ্গিয়ে ব্যাক্তি বিশেষের কাজ থেকে মোটা অংকের টাকাও উত্তোলন করা হয়। কিন্তু, ভবণ নির্মাণ যখন শেষ পর্যায়ে তখন উধাও হয়ে যায় ব্যানারটি। একইভাবে আত্মসাত করা হয় মসজিদের জন্য উত্তেলিত টাকা।

গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্টরা কক্সবাজার সদর থানায় জিডি’র পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে দায় ছেড়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি।

সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের একটি দল অভিযান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। পরে দলটির নেতৃত্ব দানকারি দুদকের সহকারি পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন প্রধান কার্যালয়ে সরকারি জমি উদ্ধারে সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। তবে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোন ধরণের নির্দেশনা আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরের শহীদ সরণিস্থ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে রাস্তার পাশে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন ৭ শতক জমি রয়েছে। ওই জমি গত ২০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি।

গত বছর নভেম্বর মাসে দখলকৃত ওই জায়গায় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি পাকা স্থাপনার বহুতল ভবন নির্মাণকাজ শুরু করলে গণপূর্ত বিভাগ আপত্তি জানায়। এখন সেখানে পাকা স্থাপনার মার্কেট নির্মাণ করে বিভিন্ন লোকজনের নিকট দোকান ভাড়া দিয়েছে। আর প্রতিটি দোকান ভাড়ার চুক্তি বাবদ প্রতিজনের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।

এ নিয়ে গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টির ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান। তবে এ ব্যাপারে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন তিনি।

পরে যোগাযোগ করা হলে আরিফুর রহমান বলেন, কক্সবাজার শহরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন কিছু পরিমান জায়গা দীর্ঘ বছর ধরে অবৈধভাবে ভোগ দখলে রেখেছে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি। গত বছর নভেম্বর মাসে সমিতির উদ্যোগে সেখানে পাকা স্থাপনার বহুতল ভবন নির্মাণকাজ শুরু করে। বিষয়টি নজরে এলে গণপূর্ত বিভাগ আপত্তি জানায়। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি আপত্তি অমান্য করে বহুতল ভবনের পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর ৩০ নভেম্বর আমি (আরিফুর রহমান) বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগে সমিতির বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছি। এরপর জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি।

গণপূর্ত বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে দখলকৃত জায়গায় বহুতল ভবনের এক তলা পাকা স্থাপনার মার্কেট নির্মাণ কাজ শেষ করেছে জেলা চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি। মার্কেটে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নির্মিত দোকান ঘর বিভিন্ন লোকজনের কাছে ভাড়াও দিয়েছে। অথচ অভিযোগ জানানোর অন্তত ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা প্রশাসন ও কউক কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। এমন কি থানা পুলিশও ঘটনার ব্যাপারে কোন ধরণের প্রতিবেদন দেননি।

সচেতন মহল ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গণপূর্ত বিভাগের মালিকাধীন সরকারি মূল্যবান জায়গা দখলে নিতে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি বহুতল ভবন নির্মাণে অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সমিতির উদ্যোগে বিরোধীয় জায়গায় ‘মসজিদ স্থাপনের’ ব্যানার সাটাই করে। এমন কি সমিতির কর্তরা মসজিদ নির্মাণের নামে স্থানীয় বিশিষ্টজনের কাছ থেকে অনুদানের নগদ টাকাও সংগ্রহ করেছে। কিন্তু সরকারি ওই জায়গায় মসজিদ স্থাপিত না হলেও নির্মিত হয়েছে বাণ্যিজিক ভবনের মার্কেট। এখন ওই মার্কেটের দোকানগুলো মোটা অংকের টাকায় চুক্তি করে ভাড়া দেয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী সরকারি মূল্যবান জায়গা দখল করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অভিযোগে দুদকের কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের তদন্ত করে সত্যতা পায় কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন। এ নিয়ে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার শহরে পুলিশ সুপার কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় জেলা চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতির উদ্যোগে সরকারি জায়গা দখল করে বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগে দুদকের একটি দল অভিযান চালিয়েছিল।

এতে অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে জায়গা দখলের অভিযোগের সত্যতা পায়। এর পরপরই জেলা চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতির উদ্যোগে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সবধরণের স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ আকারে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু, প্রতিবেদন পাঠানোর প্রায় ৭ মাস অতিক্রান্ত হলেও দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এখনও পর্যন্ত কোন ধরণের নির্দেশনা পাননি বলে জানান দুদকের এ সহকারি পরিচালক।

অভিযোগের ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম গনমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোনভাবেই জড়িত নন। প্রস্তাবিত মসজিদ ও মার্কেট নির্মাণের জন্য সমিতির উদ্যোগে সভাপতিসহ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। সমিতির ওই কমিটির সদস্যরাই এ ব্যাপারে অভিযোগের সত্যতা ভাল বলতে পারেন বলে জানান কর্মচারি সমিতির এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আমিন আল পারভেজ বলেন, যেহেতু কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের, সেহেতু বিষয়টি আমাদের উপর বর্তায়। এজন্য আমি নিজে গিয়ে ভবণ নির্মাণ না করতে নিষেধ করেছি। আমি তাদের (কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) পরিস্কার করে বলে দিয়েছি জমিটি গণপূর্ত বিভাগের। গণপূর্ত অনুমতি ছাড়া কোন ধরণের বন্দোবস্তিও দেয়া যাবে না। বন্দোবস্তি পেতে হলে গণপূর্তের লিখিত অনুমতি লাগবে। তিনি আরও বলেন, গণপূর্ত বিভাগের জমিতে ভবণ নির্মাণের বিষয়টি একান্ত গণপূর্ত বিভাগ দেখভাল করবেন। এতে অনর্থক কক্সবাজার জেলা প্রশাসন দায় নেবে না।

back to top