মোহাম্মদপুরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন তারেক। রোজকার মতো সোমবার (৮ আগস্ট) সকালেও কারওয়ান বাজারে গিয়েছিলেন পাইকারিতে পণ্য কিনতে। তিনি বলছেন সেখানে গিয়ে তিনি ‘অবাক’।
তারেক বলেন, ‘২০ টাকা কেজির ঢেঁড়স আইজ (সোমবার) কিনছি ৩৫ টাকায়। বিক্রি করসি ৫০ টাকায়। খরচ বেশি হওয়ায় দাম বেশি।’
‘কারওয়ান বাজারে সবকিছুর দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। আমি অবাক। দাম বেশি থাকায় এক পাল্লা-দুই পাল্লা কইরা মাল আনসি। দাম বেশি হইলে বিক্রি কম হয়।’
তারেক বলছেন তার ভ্যানের ভাড়াও বেড়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী করিম মিয়া বলেন, ‘আমার এইখানে বগুড়া থিকা ট্রাকে সবজি আসে। ট্রাকে নতুন করে খরচ বাড়ছে ৩ হাজার ৬০ টাকা। পরিবহন খরচের কারণে পণ্যের দাম বেশি।’
কাঁচাবাজারের পাশাপাশি অন্য নিত্যপণ্যের দামও রেড়ে গেছে। মোহাম্মপুরের মাসুম ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক মাসুম মিয়া বলছেন, রোববার (৭ আগস্ট) থেকে চালের প্রতি বস্তা দেড় থেকে দুইশ’ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যে চাল তিনি ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করতেন সেই চাল ৭২ টাকায় বিক্রি করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন ডিলার তাদের পণ্যর দাম বাড়ায়ে দিয়েছে। যেমন- তীর সোয়াবিন তেলের গায়ে যে দাম দাম দেয়া আছে আমাদের সেই টাকা দিয়াই কিনতে হচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারের ট্রাকস্ট্যান্ডে কথা হয় ছোট পিকআপের মালিক মিঠু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে আমার ছোট পিকআপ চলে। আগে যেখানে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ভাড়া ছিল সেটা আজ ১০ হাজার টাকায় ভাড়া দিলাম।’
‘উপায় নাই ভাই, শুধু তেলে না সবকিছুতেই দাম বাড়সে।’
শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে ৪৩ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। আর তার প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন ও নিত্যপণ্যের দাম যে বেড়ে গেল তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মনি বেগম। আদি বাড়ী কুমিল্লায়, তবে থাকেন ঢাকায়। বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মে সহায়তা করেন। স্বামী দিনমজুর, কখনো রিকশা চালান। স্বামী-স্ত্রী দুইজনের আয়েও এমনিতেই সংসারে টানাটানি। আর এখন পড়েছেন আরও সংকটে।
মনি বেগম বলেন, ‘দুইজন কাজ কইরা যা আয় হয় তা দিয়া ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, বাড়িভাড়া, সংসারের সব খরচ। আগে থিকাই জিনিসপত্রের দাম অনেক চড়া। আর গত কয়েকদিনে তরিতরকারির দাম যে হারে বাড়সে তাতে কিভাবে সংসার চালামু বুইঝা পাই না।’
‘যে চাল খাই, দাম ৫০ টাকা। তয় কাইল চালের দোকানদার কইছে; টাকা পয়সা থাকলে চাল কিনা রাখেন, পরে ১০০ টাকা কেজিতে কিনতে হইবো।’
‘সন্তানগো লেখাপড়ার জন্যই কষ্ট কইরা এই শহরে থাকা। কিন্তু, এইভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে যাব কই, খামু কী। গ্রামে গিয়াও তো লাভ নাই, চাষ-আবাদের তো জায়গা জমি নাই,’ বলেন মনি বেগম।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউনহল কাঁচাবাজারে কথা হয় রাগীব আহসানের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ১০ শতাংশ করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহ আগে যে সবজি ৬০ টাকায় কিনেছিলাম আজ তা ৮০ টাকায় কিনতে হলো।’
‘প্রভাব শুধু কাঁচাবাজারে নয় সব জায়গায় পড়েছে। আয় বাড়ে নাই, কিন্তু ব্যয় প্রচুর বেড়েছে। এখন আমাদের বৌ-বাচ্চার যার যেরকম ছোট ছোট সঞ্চয় আছে সেগুলো ভাঙ্গিয়ে খাচ্ছি।’
কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছেন আনোয়র সাদাত। তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আয়ের একটা ধাক্কা খাইছি। তবে, এইবার যেইভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে তাতে টিকে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও ছেলে-মেয়েদের স্কুলের বেতন দিতে পারি নাই।’
‘আগামী মাসে হয়তো বাড়ি ভাড়ার সার্র্ভিস চার্জ বেড়ে যাবে, মহা দুশ্চিন্তায় আছি।’
মোহম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মোকামে কৃষিপণ্যের দাম বাড়সে সেইসঙ্গে পরিবহন ব্যয়ও এখন বাড়তি। আগে যে ছোট ট্রাক ভাড়া ছিল আটশ’ টাকা এখন তা বারোশ’ টাকা হয়া গেছে। তাই আমাদেরও পণ্যের দাম বাড়াইতে হচ্ছে।’
‘দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নাই। আমরা তো আর বাড়ি থিকা টাকা নিয়া আইসা ভাড়া দিব না।’
সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০২২
মোহাম্মদপুরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন তারেক। রোজকার মতো সোমবার (৮ আগস্ট) সকালেও কারওয়ান বাজারে গিয়েছিলেন পাইকারিতে পণ্য কিনতে। তিনি বলছেন সেখানে গিয়ে তিনি ‘অবাক’।
তারেক বলেন, ‘২০ টাকা কেজির ঢেঁড়স আইজ (সোমবার) কিনছি ৩৫ টাকায়। বিক্রি করসি ৫০ টাকায়। খরচ বেশি হওয়ায় দাম বেশি।’
‘কারওয়ান বাজারে সবকিছুর দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। আমি অবাক। দাম বেশি থাকায় এক পাল্লা-দুই পাল্লা কইরা মাল আনসি। দাম বেশি হইলে বিক্রি কম হয়।’
তারেক বলছেন তার ভ্যানের ভাড়াও বেড়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী করিম মিয়া বলেন, ‘আমার এইখানে বগুড়া থিকা ট্রাকে সবজি আসে। ট্রাকে নতুন করে খরচ বাড়ছে ৩ হাজার ৬০ টাকা। পরিবহন খরচের কারণে পণ্যের দাম বেশি।’
কাঁচাবাজারের পাশাপাশি অন্য নিত্যপণ্যের দামও রেড়ে গেছে। মোহাম্মপুরের মাসুম ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক মাসুম মিয়া বলছেন, রোববার (৭ আগস্ট) থেকে চালের প্রতি বস্তা দেড় থেকে দুইশ’ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যে চাল তিনি ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করতেন সেই চাল ৭২ টাকায় বিক্রি করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন ডিলার তাদের পণ্যর দাম বাড়ায়ে দিয়েছে। যেমন- তীর সোয়াবিন তেলের গায়ে যে দাম দাম দেয়া আছে আমাদের সেই টাকা দিয়াই কিনতে হচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারের ট্রাকস্ট্যান্ডে কথা হয় ছোট পিকআপের মালিক মিঠু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে আমার ছোট পিকআপ চলে। আগে যেখানে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ভাড়া ছিল সেটা আজ ১০ হাজার টাকায় ভাড়া দিলাম।’
‘উপায় নাই ভাই, শুধু তেলে না সবকিছুতেই দাম বাড়সে।’
শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে ৪৩ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। আর তার প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন ও নিত্যপণ্যের দাম যে বেড়ে গেল তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মনি বেগম। আদি বাড়ী কুমিল্লায়, তবে থাকেন ঢাকায়। বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মে সহায়তা করেন। স্বামী দিনমজুর, কখনো রিকশা চালান। স্বামী-স্ত্রী দুইজনের আয়েও এমনিতেই সংসারে টানাটানি। আর এখন পড়েছেন আরও সংকটে।
মনি বেগম বলেন, ‘দুইজন কাজ কইরা যা আয় হয় তা দিয়া ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, বাড়িভাড়া, সংসারের সব খরচ। আগে থিকাই জিনিসপত্রের দাম অনেক চড়া। আর গত কয়েকদিনে তরিতরকারির দাম যে হারে বাড়সে তাতে কিভাবে সংসার চালামু বুইঝা পাই না।’
‘যে চাল খাই, দাম ৫০ টাকা। তয় কাইল চালের দোকানদার কইছে; টাকা পয়সা থাকলে চাল কিনা রাখেন, পরে ১০০ টাকা কেজিতে কিনতে হইবো।’
‘সন্তানগো লেখাপড়ার জন্যই কষ্ট কইরা এই শহরে থাকা। কিন্তু, এইভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে যাব কই, খামু কী। গ্রামে গিয়াও তো লাভ নাই, চাষ-আবাদের তো জায়গা জমি নাই,’ বলেন মনি বেগম।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউনহল কাঁচাবাজারে কথা হয় রাগীব আহসানের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ১০ শতাংশ করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহ আগে যে সবজি ৬০ টাকায় কিনেছিলাম আজ তা ৮০ টাকায় কিনতে হলো।’
‘প্রভাব শুধু কাঁচাবাজারে নয় সব জায়গায় পড়েছে। আয় বাড়ে নাই, কিন্তু ব্যয় প্রচুর বেড়েছে। এখন আমাদের বৌ-বাচ্চার যার যেরকম ছোট ছোট সঞ্চয় আছে সেগুলো ভাঙ্গিয়ে খাচ্ছি।’
কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছেন আনোয়র সাদাত। তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আয়ের একটা ধাক্কা খাইছি। তবে, এইবার যেইভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে তাতে টিকে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও ছেলে-মেয়েদের স্কুলের বেতন দিতে পারি নাই।’
‘আগামী মাসে হয়তো বাড়ি ভাড়ার সার্র্ভিস চার্জ বেড়ে যাবে, মহা দুশ্চিন্তায় আছি।’
মোহম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মোকামে কৃষিপণ্যের দাম বাড়সে সেইসঙ্গে পরিবহন ব্যয়ও এখন বাড়তি। আগে যে ছোট ট্রাক ভাড়া ছিল আটশ’ টাকা এখন তা বারোশ’ টাকা হয়া গেছে। তাই আমাদেরও পণ্যের দাম বাড়াইতে হচ্ছে।’
‘দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নাই। আমরা তো আর বাড়ি থিকা টাকা নিয়া আইসা ভাড়া দিব না।’