বুধবার দুপুর। নারায়ণগঞ্জের বন্দরের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির সামনের পার্কে ঘুরতে এসেছেন বন্দর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিন শিক্ষার্থী। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তারা সেলফি তুলছিলেন। তখনই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গালাগাল দিতে শুরু করে এক বখাটে তরুণ। এক পর্যায়ে ওই বখাটে শিক্ষার্থীদের গালাগাল দিয়ে অপমান করে পার্ক থেকে বের করে দেয়।
শিক্ষার্থীদের থেকে সামান্য দূরে বসেছিলেন চারজন সংবাদকর্মী। ওই তরুণ তখন সংবাদকর্মীদেরও পার্ক থেকে বের হয়ে যেতে বলে। সংবাদকর্মীরা তার পরিচয় আর পার্ক থেকে সকলকে বের করে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
স্থানীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদক আফসানা আক্তার বলেন, আমরা ওই বখাটে তরুণকে এমন আচরণের কারণ জানতে চাইলে খুবই বাজে ব্যবহার করে। মারমুখী ভঙ্গিতে বখাটে বলে, ‘এতো বড় সাহস, তোরা আমারে প্রশ্ন করস।’ ওই ছেলের সঙ্গে তখন আরো কয়েকজন কিশোর ও তরুণ বয়সী ছেলে এসে যোগ দেয়। আমরা তখন বন্দর থানার ওসিকে বিষয়টি জানাই।
তিনি আরও বলেন, সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীরা যখন পার্ক থেকে বের হয়ে আসে, পার্কের ভেতরে তখন অন্তত ৩০ জন বখাটে তরুণের আড্ডা। পার্কের এক কোনে একটি ইজিবাইকে বসে ইয়াবা সেবন করছিল আরেকদল বখাটে। মোটরসাইকেলে করে এসে মাদক ক্রয় করছিল আরও চার যুবক।
পার্কের বাইরে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। অপমানে মুষড়ে পড়া এক শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ক্লাস শেষ করে কোচিং এর জন্য অপেক্ষা করছিল তারা। কোচিং শুরু হতে আরো এক ঘন্টা বাকি। সময় কাটাতে নদীর পাড় হাঁটতে এসেছিলেন। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে মাদকসেবীদের কাছে এভাবে অপমানিত হতে হবে সেটা তারা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি।
পার্কের বাইরের দোকান মালিক ও স্থানীয় লোকজন জানান, তিন বছর আগেও জায়গাটিতে বন্দরের আমিন ও রুপালী আবাসিক এলাকার লোকজন সকাল-সন্ধ্যা হাঁটতে আসতেন। বিনোদনের জায়গা না থাকায় শহর ও বন্দরের শিক্ষার্থী অভিভাবকরা ঘুরতে আসতেন মেরিন টেকনোলজির পার্কে। কিন্তু দিনে দিনে স্থানটি মাদকসেবী আর কিশোর গ্যাং এর দখলে চলে যাওয়ায় এখন আর কেউ পার্কে আসেন না। যারাই বা ভুল করে আসেন তারাই কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীদের দ্বারা ছিনতাই, মারধর ও হয়রানির শিকার হন। দিনের পর দিন স্থানটি কিশোর গ্যাং এর আড্ডাস্থলে পরিণত হলেও পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা দেখা যায় না।
নাম না প্রকাশের শর্তে পার্কের পাশের এক দোকান মালিক বলেন, এই মাদকসেবীরা স্থানটিতে কেবল মাদকই সেবন করে না। পাশাপাশি স্থানটিতে মাদক বেঁচাকেনাও চলে। নদী পথে মাদক আসে। পার্কে বসে সেবন ও বিক্রি হয়। মাদক বেঁচাকেনা নির্বিঘেœ করতে পার্কে বাইরের লোকজনকে বসতে দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, মেরিন ইনস্টিটিউট ও প্রায় সময়ই নৌবাহিনীর লোকজনের আসা যাওয়া করে। তাছাড়া পার্কটির দক্ষিণ পাশ থেকে মাত্র ৩০০ গজের মধ্যেই বন্দর থানা। এক কিলোমিটারের মধ্যেই বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এমন একটি জায়গা পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া মাদকসেবীদের দখলে চলে যেতে পারে না।
নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সবসময়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগী। অনেক বিদেশগামী এখানে তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিতে এসে ছিনতাই ও মারধরের শিকার হয়েছেন। ডেক অ্যান্ড ইঞ্জিন পার্সোনেল ট্রনিং সেন্টার (ডিইপিটিসি) এর যারা প্রশিক্ষণ নিতে আসেন তারাও হয়রানি ও ছিনতাইয়ের শিকার হন। কিন্তু এগুলো প্রতিরোধে পুলিশের কোন ভূমিকা দেখিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মালিহা খাতুন বলেন, বাড়ির পাশে হওয়ায় প্রায় সময় বাচ্চাদের নিয়ে খেলতে যেতাম। এখন আর যাওয়ার পরিবেশ নাই। সারাদিন নেশাখোররা থাকে, গেলে আমাদের উত্যক্ত করে, খারাপ, খারাপ কথা বলে। আর বাইরের কোনো মানুষ গেলে টাকা-পয়সাও রাইখা দেয়।
পুলিশের নাকের ডগায় দেশের এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান কেমন করে কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীদের দখলে চলে গেল জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আজকের ঘটনা জানার পর আমি নিজে সেখানে অভিযান চালাই। তবে এ অভিযানে আমরা কাউকে আটক করতে পারিনি। তবে স্থানটিতে মাদকসেবীদের আড্ডার বিষয়ে আমরা অবগত এবং বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আকরাম আলী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে সারাক্ষণ বখাটেদের অবস্থান থাকে। এই বখাটেদের কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব অরক্ষিত অনুভব করে, প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমাদের সিকিউরিটি কম আর বখাটেদের সংখ্যা বেশি যার কারণে কিছু করা যাচ্ছে না। আর ওই বসার জায়গাটা বিআইডাব্লিউটিএ এর অধীনে। ফলে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তবে আমরা বিভিন্ন সময় বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি এবং ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি।
বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২
বুধবার দুপুর। নারায়ণগঞ্জের বন্দরের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির সামনের পার্কে ঘুরতে এসেছেন বন্দর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিন শিক্ষার্থী। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তারা সেলফি তুলছিলেন। তখনই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গালাগাল দিতে শুরু করে এক বখাটে তরুণ। এক পর্যায়ে ওই বখাটে শিক্ষার্থীদের গালাগাল দিয়ে অপমান করে পার্ক থেকে বের করে দেয়।
শিক্ষার্থীদের থেকে সামান্য দূরে বসেছিলেন চারজন সংবাদকর্মী। ওই তরুণ তখন সংবাদকর্মীদেরও পার্ক থেকে বের হয়ে যেতে বলে। সংবাদকর্মীরা তার পরিচয় আর পার্ক থেকে সকলকে বের করে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
স্থানীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদক আফসানা আক্তার বলেন, আমরা ওই বখাটে তরুণকে এমন আচরণের কারণ জানতে চাইলে খুবই বাজে ব্যবহার করে। মারমুখী ভঙ্গিতে বখাটে বলে, ‘এতো বড় সাহস, তোরা আমারে প্রশ্ন করস।’ ওই ছেলের সঙ্গে তখন আরো কয়েকজন কিশোর ও তরুণ বয়সী ছেলে এসে যোগ দেয়। আমরা তখন বন্দর থানার ওসিকে বিষয়টি জানাই।
তিনি আরও বলেন, সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীরা যখন পার্ক থেকে বের হয়ে আসে, পার্কের ভেতরে তখন অন্তত ৩০ জন বখাটে তরুণের আড্ডা। পার্কের এক কোনে একটি ইজিবাইকে বসে ইয়াবা সেবন করছিল আরেকদল বখাটে। মোটরসাইকেলে করে এসে মাদক ক্রয় করছিল আরও চার যুবক।
পার্কের বাইরে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। অপমানে মুষড়ে পড়া এক শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ক্লাস শেষ করে কোচিং এর জন্য অপেক্ষা করছিল তারা। কোচিং শুরু হতে আরো এক ঘন্টা বাকি। সময় কাটাতে নদীর পাড় হাঁটতে এসেছিলেন। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে মাদকসেবীদের কাছে এভাবে অপমানিত হতে হবে সেটা তারা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি।
পার্কের বাইরের দোকান মালিক ও স্থানীয় লোকজন জানান, তিন বছর আগেও জায়গাটিতে বন্দরের আমিন ও রুপালী আবাসিক এলাকার লোকজন সকাল-সন্ধ্যা হাঁটতে আসতেন। বিনোদনের জায়গা না থাকায় শহর ও বন্দরের শিক্ষার্থী অভিভাবকরা ঘুরতে আসতেন মেরিন টেকনোলজির পার্কে। কিন্তু দিনে দিনে স্থানটি মাদকসেবী আর কিশোর গ্যাং এর দখলে চলে যাওয়ায় এখন আর কেউ পার্কে আসেন না। যারাই বা ভুল করে আসেন তারাই কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীদের দ্বারা ছিনতাই, মারধর ও হয়রানির শিকার হন। দিনের পর দিন স্থানটি কিশোর গ্যাং এর আড্ডাস্থলে পরিণত হলেও পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা দেখা যায় না।
নাম না প্রকাশের শর্তে পার্কের পাশের এক দোকান মালিক বলেন, এই মাদকসেবীরা স্থানটিতে কেবল মাদকই সেবন করে না। পাশাপাশি স্থানটিতে মাদক বেঁচাকেনাও চলে। নদী পথে মাদক আসে। পার্কে বসে সেবন ও বিক্রি হয়। মাদক বেঁচাকেনা নির্বিঘেœ করতে পার্কে বাইরের লোকজনকে বসতে দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, মেরিন ইনস্টিটিউট ও প্রায় সময়ই নৌবাহিনীর লোকজনের আসা যাওয়া করে। তাছাড়া পার্কটির দক্ষিণ পাশ থেকে মাত্র ৩০০ গজের মধ্যেই বন্দর থানা। এক কিলোমিটারের মধ্যেই বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এমন একটি জায়গা পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া মাদকসেবীদের দখলে চলে যেতে পারে না।
নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সবসময়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগী। অনেক বিদেশগামী এখানে তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিতে এসে ছিনতাই ও মারধরের শিকার হয়েছেন। ডেক অ্যান্ড ইঞ্জিন পার্সোনেল ট্রনিং সেন্টার (ডিইপিটিসি) এর যারা প্রশিক্ষণ নিতে আসেন তারাও হয়রানি ও ছিনতাইয়ের শিকার হন। কিন্তু এগুলো প্রতিরোধে পুলিশের কোন ভূমিকা দেখিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মালিহা খাতুন বলেন, বাড়ির পাশে হওয়ায় প্রায় সময় বাচ্চাদের নিয়ে খেলতে যেতাম। এখন আর যাওয়ার পরিবেশ নাই। সারাদিন নেশাখোররা থাকে, গেলে আমাদের উত্যক্ত করে, খারাপ, খারাপ কথা বলে। আর বাইরের কোনো মানুষ গেলে টাকা-পয়সাও রাইখা দেয়।
পুলিশের নাকের ডগায় দেশের এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান কেমন করে কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীদের দখলে চলে গেল জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আজকের ঘটনা জানার পর আমি নিজে সেখানে অভিযান চালাই। তবে এ অভিযানে আমরা কাউকে আটক করতে পারিনি। তবে স্থানটিতে মাদকসেবীদের আড্ডার বিষয়ে আমরা অবগত এবং বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আকরাম আলী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে সারাক্ষণ বখাটেদের অবস্থান থাকে। এই বখাটেদের কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব অরক্ষিত অনুভব করে, প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমাদের সিকিউরিটি কম আর বখাটেদের সংখ্যা বেশি যার কারণে কিছু করা যাচ্ছে না। আর ওই বসার জায়গাটা বিআইডাব্লিউটিএ এর অধীনে। ফলে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তবে আমরা বিভিন্ন সময় বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি এবং ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি।