‘মাটি ও মানুষের শিল্পী’ এসএম সুলতান। নড়াইলবাসীর কাছে ‘লাল মিয়া’ হিসেবে সমধিক পরিচিতি তিনি। যার রঙ-তুলিতে দরিদ্র-ক্লিষ্ট ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো হয়েছেন পেশিবহুল। শ্রমজীবী মানুষগুলো হয়েছেন শক্তিশালী ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। নীরবে চলে গেল বুধবার (১০ আগস্ট) তার ৯৮তম জন্মদিন। বিশ্বনন্দিত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের মৃত্যুর পর তার বাসভবন ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতি সংগ্রহশালা, শিশুস্বর্গ, কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ। তবে পর্যটক আকর্ষণ বিবেচনায় এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালাকে আরও সমৃদ্ধ এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশন। এ লক্ষ্যে স্মৃতি সংগ্রহশালার পাশে চিত্রা নদীর পারে সুলতানের দ্বিতলা নৌকা তথা ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গকে আরও টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন করতে ‘সুলতান ঘাট’ নির্মাণ কাজ শুরুতেই থমকে আছে। ২০১৮ সালের জুনে ঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হলেও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি সুলতান সংগ্রহশালাসহ পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়ন কাজও ঝুলে আছে। এসব উন্নয়ন কাজের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ২০ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। তবে তিন বছরেও তা বরাদ্দ হয়নি।
এদিকে, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দুই বছরে বেশি সময় পরে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর সুলতান সংগ্রহশালা। শিশুদের কলকাকলিতে জমজমাট শিশুস্বর্গও। এখানকার শিক্ষার্থী মায়মুরা সুলতানা, মেঘনাথ দাস ও সৃষ্টি জানায়, তারা শিশুস্বর্গে নিয়মিত ছবি আঁকা শিখছে। ফুল, প্রকৃতি, নদীসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি আঁকতে পারে তারা।
চারুপীঠ যশোরের শিশুশিক্ষার্থী মোহসিনা আফরোজ সোহা, লাবিবা জামান লিবা ও সাফানুজ্জামান মন বলে, এস এম সুলতানের বাড়ি এসে খুব ভালো লেগেছে। তার ব্যবহৃত পোশাক, ছবি, দ্বিতলা নৌকাসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখেছি। সুলতান দাদুর মতো সুন্দর ছবি আঁকতে চাই আমরা।
যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হোমায়রা তাবাসসুম ও দীপান্বিতা কর্মকার বলেন, এই প্রথম নড়াইলে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও এস এম সুলতানের চিত্রকর্ম দেখে আমরা মুগ্ধ। তবে পরিসরটা বড় হলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে খুব ভালো একটা সম্ভাবনা দেখা দিত।
যশোর বেজপাড়া তালতলা এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী আয়েশা রহমান মৌমি বলেন, বাবা-মার সঙ্গে সুলতান সংগ্রহশালায় ঘুরতে এসেছি। প্রথমবার এখানে ঘুরতে এলাম। চিত্রকর্মগুলো দেখে খুব ভালো লাগল। এসব দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি চারুপীঠ যশোরে আর্ট শিখছি।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) মানিকগঞ্জ জেলা থেকে আগত দর্শনার্থী পাপিয়া, সোনিয়া ও পরশ বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এখানে এসেছি। সুলতানের চিত্রকর্ম ও ফুল-প্রকৃতি দেখে আমরা খুবই মুগ্ধ। তবে জায়গাটি বড় পরিসরে হলে পর্যটকদের আরও ভালো লাগবে।
এস এম সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী বলেন, গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে দর্শনার্থী কম ছিল। বর্তমানে অনেক দর্শনার্থী আসছেন। এখানে এস এম সুলতানের মূল ছবি আছে ২৩টি এবং রেপ্লিকা ৫১টি। সংগ্রহশালার উন্নয়নে সরকার আরও কাজ করবে, এটাই আমাদের চাওয়া।
সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এসএম সুলতান তার জীবদ্দশায় যে ঘরটিতে বসবাস করতেন, সেই একতলা ঘরটি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। এস এম সুলতানের ব্যবহৃত খাটসহ অন্য জিনিসপত্রও সুরক্ষিত হয়েছে। সুলতানের ৯৮তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ১০ আগস্ট এই ঘরটিতেই চালু হচ্ছে ‘ফিরে দেখা সুলতান’ ভিডিওচিত্রের কার্যক্রম। এখানে ৩০ মিনিটের ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে পর্যটকদের দেখানো হবে সুলতানের জীবনাদর্শ ও চিত্রকর্ম।
এছাড়া সুলতান সংগ্রহশালার ঘাট নির্মাণ, দ্বিতলা নৌকা সংস্কারসহ এলাকাটি পর্যটনবান্ধব করতে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সুলতান।
চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার পেয়েছেন। এদিকে, ২০০১ সাল থেকে সুলতান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একজন গুণী চিত্রশিল্পীকে সুলতান পদক দেয়া হচ্ছে।
বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২
‘মাটি ও মানুষের শিল্পী’ এসএম সুলতান। নড়াইলবাসীর কাছে ‘লাল মিয়া’ হিসেবে সমধিক পরিচিতি তিনি। যার রঙ-তুলিতে দরিদ্র-ক্লিষ্ট ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো হয়েছেন পেশিবহুল। শ্রমজীবী মানুষগুলো হয়েছেন শক্তিশালী ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। নীরবে চলে গেল বুধবার (১০ আগস্ট) তার ৯৮তম জন্মদিন। বিশ্বনন্দিত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের মৃত্যুর পর তার বাসভবন ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতি সংগ্রহশালা, শিশুস্বর্গ, কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ। তবে পর্যটক আকর্ষণ বিবেচনায় এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালাকে আরও সমৃদ্ধ এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশন। এ লক্ষ্যে স্মৃতি সংগ্রহশালার পাশে চিত্রা নদীর পারে সুলতানের দ্বিতলা নৌকা তথা ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গকে আরও টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন করতে ‘সুলতান ঘাট’ নির্মাণ কাজ শুরুতেই থমকে আছে। ২০১৮ সালের জুনে ঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হলেও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি সুলতান সংগ্রহশালাসহ পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়ন কাজও ঝুলে আছে। এসব উন্নয়ন কাজের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ২০ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। তবে তিন বছরেও তা বরাদ্দ হয়নি।
এদিকে, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দুই বছরে বেশি সময় পরে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর সুলতান সংগ্রহশালা। শিশুদের কলকাকলিতে জমজমাট শিশুস্বর্গও। এখানকার শিক্ষার্থী মায়মুরা সুলতানা, মেঘনাথ দাস ও সৃষ্টি জানায়, তারা শিশুস্বর্গে নিয়মিত ছবি আঁকা শিখছে। ফুল, প্রকৃতি, নদীসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি আঁকতে পারে তারা।
চারুপীঠ যশোরের শিশুশিক্ষার্থী মোহসিনা আফরোজ সোহা, লাবিবা জামান লিবা ও সাফানুজ্জামান মন বলে, এস এম সুলতানের বাড়ি এসে খুব ভালো লেগেছে। তার ব্যবহৃত পোশাক, ছবি, দ্বিতলা নৌকাসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখেছি। সুলতান দাদুর মতো সুন্দর ছবি আঁকতে চাই আমরা।
যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হোমায়রা তাবাসসুম ও দীপান্বিতা কর্মকার বলেন, এই প্রথম নড়াইলে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও এস এম সুলতানের চিত্রকর্ম দেখে আমরা মুগ্ধ। তবে পরিসরটা বড় হলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে খুব ভালো একটা সম্ভাবনা দেখা দিত।
যশোর বেজপাড়া তালতলা এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী আয়েশা রহমান মৌমি বলেন, বাবা-মার সঙ্গে সুলতান সংগ্রহশালায় ঘুরতে এসেছি। প্রথমবার এখানে ঘুরতে এলাম। চিত্রকর্মগুলো দেখে খুব ভালো লাগল। এসব দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি চারুপীঠ যশোরে আর্ট শিখছি।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) মানিকগঞ্জ জেলা থেকে আগত দর্শনার্থী পাপিয়া, সোনিয়া ও পরশ বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এখানে এসেছি। সুলতানের চিত্রকর্ম ও ফুল-প্রকৃতি দেখে আমরা খুবই মুগ্ধ। তবে জায়গাটি বড় পরিসরে হলে পর্যটকদের আরও ভালো লাগবে।
এস এম সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী বলেন, গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে দর্শনার্থী কম ছিল। বর্তমানে অনেক দর্শনার্থী আসছেন। এখানে এস এম সুলতানের মূল ছবি আছে ২৩টি এবং রেপ্লিকা ৫১টি। সংগ্রহশালার উন্নয়নে সরকার আরও কাজ করবে, এটাই আমাদের চাওয়া।
সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এসএম সুলতান তার জীবদ্দশায় যে ঘরটিতে বসবাস করতেন, সেই একতলা ঘরটি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। এস এম সুলতানের ব্যবহৃত খাটসহ অন্য জিনিসপত্রও সুরক্ষিত হয়েছে। সুলতানের ৯৮তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ১০ আগস্ট এই ঘরটিতেই চালু হচ্ছে ‘ফিরে দেখা সুলতান’ ভিডিওচিত্রের কার্যক্রম। এখানে ৩০ মিনিটের ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে পর্যটকদের দেখানো হবে সুলতানের জীবনাদর্শ ও চিত্রকর্ম।
এছাড়া সুলতান সংগ্রহশালার ঘাট নির্মাণ, দ্বিতলা নৌকা সংস্কারসহ এলাকাটি পর্যটনবান্ধব করতে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সুলতান।
চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার পেয়েছেন। এদিকে, ২০০১ সাল থেকে সুলতান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একজন গুণী চিত্রশিল্পীকে সুলতান পদক দেয়া হচ্ছে।