alt

সারাদেশ

বানরের খাবার নিয়ে বাঁদরামি, খাদ্য সংকটে বিলুপ্তির পথে বানর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, মাদারীপুর : শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

এক শতাব্দী আগেও ছায়া ঘেরা, পাখি ডাকা এক গহীন অরণ্যে ঢাকা ছিল মাদারীপুরের চরমুগরিয়া। এই অরণ্যে নিজেদের বাসভূমি নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছিল হাজারো বানর। তখন এসব বানরগুলো বাগানের গাছে গাছে ঝুলে থাকা নানা প্রজাতির ফলমূল খেয়েই বেঁচে থাকতো। সে সময় এই অঞ্চলে মানুষের তেমন একটা বসতি না থাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে দলবেঁধে থাকতো তারা। কিন্তু কালের পরিবর্তনে ধীরে ধীরে এই গহীন বন-জঙ্গলে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি। গত পঞ্চশ ষাট বছরের মধ্যেই কয়েক হাজার বাড়িঘর উঠায় কমে গেছে গাছপালা, ফলমূল ও বনের বৃক্ষরাজি। ফলে বানরের বেঁচে থাকা এখন চরম হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে। গত দশ বছরেই বানরের সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, তীব্র খাদ্য সংকটের কারণেই চরমুগরিয়া ছেড়ে বানরেরা অন্য কোথাও চলে গেছে। তবে সরকারিভাবে বানরের জন্য যে খাদ্য বরাদ্দ করা হয় তার পুরোটা বানরের ভাগ্যে জোটে না। মানুষের পেটেই চলে যায় অর্ধেক, বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের লোকজন। তারা দাবি করেছেন, সরকারিভাবে বানরদের জন্য সারা বছর আরও বেশি খাদ্য বরাদ্দ করা না হলে কয়েক বছরের মধ্যেই মাদারীপুরে বানর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন যা হচ্ছে, সেটা বানরের খাবার নিয়ে বাঁদরামি।

মাদারীপুর বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের চরমুগরিয়ায় এখনও দুই হাজার ৫০০ বানর বসবাস করছে। এসব বানরের জন্য বছরে ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা খরচে বছরে ১৪৪ দিন খাবার বিতরণ করা হয়। প্রতিবার ২৪৫ কেজি করে খাবার দেয়ার কথা রয়েছে। যার মধ্যে ১২০ কেজি কলা, ১০০ কেজি পাউরুটি ও ২৫ কেজি চীনা বাদাম। এসব খাবার বিতরণ করার জন্য মাদারীপুর বন বিভাগের সঙ্গে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজল এন্টারপ্রাইজের মধ্যে চুক্তি রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বানরের খাওয়ানোর জন্য প্রতি সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার এই তিন দিন চরমুগরিয়া এলাকার পিটিআই গেট, নতুন ব্রিজের গোড়া, পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন নদীর পাড়, লস্কর মার্কেটের উত্তর পাড় ও দক্ষিণ পাড়, চরমুগরিয়া মিল গেট, বশীর স’মিল, কলেজ চত্বর, গরুর হাট, মধ্য খাগদী লুৎফর শরীফের বাড়ির পাশেসহ ৯টি স্পট ঠিক করেছে। কিন্তু স্থানীয় স্পটের বাসিন্দারা বলছেন, তারা মাঝে মাঝে দু’একবার বন বিভাগের লোকজনকে কিছু খাবার এনে বানরদের খাওয়াতে দেখেন। তবে তারা যে পরিমাণ খাবার নিয়ে আসেন তা খুবই সামন্য। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সরকারিভাবে বানরদের জন্য যে খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে, তার সিকি ভাগও খাওয়ানো হয় না।

চরমুগরিয়ার মধ্য খাগদী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা আবুল কালাম ফকির বলেন, ‘গত দশ বছর আগেও যে বানর এখানে ছিল তার অর্ধেকও এখন চোখে দেহি না। আর মাঝে মাঝে দুই একজন লোক হাতে করে কিছু কলা রুটি এনে বান্দরগো খাওয়ানোর জন্য ছিড়াইয়া রাহে। বান্দরে ওই খাবার সব সময় খায়ও না। বান্দরের খাবার নিয়া পুরা বাঁদরামি চলে।’ পিটিআই গেট এলাকার বাসিন্দা মো. শাকিল হোসেন বলেন, ‘সরকারিভাবে প্রতিদিন বানরকে খাবার না দেয়ার কারণে আমরা এলাকাবাসী ভীষণ অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমাদের এলাকার কারো ঘরেই খাবার রাখতে পারি না। দরজা-জানালা একটু খোলা পেলেই ঘরে ঢুকে বানরেরা দল বেঁধে ভাতসহ খাবার নিয়ে পালিয়ে যায়। বানরগুলো সব সময় খুব ক্ষুধার্ত থাকে।’ চরমুগরিয়া কলেজের পাশের বাসিন্দা সৈয়দ মাহবুব। তিনি পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আমি তো সব সময়ই এলাকায় থাকি। কই কখনো তো আমি দেখি নাই, বানরগুলোর জন্য সরকার খাবার দেয়। ওই খাবার সরকারি অফিসে কাগজে কলমে থাকতে পারে। বাস্তবে খাবার দিলে তো বানরগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে অতিষ্ঠ করতো না। আর এগুলো রোগাটেও দেখাত না। বানরের খাবারের নামে নয়ছয় ছাড়া আর কিছু হয় না।’ পশ্চিম খাগদী গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, ‘বানরগুলো খাবারের জ্বালায় আমাদের ঘরের টিনের চালে সারারাত লাফালাফি-দাপাদাপি করেছে। ঘর থেকে ওরা যেমন খাবার নিয়ে যায়। তেমনি আমিও মাঝে মাঝে ভাত-মুড়ি খেতে দেই। কিন্তু এই খাবারে তো আর ওদের হয় না। সরকারিভাবে তো দেখি না কখনো ওদের খাবার দিতে আসে। আর দিলেও বানরগুলো তো আর ভাগে পায় না। সব তো মাইনষের পেটেই যায়।’ একই কথা বললেন কুমার নদের পাড়ের বাসিন্দা ও রাজমিস্ত্রি শেরে আলী। চরমুগরিয়ায় খাদ্য সংকটে বানরের টিকে থাকাটাই এখন ঝুঁকির ভেতরে রয়েছে উল্লেখ করে মাদারীপুর পরিবেশ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রিপনচন্দ্র মল্লিক বলেন, ‘সরকারিভাবে সারা বছর এই বন্যপ্রাণীটিকে টিকিয়ে রাখতে খাবার বিতরণ করা প্রয়োজন। খাদ্য সংকটের কারণে বানরগুলো অন্যত্র চলে যাচ্ছে। শিশু বানরগুলো খাবারের অভাবে মরে যাচ্ছে। আমি মনে করি বানরের এই সংকট কাটিয়ে তুলতে হলে আন্তরিকভাবে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আর কয়েক বছর পরে এই বন্যপ্রাণীটি পুরোই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ বানরগুলোকে সঠিকভাবে খাবার না দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলার ভারপ্রাপ্ত বন ও পরিবেশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা চরমুগরিয়ার ৯টি জায়গাতে সপ্তাহে ৩ দিন ঠিকাদারের লোকজন সঙ্গে নিয়ে আমরা বানরের জন্য খাবার বিতরণ করি। কিন্তু এই খাবার হয়তো বানরের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আমরা সারা বছর যাতে খাবার বিতরণ করতে পারি সেই ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করেছি। বন্যপ্রাণী দেশের সম্পদ, এটিকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের কোন অবহেলা নেই। আমরা এই বিষয়ে খুবই আন্তরিক।’

বানরের বরাদ্দকৃত খাবার সরবরাহে অনিয়মের বিষয়ে জানতে মেসার্স কাজল এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ছবি

সড়কে এক পরিবারের ৫ জনসহ সারাদেশে ১৭ জন নিহত, আহত ৩২

ছবি

কক্সবাজারে হোটেলের সুইমিংপুলে পর্যটক শিশুর মৃত্যু

ছবি

৩দিনে মায়ানমারের ৩৪ বিজিপি ও সেনা সদস্য আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে

নরসিংদীতে বজ্রপাতে নিহত ১, আহত ২

মুন্সীগঞ্জে আ.লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

সখীপিরে সাংবাদিকের উপর হামলাকারী সেই আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে

ছবি

লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসব: পুণ্যার্থীদের ঢল, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

ছবি

গাজীপুরের শ্রীপুরে জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, সড়কে দীর্ঘ যানজট

ছবি

সেচ পাম্পের পিলার ভেঙে প্রাণ গেল স্কুলছাত্রের

ছবি

নাটোরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ২

ছবি

নদীতে নিখোঁজের ২ দিন পর মিলল তিন মরদেহ

ছবি

টিকিট ছাড়া পার্কে ৫ শিশু, কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ

ছবি

কক্সবাজারে বন বিট কর্মকর্তা হত্যার পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেপ্তার ৪

ছবি

বাংলাদেশে পালিয়ে আসলো আরও ময়ানমারের ১২ সেনা

ছবি

সময়ের বাইরে উদীচীর অনুষ্ঠান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে: ডিএমপি

ছবি

কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন বেড়েছে

মসজিদের বারান্দায় মিললো যুবকের ঝুলন্ত দেহ

ছবি

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৩

ছবি

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষ, নিহত ১১

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় অটোরিকশা চালকের মৃত্যু

গজারিয়ায় ভুট্টা ক্ষেতে নারীর লাশ

ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ১৬, আহত ২৭

৫৪ জেলার ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ, ৩ বিভাগে বৃষ্টির আভাস

ছবি

নরসিংদীতে ইউপি সদস্যকে গুলি ও জবাই করে হত্যা

ছবি

লাঙ্গলবন্দে পূণ্যার্থীদের অষ্টমী স্নানোৎসব শুরু

গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেল ধাক্কা, চাচা ভাজিতার মৃত্যু, আহত একজন

ছবি

প্রকাশ্য দিবালোকে নরসিংদীতে ইউপি সদস্যকে গুলি করে হত্যা

ছবি

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৮৯১ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা

ছবি

অতিরিক্ত টোল আদায় ৯৯৯-এ ফোন,আটক ২

ছবি

ভুট্টাক্ষেতে তরুণীর লাশ উদ্ধার

ছবি

চট্টগ্রামের বস্তিতে ২০০ ঘর আগুনে পুড়ল

ছবি

গাজীপুরে বাস চাপায় দম্পতির মৃত্যু

ছবি

গাজীপুরে অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

ছবি

উৎপাদন কেন্দ্রে আগুন, সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত

ছবি

নওগাঁয় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, ঠিকাদারকে কুপিয়ে জখম

ছবি

আরও ৫ মায়ানমার সীমান্তরক্ষী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে

tab

সারাদেশ

বানরের খাবার নিয়ে বাঁদরামি, খাদ্য সংকটে বিলুপ্তির পথে বানর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, মাদারীপুর

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

এক শতাব্দী আগেও ছায়া ঘেরা, পাখি ডাকা এক গহীন অরণ্যে ঢাকা ছিল মাদারীপুরের চরমুগরিয়া। এই অরণ্যে নিজেদের বাসভূমি নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছিল হাজারো বানর। তখন এসব বানরগুলো বাগানের গাছে গাছে ঝুলে থাকা নানা প্রজাতির ফলমূল খেয়েই বেঁচে থাকতো। সে সময় এই অঞ্চলে মানুষের তেমন একটা বসতি না থাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে দলবেঁধে থাকতো তারা। কিন্তু কালের পরিবর্তনে ধীরে ধীরে এই গহীন বন-জঙ্গলে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি। গত পঞ্চশ ষাট বছরের মধ্যেই কয়েক হাজার বাড়িঘর উঠায় কমে গেছে গাছপালা, ফলমূল ও বনের বৃক্ষরাজি। ফলে বানরের বেঁচে থাকা এখন চরম হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে। গত দশ বছরেই বানরের সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, তীব্র খাদ্য সংকটের কারণেই চরমুগরিয়া ছেড়ে বানরেরা অন্য কোথাও চলে গেছে। তবে সরকারিভাবে বানরের জন্য যে খাদ্য বরাদ্দ করা হয় তার পুরোটা বানরের ভাগ্যে জোটে না। মানুষের পেটেই চলে যায় অর্ধেক, বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের লোকজন। তারা দাবি করেছেন, সরকারিভাবে বানরদের জন্য সারা বছর আরও বেশি খাদ্য বরাদ্দ করা না হলে কয়েক বছরের মধ্যেই মাদারীপুরে বানর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন যা হচ্ছে, সেটা বানরের খাবার নিয়ে বাঁদরামি।

মাদারীপুর বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের চরমুগরিয়ায় এখনও দুই হাজার ৫০০ বানর বসবাস করছে। এসব বানরের জন্য বছরে ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা খরচে বছরে ১৪৪ দিন খাবার বিতরণ করা হয়। প্রতিবার ২৪৫ কেজি করে খাবার দেয়ার কথা রয়েছে। যার মধ্যে ১২০ কেজি কলা, ১০০ কেজি পাউরুটি ও ২৫ কেজি চীনা বাদাম। এসব খাবার বিতরণ করার জন্য মাদারীপুর বন বিভাগের সঙ্গে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজল এন্টারপ্রাইজের মধ্যে চুক্তি রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বানরের খাওয়ানোর জন্য প্রতি সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার এই তিন দিন চরমুগরিয়া এলাকার পিটিআই গেট, নতুন ব্রিজের গোড়া, পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন নদীর পাড়, লস্কর মার্কেটের উত্তর পাড় ও দক্ষিণ পাড়, চরমুগরিয়া মিল গেট, বশীর স’মিল, কলেজ চত্বর, গরুর হাট, মধ্য খাগদী লুৎফর শরীফের বাড়ির পাশেসহ ৯টি স্পট ঠিক করেছে। কিন্তু স্থানীয় স্পটের বাসিন্দারা বলছেন, তারা মাঝে মাঝে দু’একবার বন বিভাগের লোকজনকে কিছু খাবার এনে বানরদের খাওয়াতে দেখেন। তবে তারা যে পরিমাণ খাবার নিয়ে আসেন তা খুবই সামন্য। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সরকারিভাবে বানরদের জন্য যে খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে, তার সিকি ভাগও খাওয়ানো হয় না।

চরমুগরিয়ার মধ্য খাগদী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা আবুল কালাম ফকির বলেন, ‘গত দশ বছর আগেও যে বানর এখানে ছিল তার অর্ধেকও এখন চোখে দেহি না। আর মাঝে মাঝে দুই একজন লোক হাতে করে কিছু কলা রুটি এনে বান্দরগো খাওয়ানোর জন্য ছিড়াইয়া রাহে। বান্দরে ওই খাবার সব সময় খায়ও না। বান্দরের খাবার নিয়া পুরা বাঁদরামি চলে।’ পিটিআই গেট এলাকার বাসিন্দা মো. শাকিল হোসেন বলেন, ‘সরকারিভাবে প্রতিদিন বানরকে খাবার না দেয়ার কারণে আমরা এলাকাবাসী ভীষণ অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমাদের এলাকার কারো ঘরেই খাবার রাখতে পারি না। দরজা-জানালা একটু খোলা পেলেই ঘরে ঢুকে বানরেরা দল বেঁধে ভাতসহ খাবার নিয়ে পালিয়ে যায়। বানরগুলো সব সময় খুব ক্ষুধার্ত থাকে।’ চরমুগরিয়া কলেজের পাশের বাসিন্দা সৈয়দ মাহবুব। তিনি পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আমি তো সব সময়ই এলাকায় থাকি। কই কখনো তো আমি দেখি নাই, বানরগুলোর জন্য সরকার খাবার দেয়। ওই খাবার সরকারি অফিসে কাগজে কলমে থাকতে পারে। বাস্তবে খাবার দিলে তো বানরগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে অতিষ্ঠ করতো না। আর এগুলো রোগাটেও দেখাত না। বানরের খাবারের নামে নয়ছয় ছাড়া আর কিছু হয় না।’ পশ্চিম খাগদী গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, ‘বানরগুলো খাবারের জ্বালায় আমাদের ঘরের টিনের চালে সারারাত লাফালাফি-দাপাদাপি করেছে। ঘর থেকে ওরা যেমন খাবার নিয়ে যায়। তেমনি আমিও মাঝে মাঝে ভাত-মুড়ি খেতে দেই। কিন্তু এই খাবারে তো আর ওদের হয় না। সরকারিভাবে তো দেখি না কখনো ওদের খাবার দিতে আসে। আর দিলেও বানরগুলো তো আর ভাগে পায় না। সব তো মাইনষের পেটেই যায়।’ একই কথা বললেন কুমার নদের পাড়ের বাসিন্দা ও রাজমিস্ত্রি শেরে আলী। চরমুগরিয়ায় খাদ্য সংকটে বানরের টিকে থাকাটাই এখন ঝুঁকির ভেতরে রয়েছে উল্লেখ করে মাদারীপুর পরিবেশ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রিপনচন্দ্র মল্লিক বলেন, ‘সরকারিভাবে সারা বছর এই বন্যপ্রাণীটিকে টিকিয়ে রাখতে খাবার বিতরণ করা প্রয়োজন। খাদ্য সংকটের কারণে বানরগুলো অন্যত্র চলে যাচ্ছে। শিশু বানরগুলো খাবারের অভাবে মরে যাচ্ছে। আমি মনে করি বানরের এই সংকট কাটিয়ে তুলতে হলে আন্তরিকভাবে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আর কয়েক বছর পরে এই বন্যপ্রাণীটি পুরোই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ বানরগুলোকে সঠিকভাবে খাবার না দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলার ভারপ্রাপ্ত বন ও পরিবেশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা চরমুগরিয়ার ৯টি জায়গাতে সপ্তাহে ৩ দিন ঠিকাদারের লোকজন সঙ্গে নিয়ে আমরা বানরের জন্য খাবার বিতরণ করি। কিন্তু এই খাবার হয়তো বানরের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আমরা সারা বছর যাতে খাবার বিতরণ করতে পারি সেই ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করেছি। বন্যপ্রাণী দেশের সম্পদ, এটিকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের কোন অবহেলা নেই। আমরা এই বিষয়ে খুবই আন্তরিক।’

বানরের বরাদ্দকৃত খাবার সরবরাহে অনিয়মের বিষয়ে জানতে মেসার্স কাজল এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

back to top