alt

সারাদেশ

নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে কোন পরিবর্তন নেই

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে বৈশ্বিক পণ্যবাজারে দামের উত্তাপ ছড়াতে থাকে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশের বাজারেও। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেল-চাল-আট-ময়দা-ডাল-ডিম-মাছ মাংস-সবজিরসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যে ও অন্য পণ্যের দাম । এতে কয়েক দফা বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে দু-একটি বাদে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে একটি জায়গায় স্থির হয়ে আছে। কমার কোন লক্ষণ নেই। বাজার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর শ্যামলী বিডিআর মার্কেট কাঁচা বাজার, মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজার, সেগুনবাগিচা বাজারসহ বেশকিছু দোকান ঘুরে দেখা গেছে, তেল-চাল-আট-ময়দা-ডাল-ডিম-মাছ-মাংস-সবজির দাম চড়া।

বিশ্ববাজারে দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পাম তেল ও চিনির দাম কমিয়ে নির্ধারণ করলেও বাজারে সেগুলো এখনও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা। অথচ পাইকারি বাজারে শুক্রবারও (৩০ সেপ্টেম্বর) খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা কেজি দরে। যা খুচরায় এখনও ৯০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি ৯৫ টাকা দর বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বাজারে নতুন দামের প্যাকেটজাত চিনি এখনও আসেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। মোটা চালের দাম আবারও কেজিতে বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। সরু বা চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মোকামে চালের দাম চড়া। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে ঢাকায় চাল আনতে খরচ বেশি পড়ছে। এ কারণে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, বাজারে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। তবে একটু নিম্নমানের এই চাল গত সপ্তাহে ৪৭ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। এখন ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের বিআর-২৮ জাতের চাল কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চিনিগুঁড়া চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা মানভেদে সরু চাল বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের বিক্রি বেশি। ভালো মানের মিনিকেট ৭৫ টাকা, আর নাজিরশাইল কিনতে প্রতি কেজির জন্য গুনতে হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি।

দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে আটা ও ময়দাও। যদিও বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে আটার দাম এখনও বাড়তি। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার দুই কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। খোলা ময়দা কেজি রাখা হচ্ছে ৬০ টাকার কাছাকাছি। দোকানিরা বলছেন, প্যাকেট আটার দাম কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার মতো। অর্থাৎ যে আটা (প্যাকেট) ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেতো, এখন সেই আটা কিনতে হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে।

খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। দোকানিরা গত সপ্তাহে খোলা ময়দা ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এ সপ্তাহে তারা বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ৫৮ টাকা কেজি দরের খোলা ময়দা চলতি সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি দরে।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে এ সপ্তাহে নতুন করে দাম বাড়েনি। বিশ্ববাজারে গমের দাম কমলেও দেশের বাজারে আটার দাম এখনও বাড়তি। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার দুই কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। খোলা ময়দা কেজি রাখা হচ্ছে ৬০ টাকার কাছাকাছি।

বাজারে করতে আসা একরাম মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে মানুষ নাজেহাল। কোন পণ্যের দাম কমছে না, শুধু বাড়ছে আর বাড়ছেই। মধ্যবিত্তদের জন্য এখন আতঙ্কের জায়গা বাজার। যারা হিসাবের টাকা দিয়ে সংসার চালান তারা আর হিসাব-নিকাশ মেলাতে পারছেন না।

বাজারে এখনও মোটা ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। সরু দানা ডালের দাম কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।

করিম মিয়া নামে ক্রেতা বলেন, দুটোর দাম কমলে বাড়ে আরও তিনটি সবজির দাম। শাকের দাম কমেছে কিন্তু বেড়েছে মরিচের দাম। বাজারে সবজির অভাব নেই। কিন্তু অধিকাংশ সবজির দাম ৫০ টাকার বেশি।

বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম বাড়ার স্পষ্ট কারণ জানা নেই। তবে অধিকাংশ সবজিই গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে।

বাজারের সবজি বিক্রেতা বেলাল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহেও ঢেঁড়শ ছিল ৫০ টাকা, আজ তা ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। কাঁকরোল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহেও যা ছিল ৫০ টাকা। শসার দাম হেরফের না হওয়ায় ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। আর টমেটো ১২০-১৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহেও গাজরের দাম ছিল ১৩০ টাকা। এখন কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। আর আলু যথারীতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়

বাজার ঘুরে দেখা যায়, লাউ ৫০ থেকে ৬০, কচুরমুখী ৬০ ও লতি ৬০ টাকা। দাম কমায় করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা। ধুন্দল ৬০, ঝিঙ্গা ৭০, চিচিঙ্গা ৭০, পটোল ৫০। মুলার কেজি আগের মতোই ৬০ টাকা কেজি। কাঁচকলার হালি ৪০ টাকা।

বিক্রেতা খোকন মিয়া বলেন, গত সপ্তাহেও এসব সবজির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি ছিল। তবে শুধু পেঁপেই মিলছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, শীতের সবজি নামছে কিন্তু দাম অনেক বেশি। শিম খেতে মন চায় কিন্তু কেজি ১৪০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে আড়াইশ’ গ্রাম শিম কিনেছি।

বাজার ঘুরে জানা যায়, কমেছে শাকের দাম। পাট শাক দুই আঁটি ১৫, কলমি শাক দুই আঁটি ২০, কচুর লতি দুই আঁটি ১০, মুলা শাক দুই আঁটি ২০, লালশাক দুই আঁটি ২০, পুইশাক ২০ ও শাপলা ডাটা ১০ টাকা। তবে ধনেপাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর লেবুর হালি ১০ টাকায় মিলছে।

নিম্নআয়ের মানুষের পছন্দের লাউয়ের দাম ১০-১৫ টাকা করে কমেছে। ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে লাউ। জালি কুমড়া ৪০ টাকা পিস।

শাক বিক্রেতা মজনু বলেন, শাকের দাম বেশি ছিল। লাল শাকের এক আটি ছিল ২০ টাকা। এখন তা জোড়া ২০। পুইশাকের দামও কমেছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিভেদে দুধের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন প্রতি কেজি ডানো ৮৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ৮৪০ টাকা, ফ্রেশ ৭১০ টাকা ও মার্কস ৭৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছের দামও বাড়তি। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আকার ভেদে কেজিতে ইলিশের দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। আগে যে ইলিশ ৭০০ টাকা ছিল, সেটি শুক্রবার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে। ১৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়।

এর আগে গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার উদ্বোধন শেষে কৃষিমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন একটা ডিমের দাম ১৩ টাকা হবে কেন, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘একটা ডিমের উৎপাদন খরচ ৫ থেকে ৬ টাকা। সেই ডিম সর্বোচ্চ ৮ টাকা বিক্রি হতে পারে। কিন্তু তা না করে সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকা। এটা কেন? একটা ডিমের দাম ১৩ টাকা হবে কেন? এটা কি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না? এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রাজ্জাক বলেন, কোন কারণে ডিমের সরবরাহ কমে গেলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, ফার্মের মালিক, হ্যাচারির মালিক নানারকম চক্রান্ত করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেন। মানুষকে জিম্মি করে ফেলেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনিটরিং (তদারকি) ব্যবস্থা চালু করা উচিত।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ডিম আমদানি করলে আমাদের আমদানি নির্ভরতা বাড়বে, যা আমরা সমর্থন করি না। একটু কষ্ট হবে, প্রয়োজনে ডিম কম খাব। তবু স্থানীয়ভাবেই ডিম উৎপাদন করে খেতে হবে। এটা চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়। সরবরাহ কমে গেছে বলেই ডিমের বাজারে এত অস্থিরতা। এ সুযোগেই অসাধু চক্র নানা কৌশলে লাভবান হচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।’

ছবি

‘আনন্দে’ শুরুর পর সড়কের ঈদযাত্রা কেন ‘বিষাদে’

ছবি

ঘটনা চাপা দিতে ১৫০ বস্তা সিমেন্ট সরিয়ে ফেলার অভিযোগ

মীরসরাইয়ে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে

ছবি

মাধবপুরে বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার

ছবি

টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ১২টি খাদ্য গুদাম

ছবি

জলকেলি উৎসবে মুখরিত কক্সবাজরের রাখাইন পল্লী

শেরপুরে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ উদ্বোধন

কেশবপুরে সকাল-সন্ধ্যা বাজারের দখল নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি উচ্ছেদ আতঙ্কে অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে সরকারি রাস্তার ১২০টি গাছ কর্তনের অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে

পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করেন পুত্রবধূ

ছবি

মির্জাগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ছবি

নড়াইলের শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা

ছবি

প্রেমিকার ওপর অভিমান প্রেমিকের আত্মহত্যা

ছবি

শ্যামনগর পদ্মপুকুরের প্রধান সড়কের একাংশ যেন বালুর স্তুপে পরিণত

আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলায় নাই : তাহেরপুত্র বিপ্লব

ছবি

কক্সবাজারে রিসোর্টে পযটক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ছবি

ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা

ছবি

সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

টোলপ্লাজায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১৪

ছবি

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বেশিরভাগ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ

কোম্পানীগঞ্জে পর্যটকের সঙ্গে এএসপির মারামারি

ছবি

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ গোপালগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

শার্শায় সাংবাদিকের উপর হামলা

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সালথায় স্বামীর উপর অভিমান করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

শিবগঞ্জে পরিবারের উপর অভিমান করে কিশোরের আত্মহত্যা

ছবি

ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

ছবি

নরসিংদীতে বজ্রপাতে নিহত ১, আহত ২

ছবি

হাওরে বৃষ্টি জলাবদ্ধতায় দেড় হাজার একর বোরো জমি বিনষ্টের পথে, কৃষকের আহাজারি

ছবি

রংপুরে বাসের টিকেট বিক্রিতে নৈরাজ্য, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছবি

দর্শনার্থীতে মুখরিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

ছবি

গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজার

ছবি

রায়পুরায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০

tab

সারাদেশ

নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে কোন পরিবর্তন নেই

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে বৈশ্বিক পণ্যবাজারে দামের উত্তাপ ছড়াতে থাকে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশের বাজারেও। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেল-চাল-আট-ময়দা-ডাল-ডিম-মাছ মাংস-সবজিরসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যে ও অন্য পণ্যের দাম । এতে কয়েক দফা বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে দু-একটি বাদে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে একটি জায়গায় স্থির হয়ে আছে। কমার কোন লক্ষণ নেই। বাজার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর শ্যামলী বিডিআর মার্কেট কাঁচা বাজার, মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজার, সেগুনবাগিচা বাজারসহ বেশকিছু দোকান ঘুরে দেখা গেছে, তেল-চাল-আট-ময়দা-ডাল-ডিম-মাছ-মাংস-সবজির দাম চড়া।

বিশ্ববাজারে দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পাম তেল ও চিনির দাম কমিয়ে নির্ধারণ করলেও বাজারে সেগুলো এখনও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা। অথচ পাইকারি বাজারে শুক্রবারও (৩০ সেপ্টেম্বর) খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা কেজি দরে। যা খুচরায় এখনও ৯০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি ৯৫ টাকা দর বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বাজারে নতুন দামের প্যাকেটজাত চিনি এখনও আসেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। মোটা চালের দাম আবারও কেজিতে বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। সরু বা চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মোকামে চালের দাম চড়া। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে ঢাকায় চাল আনতে খরচ বেশি পড়ছে। এ কারণে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, বাজারে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। তবে একটু নিম্নমানের এই চাল গত সপ্তাহে ৪৭ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। এখন ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের বিআর-২৮ জাতের চাল কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চিনিগুঁড়া চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা মানভেদে সরু চাল বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের বিক্রি বেশি। ভালো মানের মিনিকেট ৭৫ টাকা, আর নাজিরশাইল কিনতে প্রতি কেজির জন্য গুনতে হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি।

দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে আটা ও ময়দাও। যদিও বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে আটার দাম এখনও বাড়তি। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার দুই কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। খোলা ময়দা কেজি রাখা হচ্ছে ৬০ টাকার কাছাকাছি। দোকানিরা বলছেন, প্যাকেট আটার দাম কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার মতো। অর্থাৎ যে আটা (প্যাকেট) ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেতো, এখন সেই আটা কিনতে হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে।

খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। দোকানিরা গত সপ্তাহে খোলা ময়দা ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এ সপ্তাহে তারা বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ৫৮ টাকা কেজি দরের খোলা ময়দা চলতি সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি দরে।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে এ সপ্তাহে নতুন করে দাম বাড়েনি। বিশ্ববাজারে গমের দাম কমলেও দেশের বাজারে আটার দাম এখনও বাড়তি। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার দুই কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। খোলা ময়দা কেজি রাখা হচ্ছে ৬০ টাকার কাছাকাছি।

বাজারে করতে আসা একরাম মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে মানুষ নাজেহাল। কোন পণ্যের দাম কমছে না, শুধু বাড়ছে আর বাড়ছেই। মধ্যবিত্তদের জন্য এখন আতঙ্কের জায়গা বাজার। যারা হিসাবের টাকা দিয়ে সংসার চালান তারা আর হিসাব-নিকাশ মেলাতে পারছেন না।

বাজারে এখনও মোটা ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। সরু দানা ডালের দাম কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।

করিম মিয়া নামে ক্রেতা বলেন, দুটোর দাম কমলে বাড়ে আরও তিনটি সবজির দাম। শাকের দাম কমেছে কিন্তু বেড়েছে মরিচের দাম। বাজারে সবজির অভাব নেই। কিন্তু অধিকাংশ সবজির দাম ৫০ টাকার বেশি।

বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম বাড়ার স্পষ্ট কারণ জানা নেই। তবে অধিকাংশ সবজিই গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে।

বাজারের সবজি বিক্রেতা বেলাল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহেও ঢেঁড়শ ছিল ৫০ টাকা, আজ তা ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। কাঁকরোল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহেও যা ছিল ৫০ টাকা। শসার দাম হেরফের না হওয়ায় ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। আর টমেটো ১২০-১৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহেও গাজরের দাম ছিল ১৩০ টাকা। এখন কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। আর আলু যথারীতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়

বাজার ঘুরে দেখা যায়, লাউ ৫০ থেকে ৬০, কচুরমুখী ৬০ ও লতি ৬০ টাকা। দাম কমায় করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা। ধুন্দল ৬০, ঝিঙ্গা ৭০, চিচিঙ্গা ৭০, পটোল ৫০। মুলার কেজি আগের মতোই ৬০ টাকা কেজি। কাঁচকলার হালি ৪০ টাকা।

বিক্রেতা খোকন মিয়া বলেন, গত সপ্তাহেও এসব সবজির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি ছিল। তবে শুধু পেঁপেই মিলছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, শীতের সবজি নামছে কিন্তু দাম অনেক বেশি। শিম খেতে মন চায় কিন্তু কেজি ১৪০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে আড়াইশ’ গ্রাম শিম কিনেছি।

বাজার ঘুরে জানা যায়, কমেছে শাকের দাম। পাট শাক দুই আঁটি ১৫, কলমি শাক দুই আঁটি ২০, কচুর লতি দুই আঁটি ১০, মুলা শাক দুই আঁটি ২০, লালশাক দুই আঁটি ২০, পুইশাক ২০ ও শাপলা ডাটা ১০ টাকা। তবে ধনেপাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর লেবুর হালি ১০ টাকায় মিলছে।

নিম্নআয়ের মানুষের পছন্দের লাউয়ের দাম ১০-১৫ টাকা করে কমেছে। ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে লাউ। জালি কুমড়া ৪০ টাকা পিস।

শাক বিক্রেতা মজনু বলেন, শাকের দাম বেশি ছিল। লাল শাকের এক আটি ছিল ২০ টাকা। এখন তা জোড়া ২০। পুইশাকের দামও কমেছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিভেদে দুধের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন প্রতি কেজি ডানো ৮৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ৮৪০ টাকা, ফ্রেশ ৭১০ টাকা ও মার্কস ৭৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছের দামও বাড়তি। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আকার ভেদে কেজিতে ইলিশের দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। আগে যে ইলিশ ৭০০ টাকা ছিল, সেটি শুক্রবার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে। ১৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়।

এর আগে গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার উদ্বোধন শেষে কৃষিমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন একটা ডিমের দাম ১৩ টাকা হবে কেন, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘একটা ডিমের উৎপাদন খরচ ৫ থেকে ৬ টাকা। সেই ডিম সর্বোচ্চ ৮ টাকা বিক্রি হতে পারে। কিন্তু তা না করে সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকা। এটা কেন? একটা ডিমের দাম ১৩ টাকা হবে কেন? এটা কি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না? এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রাজ্জাক বলেন, কোন কারণে ডিমের সরবরাহ কমে গেলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, ফার্মের মালিক, হ্যাচারির মালিক নানারকম চক্রান্ত করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেন। মানুষকে জিম্মি করে ফেলেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনিটরিং (তদারকি) ব্যবস্থা চালু করা উচিত।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ডিম আমদানি করলে আমাদের আমদানি নির্ভরতা বাড়বে, যা আমরা সমর্থন করি না। একটু কষ্ট হবে, প্রয়োজনে ডিম কম খাব। তবু স্থানীয়ভাবেই ডিম উৎপাদন করে খেতে হবে। এটা চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়। সরবরাহ কমে গেছে বলেই ডিমের বাজারে এত অস্থিরতা। এ সুযোগেই অসাধু চক্র নানা কৌশলে লাভবান হচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।’

back to top