বিগত ২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তার এই মহান ব্রতকে সামনে রেখেই মুজিববর্ষে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারই পাচ্ছে দুর্যোগ সহনীয় সেমিপাকা ঘর, আর দুই শতাংশ জমির মালিকানা। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সুদৃশ্য রঙিন টিনশেডের সেমিপাকা বাড়ি পাবেন গৃহহীন ও ভূমিহীনরা। সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের এই মহাযজ্ঞ প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিভিন্ন স্থানে এ ঘর নির্মাণ নিয়ে নানা অভিযোগও উঠেছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে গৃহহীন হতদরিদ্রদের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মুজিববর্ষের ঘরের ফ্লোর করা হচ্ছে বাঁশ দিয়ে। এখনও ঘরগুলো পুরো নির্মাণ হয়নি, এরই মধ্যে কিছু ঘরের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। মুজিববর্ষের ঘর তৈরির পেছনে সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের তথ্যও পাওয়া যায়। মহেশখালীর কালারমারছড়ায় সরেজমিনে দেখা দেখা যায় এমন দৃশ্য।
উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সোনারপাড়া, ৭নং ওয়ার্ডের ছামিরাঘোনা ও অফিসপাড়ায় নির্মাণাধীন মুজিববর্ষের এসব ঘর তৈরিতে উপকারভোগীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নগদ অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী আদায় করার মতো নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে উপকারভোগীদের মুখে।
এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োজিত তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় শামসুল আলম জানান, ইউএনওর অর্পিত দায়িত্ব হিসেবে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি তিনি তদারকি করছেন। অর্থ আদায় কিংবা মালামালের খরচ বাবদ অর্থ নেয়ার কথাটি ভিত্তিহীন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে ইউএনওর নিয়োজিত লোকজন ও মিস্ত্রিরা কাজে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অনেকটাই জোরপূর্বক অর্থ ও নির্মাণসামগ্রী আদায় করে নিয়েছে। অনেক উপকারভোগীকে নিজের অর্থে কিনতে হয়েছে সিমেন্ট। অনেক সময় ঘর তৈরির মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করার জন্য নিজ অর্থে দিতে হয়েছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন উপকারভোগী বলেন, ইউএনওর নিয়োজিত ব্যক্তি ও মিস্ত্রি বলেছে এসব ঘর নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ বস্তা সিমেন্ট দেয়া হয়েছে। এসব সিমেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় নিজ থেকে সিমেন্ট কিনে দিয়ে বাকি কাজ চালিয়ে নিতে হবে। তাই নিজেরা মজুরি করে সংসার চালালেও এসব সিমেন্টের টাকা জোগাড় করে সিমেন্ট কিনে দেয়ার কথা জানান ওই ব্যক্তি। এ সময় নিজ অর্থে সিমেন্ট কিনে দেয়ার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি কয়েকটা সিমেন্ট দোকানির সিমেন্ট ক্রয়ের বিল দেখান। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিমেন্ট জোগান দিতে হয়েছে বলে জানান তারা।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকার নিজ তহবিল থেকে পূর্ণ অর্থ ব্যয় করে এসব ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। মুজিববর্ষের এসব ঘর সারাদেশে সরাসরি ইউএনওদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজে কোন ঠিকাদার নিযুক্ত হয়নি। বরাদ্দের চেয়েও অতিরিক্ত নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত যে খরচ লাগছে তা এমপি, স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খরচ মিটানো হচ্ছে। তবে কেউ যদি উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে থাকে তাহলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার হবে বলেও জানান ইউএনও।
এসব ঘরের ফ্লোরে বাঁশের অংশ ব্যবহার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফ্লোরে রড ব্যবহার করার বিষয়ে ধরা নেই। উপকারভোগীরা নিজ থেকে এটা করতে পারেন বলে তিনি জানান।
তবে স্থানীয় ইউএনওর ঠিকাদারিতে নির্মিত এসব ঘর নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত উপকারভোগীরা নির্মাণে নিজেদের নির্মাণ সামগ্রী সংযুক্ত করার নিয়ম নেই। সারাদেশে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম নিয়ে সচেষ্টতার অবস্থান থেকে এ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এসব ঘর তৈরিতে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি, এসব ঘর তৈরিতে প্রায় তিন লাখ টাকার অধিক ব্যয় হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নে গৃহহীন হিসেবে যে ১৮ জনকে ঘর দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে কেবল তিনজন সেই ঘরে থাকছেন। বাকি ১৫টি ঘরে তালা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ঘটনাটি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘরগুলো সম্পদশালীরা বরাদ্দ নিয়ে এর কয়েকটি বিক্রি করেছেন, কেউ আবার ভাড়া দিয়েছেন আবার কেউ অন্যকে উপহার দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে।
শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২
বিগত ২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তার এই মহান ব্রতকে সামনে রেখেই মুজিববর্ষে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারই পাচ্ছে দুর্যোগ সহনীয় সেমিপাকা ঘর, আর দুই শতাংশ জমির মালিকানা। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সুদৃশ্য রঙিন টিনশেডের সেমিপাকা বাড়ি পাবেন গৃহহীন ও ভূমিহীনরা। সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের এই মহাযজ্ঞ প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিভিন্ন স্থানে এ ঘর নির্মাণ নিয়ে নানা অভিযোগও উঠেছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে গৃহহীন হতদরিদ্রদের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মুজিববর্ষের ঘরের ফ্লোর করা হচ্ছে বাঁশ দিয়ে। এখনও ঘরগুলো পুরো নির্মাণ হয়নি, এরই মধ্যে কিছু ঘরের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। মুজিববর্ষের ঘর তৈরির পেছনে সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের তথ্যও পাওয়া যায়। মহেশখালীর কালারমারছড়ায় সরেজমিনে দেখা দেখা যায় এমন দৃশ্য।
উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সোনারপাড়া, ৭নং ওয়ার্ডের ছামিরাঘোনা ও অফিসপাড়ায় নির্মাণাধীন মুজিববর্ষের এসব ঘর তৈরিতে উপকারভোগীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নগদ অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী আদায় করার মতো নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে উপকারভোগীদের মুখে।
এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োজিত তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় শামসুল আলম জানান, ইউএনওর অর্পিত দায়িত্ব হিসেবে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি তিনি তদারকি করছেন। অর্থ আদায় কিংবা মালামালের খরচ বাবদ অর্থ নেয়ার কথাটি ভিত্তিহীন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে ইউএনওর নিয়োজিত লোকজন ও মিস্ত্রিরা কাজে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অনেকটাই জোরপূর্বক অর্থ ও নির্মাণসামগ্রী আদায় করে নিয়েছে। অনেক উপকারভোগীকে নিজের অর্থে কিনতে হয়েছে সিমেন্ট। অনেক সময় ঘর তৈরির মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করার জন্য নিজ অর্থে দিতে হয়েছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন উপকারভোগী বলেন, ইউএনওর নিয়োজিত ব্যক্তি ও মিস্ত্রি বলেছে এসব ঘর নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ বস্তা সিমেন্ট দেয়া হয়েছে। এসব সিমেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় নিজ থেকে সিমেন্ট কিনে দিয়ে বাকি কাজ চালিয়ে নিতে হবে। তাই নিজেরা মজুরি করে সংসার চালালেও এসব সিমেন্টের টাকা জোগাড় করে সিমেন্ট কিনে দেয়ার কথা জানান ওই ব্যক্তি। এ সময় নিজ অর্থে সিমেন্ট কিনে দেয়ার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি কয়েকটা সিমেন্ট দোকানির সিমেন্ট ক্রয়ের বিল দেখান। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিমেন্ট জোগান দিতে হয়েছে বলে জানান তারা।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকার নিজ তহবিল থেকে পূর্ণ অর্থ ব্যয় করে এসব ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। মুজিববর্ষের এসব ঘর সারাদেশে সরাসরি ইউএনওদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজে কোন ঠিকাদার নিযুক্ত হয়নি। বরাদ্দের চেয়েও অতিরিক্ত নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত যে খরচ লাগছে তা এমপি, স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খরচ মিটানো হচ্ছে। তবে কেউ যদি উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে থাকে তাহলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার হবে বলেও জানান ইউএনও।
এসব ঘরের ফ্লোরে বাঁশের অংশ ব্যবহার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফ্লোরে রড ব্যবহার করার বিষয়ে ধরা নেই। উপকারভোগীরা নিজ থেকে এটা করতে পারেন বলে তিনি জানান।
তবে স্থানীয় ইউএনওর ঠিকাদারিতে নির্মিত এসব ঘর নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত উপকারভোগীরা নির্মাণে নিজেদের নির্মাণ সামগ্রী সংযুক্ত করার নিয়ম নেই। সারাদেশে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম নিয়ে সচেষ্টতার অবস্থান থেকে এ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এসব ঘর তৈরিতে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি, এসব ঘর তৈরিতে প্রায় তিন লাখ টাকার অধিক ব্যয় হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নে গৃহহীন হিসেবে যে ১৮ জনকে ঘর দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে কেবল তিনজন সেই ঘরে থাকছেন। বাকি ১৫টি ঘরে তালা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ঘটনাটি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘরগুলো সম্পদশালীরা বরাদ্দ নিয়ে এর কয়েকটি বিক্রি করেছেন, কেউ আবার ভাড়া দিয়েছেন আবার কেউ অন্যকে উপহার দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে।