পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি
বান্দরবানসহ তিন জেলার মধ্যে ‘শান্ত’ ও ‘সম্প্রীতির জেলা’ খ্যাত বান্দরবান। কিন্তু সম্প্রতি পাহাড়ে সংগঠনগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েছে। গেল এক বছরে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত ও পারিবারিক কলহে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপহণ হয়েছে বেশ কয়েকজন। তবে চুক্তির পর দীর্ঘ ২৫টি বছর সময় কেটে গেলেও পাহাড়ে থামেনি অস্ত্রের ঝনঝনানি বরং দিন দিন বাড়ছে সংঘাত, খুন, গুমসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। যার কারণে পাহাড়ে মনে আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়নের ২৫ বছরেও বির্তকের শেষ হয়নি। সরকার পক্ষ বলছে চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ধারাগুলোও হবে।
জেএসএসের অভিযোগ, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের পরিবর্তে লঙ্ঘন করছে। আর শান্তিচুক্তি সংশোধনের দাবিতে বাঙালি সংগঠগুলো আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পাহাড়ে নতুন একটিসহ চারটি সংগঠন জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (এমএন) ও ইউপিডি এফ গণতান্ত্রিক পার্টি ও নতুন করে কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর লড়াইয়ে রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে গেল একমাসের বেশি সময় পাহাড়ে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় রয়েছে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা।
এদিকে স্থানীয় পাহাড়িদের মতে শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে উন্নয়ন ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও ক্ষমতায়ন করতে হবে। তা না হলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যারা রয়েছে তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে না। শান্তিচুক্তি শুধু পাহাড়িদের জন্য নয়, পাহাড়ে বসবাসরত সব মানুষের জন্য। পাহাড়ে শান্তিচুক্তির পর অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে শান্তিচুক্তির পরেও পাহাড়ে চাঁদাবাজি ও অস্ত্রের ঝনঝনানি থামেনি। পাহাড়ে উন্নয়নের স্বার্থে আরও নজর রাখা দরকার মনে করেন পাহাড়ি নেতারা। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, শান্তিচুক্তির অনেকগুলো ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে চুক্তিতে বলা হয়েছে অবৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য। কিন্তু অস্ত্র জমা না দেয়ায় প্রতিনিয়িত হত্যা, গুম-খুন, চাঁদাবাজি হচ্ছে এবং বন্ধ হচ্ছে না সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।
তবে কিছু উপধারা রয়েছে সেই ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ২৫ বছরও শান্তিচুক্তি কোন সুফল পায়নি পাহাড়ের মানুষ। অধিকাংশ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেখানে সেনা ক্যাম্পগুলো তুলে নেয়ার কারণে পাহাড়ে এখনও হানাহানি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়েগেছে। তবে পাহাড়ে শান্তি-শৃখলা রক্ষার জন্য পুনরায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হলে হানাহানি বন্ধ হবে বলে মনে করেন এই নেতা।
অন্যদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লক্ষ্মী পদ দাশ বলেন, শান্তিচুক্তি ধারা-উপধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিছু কিছু ধারা-উপধারা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, শান্তিচুক্তির ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। স্কুল, কলেজ, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ হয়েছে। সর্বোপরি অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনগণর আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চুক্তির পর জেএসএস নেতাদের সব অস্ত্র জমা দেয়ার কথা থাকলেও তারা কিছু অস্ত্র জমা দিয়ে শর্ত ভঙ্গ করেছে। এর কারণেই পাহাড়ে এখনও অস্ত্রের ঝনঝনানি চলমান আছে। প্রতিনিয়ত পাহাড়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হচ্ছে এবং বন্ধ হচ্ছে না হত্যা গুম খুন। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সিংইয়ং ম্রো বলেন, পাহাড়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে শান্তি বজায় থাকছে এবং শান্তিচুক্তির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন। তবে শান্তিচুক্তির প্রায় ধারাগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, যার কারণে পার্বত্য জেলা পরিষদ সব সম্প্রদায়ের সদস্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সন্তু লারমার দল গত দুই যুগ ধরেই দাবি করে আসছে, চুক্তির মূল ধারার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করেনি সরকার। আর সরকার বলছে ধারা-উপধার প্রায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি
বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২
বান্দরবানসহ তিন জেলার মধ্যে ‘শান্ত’ ও ‘সম্প্রীতির জেলা’ খ্যাত বান্দরবান। কিন্তু সম্প্রতি পাহাড়ে সংগঠনগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েছে। গেল এক বছরে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত ও পারিবারিক কলহে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপহণ হয়েছে বেশ কয়েকজন। তবে চুক্তির পর দীর্ঘ ২৫টি বছর সময় কেটে গেলেও পাহাড়ে থামেনি অস্ত্রের ঝনঝনানি বরং দিন দিন বাড়ছে সংঘাত, খুন, গুমসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। যার কারণে পাহাড়ে মনে আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়নের ২৫ বছরেও বির্তকের শেষ হয়নি। সরকার পক্ষ বলছে চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ধারাগুলোও হবে।
জেএসএসের অভিযোগ, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের পরিবর্তে লঙ্ঘন করছে। আর শান্তিচুক্তি সংশোধনের দাবিতে বাঙালি সংগঠগুলো আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পাহাড়ে নতুন একটিসহ চারটি সংগঠন জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (এমএন) ও ইউপিডি এফ গণতান্ত্রিক পার্টি ও নতুন করে কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর লড়াইয়ে রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে গেল একমাসের বেশি সময় পাহাড়ে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় রয়েছে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা।
এদিকে স্থানীয় পাহাড়িদের মতে শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে উন্নয়ন ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও ক্ষমতায়ন করতে হবে। তা না হলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যারা রয়েছে তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে না। শান্তিচুক্তি শুধু পাহাড়িদের জন্য নয়, পাহাড়ে বসবাসরত সব মানুষের জন্য। পাহাড়ে শান্তিচুক্তির পর অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে শান্তিচুক্তির পরেও পাহাড়ে চাঁদাবাজি ও অস্ত্রের ঝনঝনানি থামেনি। পাহাড়ে উন্নয়নের স্বার্থে আরও নজর রাখা দরকার মনে করেন পাহাড়ি নেতারা। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, শান্তিচুক্তির অনেকগুলো ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে চুক্তিতে বলা হয়েছে অবৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য। কিন্তু অস্ত্র জমা না দেয়ায় প্রতিনিয়িত হত্যা, গুম-খুন, চাঁদাবাজি হচ্ছে এবং বন্ধ হচ্ছে না সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।
তবে কিছু উপধারা রয়েছে সেই ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ২৫ বছরও শান্তিচুক্তি কোন সুফল পায়নি পাহাড়ের মানুষ। অধিকাংশ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেখানে সেনা ক্যাম্পগুলো তুলে নেয়ার কারণে পাহাড়ে এখনও হানাহানি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়েগেছে। তবে পাহাড়ে শান্তি-শৃখলা রক্ষার জন্য পুনরায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হলে হানাহানি বন্ধ হবে বলে মনে করেন এই নেতা।
অন্যদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লক্ষ্মী পদ দাশ বলেন, শান্তিচুক্তি ধারা-উপধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিছু কিছু ধারা-উপধারা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, শান্তিচুক্তির ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। স্কুল, কলেজ, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ হয়েছে। সর্বোপরি অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনগণর আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চুক্তির পর জেএসএস নেতাদের সব অস্ত্র জমা দেয়ার কথা থাকলেও তারা কিছু অস্ত্র জমা দিয়ে শর্ত ভঙ্গ করেছে। এর কারণেই পাহাড়ে এখনও অস্ত্রের ঝনঝনানি চলমান আছে। প্রতিনিয়ত পাহাড়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হচ্ছে এবং বন্ধ হচ্ছে না হত্যা গুম খুন। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সিংইয়ং ম্রো বলেন, পাহাড়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে শান্তি বজায় থাকছে এবং শান্তিচুক্তির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন। তবে শান্তিচুক্তির প্রায় ধারাগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, যার কারণে পার্বত্য জেলা পরিষদ সব সম্প্রদায়ের সদস্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সন্তু লারমার দল গত দুই যুগ ধরেই দাবি করে আসছে, চুক্তির মূল ধারার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করেনি সরকার। আর সরকার বলছে ধারা-উপধার প্রায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে।