দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে পরিবারের অভাব-অনটনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। সে অভাব মেটানোর জন্য দায়িত্ব নিতে পিছপা হননি। কর্মচারী হিসেবে কাজ নেন চায়ের দোকানে।
কিন্তু সেই দুঃসময়ে এটিও যথেষ্ট না হওয়ায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি রেলস্টেশন ঝাড়ু দিয়ে ও জুতা পরিষ্কার করে পরিবারের জন্য অর্থোপার্জনের চেষ্টা করেছিলেন। বাবার কাছেই ফুটবলের হাতেখড়ি। খেলতেন অন্যদের সঙ্গে কিন্তু অনুশীলন করার নিজস্ব ফুটবল ছিল না।
মোজার ভেতরে খবরের কাগজ ভরে ফুটবল বানিয়ে খেলতেন। প্রকৃত ফুটবলে খেলার সুযোগ জন্য ইনডোর ফুটবল খেলতে বাধ্য হতেন। পরে পেলে বলেছেন, ইনডোর ফুটবল খেলাটা তার ভীষণ কাজে দিয়েছে। ঘাসের থেকে শক্ত মেঝেই বল অনেক দ্রুত গতিসম্পন্ন, সে কারণে খেলোয়াড়দেরও অনেক দ্রুত গতিসম্পন্ন হতে হয়। তারা দ্রুত চিন্তাভাবনা করার প্রশিক্ষণ পান।
পেলে বলেছিলেন, এরফলে আমি শিখেছিলাম যা-ই সামনে আসুক না কেন তাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
দারিদ্র্যের কারণে যে কাজ করতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন সেই কাজই তাকে আগামীতে বিজয়ী করতে তৈরি করেছিল। ইনডোর এই ফুটবলেই পেলে দারুণ ভালো করেন।
তার প্রতিভা একদিন চোখে পড়ে ওয়ালডেমার ডি ব্রিটোর। সে সময় পেলের বয়স ছিল ১৫ বছর। ব্রিটো পেলেকে গলি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন স্যান্টোস ক্লাবে এবং অন্তর্ভুক্ত করেন স্যান্টোসের ‘বি’ টিমে।
এখানেও সহজাত প্রতিভা দেখিয়ে এক বছরের মধ্যেই স্যান্টোসের মূল দলে নিজের জায়গা করে নেন পেলে। তারপর শুরু আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সেবার ব্রাজিলের পেশাদার ফুটবল লিগে স্যান্টোসের হয়ে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি অর্জন করেন।
ব্রাজিলের হয়ে পেলের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। সে ম্যাচে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে যায়। কিন্তু পেলে করেন বিশ্বরেকর্ড। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হিসেবে নতুন রেকর্ড তৈরি করেন তিনি।
১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলের অভিষেক ঘটে। এখানেও তিনি করেন বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার মর্যাদা অর্জন করেন।
এভাবে একে একে ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ এর মোট চার চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন পেলে। এর মধ্যে তিনবার (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে) বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেন। ক্যারিয়ারের ১৩৬৩ ম্যাচে পেলে গোল করেছেন ১২৮১টি।
১৯৬৯ সালের নভেম্বরে ভাস্কো-দা-গামা ক্লাবের বিপক্ষে ব্রাজিলিয়ান লিগের এক ম্যাচে যেদিন করলেন তার হাজারতম গোল, সেদিন পুরো ব্রাজিল মেতে উঠেছিল উৎসবে। কোনো একক খেলোয়াড়ের গোল করার এটিই ছিল বিশ্বরেকর্ড। পেলের জীবন যেন এক রূপকথা। অবিশ্বাস্য সব ঘটনায় মোড়া।
আজকের কোনো খেলোয়াড় কি সারা জীবন একটিমাত্র ক্লাবে খেলার কথা ভাবতে পারেন? পেলে কিন্তু একটিমাত্র ক্লাবেই খেলেছেন সারা জীবন। কোনো ব্যক্তিকে কি জাতীয় সম্পদ হিসেবে কোনো দেশ ঘোষণা করেছে?
ব্রাজিলের সরকার পেলেকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছিল এবং এই সম্পদ যেন রপ্তানি না করা হয় সেজন্য আইনও তৈরি করেছিল। পেলেকে দেখার জন্য গৃহযুদ্ধ বন্ধ করেছিল নাইজেরিয়া। এমন আশ্চর্য সব কান্ড যে মানুষটার সেই মানুষটা গড়ে উঠেছিলেন কোন মন্ত্রবলে?
চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ আর তার তিনটিই জয় করা মুখের কথা নয় তার জন্য কমপক্ষে ষোল বছর শারীরিকভাবে সক্ষম ও নৈপুণ্য প্রদর্শনের উপযোগী থাকতে হবে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো তা পেলের কিছু উদ্ধৃতির মাধ্যমে বোঝা যায়।
তিনি বলেছিলেন, সবকিছুই অনুশীলনের অধীন। সফলতা কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়। এটা হলো কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ক্রমাগত শিখতে থাকা, ত্যাগ এবং নিজের কাজকে ভালোবাসার সমন্বয়ের প্রাপ্ত ফলাফল।
শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে পরিবারের অভাব-অনটনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। সে অভাব মেটানোর জন্য দায়িত্ব নিতে পিছপা হননি। কর্মচারী হিসেবে কাজ নেন চায়ের দোকানে।
কিন্তু সেই দুঃসময়ে এটিও যথেষ্ট না হওয়ায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি রেলস্টেশন ঝাড়ু দিয়ে ও জুতা পরিষ্কার করে পরিবারের জন্য অর্থোপার্জনের চেষ্টা করেছিলেন। বাবার কাছেই ফুটবলের হাতেখড়ি। খেলতেন অন্যদের সঙ্গে কিন্তু অনুশীলন করার নিজস্ব ফুটবল ছিল না।
মোজার ভেতরে খবরের কাগজ ভরে ফুটবল বানিয়ে খেলতেন। প্রকৃত ফুটবলে খেলার সুযোগ জন্য ইনডোর ফুটবল খেলতে বাধ্য হতেন। পরে পেলে বলেছেন, ইনডোর ফুটবল খেলাটা তার ভীষণ কাজে দিয়েছে। ঘাসের থেকে শক্ত মেঝেই বল অনেক দ্রুত গতিসম্পন্ন, সে কারণে খেলোয়াড়দেরও অনেক দ্রুত গতিসম্পন্ন হতে হয়। তারা দ্রুত চিন্তাভাবনা করার প্রশিক্ষণ পান।
পেলে বলেছিলেন, এরফলে আমি শিখেছিলাম যা-ই সামনে আসুক না কেন তাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
দারিদ্র্যের কারণে যে কাজ করতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন সেই কাজই তাকে আগামীতে বিজয়ী করতে তৈরি করেছিল। ইনডোর এই ফুটবলেই পেলে দারুণ ভালো করেন।
তার প্রতিভা একদিন চোখে পড়ে ওয়ালডেমার ডি ব্রিটোর। সে সময় পেলের বয়স ছিল ১৫ বছর। ব্রিটো পেলেকে গলি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন স্যান্টোস ক্লাবে এবং অন্তর্ভুক্ত করেন স্যান্টোসের ‘বি’ টিমে।
এখানেও সহজাত প্রতিভা দেখিয়ে এক বছরের মধ্যেই স্যান্টোসের মূল দলে নিজের জায়গা করে নেন পেলে। তারপর শুরু আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সেবার ব্রাজিলের পেশাদার ফুটবল লিগে স্যান্টোসের হয়ে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি অর্জন করেন।
ব্রাজিলের হয়ে পেলের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। সে ম্যাচে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে যায়। কিন্তু পেলে করেন বিশ্বরেকর্ড। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হিসেবে নতুন রেকর্ড তৈরি করেন তিনি।
১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলের অভিষেক ঘটে। এখানেও তিনি করেন বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার মর্যাদা অর্জন করেন।
এভাবে একে একে ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ এর মোট চার চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন পেলে। এর মধ্যে তিনবার (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে) বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেন। ক্যারিয়ারের ১৩৬৩ ম্যাচে পেলে গোল করেছেন ১২৮১টি।
১৯৬৯ সালের নভেম্বরে ভাস্কো-দা-গামা ক্লাবের বিপক্ষে ব্রাজিলিয়ান লিগের এক ম্যাচে যেদিন করলেন তার হাজারতম গোল, সেদিন পুরো ব্রাজিল মেতে উঠেছিল উৎসবে। কোনো একক খেলোয়াড়ের গোল করার এটিই ছিল বিশ্বরেকর্ড। পেলের জীবন যেন এক রূপকথা। অবিশ্বাস্য সব ঘটনায় মোড়া।
আজকের কোনো খেলোয়াড় কি সারা জীবন একটিমাত্র ক্লাবে খেলার কথা ভাবতে পারেন? পেলে কিন্তু একটিমাত্র ক্লাবেই খেলেছেন সারা জীবন। কোনো ব্যক্তিকে কি জাতীয় সম্পদ হিসেবে কোনো দেশ ঘোষণা করেছে?
ব্রাজিলের সরকার পেলেকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছিল এবং এই সম্পদ যেন রপ্তানি না করা হয় সেজন্য আইনও তৈরি করেছিল। পেলেকে দেখার জন্য গৃহযুদ্ধ বন্ধ করেছিল নাইজেরিয়া। এমন আশ্চর্য সব কান্ড যে মানুষটার সেই মানুষটা গড়ে উঠেছিলেন কোন মন্ত্রবলে?
চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ আর তার তিনটিই জয় করা মুখের কথা নয় তার জন্য কমপক্ষে ষোল বছর শারীরিকভাবে সক্ষম ও নৈপুণ্য প্রদর্শনের উপযোগী থাকতে হবে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো তা পেলের কিছু উদ্ধৃতির মাধ্যমে বোঝা যায়।
তিনি বলেছিলেন, সবকিছুই অনুশীলনের অধীন। সফলতা কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়। এটা হলো কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ক্রমাগত শিখতে থাকা, ত্যাগ এবং নিজের কাজকে ভালোবাসার সমন্বয়ের প্রাপ্ত ফলাফল।