alt

সারাদেশ

জেলা ও উপজেলার অধিকাংশ হাসপাতাল বেহাল

বাকী বিল্লাহ : শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩

তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল চিত্র -সংবাদ

দেশের জেলা ও উপজেলার অধিকাংশ হাসপাতালের চিকিৎসকের পদ শূন্যসহ নানামুখী সমস্যায় বেহাল দশা বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মতো পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবও রয়েছে। যার কারণে হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি চিকিৎসকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানী গবেষণা থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে শতকরা ৬৩ ভাগ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালটেন্টের পদ শূন্য আছে। এভাবে বিভিন্ন পদ মর্যাদার পদগুলো বছরের পর বছর শূন্য আছে।

জেলা হাসপাতালে ৬৫ ভাগ এবং উপজেলায় ৩৮ ভাগ মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জন পদ শূন্য রয়েছে। নার্সদের পদের ক্ষেত্রে জেলায় ১৫ ভাগ এবং উপজেলায় ২৫ ভাগ পদ শূন্য রয়েছে।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের মধ্যে জেলা পর্যায়ে শতকরা ৫১ ভাগ ও উপজেলা পর্যায়ে ৪২ ভাগ পদ শূন্য। ক্লিনারের পদ জেলায় ২০ ভাগ উপজেলা পর্যায়ে ৬৬ ভাগ শূন্য দীর্ঘদিন। নিরাপত্তাকর্মীর পদও বছরের পর বছর শূন্য থাকে। শুধু তাই না ঝুঁকিপূর্ণ সেবাকক্ষ, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, নিরাপদ পানির অভাব, অনুপযুক্ত হসপিটাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মেডিকেল অফিসার, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ও সহায়ককর্মী সংকট বিরাজ করছে।

এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত কাজের চাপ, সঠিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম প্রযুক্তির অভাবকে অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিকিৎসকরা চিহ্নিত করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, হাসপাতালগুলোতে রয়েছে অন্যায় সুবিধাভোগীদের প্রভাব ও নিরাপত্তার অভাব সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ। কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতার অনাকাক্সিক্ষত চাপ ও প্রস্তাব, কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কিছু স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সেবা দেয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে উচ্চশিক্ষা বা প্রশিক্ষণের সুযোগের অভাব, কর্মক্ষেত্রে বদলি-বৈষম্য, অর্জিত জ্ঞান বাস্তবায়নে সুযোগের অভাব, বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে বৈষম্য, চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জীর্ণশীর্ণ আবাসন ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সুবিধার অভাব, দুর্বল যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অবস্থানকে নিরুৎসাহিত করে।

চিকিৎসকদের গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের বড় সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওপর নির্ভরশীল। এই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। যা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার অন্তরায়। এ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা গেলে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি কমিয়ে উন্নত সেবা দেয়ার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের সরেজমিন অনুসন্ধান ও গবেষণা থেকে জানা গেছে, গবেষণায় দেশের ৯টি জেলা হাসপাতাল ও ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সার্ভে চেকলিস্টের মাধ্যমে হাসপাতাল সমূহের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ৭৭ জন উপজেলা স্বাস্ব্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, সুপারিনটেনডেন্ট, মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ তথ্য নেয়া হয়। এরপর তা নিয়ে টানা গবেষণা করা হয়।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশের শতভাগ জেলা হাসপাতালে রক্ত পরিসঞ্চালন ইউনিট থাকলেও শতকরা ৪১ দশমিক ২ ভাগ উপজেলা হাসপাতালে এই সেবা পাওয়া যায় না। জেলা হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন পাওয়া গেছে ৮৮ দশমিক ৯ ভাগ। অন্যদিকে উপজেলা হাসপাতালে পাওয়া গেছে শতকরা ৪১ দশমিক ২ ভাগ। ইসিজি সেবাও সব হাসপাতালে পাওয়া যেন সোনার হরিণ। জেলা হাসপাতালে ইসিজি শতকরা ৮৮ দশমিক ৯ ভাগ। উপজেলায় ৭৬ দশমিক ৫ ভাগে পাওয়া গেছে।

আল্ট্রাসনোগ্রাম সুবিধা আছে জেলা পর্যায়ে শতকরা ৪৪ ভাগ ও উপজেলায় আছে ১১ ভাগ হাসপাতালে। মহিলা রোগীদের অ্যাটেনডেন্টদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা আছে জেলা পর্যায়ে শতকরা ৭৭ দমমিক ৮ ভাগ। শতকরা ৬৪ দশমিক ৭ ভাগ আছে উপজেলা হাসপাতালে।

চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি বা কোয়ার্টার সুবিধা থাকলে জেলা হাসপাতালে উপস্থিতি শতকরা ৪৪ দশমিক ৪ ভাগ। শতকরা ৫২ দশমিক ৯ ভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী ডরমিটরি বা কোয়ার্টার পাওয়া গেলেও শতকরা ১৭ দশমিক ৬ ভাগ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের জন্য থাকা ডরমিটিরি, কোয়ার্টারে গার্ড থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সব স্তরের শূন্য পদ পূরণ করা দরকার, অর্জিত দক্ষতা অনুযায়ী চিকিৎসকদের যথাযথ পোস্টিং নিশ্চিত করা উচিত। পৃথক পরামর্শ, ওয়েটিং রুম, ডাক্তারের রুম, চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন টয়লেট সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নত করা। দরকারি যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষিত জনবল, ল্যাবরেটরি সেবাগুলোর মান উন্নত করা দরকার বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছেন।

আর বদলি ও পদোন্নতির জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন এবং পছন্দসই বিষয়ে শিক্ষা নেয়ার সুযোগের ব্যবস্থা করা দরকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে উপজেলার নারী-পুরুষ চিকিৎসকদের সমতায়ন নিশ্চিতে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা যেতে পারে। আর চিকিৎসকদের পদোন্নতি অটোমেশন করতে হলে চিকিৎসকদের ৪টি ক্যাডার দরকার বলে তিনি জানান।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি এ সম্পর্কে বলেছেন, চিকিৎসকদের সংখ্যা এখনও তুলনামূলক অনেক কম। এতে তারা কাজের চাপে থাকেন। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে চিকিৎসকরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে, এটা থাকবেই। রাতারাতি দেশের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কিছু জায়গায় আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী, দুই তৃতীয়ংশ হাসপাতালের এক্স-রেসহ সব মেশিন নষ্ট। এর জন্য সিভিল সার্জনদের দায়িত্ব নিতে হবে। আর প্রতিষ্ঠানের প্রধান ভালো হলে বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

রংপুরে বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

ছবি

নাফ নদীতে মাছ ধরার সময় আরাকান আর্মির গুলিতে দুই জেলে আহত

ছবি

নাফনদে মাছ শিকারে গিয়ে দুই জেলে গুলিবিদ্ধ

মায়ানমারে স্কুলে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা, ১৭ ছাত্র নিহত

চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১৪ জন আটক

রাজারহাটে ৩ জুয়াড়ি আটক

দুই জেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুইজনের মৃত্যু

হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার

কলারোয়া সীমান্তে ওষুধ-শাড়ি উদ্ধার

দুই জেলায় সড়কে ঝরল ২ গ্যারেজ শ্রমিকের প্রাণ

ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে পাঁচ জনের মৃত্যু

দুই জেলায় সড়কে ঝরল ২ গ্যারেজ শ্রমিকের প্রাণ

ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী, গর্ভপাতে নবজাতকের মৃত্যু

ছবি

সরকারি রাস্তা থেকে লক্ষাধিক টাকার গাছ কাটার অভিযোগ

তালগাছ থেকে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

কবরস্থানের জায়গা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১

ব্রহ্মপুত্র নদে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

ছবি

ছুটির পরেও বিদ্যালয়ে উড়ছে জাতীয় পতাকা!

এক সপ্তাহে ৭ গরু চুরি বেড়েছে অন্য চুরিও

তাড়াশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাঝে গরু বিতরণে অনিয়ম

ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি

ছবি

টাঙ্গাইল পৌরসভায় ১৩৮ বছরেও হয়নি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ছবি

টঙ্গীবাড়ীতে বেহাল সড়কে দুর্ভোগ

ঝালকাঠির নথুল্লাবাদে খাল পুনঃখননে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ

সিংড়ায় বিএনপির অফিস থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ১

ছবি

সিরাজগঞ্জে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৬ লক্ষাধিক পশু

সুনামগঞ্জের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মী ও জেলা প্রশাসনের মতবিনিময়

কেশবপুরে শিক্ষার মানোন্নয়নে মতবিনিময়

নোয়াখালী শহর আ’লীগের সভাপতি পিন্টুর বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ

হত্যার প্রতিশোধ নিতে গুলি করে হত্যাচেষ্টা

ছবি

চাঁদাবাজির প্রতিবাদে সিএনজি চালকদের সড়কে অবরোধ

কলাপাড়ায় খাল দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান

ফেইসবুকে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করায় যুবক গ্রেপ্তার

সখীপুরে নারী ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পিস্কিন রোগ

ছবি

মাগুরায় জিআই সনদ পাওয়ার পরও অবহেলার শিকার লিচু চাষিরা

tab

সারাদেশ

জেলা ও উপজেলার অধিকাংশ হাসপাতাল বেহাল

বাকী বিল্লাহ

তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল চিত্র -সংবাদ

শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩

দেশের জেলা ও উপজেলার অধিকাংশ হাসপাতালের চিকিৎসকের পদ শূন্যসহ নানামুখী সমস্যায় বেহাল দশা বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মতো পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবও রয়েছে। যার কারণে হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি চিকিৎসকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানী গবেষণা থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে শতকরা ৬৩ ভাগ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালটেন্টের পদ শূন্য আছে। এভাবে বিভিন্ন পদ মর্যাদার পদগুলো বছরের পর বছর শূন্য আছে।

জেলা হাসপাতালে ৬৫ ভাগ এবং উপজেলায় ৩৮ ভাগ মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জন পদ শূন্য রয়েছে। নার্সদের পদের ক্ষেত্রে জেলায় ১৫ ভাগ এবং উপজেলায় ২৫ ভাগ পদ শূন্য রয়েছে।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের মধ্যে জেলা পর্যায়ে শতকরা ৫১ ভাগ ও উপজেলা পর্যায়ে ৪২ ভাগ পদ শূন্য। ক্লিনারের পদ জেলায় ২০ ভাগ উপজেলা পর্যায়ে ৬৬ ভাগ শূন্য দীর্ঘদিন। নিরাপত্তাকর্মীর পদও বছরের পর বছর শূন্য থাকে। শুধু তাই না ঝুঁকিপূর্ণ সেবাকক্ষ, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, নিরাপদ পানির অভাব, অনুপযুক্ত হসপিটাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মেডিকেল অফিসার, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ও সহায়ককর্মী সংকট বিরাজ করছে।

এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত কাজের চাপ, সঠিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম প্রযুক্তির অভাবকে অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিকিৎসকরা চিহ্নিত করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, হাসপাতালগুলোতে রয়েছে অন্যায় সুবিধাভোগীদের প্রভাব ও নিরাপত্তার অভাব সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ। কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতার অনাকাক্সিক্ষত চাপ ও প্রস্তাব, কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কিছু স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সেবা দেয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে উচ্চশিক্ষা বা প্রশিক্ষণের সুযোগের অভাব, কর্মক্ষেত্রে বদলি-বৈষম্য, অর্জিত জ্ঞান বাস্তবায়নে সুযোগের অভাব, বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে বৈষম্য, চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জীর্ণশীর্ণ আবাসন ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সুবিধার অভাব, দুর্বল যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অবস্থানকে নিরুৎসাহিত করে।

চিকিৎসকদের গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের বড় সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওপর নির্ভরশীল। এই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। যা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার অন্তরায়। এ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা গেলে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি কমিয়ে উন্নত সেবা দেয়ার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের সরেজমিন অনুসন্ধান ও গবেষণা থেকে জানা গেছে, গবেষণায় দেশের ৯টি জেলা হাসপাতাল ও ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সার্ভে চেকলিস্টের মাধ্যমে হাসপাতাল সমূহের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ৭৭ জন উপজেলা স্বাস্ব্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, সুপারিনটেনডেন্ট, মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ তথ্য নেয়া হয়। এরপর তা নিয়ে টানা গবেষণা করা হয়।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশের শতভাগ জেলা হাসপাতালে রক্ত পরিসঞ্চালন ইউনিট থাকলেও শতকরা ৪১ দশমিক ২ ভাগ উপজেলা হাসপাতালে এই সেবা পাওয়া যায় না। জেলা হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন পাওয়া গেছে ৮৮ দশমিক ৯ ভাগ। অন্যদিকে উপজেলা হাসপাতালে পাওয়া গেছে শতকরা ৪১ দশমিক ২ ভাগ। ইসিজি সেবাও সব হাসপাতালে পাওয়া যেন সোনার হরিণ। জেলা হাসপাতালে ইসিজি শতকরা ৮৮ দশমিক ৯ ভাগ। উপজেলায় ৭৬ দশমিক ৫ ভাগে পাওয়া গেছে।

আল্ট্রাসনোগ্রাম সুবিধা আছে জেলা পর্যায়ে শতকরা ৪৪ ভাগ ও উপজেলায় আছে ১১ ভাগ হাসপাতালে। মহিলা রোগীদের অ্যাটেনডেন্টদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা আছে জেলা পর্যায়ে শতকরা ৭৭ দমমিক ৮ ভাগ। শতকরা ৬৪ দশমিক ৭ ভাগ আছে উপজেলা হাসপাতালে।

চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি বা কোয়ার্টার সুবিধা থাকলে জেলা হাসপাতালে উপস্থিতি শতকরা ৪৪ দশমিক ৪ ভাগ। শতকরা ৫২ দশমিক ৯ ভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী ডরমিটরি বা কোয়ার্টার পাওয়া গেলেও শতকরা ১৭ দশমিক ৬ ভাগ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের জন্য থাকা ডরমিটিরি, কোয়ার্টারে গার্ড থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সব স্তরের শূন্য পদ পূরণ করা দরকার, অর্জিত দক্ষতা অনুযায়ী চিকিৎসকদের যথাযথ পোস্টিং নিশ্চিত করা উচিত। পৃথক পরামর্শ, ওয়েটিং রুম, ডাক্তারের রুম, চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন টয়লেট সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নত করা। দরকারি যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষিত জনবল, ল্যাবরেটরি সেবাগুলোর মান উন্নত করা দরকার বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছেন।

আর বদলি ও পদোন্নতির জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন এবং পছন্দসই বিষয়ে শিক্ষা নেয়ার সুযোগের ব্যবস্থা করা দরকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে উপজেলার নারী-পুরুষ চিকিৎসকদের সমতায়ন নিশ্চিতে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা যেতে পারে। আর চিকিৎসকদের পদোন্নতি অটোমেশন করতে হলে চিকিৎসকদের ৪টি ক্যাডার দরকার বলে তিনি জানান।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি এ সম্পর্কে বলেছেন, চিকিৎসকদের সংখ্যা এখনও তুলনামূলক অনেক কম। এতে তারা কাজের চাপে থাকেন। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে চিকিৎসকরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে, এটা থাকবেই। রাতারাতি দেশের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কিছু জায়গায় আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী, দুই তৃতীয়ংশ হাসপাতালের এক্স-রেসহ সব মেশিন নষ্ট। এর জন্য সিভিল সার্জনদের দায়িত্ব নিতে হবে। আর প্রতিষ্ঠানের প্রধান ভালো হলে বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

back to top