alt

সারাদেশ

সরকারি খাতায় অবৈধ ইটভাটা ৪ হাজার ৬৩৩

মোস্তাফিজুর রহমান : শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩

এ যেন এক ধুলার রাজ্য! মূল সড়ক থেকে যখন ট্রাকটি নদীর পাড়ে দিকে ছুটলো তখন পেছনে ধুলায় পুরো অন্ধকার। খানিকটা সময় পর কিছুটা পরিষ্কার হয়ে এলে সামনে এগোতে দূর থেকে দৃষ্টি পড়লো নদীর জলের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এক ‘বিশাল পাহাড়’। সেই ‘পাহাড়ের’ কাছে গিয়ে দেখা গেল এখানেই একে একে ট্রাক এসে মাটি ফেলছে। মাটির এই ‘পাহাড়’ বেড়ে চূড়ায় উঠতেই মিললো আরেক দৃশ্য! বিশাল এলাকা জুড়ে কৃষি জমি থেকে নিয়ে আসা উর্বর এই মাটি নিয়ে চলছে ইট তৈরির মহাযজ্ঞ। একপাশে সারিসারি কাঁচা ইট শুকানো হচ্ছে, অন্যপাশে শুকনো ইট কয়লায় পোড়ানো হচ্ছে। আর ভাটার উঁচু চিমনি থেকে অবিরত বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ার সঙ্গে ছাই ছড়িয়ে পড়ছে নদীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে। এটি রাজধানী ঢাকার অদূরে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাংগা বাজারের পশ্চিম পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের চিত্র।

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এই নদীর পাড় ঘেঁষে দীর্ঘ তিন দশক আগে গড়ে উঠে ‘মেসার্স আজিজ ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং (এবিএম)’ নামে এই ইটভাটা। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এটির কোন পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। পাশেই নদী, স্কুল, বাজার এবং বসতবাড়ি। আইন অনুযায়ী এমন জনবহুল স্থানে ইটভাটা পরিচালনার কোন সুযোগ নেই। তারপরও ইটভাটাটি চলছে দীর্ঘ সময় ধরে।

শুধু এটিই নয়, উপকূলীয় বা পাহাড়ি, বরেন্দ্র অঞ্চল কিংবা চরাঞ্চল- দেশের সবত্রই এমন অবৈধ ইটভাটার খোঁজ রয়েছে। সরকারি তালিকা বলছে, সারাদেশে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা এখন ৪ হাজার ৬৩৩টি। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে মোট ইটভাটার প্রায় ৫৯ শতাংশই অবৈধ। অবৈধ ইটভাটার সংখ্যায় শীর্ষে রাজশাহী বিভাগ। অবৈধ ইটভাটার হার সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগে। ঢাকা বিভাগে বৈধ-অবৈধ মিলে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিগত চার বছরে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার। এরমধ্যে গত তিন বছর অবৈধ ইটভাটার বাড়ার হার বেশি। গত দশ বছরে মোট ইটভাটার সংখ্যা বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সবশেষ (ডিসেম্বর, ২০২২) পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৭ হাজার ৮৮১টি। পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে সারাদেশে মোট ইটভাটা ছিল ৭ হাজার ৯০২টি। এ হিসাবে কয়েকটি ইটভাটা কমেছে। তবে দশ বছর আগে ২০১৩ সালে সারাদেশে ইটভাটা ছিল ৪ হাজার ৯৫৯টি। আর চার বছর আগে ২০১৮ সালে অবৈধ ইটভাটা ছিল ৩ হাজার ২০০টি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ফিক্সড চিমনির ইটভাটা রয়েছে ১ হাজার ৩৭৩টি। জিগগ্যাগ ইটভাটা রয়েছে ৬ হাজার ৩৫২টি। অটো ইটভাটা (হাইব্রিড হফম্যান ও টানেল কিলন) রয়েছে ১৪৯টি। এছাড়া অন্যান্য প্রযুক্তির ইটভাটা রয়েছে ৬টি।

দেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) হয়েছে। পাশাপাশি গত বছরের ২৫ জুলাই বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। ওই গেজেটের আলোকে ইতোমধ্যে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তালিকা অনুযায়ী অবৈধ ইটভাটা বন্ধের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তারা।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক সংবাদকে বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।’

যদিও বেসরকারি সংস্থা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় বেশকিছু অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। তাদের ধারণা, দেশে ইটভাটার বাস্তবচিত্র আরও অনেক ভয়াবহ।

প্রতিবছর এসব ইটভাটা বায়ুদূষণ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। পাশাপাশি ইট তৈরিতে ধ্বংশ হচ্ছে প্রচুর ফসলি জমি ও পাহাড়ের মাটি। সেই সঙ্গে জ্বালানি হিসেবে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বিপুল পরিমাণ গাছপালা। যার ফলে কৃষি উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করছে। তাছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত আমদানি করা কয়লা অত্যন্ত নিম্নমানের ও উচ্চ সালফারযুক্ত। এই সালফার মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ইট পোড়াতে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করায় সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক বায়ুদূষণ।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান সংবাদকে বলেন, ‘সারাদেশে ব্যঙের ছাতার মতো ইটভাটা গড়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, লোকালয় ও বনাঞ্চলের আশপাশে, পাহাড়ের পাদদেশে এবং দুই বা তিন ফসলি কৃষি জমিতে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। ফলে ইটভাটার বায়ুদূষণে এখন জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। তাই সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা। কিন্তু ইটভাটা বন্ধে সরকারের কার্যক্রম কতটুকু হচ্ছে তা প্রশ্নবিদ্ধ।’

ইটভাটা ঢাকায় বেশি

রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা দিনদিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় এখন নিয়মিতই শীর্ষ স্থান দখল করে নিচ্ছে শহরটি। এ বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটার কালো ধোঁয়া। ঢাকায় বর্তমানে ৩৯০টি ইটভাটা চালু আছে, এরমধ্যে ১৭৮টিই অবৈধ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় মোট ২০১৭টি ইটভাটা রয়েছে, যা বিভাগভিত্তিক ইটভাটার সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। যারমধ্যে ৭৪৪টি ইটভাটা অবৈধ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ২৯৪টির মধ্যে ৮৬টি, মুন্সীগঞ্জে ৬০টি মধ্যে ৩০টি, মানিকগঞ্জে ১৪৭টির মধ্যে ১৮টি, নরসিংদীতে ১৮০টির মধ্যে ৫৬টি, গাজীপুরে ১৫৯টির মধ্যে ৮৬টি, ফরিদপুরে ১২৭টির মধ্যে ১৫টি, রাজবাড়ীতে ৮১টির মধ্যে ৫১টি, গোপালগঞ্জে ৪৭টির মধ্যে ৩০টি, মাদারীপুরে ৮৭টির মধ্যে ৩১টি, শরীয়তপুরে ৫৩টির মধ্যে ৪টি, কিশোরগঞ্জে ১০৯টির মধ্যে ৮টি এবং টাঙ্গাইলে ২৮১টির মধ্যে ১৫১টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

অবৈধ ইটভাটায় শীর্ষে রাজশাহী বিভাগ

দেশের সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগের ৮টি জেলায় ৯৩৫টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এখানে মোট ইটভাটার সংখ্যা ১ হাজার ১১৯টি। অর্থাৎ মোট ইটভাটার প্রায় ৮৪ শতাংশই অবৈধ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজশাহী জেলায় ১০৭টির মধ্যে ৭৯টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০৪টির মধ্যে ৯১টি, নাটোরে ১১টির মধ্যে ৭২টি, নওগাঁয় ১৯৩টির মধ্যে ১৮৭টি, বগুড়ায় ২৩৫টির মধ্যে ২১৮টি, জয়পুরহাটে ৪৮টির মধ্যে ৩৯টি, পাবনায় ১৮৭টির মধ্যে ১৬১টি এবং সিরাজগঞ্জে ১৩৪টির মধ্যে ৮৮টি ইটভাটা অবৈধ।

অবৈধের হারে এগিয়ে ময়মনসিংহ

বৈধ ইটভাটার তুলনায় অবৈধ ইটভাটার হার সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ময়মনসিংহ বিভাগে। এখানে মোট ইটভাটার প্রায় ৮৮ শতাংশ অবৈধ। এর মধ্যে শেরপুরের সব ইটভাটাই অবৈধ।

অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানমতে, ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ৪৬০টির মধ্যে ৪০৪টি ইটভাটাই অবৈধ। এর মধ্যে সদর জেলায় ২৯১টি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে ২৬২টিই অবৈধ। এছাড়া নেত্রেকোনায় ৫৭টির মধ্যে ৪১টি, শেরপুরে ৫৫টির মধ্যে ৫৫টি এবং জামালপুরে ৫৭টির মধ্যে ৪৬টি ইটভাটাই অবৈধ।

চট্টগামের ৫ জেলার সব ইটভাটাই অবৈধ

পর্যটন জেলা কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের ৫টি জেলার সব ইটভাটাই অবৈধ। এই জেলাগুলোয় মোট ৩১৮টি অবৈধ ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ১০৯টি, চাঁদপুরে ১১০টি, রাঙ্গামাটিতে ১৭টি, খাগড়াছড়িতে ৩৩টি ও বান্দরবানে ৪৯টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ইটভাটার সংখ্যা ১ হাজার ৪৮৯টি। এর মধ্যে ৯১৭টি অবৈধ ইটভাটা। আর বৈধ ইটভাটার সংখ্যা মাত্র ৫৭২টি। অর্থাৎ চট্টগ্রামে অবৈধ ইটভাটার হার প্রায় ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সদর জেলায় সবচেয়ে বেশি তথা ২৭৬টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এখানে মোট ৩২৯টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র ৫৩টি।

এছাড়া কুমিল্লায় ৩১৫টির মধ্যে ১৪৪টি, ব্রাহ্মবাড়িয়ায় ১৮৫টির মধ্যে ৯৪টি, নোয়াখালীতে ১২৩টির মধ্যে ৮টি, লক্ষ্মীপুরে ১১২টির মধ্যে ২৩টি এবং ফেনীতে ১০৭টির মধ্যে ৫৩টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

রংপুরে ৮৬ শতাংশই অবৈধ

অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় মোট ৯৫২টি ইটভাটা রয়েছে, যার ৮১৮টি অবৈধ। এ হিসাবে অবৈধ ইটভাটার হার প্রায় ৮৬ শতাংশ।

এর মধ্যে রংপুর সদরে ২৪২টির মধ্যে ২১৪টি, কুড়িগ্রামে ১১৯টির মধ্যে ৯৯টি, লালমনিরহাটে ৪৭টির মধ্যে ৩০টি, নীলফামারীতে ৬৫টির মধ্যে ৬২টি, গাইবান্ধায় ১৫৫টির মধ্যে ১৪০টি, দিনাজপুরে ২৩২টির মধ্যে ১৯০টি, পঞ্চগড়ে ২৫টির মধ্যে ১৭টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৬৭টির মধ্যে ৬৬টিই অবৈধ ইটভাটা।

খুলনায় অবৈধ ৬২৪

খুলনা বিভাগে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৯৭৩টি। এর মধ্যে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৬২৪টি। এ হিসাবে অবৈধ ইটভাটার হার ৬৪ শতাংশের বেশি। এ বিভাগে সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে যশোরে। এ জেলায় ১১০টি ইটভাটার মধ্যে ১০৭টিই অবৈধ। এরপরই রয়েছে যশোর পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদেহ, এখানে ৯০টির মধ্যে ৮৭টিই অবৈধ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৩৩টির মধ্যে ২টি, সাতক্ষীরায় ৯৯টির মধ্যে ৭০টি, মাগুরায় ৭১টির মধ্যে ৬৪টি, নড়াইলে ৪৫টির মধ্যে ৪১টি, কুষ্টিয়ায় ১৭০টির মধ্যে ১৩৩টি, চুয়াডাঙ্গায় ১০২টির মধ্যে ৬৩টি এবং মেহেরপুরে ৬৪টির মধ্যে ৫৭টি ইটাভাটা অবৈধ। তবে খুলনা সদর জেলায় ১৮৯টির সবগুলোই বৈধ ইটভাটা রয়েছে।

সিলেটে কম, তারপর বরিশাল

দেশে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। সিলেটর পর রয়েছে বরিশাল বিভাগ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ২৮৮টি, যারমধ্যে অবৈধ ২৪টি। অর্থাৎ মোট ইটভাটার ৮ শতাংশের কিছু বেশি অবৈধ। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ১১১টির মধ্যে ১৬টি ও মৌলবিবাজারে ৬৮টির মধ্যে ৮টি অবৈধ। আর সিলেট ৮৫ ও সুনামগঞ্জে ২৪টির মধ্যে সবগুলোই বৈধ ইটভাটা।

বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় মোট ৪৭৩টি ইটভাটা রয়েছে, যারমধ্যে ১৫৪টি অবৈধ। অর্থাৎ মোট ইটভাটার ৩৩ শতাংশ অবৈধ। এর মধ্যে বরিশাল সদর জেলায় ১৭৯টির মধ্যে ৭৬টি, পটুয়াখালীতে ৭৩টির মধ্যে ২১টি, বরগুনায় ৫৬টির মধ্যে ২টি, ঝালকাঠিতে ৩৮টির মধ্যে ২৬টি, পিরোজপুরে ৩৬টির মধ্যে ১৪টি এবং ভোলায় ৯১টির মধ্যে ১৫টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

ইটভাটায় কত ক্ষতি?

ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। দেশের বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে বিশ গুণের বেশি। এ বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস অবৈধ ইটভাটা।

দেশে এলাকাভিত্তিক বায়ুদূষণের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা এবং তার আশপাশের বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। উত্তাঞ্চলের বিভাগ রংপুরেও বায়ুদূষণের মানমাত্রা সন্তোষজনক নয়। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের বায়ুদূষণের মানমাত্রা কিছুটা ভালো।

বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা মতে, বায়ুদূষণের ফলে বছরে দেশের ১ লাখ ৬৩ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। যা মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ। এ বায়ুদূষণের কারণে ২৮ কোটি দিনের মতো কর্ম সময় নষ্ট হয়। টাকায় হিসাব করলে এর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৯৫ ট্রিলিয়ন থেকে ২.২৮ ট্রিলিয়ন টাকা, যা দেশের জিডিপির ৭.৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ।

যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান বলছিলেন, ‘ইটভাটায় যে কত ক্ষতি হচ্ছে তা হিসাব করে বের করা সম্ভব নয়।’

ছবি

৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো তাপপ্রবাহ

সেনবাগে কলেজছাএ ও সুধারামে প্রবাসী খুনের পর বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

ছবি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

দুর্বৃত্তের হামলায় ‘গুরুতর’ আহত যুবলীগ নেতা

ছবি

গাজীপুরে কাভার্ড ভ্যানে সিএনজির ধাক্কা নিহত-১ আহত-৪

ছবি

হাসপাতালে হিট ষ্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু

ছবি

লালমনিরহাটে হিট স্ট্রোকে অটোচালকের মৃত্যু

ছবি

গাজীপুরে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু

ছবি

পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

ছবি

গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

প্রিলি পরীক্ষায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার প্রার্থী বসেছে পরীক্ষায়

ছবি

মায়ানমার ফেরতঃ কারাগারে দুপুরে এক বেলা খাবার, সারাদিন ব্যস্ত ভারি কাজে

ছবি

বারিতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল শীর্ষক প্রশিক্ষণ

ছবি

গাজীপুরের কোনাবাড়ী জোনাল অফিসে পাওয়ার ট্রান্সফরমারে আগুন

ছবি

গাজীপুরে মরে যাচ্ছে মুরগি

ছবি

মেহেরপুরে মানব পাচারের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন জেল

ছবি

দাবদাহে গলে যাচ্ছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের পিচ

ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরের কার্যালয়ে তালা

ছবি

হরিরামপুরে পূর্ব শত্রতার জেরে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, মেয়াদ আরও বাড়লো

হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

ঈদযাত্রা : মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ৫১ শতাংশ, সাড়ে ৪২ শতাংশ নিহত

ছবি

১৫ শ্রমিক নিয়ে সাজেকের খাদে ট্রাক, নিহত ৯

ছবি

রাজধানীতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ভ্যানচালক নিহত

ছবি

থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ছবি

বাসের ধাক্কায় চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু নরসিংদীর বাড়িতে কান্নার রোল

ছবি

অপহরণ ও মারধরের শিকার দেলোয়ার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান

ছবি

রাজশাহীতে বৃষ্টি নামাতে বিয়ের পিঁড়িতে দুই ব্যঙ

ছবি

রংপুরে সাজাপ্রাপ্ত দুই যুবদল নেতাকে কারাগাওে পাঠানোর নির্দেশে বিক্ষোভ

ছবি

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ

ছবি

পরিবার পাবে ১০ লাখ টাকা চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম

তিস্তাসহ ৫৪ অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা দাবিতে বাসদের লং মার্চ

ছবি

লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন হাজার হাজার মুসল্লি

ছবি

অসহায় পরিবারের নিরুপায় নির্মমতা! চুরি ঠেকাতে ৩ বছর শেকল বন্দি কিশোর

ছবি

ছাত্র হত্যায় যুবকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

হোটেলে আটকে রেখে কিশোর ধর্ষণ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

tab

সারাদেশ

সরকারি খাতায় অবৈধ ইটভাটা ৪ হাজার ৬৩৩

মোস্তাফিজুর রহমান

শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩

এ যেন এক ধুলার রাজ্য! মূল সড়ক থেকে যখন ট্রাকটি নদীর পাড়ে দিকে ছুটলো তখন পেছনে ধুলায় পুরো অন্ধকার। খানিকটা সময় পর কিছুটা পরিষ্কার হয়ে এলে সামনে এগোতে দূর থেকে দৃষ্টি পড়লো নদীর জলের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এক ‘বিশাল পাহাড়’। সেই ‘পাহাড়ের’ কাছে গিয়ে দেখা গেল এখানেই একে একে ট্রাক এসে মাটি ফেলছে। মাটির এই ‘পাহাড়’ বেড়ে চূড়ায় উঠতেই মিললো আরেক দৃশ্য! বিশাল এলাকা জুড়ে কৃষি জমি থেকে নিয়ে আসা উর্বর এই মাটি নিয়ে চলছে ইট তৈরির মহাযজ্ঞ। একপাশে সারিসারি কাঁচা ইট শুকানো হচ্ছে, অন্যপাশে শুকনো ইট কয়লায় পোড়ানো হচ্ছে। আর ভাটার উঁচু চিমনি থেকে অবিরত বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ার সঙ্গে ছাই ছড়িয়ে পড়ছে নদীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে। এটি রাজধানী ঢাকার অদূরে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাংগা বাজারের পশ্চিম পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের চিত্র।

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এই নদীর পাড় ঘেঁষে দীর্ঘ তিন দশক আগে গড়ে উঠে ‘মেসার্স আজিজ ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং (এবিএম)’ নামে এই ইটভাটা। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এটির কোন পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। পাশেই নদী, স্কুল, বাজার এবং বসতবাড়ি। আইন অনুযায়ী এমন জনবহুল স্থানে ইটভাটা পরিচালনার কোন সুযোগ নেই। তারপরও ইটভাটাটি চলছে দীর্ঘ সময় ধরে।

শুধু এটিই নয়, উপকূলীয় বা পাহাড়ি, বরেন্দ্র অঞ্চল কিংবা চরাঞ্চল- দেশের সবত্রই এমন অবৈধ ইটভাটার খোঁজ রয়েছে। সরকারি তালিকা বলছে, সারাদেশে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা এখন ৪ হাজার ৬৩৩টি। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে মোট ইটভাটার প্রায় ৫৯ শতাংশই অবৈধ। অবৈধ ইটভাটার সংখ্যায় শীর্ষে রাজশাহী বিভাগ। অবৈধ ইটভাটার হার সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগে। ঢাকা বিভাগে বৈধ-অবৈধ মিলে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিগত চার বছরে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার। এরমধ্যে গত তিন বছর অবৈধ ইটভাটার বাড়ার হার বেশি। গত দশ বছরে মোট ইটভাটার সংখ্যা বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সবশেষ (ডিসেম্বর, ২০২২) পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৭ হাজার ৮৮১টি। পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে সারাদেশে মোট ইটভাটা ছিল ৭ হাজার ৯০২টি। এ হিসাবে কয়েকটি ইটভাটা কমেছে। তবে দশ বছর আগে ২০১৩ সালে সারাদেশে ইটভাটা ছিল ৪ হাজার ৯৫৯টি। আর চার বছর আগে ২০১৮ সালে অবৈধ ইটভাটা ছিল ৩ হাজার ২০০টি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ফিক্সড চিমনির ইটভাটা রয়েছে ১ হাজার ৩৭৩টি। জিগগ্যাগ ইটভাটা রয়েছে ৬ হাজার ৩৫২টি। অটো ইটভাটা (হাইব্রিড হফম্যান ও টানেল কিলন) রয়েছে ১৪৯টি। এছাড়া অন্যান্য প্রযুক্তির ইটভাটা রয়েছে ৬টি।

দেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) হয়েছে। পাশাপাশি গত বছরের ২৫ জুলাই বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। ওই গেজেটের আলোকে ইতোমধ্যে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তালিকা অনুযায়ী অবৈধ ইটভাটা বন্ধের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তারা।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক সংবাদকে বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।’

যদিও বেসরকারি সংস্থা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় বেশকিছু অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। তাদের ধারণা, দেশে ইটভাটার বাস্তবচিত্র আরও অনেক ভয়াবহ।

প্রতিবছর এসব ইটভাটা বায়ুদূষণ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। পাশাপাশি ইট তৈরিতে ধ্বংশ হচ্ছে প্রচুর ফসলি জমি ও পাহাড়ের মাটি। সেই সঙ্গে জ্বালানি হিসেবে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বিপুল পরিমাণ গাছপালা। যার ফলে কৃষি উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করছে। তাছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত আমদানি করা কয়লা অত্যন্ত নিম্নমানের ও উচ্চ সালফারযুক্ত। এই সালফার মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ইট পোড়াতে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করায় সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক বায়ুদূষণ।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান সংবাদকে বলেন, ‘সারাদেশে ব্যঙের ছাতার মতো ইটভাটা গড়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, লোকালয় ও বনাঞ্চলের আশপাশে, পাহাড়ের পাদদেশে এবং দুই বা তিন ফসলি কৃষি জমিতে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। ফলে ইটভাটার বায়ুদূষণে এখন জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। তাই সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা। কিন্তু ইটভাটা বন্ধে সরকারের কার্যক্রম কতটুকু হচ্ছে তা প্রশ্নবিদ্ধ।’

ইটভাটা ঢাকায় বেশি

রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা দিনদিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় এখন নিয়মিতই শীর্ষ স্থান দখল করে নিচ্ছে শহরটি। এ বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটার কালো ধোঁয়া। ঢাকায় বর্তমানে ৩৯০টি ইটভাটা চালু আছে, এরমধ্যে ১৭৮টিই অবৈধ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় মোট ২০১৭টি ইটভাটা রয়েছে, যা বিভাগভিত্তিক ইটভাটার সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। যারমধ্যে ৭৪৪টি ইটভাটা অবৈধ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ২৯৪টির মধ্যে ৮৬টি, মুন্সীগঞ্জে ৬০টি মধ্যে ৩০টি, মানিকগঞ্জে ১৪৭টির মধ্যে ১৮টি, নরসিংদীতে ১৮০টির মধ্যে ৫৬টি, গাজীপুরে ১৫৯টির মধ্যে ৮৬টি, ফরিদপুরে ১২৭টির মধ্যে ১৫টি, রাজবাড়ীতে ৮১টির মধ্যে ৫১টি, গোপালগঞ্জে ৪৭টির মধ্যে ৩০টি, মাদারীপুরে ৮৭টির মধ্যে ৩১টি, শরীয়তপুরে ৫৩টির মধ্যে ৪টি, কিশোরগঞ্জে ১০৯টির মধ্যে ৮টি এবং টাঙ্গাইলে ২৮১টির মধ্যে ১৫১টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

অবৈধ ইটভাটায় শীর্ষে রাজশাহী বিভাগ

দেশের সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগের ৮টি জেলায় ৯৩৫টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এখানে মোট ইটভাটার সংখ্যা ১ হাজার ১১৯টি। অর্থাৎ মোট ইটভাটার প্রায় ৮৪ শতাংশই অবৈধ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজশাহী জেলায় ১০৭টির মধ্যে ৭৯টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০৪টির মধ্যে ৯১টি, নাটোরে ১১টির মধ্যে ৭২টি, নওগাঁয় ১৯৩টির মধ্যে ১৮৭টি, বগুড়ায় ২৩৫টির মধ্যে ২১৮টি, জয়পুরহাটে ৪৮টির মধ্যে ৩৯টি, পাবনায় ১৮৭টির মধ্যে ১৬১টি এবং সিরাজগঞ্জে ১৩৪টির মধ্যে ৮৮টি ইটভাটা অবৈধ।

অবৈধের হারে এগিয়ে ময়মনসিংহ

বৈধ ইটভাটার তুলনায় অবৈধ ইটভাটার হার সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ময়মনসিংহ বিভাগে। এখানে মোট ইটভাটার প্রায় ৮৮ শতাংশ অবৈধ। এর মধ্যে শেরপুরের সব ইটভাটাই অবৈধ।

অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানমতে, ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ৪৬০টির মধ্যে ৪০৪টি ইটভাটাই অবৈধ। এর মধ্যে সদর জেলায় ২৯১টি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে ২৬২টিই অবৈধ। এছাড়া নেত্রেকোনায় ৫৭টির মধ্যে ৪১টি, শেরপুরে ৫৫টির মধ্যে ৫৫টি এবং জামালপুরে ৫৭টির মধ্যে ৪৬টি ইটভাটাই অবৈধ।

চট্টগামের ৫ জেলার সব ইটভাটাই অবৈধ

পর্যটন জেলা কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের ৫টি জেলার সব ইটভাটাই অবৈধ। এই জেলাগুলোয় মোট ৩১৮টি অবৈধ ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ১০৯টি, চাঁদপুরে ১১০টি, রাঙ্গামাটিতে ১৭টি, খাগড়াছড়িতে ৩৩টি ও বান্দরবানে ৪৯টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ইটভাটার সংখ্যা ১ হাজার ৪৮৯টি। এর মধ্যে ৯১৭টি অবৈধ ইটভাটা। আর বৈধ ইটভাটার সংখ্যা মাত্র ৫৭২টি। অর্থাৎ চট্টগ্রামে অবৈধ ইটভাটার হার প্রায় ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সদর জেলায় সবচেয়ে বেশি তথা ২৭৬টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এখানে মোট ৩২৯টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র ৫৩টি।

এছাড়া কুমিল্লায় ৩১৫টির মধ্যে ১৪৪টি, ব্রাহ্মবাড়িয়ায় ১৮৫টির মধ্যে ৯৪টি, নোয়াখালীতে ১২৩টির মধ্যে ৮টি, লক্ষ্মীপুরে ১১২টির মধ্যে ২৩টি এবং ফেনীতে ১০৭টির মধ্যে ৫৩টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

রংপুরে ৮৬ শতাংশই অবৈধ

অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় মোট ৯৫২টি ইটভাটা রয়েছে, যার ৮১৮টি অবৈধ। এ হিসাবে অবৈধ ইটভাটার হার প্রায় ৮৬ শতাংশ।

এর মধ্যে রংপুর সদরে ২৪২টির মধ্যে ২১৪টি, কুড়িগ্রামে ১১৯টির মধ্যে ৯৯টি, লালমনিরহাটে ৪৭টির মধ্যে ৩০টি, নীলফামারীতে ৬৫টির মধ্যে ৬২টি, গাইবান্ধায় ১৫৫টির মধ্যে ১৪০টি, দিনাজপুরে ২৩২টির মধ্যে ১৯০টি, পঞ্চগড়ে ২৫টির মধ্যে ১৭টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৬৭টির মধ্যে ৬৬টিই অবৈধ ইটভাটা।

খুলনায় অবৈধ ৬২৪

খুলনা বিভাগে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৯৭৩টি। এর মধ্যে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৬২৪টি। এ হিসাবে অবৈধ ইটভাটার হার ৬৪ শতাংশের বেশি। এ বিভাগে সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে যশোরে। এ জেলায় ১১০টি ইটভাটার মধ্যে ১০৭টিই অবৈধ। এরপরই রয়েছে যশোর পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদেহ, এখানে ৯০টির মধ্যে ৮৭টিই অবৈধ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৩৩টির মধ্যে ২টি, সাতক্ষীরায় ৯৯টির মধ্যে ৭০টি, মাগুরায় ৭১টির মধ্যে ৬৪টি, নড়াইলে ৪৫টির মধ্যে ৪১টি, কুষ্টিয়ায় ১৭০টির মধ্যে ১৩৩টি, চুয়াডাঙ্গায় ১০২টির মধ্যে ৬৩টি এবং মেহেরপুরে ৬৪টির মধ্যে ৫৭টি ইটাভাটা অবৈধ। তবে খুলনা সদর জেলায় ১৮৯টির সবগুলোই বৈধ ইটভাটা রয়েছে।

সিলেটে কম, তারপর বরিশাল

দেশে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। সিলেটর পর রয়েছে বরিশাল বিভাগ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ২৮৮টি, যারমধ্যে অবৈধ ২৪টি। অর্থাৎ মোট ইটভাটার ৮ শতাংশের কিছু বেশি অবৈধ। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ১১১টির মধ্যে ১৬টি ও মৌলবিবাজারে ৬৮টির মধ্যে ৮টি অবৈধ। আর সিলেট ৮৫ ও সুনামগঞ্জে ২৪টির মধ্যে সবগুলোই বৈধ ইটভাটা।

বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় মোট ৪৭৩টি ইটভাটা রয়েছে, যারমধ্যে ১৫৪টি অবৈধ। অর্থাৎ মোট ইটভাটার ৩৩ শতাংশ অবৈধ। এর মধ্যে বরিশাল সদর জেলায় ১৭৯টির মধ্যে ৭৬টি, পটুয়াখালীতে ৭৩টির মধ্যে ২১টি, বরগুনায় ৫৬টির মধ্যে ২টি, ঝালকাঠিতে ৩৮টির মধ্যে ২৬টি, পিরোজপুরে ৩৬টির মধ্যে ১৪টি এবং ভোলায় ৯১টির মধ্যে ১৫টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

ইটভাটায় কত ক্ষতি?

ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। দেশের বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে বিশ গুণের বেশি। এ বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস অবৈধ ইটভাটা।

দেশে এলাকাভিত্তিক বায়ুদূষণের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা এবং তার আশপাশের বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। উত্তাঞ্চলের বিভাগ রংপুরেও বায়ুদূষণের মানমাত্রা সন্তোষজনক নয়। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের বায়ুদূষণের মানমাত্রা কিছুটা ভালো।

বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা মতে, বায়ুদূষণের ফলে বছরে দেশের ১ লাখ ৬৩ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। যা মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ। এ বায়ুদূষণের কারণে ২৮ কোটি দিনের মতো কর্ম সময় নষ্ট হয়। টাকায় হিসাব করলে এর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৯৫ ট্রিলিয়ন থেকে ২.২৮ ট্রিলিয়ন টাকা, যা দেশের জিডিপির ৭.৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ।

যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান বলছিলেন, ‘ইটভাটায় যে কত ক্ষতি হচ্ছে তা হিসাব করে বের করা সম্ভব নয়।’

back to top