সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা-লোকজ উৎসব
উন্নত প্রযুক্তির থাবা আর কৃষি জমি কমতে থাকায় অস্তিত্ব সংকটে পরতে যাচ্ছে দেশীয় লৌহজাত শিল্পের কৃষি যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী। এছাড়া দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি, কয়লা সংকট, কর্মচারী সংকট, ক্রেতার অভাবসহ নানা সমস্যার কারণে বাপ-দাদার প্রাচীন পেশা পাল্টাচ্ছে অনেকে। যেকোন ভাবেই হোক দেশীয় এই লৌহজাত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার দাবি সোনারগাঁয়ে লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে অংশ নেওয়া কামার সম্প্রদায়ের। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলমান মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে প্রদর্শিত হস্তশিল্পের গ্যালারিতে স্থান পাওয়া সোনারগাঁয়ের লৌহজাত শিল্প স্টলের মালিক দীপন বিশ্বাস জানান, পেশাগতভাবে তিনি কামার। বাড়ি সোনারগাঁয়ের হামছাদী গ্রামে। যুগ যুগ ধরে পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাচীন এই পেশায় জড়িত তিনি। ১৭ বছর যাবত জাদুঘরে মেলায় অংশ নিচ্ছেন। আগে বেঁচা বিক্রি ভালো হতো, এখন আগের মতো হয় না। স্টলে ক্রেতা তেমন নেই বিধায় হতাশার সুরেই বলেন ‘কামার শিল্পের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো না। আগে জমিতে ইরি, বোরো ধান, গম, আলু ইত্যাদি ইত্যাদি ফসল হতো। সে সময় লাঙ্গলের ফলা, কাস্তে, কোদাল, আঁচড়ার ব্যবাহার হতো বেশি। কিন্তু শিল্পায়নের প্রভাবে কৃষি জমি কমতে থাকায় এখন আর চাষাবাদ তেমন একটা হয় না, তাই এসব যন্ত্রপাতিও এখন আর বেশি একটা তৈরি করা হয় না। এছাড়া যতটুকুই চাষাবাদ হয় ততটুকুর জন্যও চাষিরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বিদেশি প্রযুক্তির ওপর। দেশীয় পদ্ধতিতে আর কেউ তৈরি করতে চায়না এসব যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালির লৌহজাত সামগ্রী। তবে প্রাচীন পদ্ধতিতেই এখন তৈরি করি দা, বটি, ছেনি, চড়তা, নারিকেল কোরানী, ছোট কুড়াল, ডাইস, চাপাতি ও কাস্তে। কয়েকবছর আগেও দম ফেলানো যেত না লাঙ্গলের ফলা, কোদাল, দা, কাস্তে বানাতে আর শান দিতে। কিন্তু বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির থাবায় অস্তিত্ব সংকটে পরতে যাচ্ছে দেশীয় লৌহজাতের এই শিল্পটি। কামার শিল্পের চাহিদা দিন দিন কমছে। তাছাড়া লোহার দামও বেড়েছে, আছে কয়লা সংকট, কর্মচারি সংকট, ক্রেতার অভাবসহ নানান সমস্যা। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আগের মতো এখন এই শিল্পে লাভ হয় না। তাই কামার পাড়ার অনেকে বাপ-দাদার পেশা পাল্টে চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কাজে মনযোগী হচ্ছে। আগের মতোন লাভ না হলেও আমি ধরে রেখেছি বাপ-দাদার পেশা হিসেবেই। আমার সন্তানরাই হয়তো অন্য পেশায় চলে যাবে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সোনারগাঁ উপজেলা খেলাঘর ও বঙ্গবন্ধু সাংষ্কৃতিক জোটের সভাপতি আজিজুল ইসলাম মুকুল বলেন, দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে এই কামার শিল্প। বর্তমানে মানুষ চাষাবাদ কমিয়ে শিল্প ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ফলে চাষাবাদের জন্য আর তৈরি হচ্ছে না লাঙ্গল। এছাড়া ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এই শিল্প ছেড়ে কামার সম্প্রদায় চলে যাচ্ছে অন্য কাজে। ফলে এই শিল্প বিকশিত হতে পারছে না। সরকার সহযোগিতা করলে আদি নিয়মেই টিকে থাকতে পারে এই কামারশালা।
সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা-লোকজ উৎসব
বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
উন্নত প্রযুক্তির থাবা আর কৃষি জমি কমতে থাকায় অস্তিত্ব সংকটে পরতে যাচ্ছে দেশীয় লৌহজাত শিল্পের কৃষি যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী। এছাড়া দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি, কয়লা সংকট, কর্মচারী সংকট, ক্রেতার অভাবসহ নানা সমস্যার কারণে বাপ-দাদার প্রাচীন পেশা পাল্টাচ্ছে অনেকে। যেকোন ভাবেই হোক দেশীয় এই লৌহজাত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার দাবি সোনারগাঁয়ে লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে অংশ নেওয়া কামার সম্প্রদায়ের। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলমান মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে প্রদর্শিত হস্তশিল্পের গ্যালারিতে স্থান পাওয়া সোনারগাঁয়ের লৌহজাত শিল্প স্টলের মালিক দীপন বিশ্বাস জানান, পেশাগতভাবে তিনি কামার। বাড়ি সোনারগাঁয়ের হামছাদী গ্রামে। যুগ যুগ ধরে পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাচীন এই পেশায় জড়িত তিনি। ১৭ বছর যাবত জাদুঘরে মেলায় অংশ নিচ্ছেন। আগে বেঁচা বিক্রি ভালো হতো, এখন আগের মতো হয় না। স্টলে ক্রেতা তেমন নেই বিধায় হতাশার সুরেই বলেন ‘কামার শিল্পের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো না। আগে জমিতে ইরি, বোরো ধান, গম, আলু ইত্যাদি ইত্যাদি ফসল হতো। সে সময় লাঙ্গলের ফলা, কাস্তে, কোদাল, আঁচড়ার ব্যবাহার হতো বেশি। কিন্তু শিল্পায়নের প্রভাবে কৃষি জমি কমতে থাকায় এখন আর চাষাবাদ তেমন একটা হয় না, তাই এসব যন্ত্রপাতিও এখন আর বেশি একটা তৈরি করা হয় না। এছাড়া যতটুকুই চাষাবাদ হয় ততটুকুর জন্যও চাষিরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বিদেশি প্রযুক্তির ওপর। দেশীয় পদ্ধতিতে আর কেউ তৈরি করতে চায়না এসব যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালির লৌহজাত সামগ্রী। তবে প্রাচীন পদ্ধতিতেই এখন তৈরি করি দা, বটি, ছেনি, চড়তা, নারিকেল কোরানী, ছোট কুড়াল, ডাইস, চাপাতি ও কাস্তে। কয়েকবছর আগেও দম ফেলানো যেত না লাঙ্গলের ফলা, কোদাল, দা, কাস্তে বানাতে আর শান দিতে। কিন্তু বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির থাবায় অস্তিত্ব সংকটে পরতে যাচ্ছে দেশীয় লৌহজাতের এই শিল্পটি। কামার শিল্পের চাহিদা দিন দিন কমছে। তাছাড়া লোহার দামও বেড়েছে, আছে কয়লা সংকট, কর্মচারি সংকট, ক্রেতার অভাবসহ নানান সমস্যা। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আগের মতো এখন এই শিল্পে লাভ হয় না। তাই কামার পাড়ার অনেকে বাপ-দাদার পেশা পাল্টে চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কাজে মনযোগী হচ্ছে। আগের মতোন লাভ না হলেও আমি ধরে রেখেছি বাপ-দাদার পেশা হিসেবেই। আমার সন্তানরাই হয়তো অন্য পেশায় চলে যাবে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সোনারগাঁ উপজেলা খেলাঘর ও বঙ্গবন্ধু সাংষ্কৃতিক জোটের সভাপতি আজিজুল ইসলাম মুকুল বলেন, দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে এই কামার শিল্প। বর্তমানে মানুষ চাষাবাদ কমিয়ে শিল্প ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ফলে চাষাবাদের জন্য আর তৈরি হচ্ছে না লাঙ্গল। এছাড়া ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এই শিল্প ছেড়ে কামার সম্প্রদায় চলে যাচ্ছে অন্য কাজে। ফলে এই শিল্প বিকশিত হতে পারছে না। সরকার সহযোগিতা করলে আদি নিয়মেই টিকে থাকতে পারে এই কামারশালা।