মামলা করবেন কিনা অনিশ্চয়তায় নিহতের পরিবার
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে হত্যা মামলার এক আসামিকে ধরতে গিয়ে ব়্যাবের অভিযানে হতাহতের ঘটনার ওই রাতেই পুনরায় অভিযান চালিয়ে দুই কিশোরসহ ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বিশজনকে৷ তাদের ১৫ জনকে ১৮ ঘন্টা হেফাজতে রাখার পর ছাড়ে ব়্যাব৷ এই সময়ে উৎকন্ঠায় কেটেছে তাদের পরিবারের লোকজনের সময়, তাদের সাথে কী হয় এ নিয়ে ভীতি ও শঙ্কায় ছিলেন হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরাও৷
রোববার সকালে হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া ব্যক্তি ও স্বজনদের সাথে কথা বলে তারা এ উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার কথা জানান৷
শুক্রবার রাতে ব়্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবুল কাশেম নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন ৫০ বছর বয়সী ওষুধ ব্যবসায়ী হুমায়ূন কবির৷
ব়্যাবের দাবি, আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায় স্থানীয় গ্রামবাসী৷ এ ঘটনায় ব়্যাব বাদী হয়ে তাদের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে একটি মামলা করেছে ব়্যাব৷ ওই মামলায় নিহতের ছেলে, ভাতিজাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
এদিকে সারারাত এবং শনিবার দিন ব়্যাব হেফাজতে থাকার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের জিম্মায় ছাড়া হয় ১৫ জনকে৷ তবে ব়্যাবের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বাকি পাঁচজনকে৷
গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল ইসলাম ও তার তিন ভাতিজা ও এক নাতি রয়েছেন৷
ব়্যাব হেফাজত থেকে ফেরা ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের৷ তাদের ভাষ্য, ‘ব়্যাবের উপর হামলার কোনো ঘটনায় তারা জড়িত না৷ গ্রামে ডাকাত পড়েছে শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন৷ ওই সময় গুলি চলে৷ এ ঘটনার প্রায় দেড় পর আবারও ব়্যাব এসে বিনা কারণে তাদেরকে ধরে নিয়ে যায়৷’
জামদানি কারিগর নূর হোসেনের বাড়ি নিহত আবুল কাশেমের বাড়ির পাশেই৷ ব়্যাবের হেফাজত থেকে ফেরা নূর হোসেন বলেন, ‘ডাকাত পড়ছে শুইনা ঘুম থেকে উঠি৷ পরে জানতে পারি পাশের বাড়ির কাশেম চাচা গুলিতে মারা গেছেন৷ পরে আবারও বাসায় আইসা ঘুমিয়ে পড়ি৷ এরও দেড়-দুই ঘন্টা পর ব়্যাব আবারও আসে৷ পরে অনেকরে ধইরা নেয়৷ অনেকরে মারধরও করে তখন৷ এগুলা দেইখা আমি আর নড়াচড়া করি নাই৷ পরে আমারেও ধইরা নেয়৷’
‘ভোর পর্যন্ত গ্রামের পাশে একটি বালুর মাঠে রাখেন৷ পরে আদমজীতে ব়্যাব-১১ এর ক্যাম্পে নেন৷ ওইখানে আমাগো বিশজনরে একলগে একটা হাজতের মইধ্যে রাখে৷ আমাগোরে ৭-৮ জন একেকবার আইসা জেরা করে৷ আমাদের বক্তব্য ভিডিও করে৷ এরপর সন্ধ্যার দিকে এলাকার সাবেক এমপি (আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত) ও আওয়ামী লীগের নেতাগো জিম্মায় আমাদের ছাড়ে৷ তাগো দুইটা গাড়িতেই আমরা পনেরোজন আসি৷ বাকি কাশেম চাচার পোলাসহ পাঁচজনকে ছাড়ে নাই৷’
নূর হোসেন বলেন, ‘কখনও জেলে যাই নাই৷ আমরা কামের মানুষ৷ কাম না করতে ভাত হয় না৷ ব়্যাবের কাছে থাকাবস্থায় ভয় পাইছি৷’
নূর হোসেনের স্ত্রী রুবিনা বলেন, ‘আমার স্বামীরে অন্যায়ভাবে ধরে নিছিলো৷ হ্যায় তো কোনো অপরাধ করে নাই৷ সারাক্ষণ চিন্তা করছি, আত্মীয়-স্বজনের হেরে হেরে কল দিছি৷ কোনো কারণ ছাড়াই রাইত-বেরাইতে ধইরা নেওয়া, এইটা গরীব মানুষের লগে অন্যায় কাজ৷’
ব়্যাব ওই রাতে হেফাজতে নিয়েছিল ১৪ বছর বয়সী কিশোর মো. রাব্বিকেও৷ তার মা রাত ও সারাদিন ছিলেন ছেলেকে নিয়ে উৎকন্ঠায়৷ রাব্বির মা রাবেয়া বলেন, ‘মায়ের মন প্রতিটা সেকেন্ড কষ্টে কাটছে৷ একজন মানুষ মাইরা ফেলছডে৷ পোলাডারে কী করে না করে তার ঠিক নাই৷ আমি গরীব মানুষ, আগে-পরে কিছু নাই৷ আমার পোলাডারে নিছে, সারাক্ষণ চিন্তায় ছিলাম৷ আমার পোলাডায় যে বাইক আইছে এইডায় আলহামদুলিল্লাহ৷’
তিন সন্তানের বড় রাব্বি৷ কাঁচপুরে নানার বাড়িতে থেকে সেখানে জামদানি তৈরির কাজ শেখেন৷ সপ্তাহে শুক্রবার বাড়িতে আসে, বাবা-মায়ের সাথে থেকে আবার শনিবার চলে যায়৷
রাব্বির মা বলেন, ‘সপ্তাহে একটা দিন বাড়িত আহে পোলাডায়৷ কপালের শনি ওইরাতেই হইছে৷ পোলাডারে নেয়ার সময় পায়ে ব়্যাব দুইটা বাড়ি মারছে লাঠি দিয়া৷ ফেরার পর রাতে ব্যাথার ওষুধ খাওয়াইছি৷ কী না কি ঝামেলা হয় নানার বাড়িতে পাঠাইয়া দিছি৷’
ব়্যাবের হেফাজতে ছিল দশম শ্রেণির ছাত্র শ্রাবণও৷ শ্রবণের দাদা আবুল কাশেম, যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন৷ সন্ধ্যায় ব়্যাবের হেফাজত থেকে মুক্ত হলেও গ্রেপ্তার আছেন তার বাবা জামদানি কারিগর নজরুল ইসলাম৷
শ্রাবণের মা আমিনা আক্তার বলেন, ‘শ্রাবণ ফেরে শনিবার সন্ধ্যায়৷ ওরে ওর বাবার সাথে ধরে নিয়া যায়৷ ধরে নেবার সময় চাইর-পাঁচটা বাড়ি দেয়৷ রানটা ফুইল্লা কালো হইয়া আছে শ্রাবণের৷ ওরে খালার বাড়িতে পাঠাইয়া দিছি৷’
নিহতের ঘটনায় মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে নিহতের ছেলের বউ আমিনা বলেন, ‘শ্বশুর গুলিতে মারা গেলো৷ স্বামী গ্রেপ্তার হইয়া আছে৷ বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নাই৷ তারাও গ্রেপ্তারের ভয়ে পালাইয়া আছে৷ এখন মরার শোক করমু নাকি মামলা করমু কিছুই বুঝতে পারতেছি না৷ মামলা করলেই বা কার নামে করমু? মামলা করলেই কী পুলিশ নিবো আমাগো মামলা?’
ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে এসেছেন আবুল কাশেমের বোন মিনারা বেগম৷ তিনি বলেন, ‘মরছি মরছি আমরা মরছি৷ আমরা তো তাগো লগে পারমু না৷ তারা আইনের লোক৷ তাগো বিরুদ্ধে কেমনে মামলা করমু?’
মামলা করবেন কিনা অনিশ্চয়তায় নিহতের পরিবার
রোববার, ১৯ মার্চ ২০২৩
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে হত্যা মামলার এক আসামিকে ধরতে গিয়ে ব়্যাবের অভিযানে হতাহতের ঘটনার ওই রাতেই পুনরায় অভিযান চালিয়ে দুই কিশোরসহ ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বিশজনকে৷ তাদের ১৫ জনকে ১৮ ঘন্টা হেফাজতে রাখার পর ছাড়ে ব়্যাব৷ এই সময়ে উৎকন্ঠায় কেটেছে তাদের পরিবারের লোকজনের সময়, তাদের সাথে কী হয় এ নিয়ে ভীতি ও শঙ্কায় ছিলেন হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরাও৷
রোববার সকালে হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া ব্যক্তি ও স্বজনদের সাথে কথা বলে তারা এ উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার কথা জানান৷
শুক্রবার রাতে ব়্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবুল কাশেম নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন ৫০ বছর বয়সী ওষুধ ব্যবসায়ী হুমায়ূন কবির৷
ব়্যাবের দাবি, আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায় স্থানীয় গ্রামবাসী৷ এ ঘটনায় ব়্যাব বাদী হয়ে তাদের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে একটি মামলা করেছে ব়্যাব৷ ওই মামলায় নিহতের ছেলে, ভাতিজাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
এদিকে সারারাত এবং শনিবার দিন ব়্যাব হেফাজতে থাকার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের জিম্মায় ছাড়া হয় ১৫ জনকে৷ তবে ব়্যাবের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বাকি পাঁচজনকে৷
গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল ইসলাম ও তার তিন ভাতিজা ও এক নাতি রয়েছেন৷
ব়্যাব হেফাজত থেকে ফেরা ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের৷ তাদের ভাষ্য, ‘ব়্যাবের উপর হামলার কোনো ঘটনায় তারা জড়িত না৷ গ্রামে ডাকাত পড়েছে শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন৷ ওই সময় গুলি চলে৷ এ ঘটনার প্রায় দেড় পর আবারও ব়্যাব এসে বিনা কারণে তাদেরকে ধরে নিয়ে যায়৷’
জামদানি কারিগর নূর হোসেনের বাড়ি নিহত আবুল কাশেমের বাড়ির পাশেই৷ ব়্যাবের হেফাজত থেকে ফেরা নূর হোসেন বলেন, ‘ডাকাত পড়ছে শুইনা ঘুম থেকে উঠি৷ পরে জানতে পারি পাশের বাড়ির কাশেম চাচা গুলিতে মারা গেছেন৷ পরে আবারও বাসায় আইসা ঘুমিয়ে পড়ি৷ এরও দেড়-দুই ঘন্টা পর ব়্যাব আবারও আসে৷ পরে অনেকরে ধইরা নেয়৷ অনেকরে মারধরও করে তখন৷ এগুলা দেইখা আমি আর নড়াচড়া করি নাই৷ পরে আমারেও ধইরা নেয়৷’
‘ভোর পর্যন্ত গ্রামের পাশে একটি বালুর মাঠে রাখেন৷ পরে আদমজীতে ব়্যাব-১১ এর ক্যাম্পে নেন৷ ওইখানে আমাগো বিশজনরে একলগে একটা হাজতের মইধ্যে রাখে৷ আমাগোরে ৭-৮ জন একেকবার আইসা জেরা করে৷ আমাদের বক্তব্য ভিডিও করে৷ এরপর সন্ধ্যার দিকে এলাকার সাবেক এমপি (আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত) ও আওয়ামী লীগের নেতাগো জিম্মায় আমাদের ছাড়ে৷ তাগো দুইটা গাড়িতেই আমরা পনেরোজন আসি৷ বাকি কাশেম চাচার পোলাসহ পাঁচজনকে ছাড়ে নাই৷’
নূর হোসেন বলেন, ‘কখনও জেলে যাই নাই৷ আমরা কামের মানুষ৷ কাম না করতে ভাত হয় না৷ ব়্যাবের কাছে থাকাবস্থায় ভয় পাইছি৷’
নূর হোসেনের স্ত্রী রুবিনা বলেন, ‘আমার স্বামীরে অন্যায়ভাবে ধরে নিছিলো৷ হ্যায় তো কোনো অপরাধ করে নাই৷ সারাক্ষণ চিন্তা করছি, আত্মীয়-স্বজনের হেরে হেরে কল দিছি৷ কোনো কারণ ছাড়াই রাইত-বেরাইতে ধইরা নেওয়া, এইটা গরীব মানুষের লগে অন্যায় কাজ৷’
ব়্যাব ওই রাতে হেফাজতে নিয়েছিল ১৪ বছর বয়সী কিশোর মো. রাব্বিকেও৷ তার মা রাত ও সারাদিন ছিলেন ছেলেকে নিয়ে উৎকন্ঠায়৷ রাব্বির মা রাবেয়া বলেন, ‘মায়ের মন প্রতিটা সেকেন্ড কষ্টে কাটছে৷ একজন মানুষ মাইরা ফেলছডে৷ পোলাডারে কী করে না করে তার ঠিক নাই৷ আমি গরীব মানুষ, আগে-পরে কিছু নাই৷ আমার পোলাডারে নিছে, সারাক্ষণ চিন্তায় ছিলাম৷ আমার পোলাডায় যে বাইক আইছে এইডায় আলহামদুলিল্লাহ৷’
তিন সন্তানের বড় রাব্বি৷ কাঁচপুরে নানার বাড়িতে থেকে সেখানে জামদানি তৈরির কাজ শেখেন৷ সপ্তাহে শুক্রবার বাড়িতে আসে, বাবা-মায়ের সাথে থেকে আবার শনিবার চলে যায়৷
রাব্বির মা বলেন, ‘সপ্তাহে একটা দিন বাড়িত আহে পোলাডায়৷ কপালের শনি ওইরাতেই হইছে৷ পোলাডারে নেয়ার সময় পায়ে ব়্যাব দুইটা বাড়ি মারছে লাঠি দিয়া৷ ফেরার পর রাতে ব্যাথার ওষুধ খাওয়াইছি৷ কী না কি ঝামেলা হয় নানার বাড়িতে পাঠাইয়া দিছি৷’
ব়্যাবের হেফাজতে ছিল দশম শ্রেণির ছাত্র শ্রাবণও৷ শ্রবণের দাদা আবুল কাশেম, যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন৷ সন্ধ্যায় ব়্যাবের হেফাজত থেকে মুক্ত হলেও গ্রেপ্তার আছেন তার বাবা জামদানি কারিগর নজরুল ইসলাম৷
শ্রাবণের মা আমিনা আক্তার বলেন, ‘শ্রাবণ ফেরে শনিবার সন্ধ্যায়৷ ওরে ওর বাবার সাথে ধরে নিয়া যায়৷ ধরে নেবার সময় চাইর-পাঁচটা বাড়ি দেয়৷ রানটা ফুইল্লা কালো হইয়া আছে শ্রাবণের৷ ওরে খালার বাড়িতে পাঠাইয়া দিছি৷’
নিহতের ঘটনায় মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে নিহতের ছেলের বউ আমিনা বলেন, ‘শ্বশুর গুলিতে মারা গেলো৷ স্বামী গ্রেপ্তার হইয়া আছে৷ বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নাই৷ তারাও গ্রেপ্তারের ভয়ে পালাইয়া আছে৷ এখন মরার শোক করমু নাকি মামলা করমু কিছুই বুঝতে পারতেছি না৷ মামলা করলেই বা কার নামে করমু? মামলা করলেই কী পুলিশ নিবো আমাগো মামলা?’
ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে এসেছেন আবুল কাশেমের বোন মিনারা বেগম৷ তিনি বলেন, ‘মরছি মরছি আমরা মরছি৷ আমরা তো তাগো লগে পারমু না৷ তারা আইনের লোক৷ তাগো বিরুদ্ধে কেমনে মামলা করমু?’