alt

সারাদেশ

ট্রিপল সেঞ্চুরির দিকে ব্রয়লার মুরগির দাম! আমদানির পরামর্শ

রমজান আলী : বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

দেশে মুরগির দাম নিয়ে চলছে তুঘলকি কান্ড। সবচেয়ে সস্তার ব্রয়লার মুরগি দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি, লেয়ার, দেশি মুরগির দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।

ভোক্তা অধিকার বলছে, ব্রয়লারের দাম ২৯০ টাকা কেজি কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। এ দাম দুইশ টাকার বেশি হওয়ার যুক্তি নেই। সেখানে ২৯০ টাকা কীভাবে হয় খামারি ও করপোরেট পর্যায়ের খরচ বিবেচনায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা কেজি হতে পারে।

বুধবার (২২ মার্চ) ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান রাজধানীর নিউ মার্কেটের বনলতা মার্কেট কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন‘ ‘ব্রয়লার মুরগি নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, ব্রয়লার মুরগির দাম ভোক্তা পর্যায়ে কেজিতে ২০০ টাকার ওপর হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।’

‘বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ার কিছু নেই’

রোজায় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সাধারণের মধ্যে যে উৎকণ্ঠা, তাও উঠে আসে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আরও বলেন, ‘বাজারে পণ্যের কোন ঘাটতি নেই। আমি ভোক্তাদের বলব, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। পণ্য আছে, পণ্যের কোন ঘাটতি নেই।

‘এবার রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে যাতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করতে না পারে, সেজন্য বাজার কমিটিগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারপরও দেশের কোন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তাহলে এর জন্য বাজার কমিটি দায়ী থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘মুরগির বাজারে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করেছে। ব্রয়লার মুরগির এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন মেসেজের মাধ্যমে মুরগি, ডিম, বাচ্চা ও খাবারের দাম নির্ধারণ করে।’

এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি নিলে বাজার কমিটিগুলোকে তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা এই নিয়ন্ত্রণটুকু করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার কমিটি বাতিল করে দেবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান থাকবে এবার রমজানে ভোক্তা যেন একটু স্বস্তিতে থাকে।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রমজান আসলেই ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অপবাদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আছে। আমরা এবার এফবিসিসিআই, ভোক্তা অধিদপ্তর, দোকান মালিক সমিতি, বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রমজানে পণ্যের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।’

কাল থেকে রমজান শুরু। ইতোমধ্যে বাজারে চিনি, তেল, খেজুর, ছোলাসহ রোজা-সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বুধবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশে এযাবতকালের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ২৮৫ থেকে ২৯০ টাকা দামে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে।

বুধবার সকালে হাতিরপুল মুরগি বাজারে বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, কাল থেকে রোজা শুরু। নিম্ন আয়ের মানুষেরা যাও একটু ফার্মের মুরগি খেতাম, সেটাও এই রোজায় হয়ত সম্ভব হবে না।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সাইফুল আলম বলেন, ‘গোশত কিনি না অনেক দিন। রমজানের কারণে আজ একটা ফার্মের মুরগি কিনতে চেয়েছিলাম। গত সপ্তাহেও দাম ছিল ২৫০ টাকা। আজ দোকানি বলছে ২৮৫ টাকা। কীভাবে কিনবো’

কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজান হাওলাদার বলেন, ‘মাসের শেষ এখন। মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। অথচ সব জিনিসের দাম বেশি। প্রতিদিন বাড়ছে দাম, দেখার কেউ নাই।’

ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা শামীম আহমেদ বলেন, ‘গত সপ্তাহেও ২৫০ বা ২৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজকে ২৮৫ থেকে ২৯০ টাকা বিক্রি করছি। দাম যতই বাড়ুক বা কমুক, আমাদের কেজি প্রতি লাভ ১০ থেকে ১৫ টাকা। যারা দাম বাড়ায়, তারা একটা সিন্ডিকেট। তাদের ধরেন।’

নিউমার্কেটে কথা হয় একজন স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে। কামরুল ইসলাম নামের এই শিক্ষক বলেন, ‘সীমিত আয়ে কোনমতে চলছি। রোজার বাহানায় বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় গরু-খাসির মাংস অনেক দিন কিনি না, এবার মুরগির মাংসও খাওয়া বন্ধ করতে হবে।’

এদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। যা মুরগির দামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত শুক্রবারেও প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি (লাল) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে হঠাৎ ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম, তাই দাম বেড়েছে। তাছাড়া একদিন পর রমজান, এটাও একটা কারণ। তবে বেশ কিছু দিন ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারেও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এর আগে কখনও এত দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেননি বলেও স্বীকার করলেন বিক্রেতারা।

হাতিরপুল বাজারে ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে ব্রয়লারের দাম আবার বেড়েছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনছি। গত দুই দিনে বৃষ্টি ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তাছাড়া ব্রয়লারের বাচ্চা আর ফিডের দাম বাড়তি থাকায় দামও বেড়েছে।’

মুরগি ও ডিমের বাজার একটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। তবে কারা সেই সিন্ডিকেট সেটা ‘না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের কথা সবারই জানা। যাদের বলার কথা, তারা কেউ কিছু বলছে না। আমরা যেমন কিনি, তেমন বেচি।’ তবে রমজানের আগে বাজার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাবুল মিয়া।

টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। যা এক মাস আগেও ছিল ২১০ থেকে ২৩০ টাকা। সেই হিসেবে এক বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সব মিলিয়ে এক বছরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১২০ টাকারও বেশি।’

জানা গেছে, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে, প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তাতে বর্তমানে উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে।

শ্রীমঙ্গলে সবুজ বোড়া বিষাক্ত সাপ উদ্ধার

রংপুরে বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

ছবি

নাফ নদীতে মাছ ধরার সময় আরাকান আর্মির গুলিতে দুই জেলে আহত

ছবি

নাফনদে মাছ শিকারে গিয়ে দুই জেলে গুলিবিদ্ধ

মায়ানমারে স্কুলে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা, ১৭ ছাত্র নিহত

চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১৪ জন আটক

রাজারহাটে ৩ জুয়াড়ি আটক

দুই জেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুইজনের মৃত্যু

হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার

কলারোয়া সীমান্তে ওষুধ-শাড়ি উদ্ধার

দুই জেলায় সড়কে ঝরল ২ গ্যারেজ শ্রমিকের প্রাণ

ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে পাঁচ জনের মৃত্যু

দুই জেলায় সড়কে ঝরল ২ গ্যারেজ শ্রমিকের প্রাণ

ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী, গর্ভপাতে নবজাতকের মৃত্যু

ছবি

সরকারি রাস্তা থেকে লক্ষাধিক টাকার গাছ কাটার অভিযোগ

তালগাছ থেকে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

কবরস্থানের জায়গা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১

ব্রহ্মপুত্র নদে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

ছবি

ছুটির পরেও বিদ্যালয়ে উড়ছে জাতীয় পতাকা!

এক সপ্তাহে ৭ গরু চুরি বেড়েছে অন্য চুরিও

তাড়াশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাঝে গরু বিতরণে অনিয়ম

ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি

ছবি

টাঙ্গাইল পৌরসভায় ১৩৮ বছরেও হয়নি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ছবি

টঙ্গীবাড়ীতে বেহাল সড়কে দুর্ভোগ

ঝালকাঠির নথুল্লাবাদে খাল পুনঃখননে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ

সিংড়ায় বিএনপির অফিস থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ১

ছবি

সিরাজগঞ্জে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৬ লক্ষাধিক পশু

সুনামগঞ্জের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মী ও জেলা প্রশাসনের মতবিনিময়

কেশবপুরে শিক্ষার মানোন্নয়নে মতবিনিময়

নোয়াখালী শহর আ’লীগের সভাপতি পিন্টুর বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ

হত্যার প্রতিশোধ নিতে গুলি করে হত্যাচেষ্টা

ছবি

চাঁদাবাজির প্রতিবাদে সিএনজি চালকদের সড়কে অবরোধ

কলাপাড়ায় খাল দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান

ফেইসবুকে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করায় যুবক গ্রেপ্তার

সখীপুরে নারী ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পিস্কিন রোগ

tab

সারাদেশ

ট্রিপল সেঞ্চুরির দিকে ব্রয়লার মুরগির দাম! আমদানির পরামর্শ

রমজান আলী

বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

দেশে মুরগির দাম নিয়ে চলছে তুঘলকি কান্ড। সবচেয়ে সস্তার ব্রয়লার মুরগি দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি, লেয়ার, দেশি মুরগির দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।

ভোক্তা অধিকার বলছে, ব্রয়লারের দাম ২৯০ টাকা কেজি কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। এ দাম দুইশ টাকার বেশি হওয়ার যুক্তি নেই। সেখানে ২৯০ টাকা কীভাবে হয় খামারি ও করপোরেট পর্যায়ের খরচ বিবেচনায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা কেজি হতে পারে।

বুধবার (২২ মার্চ) ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান রাজধানীর নিউ মার্কেটের বনলতা মার্কেট কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন‘ ‘ব্রয়লার মুরগি নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, ব্রয়লার মুরগির দাম ভোক্তা পর্যায়ে কেজিতে ২০০ টাকার ওপর হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।’

‘বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ার কিছু নেই’

রোজায় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সাধারণের মধ্যে যে উৎকণ্ঠা, তাও উঠে আসে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আরও বলেন, ‘বাজারে পণ্যের কোন ঘাটতি নেই। আমি ভোক্তাদের বলব, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। পণ্য আছে, পণ্যের কোন ঘাটতি নেই।

‘এবার রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে যাতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করতে না পারে, সেজন্য বাজার কমিটিগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারপরও দেশের কোন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তাহলে এর জন্য বাজার কমিটি দায়ী থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘মুরগির বাজারে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করেছে। ব্রয়লার মুরগির এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন মেসেজের মাধ্যমে মুরগি, ডিম, বাচ্চা ও খাবারের দাম নির্ধারণ করে।’

এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি নিলে বাজার কমিটিগুলোকে তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা এই নিয়ন্ত্রণটুকু করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার কমিটি বাতিল করে দেবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান থাকবে এবার রমজানে ভোক্তা যেন একটু স্বস্তিতে থাকে।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রমজান আসলেই ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অপবাদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আছে। আমরা এবার এফবিসিসিআই, ভোক্তা অধিদপ্তর, দোকান মালিক সমিতি, বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রমজানে পণ্যের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।’

কাল থেকে রমজান শুরু। ইতোমধ্যে বাজারে চিনি, তেল, খেজুর, ছোলাসহ রোজা-সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বুধবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশে এযাবতকালের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ২৮৫ থেকে ২৯০ টাকা দামে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে।

বুধবার সকালে হাতিরপুল মুরগি বাজারে বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, কাল থেকে রোজা শুরু। নিম্ন আয়ের মানুষেরা যাও একটু ফার্মের মুরগি খেতাম, সেটাও এই রোজায় হয়ত সম্ভব হবে না।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সাইফুল আলম বলেন, ‘গোশত কিনি না অনেক দিন। রমজানের কারণে আজ একটা ফার্মের মুরগি কিনতে চেয়েছিলাম। গত সপ্তাহেও দাম ছিল ২৫০ টাকা। আজ দোকানি বলছে ২৮৫ টাকা। কীভাবে কিনবো’

কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজান হাওলাদার বলেন, ‘মাসের শেষ এখন। মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। অথচ সব জিনিসের দাম বেশি। প্রতিদিন বাড়ছে দাম, দেখার কেউ নাই।’

ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা শামীম আহমেদ বলেন, ‘গত সপ্তাহেও ২৫০ বা ২৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজকে ২৮৫ থেকে ২৯০ টাকা বিক্রি করছি। দাম যতই বাড়ুক বা কমুক, আমাদের কেজি প্রতি লাভ ১০ থেকে ১৫ টাকা। যারা দাম বাড়ায়, তারা একটা সিন্ডিকেট। তাদের ধরেন।’

নিউমার্কেটে কথা হয় একজন স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে। কামরুল ইসলাম নামের এই শিক্ষক বলেন, ‘সীমিত আয়ে কোনমতে চলছি। রোজার বাহানায় বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় গরু-খাসির মাংস অনেক দিন কিনি না, এবার মুরগির মাংসও খাওয়া বন্ধ করতে হবে।’

এদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। যা মুরগির দামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত শুক্রবারেও প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি (লাল) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে হঠাৎ ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম, তাই দাম বেড়েছে। তাছাড়া একদিন পর রমজান, এটাও একটা কারণ। তবে বেশ কিছু দিন ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারেও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এর আগে কখনও এত দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেননি বলেও স্বীকার করলেন বিক্রেতারা।

হাতিরপুল বাজারে ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে ব্রয়লারের দাম আবার বেড়েছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনছি। গত দুই দিনে বৃষ্টি ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তাছাড়া ব্রয়লারের বাচ্চা আর ফিডের দাম বাড়তি থাকায় দামও বেড়েছে।’

মুরগি ও ডিমের বাজার একটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। তবে কারা সেই সিন্ডিকেট সেটা ‘না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের কথা সবারই জানা। যাদের বলার কথা, তারা কেউ কিছু বলছে না। আমরা যেমন কিনি, তেমন বেচি।’ তবে রমজানের আগে বাজার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাবুল মিয়া।

টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। যা এক মাস আগেও ছিল ২১০ থেকে ২৩০ টাকা। সেই হিসেবে এক বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সব মিলিয়ে এক বছরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১২০ টাকারও বেশি।’

জানা গেছে, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে, প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তাতে বর্তমানে উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে।

back to top