র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক নিজেই একটি প্রতারণা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে গত বছর অক্টোবরে ছন্দা জোয়ারদার নামে এক নারী রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন বলে জানা গেছে। ওই মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হক মামলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ছন্দা জোয়ারদারের দায়ের করা মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তবে তিনি ছন্দা জোয়ারদারের মামলাটিকে মিথ্যা মামলা বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
এদিকে নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানির সময় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত মঙ্গলবার এসব প্রশ্ন সামনে আনেন।
পাশাপাশি আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এছাড়া চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে, সেই সংক্রান্ত তথ্য আদালতকে জানাতে আদেশ দেয়া হয়েছে। ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত এবং এ সংক্রান্ত আইন, নথি এবং সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মামলায় বাদীর বক্তব্য ও এজাহারে ব্যাপক গরমিল
নওগাঁ সদর উপজেলার ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা মামলায় বাদীর বক্তব্য ও এজাহারে দেয়া তথ্যে ব্যাপক গরমিল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের বক্তব্য ও র্যাবের দাবির মধ্যেও বিস্তর ফারাক রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হকের জেসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রেকর্ডের জন্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানা পুলিশের কাছে তদবির করেন। ঠিক সেই সময় সুলতানা জেসমিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে পড়ে ছিলেন।
জেসমিন যখন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন, তখন তিনি দাবি করছেন র্যাব কর্মকর্তাদের সহায়তায় তিনি থানায় মামলা করেছেন। একজন সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এনামুল হক রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মামলা দায়েরের জন্য পূর্বানুমতি নেননি বলে জানা গেছে।
এদিকে সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেয়ার বিষয়ে র্যাবের বক্তব্য এবং যুগ্ম সচিব এনামুল হকের মামলার এজাহারে দেয়া বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আরও বেশ কিছু গরমিল পাওয়া গেছে। এনামুল হক মামলার এজাহারে বলেছেন, ‘২২ মার্চ বেলা সোয়া ১১টার দিকে দাপ্তরিক কাজে তিনি নওগাঁয় যান। ওই সময় শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে র্যাবের একটি টহল দলকে তিনি দেখতে পান। র্যাব টিমের ইনচার্জ উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. মাসুদকে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ঘটনাটি জানান। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে সুলতানা জেসমিনের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাবের দল।’
অন্যদিকে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছিলেন, কিছুদিন আগে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছায়া অনুসন্ধান করছে র্যাব। অনুসন্ধানে সুলতানা জেসমিনের ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেন পাওয়া যায়। ফলে তাকে নজরদারির মধ্যে আনা হয়। একপর্যায়ে তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ মেলে।
প্রতারণায় জেসমিনের বিরুদ্ধে অনেক আগেই একটা জিডি করেন বলে যুগ্ম সচিব দাবি করলেও কবে এবং কোথায় জিডি করেছিলেন এর কোন জবাব দিতে পারেননি তিনি।
সুলতানা জেসমিনকে আটকের বিষয়ে জড়িত নন দাবি করে এনামুল হক জানান, তিনি শুধু র্যাবকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলেন। তুলে নিতে বলেননি। তবে র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মঙ্গলবার ঢাকায় যে ব্রিফিং করেছেন তাতে স্পষ্ট করে বলেছেন, যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘দুই সপ্তাহ নজরদারিতে ছিল সুলতানার বাড়ি’
নওগাঁ শহরের চকদেব জনকল্যাণপাড়া এলাকার যে বাসাটিতে সুলতানা জেসমিন ভাড়া থাকতেন ওই বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের ২ সপ্তাহ আগে থেকে ৩ থেকে ৫ জনের একটি দল তার ৩ তলা বাড়ির সামনে কংক্রিটের বেঞ্চে বসে মধ্যরাত পর্যন্ত আড্ডা দিত। সুলতানা ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ৬৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে ৪ হাজার ২০০ টাকা ভাড়ায় থাকতেন। দেলোয়ার জানান, সুলতানা জনকল্যাণপাড়া মোড় থেকে রিকশায় উঠলে আরও কয়েকজন এসে তার রিকশা অনুসরণ করে মুক্তির মোড়ে পৌঁছান এবং সেখান থেকে তাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায়। তবে কারা তাকে আটক করেছে, এ বিষয়ে তারা কিছু জানতেন না।
সুলতানার মাথায় আঘাতের কারণ এখনও অজানা
সুলতানা জেসমিন রামেক হাসপাতালে ভর্তি করার সময় র্যাব কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে পড়ে গিয়ে তার মাথায় আঘাত লেগেছে। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন এবং তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তবে এই আঘাত বা রক্তক্ষরণের কারণ এখনও অজানা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক চিকিৎসকরা সুলতানার মৃত্যুর একদিন পর ময়নাতদন্ত করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত ৩ সদস্যের বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ছাড়াও মাথায় আঘাত লেগেছে।’
ময়নাতদন্ত দলটি হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল রিপোর্টের জন্য সুলতানার হৃদপিন্ডের নমুনা রামেকের প্যাথলজি বিভাগে পাঠিয়েছে। কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন বলেন, ‘রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সুলতানার মৃত্যুর চূড়ান্ত কারণ জানা যাবে।’
এদিকে সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত প্রস্তুত হয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন বলেন, তারা প্যাথলজিতে আলামতগুলো পাঠিয়েছেন। পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলেই প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন। এজন্য তিন থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে। এছাড়া ওই প্রতিবেদন সরাসরি বিচারিক কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় তারা প্রতিবেদনের তথ্য আগেই বলতে পারেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে যুগ্ম সচিবের যোগসূত্র খতিয়ে দেখা দরকার। জেসমিনের সঙ্গে তার লেনদেন সংক্রান্ত কোন বিরোধ ছিল কি না বা তাদের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝির কারণে জেসমিনকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কি না, তাও তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।
র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু
বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক নিজেই একটি প্রতারণা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে গত বছর অক্টোবরে ছন্দা জোয়ারদার নামে এক নারী রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন বলে জানা গেছে। ওই মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হক মামলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ছন্দা জোয়ারদারের দায়ের করা মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তবে তিনি ছন্দা জোয়ারদারের মামলাটিকে মিথ্যা মামলা বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
এদিকে নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানির সময় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত মঙ্গলবার এসব প্রশ্ন সামনে আনেন।
পাশাপাশি আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এছাড়া চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে, সেই সংক্রান্ত তথ্য আদালতকে জানাতে আদেশ দেয়া হয়েছে। ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত এবং এ সংক্রান্ত আইন, নথি এবং সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মামলায় বাদীর বক্তব্য ও এজাহারে ব্যাপক গরমিল
নওগাঁ সদর উপজেলার ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা মামলায় বাদীর বক্তব্য ও এজাহারে দেয়া তথ্যে ব্যাপক গরমিল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের বক্তব্য ও র্যাবের দাবির মধ্যেও বিস্তর ফারাক রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হকের জেসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রেকর্ডের জন্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানা পুলিশের কাছে তদবির করেন। ঠিক সেই সময় সুলতানা জেসমিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে পড়ে ছিলেন।
জেসমিন যখন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন, তখন তিনি দাবি করছেন র্যাব কর্মকর্তাদের সহায়তায় তিনি থানায় মামলা করেছেন। একজন সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এনামুল হক রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মামলা দায়েরের জন্য পূর্বানুমতি নেননি বলে জানা গেছে।
এদিকে সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেয়ার বিষয়ে র্যাবের বক্তব্য এবং যুগ্ম সচিব এনামুল হকের মামলার এজাহারে দেয়া বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আরও বেশ কিছু গরমিল পাওয়া গেছে। এনামুল হক মামলার এজাহারে বলেছেন, ‘২২ মার্চ বেলা সোয়া ১১টার দিকে দাপ্তরিক কাজে তিনি নওগাঁয় যান। ওই সময় শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে র্যাবের একটি টহল দলকে তিনি দেখতে পান। র্যাব টিমের ইনচার্জ উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. মাসুদকে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ঘটনাটি জানান। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে সুলতানা জেসমিনের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাবের দল।’
অন্যদিকে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছিলেন, কিছুদিন আগে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছায়া অনুসন্ধান করছে র্যাব। অনুসন্ধানে সুলতানা জেসমিনের ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেন পাওয়া যায়। ফলে তাকে নজরদারির মধ্যে আনা হয়। একপর্যায়ে তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ মেলে।
প্রতারণায় জেসমিনের বিরুদ্ধে অনেক আগেই একটা জিডি করেন বলে যুগ্ম সচিব দাবি করলেও কবে এবং কোথায় জিডি করেছিলেন এর কোন জবাব দিতে পারেননি তিনি।
সুলতানা জেসমিনকে আটকের বিষয়ে জড়িত নন দাবি করে এনামুল হক জানান, তিনি শুধু র্যাবকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলেন। তুলে নিতে বলেননি। তবে র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মঙ্গলবার ঢাকায় যে ব্রিফিং করেছেন তাতে স্পষ্ট করে বলেছেন, যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘দুই সপ্তাহ নজরদারিতে ছিল সুলতানার বাড়ি’
নওগাঁ শহরের চকদেব জনকল্যাণপাড়া এলাকার যে বাসাটিতে সুলতানা জেসমিন ভাড়া থাকতেন ওই বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের ২ সপ্তাহ আগে থেকে ৩ থেকে ৫ জনের একটি দল তার ৩ তলা বাড়ির সামনে কংক্রিটের বেঞ্চে বসে মধ্যরাত পর্যন্ত আড্ডা দিত। সুলতানা ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ৬৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে ৪ হাজার ২০০ টাকা ভাড়ায় থাকতেন। দেলোয়ার জানান, সুলতানা জনকল্যাণপাড়া মোড় থেকে রিকশায় উঠলে আরও কয়েকজন এসে তার রিকশা অনুসরণ করে মুক্তির মোড়ে পৌঁছান এবং সেখান থেকে তাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায়। তবে কারা তাকে আটক করেছে, এ বিষয়ে তারা কিছু জানতেন না।
সুলতানার মাথায় আঘাতের কারণ এখনও অজানা
সুলতানা জেসমিন রামেক হাসপাতালে ভর্তি করার সময় র্যাব কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে পড়ে গিয়ে তার মাথায় আঘাত লেগেছে। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন এবং তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তবে এই আঘাত বা রক্তক্ষরণের কারণ এখনও অজানা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক চিকিৎসকরা সুলতানার মৃত্যুর একদিন পর ময়নাতদন্ত করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত ৩ সদস্যের বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ছাড়াও মাথায় আঘাত লেগেছে।’
ময়নাতদন্ত দলটি হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল রিপোর্টের জন্য সুলতানার হৃদপিন্ডের নমুনা রামেকের প্যাথলজি বিভাগে পাঠিয়েছে। কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন বলেন, ‘রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সুলতানার মৃত্যুর চূড়ান্ত কারণ জানা যাবে।’
এদিকে সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত প্রস্তুত হয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন বলেন, তারা প্যাথলজিতে আলামতগুলো পাঠিয়েছেন। পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলেই প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন। এজন্য তিন থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে। এছাড়া ওই প্রতিবেদন সরাসরি বিচারিক কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় তারা প্রতিবেদনের তথ্য আগেই বলতে পারেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে যুগ্ম সচিবের যোগসূত্র খতিয়ে দেখা দরকার। জেসমিনের সঙ্গে তার লেনদেন সংক্রান্ত কোন বিরোধ ছিল কি না বা তাদের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝির কারণে জেসমিনকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কি না, তাও তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।