alt

সারাদেশ

জেসমিনের মৃত্যু : মেজরসহ র‌্যাবের ১১ সদস্য ক্লোজড

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত র‌্যাবের ১১ জন সদস্যকে র‌্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে। ওই ১১ জনের মধ্যে একজন মেজর, পুলিশের এএসপিসহ অন্য সদস্য ও গাড়িচালকও রয়েছেন।

এর আগে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা মামলায় ১নং আসামি আল আমিন (৩২) র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে বুধবার বিকেলে ঢাকার শাহজাহানপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-৩ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। গত সপ্তাহে আটকের পর ওই নারীর মৃত্যু হলে নির্যাতনের অভিযোগ তোলে পরিবার। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি হাইকোর্টও বিষয়টি জানতে চেয়েছিল।

এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জেসমিনকে আটকের সঙ্গে জড়িত র‌্যাব সদস্যদের ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে বলে জানান। এরপর জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২২ মার্চ ওই অভিযানে যারা ছিলেন, সেই ১১ জনকে তদন্তের প্রয়োজনে র‌্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে। ওই ১১ জনের মধ্যে একজন মেজর, পুলিশের এএসপিসহ অন্যান্য সদস্য ও গাড়িচালকও রয়েছেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র আরও জানান, ওই ঘটনা তদন্তে র‌্যাব সদর দপ্তর গঠিত কমিটি এখন রাজশাহীতে অবস্থান করছে। কমিটি এই অভিযানে যুক্ত প্রত্যেক র‌্যাব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র‌্যাব আটক করে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে।

আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার সেখানে তার মৃত্যু হয়। র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাবের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র‌্যাব বলছে, ৪৫ বছর বয়সী ওই নারীকে আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যুর এই ঘটনায় হাইকোর্ট জেসমিনের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে কী ছিল, তাও জানতে চেয়েছে। জেসমিনকে আটকের পর তাকেসহ আরও এক যুবককে আসামি করে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল।

এক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যখন তাকে ধরা হয় তখন তার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের আগে তার মৃত্যু হয়েছে। এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন দোষ দেখছি না।’

এদিকে যুগ্ম সচিবের করা মামলায় আসামির তালিকায় আল আমিনের নাম রয়েছে উল্লেখ আল আমিনকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই যুবক নওগাঁয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট এবং ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নামে ভুয়া ফেইসবুক আইডি খুলে চাকরিপ্রত্যাশী বেকার যুবকদের সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলে র‌্যাব দাবি করেছে।

যুগ্ম সচিব এনামুল রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত। তার অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র‌্যাব আটক করে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে। আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার সেখানে তার মৃত্যু হয়।

জেসমিনকে আটকের পর আল আমিনসহ তাকে আসামি করে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল। র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাবের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র‌্যাব বলছে, ওই নারীকে আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এনামুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে তার সম্মুখেই জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল জানিয়ে র‌্যাব বলছে, প্রতারণায় জড়িত থাকার কথা জেসমিন স্বীকারও করেছিলেন। এদিকে র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যুর এই ঘটনায় হাইকোর্ট জেসমিনের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে। র‌্যাবের কে কে জিজ্ঞাসাবাদে ছিল, তাও জানতে চেয়েছে।

সেই যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

এদিকে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হকের দায় আছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে নওগাঁ জেলা প্রশাসক থেকে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে। অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নওগাঁ থেকে ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছি। এনামুল হক যেহেতু রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত, সেজন্য ওই অফিস থেকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। আজকের মধ্যেই এ রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন? কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে তদন্ত রিপোর্টের পর। তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা তদন্ত প্রতিবেদনের পর জানা যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় এনামুলের ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এতে প্রশাসন ক্যাডার বিব্রত। তাই প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে আপাতত তাকে রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভাগীয় অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, এনামুল হকের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় তার কতটুকু দায়, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রীয় পদ-পদবি ব্যবহার, নিজ মন্ত্রণালয় বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার বিষয়টি তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, তিনি (এনামুল হক) নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নওগাঁর সদর উপজেলার ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে র‌্যাবের হাতে তুলে দেন। মামলা ছাড়াই জেসমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় যুগ্ম সচিব এনামুল হকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এনামুল হকের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের শায়লা ফারজানা বলেন, এনামুল হক প্রথমত একজন নাগরিক। তারপর তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। নাগরিক হিসেবে তিনি যেকোন বিষয়ে অভিযোগ করতেই পারেন। তাতে আইনি কোন বাধা নেই।

জেসমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার (এনামুল হক) বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনাও হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্র জানায়, এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হচ্ছে। এজন্য পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। উচ্চ আদালত সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়ায় মন্ত্রণালয়ও গুরুত্ব দিচ্ছে। একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, আদালত থেকে কোন ধরনের নির্দেশনা জারির আগেই মন্ত্রণালয় এনামুল হকের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চায়।

অন্যদিকে র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে বলা হয়। এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও জানানো হয়।

ছবি

বরিশাল সিটি নির্বাচনে ১২৬ কেন্দ্রের ১০৬ টিই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ

ছবি

খাগড়াছড়িতে কাভার্ডভ্যান-সিএনজির সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

বসবাসের অনুপযোগি হওয়ায় দহগ্রামের গুচ্ছগ্রাম ছেড়েছে ৮২ পরিবার

ছবি

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১৫৬

ছবি

নির্বাচন এলেই ষড়যন্ত্রকারীরা এক হয়ে যায়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ব্যবসায়ীকে জবাই করে হত্যা

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাড়ির আঙ্গিনায় পুষ্টি বাগান করে সাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই

ছবি

বগুড়ার নন্দীগ্রাম সিএনজি-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ, সিএনজি চালক নিহত

ছবি

সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হবে : পরিকল্পনামন্ত্রী

ছবি

প্রধানমন্ত্রীকে কৃষকের কোরবানির গরু উপহার

ছবি

সিসিক নির্বাচন: প্রার্থীদের সঙ্গে সিইসির মতবিনিময়

ছবি

খুলনা সিটি নির্বাচন : আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রচারণা

ছবি

নাটোর সদর হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক কুষ্টিয়ায় উদ্ধার

ছবি

বঙ্গবন্ধু সেতু‌ মহাসড়কে ১৪ কি.মি. যানজট

ছবি

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা নিয়ে মোংলায় ভিড়ল চীনা জাহাজ

ছবি

মিঠাপানির মাছ : ৬৪ প্রজাতি বিলুপ্ত প্রায় ২৯ প্রজাতির নতুন উদ্ভাবন

পরিত্যক্ত কূপ থেকে দৈনিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

মে মাসে সড়কে ঝরলো ৪০৮ প্রাণ

পিডিবির অনুরোধে পরীক্ষামূলক উৎপাদন, কয়লার অভাবে বন্ধ

ছবি

রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খানের মৃত্যু

ঝিনাইদহে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ

কাজ শেষের দু’বছরেও চালু হয়নি সরবরাহ

গাইবান্ধায় তিস্তা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে

ওহাতিয়ার মেঘনায় ঝড়ে মালামালসহ পণ্যবাহী ট্রলারডুবি

শালিখা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন

মির্জাগঞ্জে নারী ইউপি সদস্যের হামলায় নারী আহত

সার্ভার জটিলতায় আখাউড়া ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম ব্যাহত, ৬ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে ২ ব্যক্তিসহ ৪ গরুর মৃত্যু

নরসিংদীতে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন

ছবি

১৩ হাজার কেজি আম নিয়ে ম্যাংগো ট্রেন ঢাকায়

ছবি

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কাজ বন্ধ করে দিলেন মেয়র

ছবি

জামালপুরে অটোরিকশায় ট্রাকের ধাক্কায় ৪ জন নিহত

ছবি

নরসিংদীতে ট্রেনে কাটা পড়ে ২ জন নিহত

ছবি

যাত্রীবাহী বাসে মিলল ২ কোটি টাকার হেরোইন

ছবি

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১১ জন

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় মে মাসে নিহত ৪০৮

tab

সারাদেশ

জেসমিনের মৃত্যু : মেজরসহ র‌্যাবের ১১ সদস্য ক্লোজড

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত র‌্যাবের ১১ জন সদস্যকে র‌্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে। ওই ১১ জনের মধ্যে একজন মেজর, পুলিশের এএসপিসহ অন্য সদস্য ও গাড়িচালকও রয়েছেন।

এর আগে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা মামলায় ১নং আসামি আল আমিন (৩২) র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে বুধবার বিকেলে ঢাকার শাহজাহানপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-৩ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। গত সপ্তাহে আটকের পর ওই নারীর মৃত্যু হলে নির্যাতনের অভিযোগ তোলে পরিবার। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি হাইকোর্টও বিষয়টি জানতে চেয়েছিল।

এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জেসমিনকে আটকের সঙ্গে জড়িত র‌্যাব সদস্যদের ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে বলে জানান। এরপর জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২২ মার্চ ওই অভিযানে যারা ছিলেন, সেই ১১ জনকে তদন্তের প্রয়োজনে র‌্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে। ওই ১১ জনের মধ্যে একজন মেজর, পুলিশের এএসপিসহ অন্যান্য সদস্য ও গাড়িচালকও রয়েছেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র আরও জানান, ওই ঘটনা তদন্তে র‌্যাব সদর দপ্তর গঠিত কমিটি এখন রাজশাহীতে অবস্থান করছে। কমিটি এই অভিযানে যুক্ত প্রত্যেক র‌্যাব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র‌্যাব আটক করে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে।

আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার সেখানে তার মৃত্যু হয়। র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাবের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র‌্যাব বলছে, ৪৫ বছর বয়সী ওই নারীকে আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যুর এই ঘটনায় হাইকোর্ট জেসমিনের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে কী ছিল, তাও জানতে চেয়েছে। জেসমিনকে আটকের পর তাকেসহ আরও এক যুবককে আসামি করে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল।

এক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যখন তাকে ধরা হয় তখন তার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের আগে তার মৃত্যু হয়েছে। এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন দোষ দেখছি না।’

এদিকে যুগ্ম সচিবের করা মামলায় আসামির তালিকায় আল আমিনের নাম রয়েছে উল্লেখ আল আমিনকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই যুবক নওগাঁয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট এবং ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নামে ভুয়া ফেইসবুক আইডি খুলে চাকরিপ্রত্যাশী বেকার যুবকদের সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলে র‌্যাব দাবি করেছে।

যুগ্ম সচিব এনামুল রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত। তার অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র‌্যাব আটক করে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে। আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার সেখানে তার মৃত্যু হয়।

জেসমিনকে আটকের পর আল আমিনসহ তাকে আসামি করে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল। র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাবের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র‌্যাব বলছে, ওই নারীকে আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এনামুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে তার সম্মুখেই জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল জানিয়ে র‌্যাব বলছে, প্রতারণায় জড়িত থাকার কথা জেসমিন স্বীকারও করেছিলেন। এদিকে র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যুর এই ঘটনায় হাইকোর্ট জেসমিনের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে। র‌্যাবের কে কে জিজ্ঞাসাবাদে ছিল, তাও জানতে চেয়েছে।

সেই যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

এদিকে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হকের দায় আছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে নওগাঁ জেলা প্রশাসক থেকে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে। অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নওগাঁ থেকে ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছি। এনামুল হক যেহেতু রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত, সেজন্য ওই অফিস থেকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। আজকের মধ্যেই এ রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন? কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে তদন্ত রিপোর্টের পর। তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা তদন্ত প্রতিবেদনের পর জানা যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় এনামুলের ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এতে প্রশাসন ক্যাডার বিব্রত। তাই প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে আপাতত তাকে রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভাগীয় অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, এনামুল হকের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় তার কতটুকু দায়, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রীয় পদ-পদবি ব্যবহার, নিজ মন্ত্রণালয় বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার বিষয়টি তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, তিনি (এনামুল হক) নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নওগাঁর সদর উপজেলার ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে র‌্যাবের হাতে তুলে দেন। মামলা ছাড়াই জেসমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় যুগ্ম সচিব এনামুল হকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এনামুল হকের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের শায়লা ফারজানা বলেন, এনামুল হক প্রথমত একজন নাগরিক। তারপর তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। নাগরিক হিসেবে তিনি যেকোন বিষয়ে অভিযোগ করতেই পারেন। তাতে আইনি কোন বাধা নেই।

জেসমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার (এনামুল হক) বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনাও হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্র জানায়, এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হচ্ছে। এজন্য পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। উচ্চ আদালত সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়ায় মন্ত্রণালয়ও গুরুত্ব দিচ্ছে। একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, আদালত থেকে কোন ধরনের নির্দেশনা জারির আগেই মন্ত্রণালয় এনামুল হকের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চায়।

অন্যদিকে র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে বলা হয়। এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও জানানো হয়।

back to top