অদ্বৈত মল্লর্বমনের সারা জাগানো উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এক সময় প্রচণ্ড খরস্রোতা এই তিতাস নদী এখন অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। মাছের ঘেরে গাছের ডাল-পাতা ও বাঁশের জন্য উজান থেকে আসা বালি/পলি আটকে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ। ফলে নদী হারাচ্ছে নব্যতা, ব্যহত হচ্ছে নৌ চলাচল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় প্রবাহিত ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিতাস নদী। নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ অবৈধভাবে মাছের ঘের। এই ঘের তৈরি করে নির্বিচারে রেনু ও মা মাছসহ বিভিন্ন মাছ শিকার করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এই ঘের এর কারণে নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নদীতে ঘের দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার চললেও স্থানীয় প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নৌপথ বন্ধ হওয়ার কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে স্থলপথে মালামাল আনা নেয়া করতে হচ্ছে। এছাড়া ঘেরের কচুরিপানা আটকে গিয়ে পঁচে নদীর পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ায় তিতাসপাড়ের মানুষ গোসল ও রান্নাবান্নাসহ দৈনন্দিন কাজ করতে পারছেন না। এ সব ঘেরের কারণে পানি স্রোতধারা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অনেক জায়গায় ডোবচর জাগছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদীতে নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ার কারণে নদীতে ঘের নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীতে অবৈধভাবে ঘের নির্মাণ করছেন এবং চিকন জাল দিয়ে ঘের থেকে মাছ নির্ধন করছে। মা মাছ ও ছোট পোনা মাছ অবাধে ধরছে ঘের মালিকরা। এক সময় এই নদীতে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন এসব ঘের নির্মাণ করতো। তিতাস নদী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদী থেকে তিতাস নদীটি বাঞ্ছারামপুরের কালিকাপুর, জয়কালিপুর এবং পার্শ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙা গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবেশ করেছে। তিতাসের পূর্ব পাড়ে নবীনগরের ছলিমগঞ্জ পার হয়ে বাঞ্ছারামপুরের আকানগর, তেজখালি হয়ে দরিকান্দিতে এসে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে তিতাস নদীটি। এক অংশে বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার সীমানা ঘেঁষে দরিকান্দি ইমামনগর, ভিটিবিশারা, গকুলনগর, ফরদাবাদ, ডোবাচাইল, ঝুনারচর, ভুরভরিয়া, রামকৃষ্ণপুর, গঙ্গানগর, তাতুয়াকান্দি, পাইকারচর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য অংশটি দরিকান্দি থেকে খাল্লা, বাহাদুরপুর, কাঞ্চনপুর, মধ্যনগর, ডোমরাকান্দি, কালাইনগর,
আছাদনগর, শরীফপুর, সাহেবনগর, বাঞ্ছারামপুর, কমলপুর হয়ে পাইকারচর এসে মিলিত হয়ে উজানচর, বুধাইরকান্দি, রাধানগর, কালিকাপুর হয়ে পার্শ্ববর্তী হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দির পাশ দিয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে মেঘনা নদীতে পতিত হওয়া ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিতাস নদী একসময় ছিল প্রচ- খরস্রোতা। ড্রাগন বলে খ্যাত তিতাস নদী এখন অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা। সময়ের ব্যবধানে আজ নাব্যতা হারিয়ে ক্রমশ মরা খালে পরিণত হচ্ছে তিতাস। নদীর এই নাব্যতা হারানোর নেপথ্যে নদী দখল, পলি জমে ভরাট হওয়া, অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা অন্যতম কারণ। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা অংশের তিতাস নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৫শ’ অবৈধ মৎস ঘের রয়েছে। মাছ শিকারে ঘের মালিকরা একেবারেই ঘন (চিকন মশারীর জাল) জাল ব্যবহার করছেন। এসব জাল থেকে কোন (আধা সেন্টিমিটারের কম) ধরণের মাছই বের হতে পারে না। যার ফলে ছোট-বড় মাছের পাশাপাশি পোনা মাছও ধরা পড়ছে ঘের মালিকদের ফাঁদে। সাহেব নগর গ্রামের লিটন মিয়া বলেন, এই গাঙ্গে একসময় পানির গভীরতা ছিল অনেক বেশি। এখন দখল ও ভরাটের কারণে শুকনা মৌসুমে নদীতে কোমর পানি পর্যন্ত হয়ে যায়। ফরদাবাদ গ্রামের শিশু মিয়া বলেন, আমাদের তিতাস নদীতে আগে বড় বড় লঞ্চ, মালবাহী ষ্টিমার চলতো। এখনতো ঘের কচুরিপানা ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে আনন্দবাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে হাঁটু পানি হয়ে যায় তিতাস নদীতে। ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীতে অবৈধভাবে কতিপয় কিছু ব্যক্তি নদীতে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করছে। পলিমাটি জমে ভরাট ও অবৈধ দখলদাররা নদীর তীরে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তিতাস নদী তার পূর্বের ঐতিহ্য ফিরে পাবে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদা আক্তার বলেন, অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছি। ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা একি মিত্র চাকমা জানান, সব অবৈধ ঘের উচ্ছেদ করা হবে। নদী দখল করে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হয় এমন কোন কাজ নদীতে করা যাবে না বলে জানান।
সোমবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৩
অদ্বৈত মল্লর্বমনের সারা জাগানো উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এক সময় প্রচণ্ড খরস্রোতা এই তিতাস নদী এখন অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। মাছের ঘেরে গাছের ডাল-পাতা ও বাঁশের জন্য উজান থেকে আসা বালি/পলি আটকে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ। ফলে নদী হারাচ্ছে নব্যতা, ব্যহত হচ্ছে নৌ চলাচল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় প্রবাহিত ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিতাস নদী। নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ অবৈধভাবে মাছের ঘের। এই ঘের তৈরি করে নির্বিচারে রেনু ও মা মাছসহ বিভিন্ন মাছ শিকার করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এই ঘের এর কারণে নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নদীতে ঘের দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার চললেও স্থানীয় প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নৌপথ বন্ধ হওয়ার কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে স্থলপথে মালামাল আনা নেয়া করতে হচ্ছে। এছাড়া ঘেরের কচুরিপানা আটকে গিয়ে পঁচে নদীর পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ায় তিতাসপাড়ের মানুষ গোসল ও রান্নাবান্নাসহ দৈনন্দিন কাজ করতে পারছেন না। এ সব ঘেরের কারণে পানি স্রোতধারা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অনেক জায়গায় ডোবচর জাগছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদীতে নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ার কারণে নদীতে ঘের নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীতে অবৈধভাবে ঘের নির্মাণ করছেন এবং চিকন জাল দিয়ে ঘের থেকে মাছ নির্ধন করছে। মা মাছ ও ছোট পোনা মাছ অবাধে ধরছে ঘের মালিকরা। এক সময় এই নদীতে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন এসব ঘের নির্মাণ করতো। তিতাস নদী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদী থেকে তিতাস নদীটি বাঞ্ছারামপুরের কালিকাপুর, জয়কালিপুর এবং পার্শ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙা গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবেশ করেছে। তিতাসের পূর্ব পাড়ে নবীনগরের ছলিমগঞ্জ পার হয়ে বাঞ্ছারামপুরের আকানগর, তেজখালি হয়ে দরিকান্দিতে এসে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে তিতাস নদীটি। এক অংশে বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার সীমানা ঘেঁষে দরিকান্দি ইমামনগর, ভিটিবিশারা, গকুলনগর, ফরদাবাদ, ডোবাচাইল, ঝুনারচর, ভুরভরিয়া, রামকৃষ্ণপুর, গঙ্গানগর, তাতুয়াকান্দি, পাইকারচর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য অংশটি দরিকান্দি থেকে খাল্লা, বাহাদুরপুর, কাঞ্চনপুর, মধ্যনগর, ডোমরাকান্দি, কালাইনগর,
আছাদনগর, শরীফপুর, সাহেবনগর, বাঞ্ছারামপুর, কমলপুর হয়ে পাইকারচর এসে মিলিত হয়ে উজানচর, বুধাইরকান্দি, রাধানগর, কালিকাপুর হয়ে পার্শ্ববর্তী হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দির পাশ দিয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে মেঘনা নদীতে পতিত হওয়া ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিতাস নদী একসময় ছিল প্রচ- খরস্রোতা। ড্রাগন বলে খ্যাত তিতাস নদী এখন অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা। সময়ের ব্যবধানে আজ নাব্যতা হারিয়ে ক্রমশ মরা খালে পরিণত হচ্ছে তিতাস। নদীর এই নাব্যতা হারানোর নেপথ্যে নদী দখল, পলি জমে ভরাট হওয়া, অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা অন্যতম কারণ। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা অংশের তিতাস নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৫শ’ অবৈধ মৎস ঘের রয়েছে। মাছ শিকারে ঘের মালিকরা একেবারেই ঘন (চিকন মশারীর জাল) জাল ব্যবহার করছেন। এসব জাল থেকে কোন (আধা সেন্টিমিটারের কম) ধরণের মাছই বের হতে পারে না। যার ফলে ছোট-বড় মাছের পাশাপাশি পোনা মাছও ধরা পড়ছে ঘের মালিকদের ফাঁদে। সাহেব নগর গ্রামের লিটন মিয়া বলেন, এই গাঙ্গে একসময় পানির গভীরতা ছিল অনেক বেশি। এখন দখল ও ভরাটের কারণে শুকনা মৌসুমে নদীতে কোমর পানি পর্যন্ত হয়ে যায়। ফরদাবাদ গ্রামের শিশু মিয়া বলেন, আমাদের তিতাস নদীতে আগে বড় বড় লঞ্চ, মালবাহী ষ্টিমার চলতো। এখনতো ঘের কচুরিপানা ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে আনন্দবাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে হাঁটু পানি হয়ে যায় তিতাস নদীতে। ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীতে অবৈধভাবে কতিপয় কিছু ব্যক্তি নদীতে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করছে। পলিমাটি জমে ভরাট ও অবৈধ দখলদাররা নদীর তীরে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তিতাস নদী তার পূর্বের ঐতিহ্য ফিরে পাবে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদা আক্তার বলেন, অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছি। ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা একি মিত্র চাকমা জানান, সব অবৈধ ঘের উচ্ছেদ করা হবে। নদী দখল করে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হয় এমন কোন কাজ নদীতে করা যাবে না বলে জানান।