অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ পেস্টিসাইড মূলত বড় গার্মেন্ট, গুদাম বা অনাবাসিক জায়গাতে স্প্রে করা হয়। ঘরে এটা ব্যবহার করা যায় না। করলেও আবাসস্থল ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় এই পেস্টিসাইড স্প্রে করে। এর আইটেমও সঠিক অনুপাতে ছিল না। আবার পরিবারকে এ বিষয়ে কোন তথ্যও দেয়া হয়নি। ফলে অসুস্থ হয়ে একই দিনে দুই শিশুর করুণ মৃত্যু হয়।
বাসাটিতে যে পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা স্প্রে করেছিল, সেই ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটি জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) প্রধান হারুন অর-রশীদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন দুই শিশুর বাবা মোবারক হোসেন। তিনি এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। মোবারক হোসেন বলেন, আল্লাহ আমার দুই সন্তানকে তুলে নিয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু ফুটফুটে দুই শিশুর এভাবে মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যাদের কারণে আমি দুই সন্তান হারিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক, আমি চাই সুষ্ঠু বিচারে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যেন আর কোন বাবা-মা এভাবে তাদের আদরের সন্তান না হারায়।
পুলিশ ও পরিবার জানায়, গত ২ জুন বসুন্ধরার আই ব্লকের একটি নতুন বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা তেলাপোকা মারার বিষ স্প্রে করেন। এর দুদিন পর ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই বাসায় ওঠে। বাসায় প্রবেশ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ তারিখ ভোরে শাহিল মোবারত জায়ান আর রাত ১০টায় মারা যায় শায়ান মোবারত জাহিন। দুই শিশুর মা শারমিন জাহান লিমা ও বাবা মোবারক হোসেনও বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঘটনার পরের দিন ডিসিএস অর্গানাইজেশনের তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরিবারটি। পরে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা টিটু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
ডিবি জানায়, ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিন আত্মগোপন করে। তারা গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ বলেন, কীটনাশক মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত তীব্র দাবদাহের এই সময়ে বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার ছিল পেস্টিসাইড কোম্পানির কর্মকর্তাদের। কিন্তু অর্থের লোভে কোম্পানির মালিক-কর্মচারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই বিষয়টিকে উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদেরকে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়ার উপদেশ না দিয়েই আনাড়ি, কর্মচারীদের দিয়ে এই কীটনাশক স্প্রে করিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে দুইটি শিশুর জীবন ঝরে যায় অকালে। অসুস্থ হন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষাক্ত পণ্য কোথায় থেকে কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কি না, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কি না, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর তা যাচাই-বাছাই করা হবে।
চেয়ারম্যান ও এমডি রিমান্ডে
এদিকে, পোকা মারার বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদ। রিমান্ডে যাওয়া দুইজন হলেন ডিসিএস অরগানাইজেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিন।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই রণপ কুমার ভক্ত জানান, দুই আসামিকে এ দিন মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই রফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন আসামিদের আইনজীবী হাসনাইন তালুকদার সুজন। তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের দায় এ ঘটনায় থাকবে কেন? তারা তো এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন না। তারা কীভাবে আসামি হয়? গ্রেপ্তারদের বক্তব্য আছে কি না তা বিচারক জানতে চাইলে তারা নিরুত্তর থাকেন। এরপর বিচারক তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায়।
বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩
অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ পেস্টিসাইড মূলত বড় গার্মেন্ট, গুদাম বা অনাবাসিক জায়গাতে স্প্রে করা হয়। ঘরে এটা ব্যবহার করা যায় না। করলেও আবাসস্থল ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় এই পেস্টিসাইড স্প্রে করে। এর আইটেমও সঠিক অনুপাতে ছিল না। আবার পরিবারকে এ বিষয়ে কোন তথ্যও দেয়া হয়নি। ফলে অসুস্থ হয়ে একই দিনে দুই শিশুর করুণ মৃত্যু হয়।
বাসাটিতে যে পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা স্প্রে করেছিল, সেই ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটি জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) প্রধান হারুন অর-রশীদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন দুই শিশুর বাবা মোবারক হোসেন। তিনি এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। মোবারক হোসেন বলেন, আল্লাহ আমার দুই সন্তানকে তুলে নিয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু ফুটফুটে দুই শিশুর এভাবে মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যাদের কারণে আমি দুই সন্তান হারিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক, আমি চাই সুষ্ঠু বিচারে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যেন আর কোন বাবা-মা এভাবে তাদের আদরের সন্তান না হারায়।
পুলিশ ও পরিবার জানায়, গত ২ জুন বসুন্ধরার আই ব্লকের একটি নতুন বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা তেলাপোকা মারার বিষ স্প্রে করেন। এর দুদিন পর ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই বাসায় ওঠে। বাসায় প্রবেশ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ তারিখ ভোরে শাহিল মোবারত জায়ান আর রাত ১০টায় মারা যায় শায়ান মোবারত জাহিন। দুই শিশুর মা শারমিন জাহান লিমা ও বাবা মোবারক হোসেনও বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঘটনার পরের দিন ডিসিএস অর্গানাইজেশনের তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরিবারটি। পরে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা টিটু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
ডিবি জানায়, ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিন আত্মগোপন করে। তারা গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ বলেন, কীটনাশক মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত তীব্র দাবদাহের এই সময়ে বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার ছিল পেস্টিসাইড কোম্পানির কর্মকর্তাদের। কিন্তু অর্থের লোভে কোম্পানির মালিক-কর্মচারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই বিষয়টিকে উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদেরকে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়ার উপদেশ না দিয়েই আনাড়ি, কর্মচারীদের দিয়ে এই কীটনাশক স্প্রে করিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে দুইটি শিশুর জীবন ঝরে যায় অকালে। অসুস্থ হন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষাক্ত পণ্য কোথায় থেকে কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কি না, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কি না, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর তা যাচাই-বাছাই করা হবে।
চেয়ারম্যান ও এমডি রিমান্ডে
এদিকে, পোকা মারার বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদ। রিমান্ডে যাওয়া দুইজন হলেন ডিসিএস অরগানাইজেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিন।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই রণপ কুমার ভক্ত জানান, দুই আসামিকে এ দিন মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই রফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন আসামিদের আইনজীবী হাসনাইন তালুকদার সুজন। তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের দায় এ ঘটনায় থাকবে কেন? তারা তো এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন না। তারা কীভাবে আসামি হয়? গ্রেপ্তারদের বক্তব্য আছে কি না তা বিচারক জানতে চাইলে তারা নিরুত্তর থাকেন। এরপর বিচারক তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায়।