২২০ বছরের পুরনো আমগাছ ‘সূর্যপুরী’
ব্যতিক্রমী এই সূর্যপুরী আমগাছটির অবস্থান ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়। আর একটু ভেঙে অবস্থান জানাতে গেলে বলা যায় আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তের ম-ুমালা গ্রামে।
ঠাকুরগাঁওয়ে ২২০ বছরের পুরনো এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ আমগাছটি এক নজর দেখতে মানুষ ভিড় করে। গাছটি ঘিরে ঈদের দিন থেকে প্রায় সপ্তাহখানেক এখানে মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সব বয়সী মানুষেরাই এখানে ভিড় জমিয়েছে এবং গাছটি এক নজর দেখে হতবাক হয়েছে। তাই ঐহিত্যবাহী এই আমগাছটিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি দর্শনাথীদের।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ২ বিঘা জমিরও বেশি জায়গা জুড়ে আমগাছটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে ভিড় করছেন। কেউ গাছের চারপাশ ঘুরে দেখছেন, কেউবা গাছের ডালে উঠে বসে মোবাইলফোনে ছবি তুলছেন। আবার কেউবা খাওয়ার জন্য গাছের আম কিনছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলায় ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বালিয়াডাঙ্গীর এই সূর্যপুরী আমগাছটি বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আম সূর্য্যপুরী। এর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আটি সূর্যপুরী আম জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বালিয়াডাঙ্গীর বিশালাকৃতির আমগাছটি ৭৪ শতাংশ জমির উপরে অর্থাৎ প্রায় দুই বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত।
গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট। এর পরিধিও ৩০-৩৫ ফুটের কম নয়। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা মোটা ডালপালা। বয়সের ভারে গাছের ডালপালা নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর থাকে এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম। এবারও গাছটিতে ব্যাপক আম ধরেছে। প্রতি বছর ১ থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি হয় গাছটির আম। গাছটির আম পাকতে শুরু করেছে। দর্শনার্থীরা গাছটি দেখে সেখানেই পাকা আম কিনছেন।
প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে সূর্য্যপুরী আমগাছটি আজ ঠাকুরগাঁওয়ের ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বছরের দুই ঈদে আমগাছটি দেখতে মানুষের ঢল নামে। গাছটিকে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের টিকেটের টাকায় গাছটির পরিচর্যাসহ দেখভাল করেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া গাছটির মালিক নূর ইসলাম।
পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে আসা আসিক ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমগাছটির ছবি দেখেছি; তাই আজ নিজ চোখে এসে গাছটি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এত বড় আমগাছ এর আগে কোথায় দেখিনি।
নীলফামারী জেলার ডোমার এলাকা থেকে গাছটি দেখতে এসেছেন আরমান হোসেন। তিনি বলেন, পরিবারসহ এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ আমগাছটি দেখতে এসেছি। বিশাল এলাকাজুড়ে গাছটি বিস্তৃত। এখান থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ৫ কেটি আম কিনলাম। সেই সঙ্গে আম খেয়েও দেখলাম, অনেক মজাদার।
এই আমগাছটি ঘিরে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব এবং যাতায়াতেও রাস্তার উন্নতি হলে সহজেই দুর-দূরান্তের মানুষজন এখানে এসে আমগাছটির বিশালতা উপভোগ করতে পারবে বলে জানান ঠাকুরগাঁও শহর থেকে আসা মাহবুবুর আলম সোহাগ। গাছটি আরও যুগ যুগ টিকে থাকুক প্রত্যশা স্থানয়ীসহ দর্শনার্থীদের।
বৃহৎ আম গাছটির মালিক নূর ইসলাম বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া গাছটির বয়স আনুমানিক ২২০ বছর। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ গাছটিকে দেখতে আসে। তবে বিশেষ করে বছরের দুটি ঈদে ও বিশেষ দিনগুলোতে এখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয়। দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে টিকেট নিয়েই গাছটির পরিচর্যা করা হয়।
তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে এ বছর ১০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত আম পাওয়া যাবে। এছাড়া গাছটিকে ঘিরেই পর্যটনকেন্দ্র করা সম্ভব। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল বলেন, আমগাছটি জেলার এবং আমাদের ঐতিহ্য। এটিকে ঘিরে কীভাবে একটি পর্যটন কেন্দ্র করা যায় সে বিষয়ে আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি সরকার পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য অতিশীঘ্রই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বালিয়াডাঙ্গীর আমগাছটি ঠাকুরগাঁও জেলার জন্য গৌরবের। প্রায় দুই বিঘা জমিজুড়ে গাছটির বিচরণ। এটি এশিয়া মহাদেশের মধ্য সর্ববৃহৎ আমগাছ। গাছটি কীভাবে আরও বেশি দিন বেঁচে থাকে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের কাছ থেকে গাছের মালিক ২০ টাকা করে টিকেটের মূল্য নেয়। আর সেই টাকা দিয়েই তিনি গাছের যত্ন নেন। যারা এই আমগাছ দেখতে আসে তারাই আম কিনে নিয়ে যায়। আমের মৌসুমে গাছের পাশেই তা বিক্রি করা হয়। ঈদের সময় লোক সমাগম বেশি থাকে।
২২০ বছরের পুরনো আমগাছ ‘সূর্যপুরী’
শুক্রবার, ০৭ জুলাই ২০২৩
ব্যতিক্রমী এই সূর্যপুরী আমগাছটির অবস্থান ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়। আর একটু ভেঙে অবস্থান জানাতে গেলে বলা যায় আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তের ম-ুমালা গ্রামে।
ঠাকুরগাঁওয়ে ২২০ বছরের পুরনো এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ আমগাছটি এক নজর দেখতে মানুষ ভিড় করে। গাছটি ঘিরে ঈদের দিন থেকে প্রায় সপ্তাহখানেক এখানে মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সব বয়সী মানুষেরাই এখানে ভিড় জমিয়েছে এবং গাছটি এক নজর দেখে হতবাক হয়েছে। তাই ঐহিত্যবাহী এই আমগাছটিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি দর্শনাথীদের।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ২ বিঘা জমিরও বেশি জায়গা জুড়ে আমগাছটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে ভিড় করছেন। কেউ গাছের চারপাশ ঘুরে দেখছেন, কেউবা গাছের ডালে উঠে বসে মোবাইলফোনে ছবি তুলছেন। আবার কেউবা খাওয়ার জন্য গাছের আম কিনছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলায় ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বালিয়াডাঙ্গীর এই সূর্যপুরী আমগাছটি বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আম সূর্য্যপুরী। এর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আটি সূর্যপুরী আম জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বালিয়াডাঙ্গীর বিশালাকৃতির আমগাছটি ৭৪ শতাংশ জমির উপরে অর্থাৎ প্রায় দুই বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত।
গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট। এর পরিধিও ৩০-৩৫ ফুটের কম নয়। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা মোটা ডালপালা। বয়সের ভারে গাছের ডালপালা নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর থাকে এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম। এবারও গাছটিতে ব্যাপক আম ধরেছে। প্রতি বছর ১ থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি হয় গাছটির আম। গাছটির আম পাকতে শুরু করেছে। দর্শনার্থীরা গাছটি দেখে সেখানেই পাকা আম কিনছেন।
প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে সূর্য্যপুরী আমগাছটি আজ ঠাকুরগাঁওয়ের ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বছরের দুই ঈদে আমগাছটি দেখতে মানুষের ঢল নামে। গাছটিকে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের টিকেটের টাকায় গাছটির পরিচর্যাসহ দেখভাল করেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া গাছটির মালিক নূর ইসলাম।
পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে আসা আসিক ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমগাছটির ছবি দেখেছি; তাই আজ নিজ চোখে এসে গাছটি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এত বড় আমগাছ এর আগে কোথায় দেখিনি।
নীলফামারী জেলার ডোমার এলাকা থেকে গাছটি দেখতে এসেছেন আরমান হোসেন। তিনি বলেন, পরিবারসহ এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ আমগাছটি দেখতে এসেছি। বিশাল এলাকাজুড়ে গাছটি বিস্তৃত। এখান থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ৫ কেটি আম কিনলাম। সেই সঙ্গে আম খেয়েও দেখলাম, অনেক মজাদার।
এই আমগাছটি ঘিরে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব এবং যাতায়াতেও রাস্তার উন্নতি হলে সহজেই দুর-দূরান্তের মানুষজন এখানে এসে আমগাছটির বিশালতা উপভোগ করতে পারবে বলে জানান ঠাকুরগাঁও শহর থেকে আসা মাহবুবুর আলম সোহাগ। গাছটি আরও যুগ যুগ টিকে থাকুক প্রত্যশা স্থানয়ীসহ দর্শনার্থীদের।
বৃহৎ আম গাছটির মালিক নূর ইসলাম বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া গাছটির বয়স আনুমানিক ২২০ বছর। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ গাছটিকে দেখতে আসে। তবে বিশেষ করে বছরের দুটি ঈদে ও বিশেষ দিনগুলোতে এখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয়। দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে টিকেট নিয়েই গাছটির পরিচর্যা করা হয়।
তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে এ বছর ১০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত আম পাওয়া যাবে। এছাড়া গাছটিকে ঘিরেই পর্যটনকেন্দ্র করা সম্ভব। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল বলেন, আমগাছটি জেলার এবং আমাদের ঐতিহ্য। এটিকে ঘিরে কীভাবে একটি পর্যটন কেন্দ্র করা যায় সে বিষয়ে আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি সরকার পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য অতিশীঘ্রই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বালিয়াডাঙ্গীর আমগাছটি ঠাকুরগাঁও জেলার জন্য গৌরবের। প্রায় দুই বিঘা জমিজুড়ে গাছটির বিচরণ। এটি এশিয়া মহাদেশের মধ্য সর্ববৃহৎ আমগাছ। গাছটি কীভাবে আরও বেশি দিন বেঁচে থাকে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের কাছ থেকে গাছের মালিক ২০ টাকা করে টিকেটের মূল্য নেয়। আর সেই টাকা দিয়েই তিনি গাছের যত্ন নেন। যারা এই আমগাছ দেখতে আসে তারাই আম কিনে নিয়ে যায়। আমের মৌসুমে গাছের পাশেই তা বিক্রি করা হয়। ঈদের সময় লোক সমাগম বেশি থাকে।