জলবাযু পরিবর্তনের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত খাদ্য শস্যের পুষ্টিমান কমছে : মোহাম্মদ বনি আমিন
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইত পুর ইউনিয়নের শীতলাইপাড়া গ্রামের রুলি খাতুন। তার গড়ে তোলা হয় একটি সবজির বীজ ব্যাংক। সেখানে ৩২ রকমের শাকসবজির বীজ ও নিজ বাড়ির পাশে সবজি ক্ষেতে তৈরি করেছেন তিনি। পাশাপাশি গ্ৰামের ১২ জন নারী নিয়ে ‘আকাশী নারী দল’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করে কাজ করছেন তিনি। তারা সবজি চাষ করছেন নিজেদের বাড়ির আঙিনায়।
তারা পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে তারা এসব সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছেন। কৃষি বিভাগের ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে নিজেদের পরিশ্রমে এ সাফল্য পেয়েছে এই নারীরা। সার-কীটনাশক ছাড়াই সবজি চাষে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন তারা।
‘আকাশি নারী দল’ দলনেতা রুলি খাতুন ভেড়ামারা মহিলা অনার্স কলেজ থেকে বিএ পাস করেছেন। তার নেতৃত্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ তৈরিতে শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছেন গ্রামের নারীরা। তাদের এ সাফল্য অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।
তারা জানান, গ্রামের বাড়ির পাশে জায়গা জঙ্গল হয়ে পড়ে থাকত। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন নারীরা সেখানে বিষমুক্ত হরেক রকম শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন করেন। নিজে খান এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের দেন। এসব নারী এখন বাজার থেকে সবজি কেনেন না। বরং মাঝেমধ্যে কিছু সবজি বিক্রি করেন।
রুলি খাতুন বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আলাদা জমিতে বেড তৈরি করে চাষ করতে শিখেছেন। কৃষি অফিস তাদের জৈবসার ও ১৭ ধরনের বীজ দিয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করার জন্য শিখিয়েছে নিমপাতা ও ছাই ব্যবহার করা। তাই তারা কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন, প্রতিবেশীদের দিচ্ছেন, প্রয়োজনে বিক্রি করতে পারছেন। তাদের দেখে গ্রামের অন্য নারীরাও আগ্রহী হচ্ছেন। আকাশি নারী দলের সদস্যরা গ্রামের নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করে তোলার কাজও করছেন।’
দৌলতপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ তৈরিতে শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছেন শীতলাইপাড়া ও শশীদারপুর গ্রামের নারীরা। তাদের এ সাফল্য অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মতো ঢাকার পাশের উপজেলা মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায়ও ৭৮টি পরিবার বছরব্যাপী সবজি উৎপাদন করছে। কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ঘিওর উপেজলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপদ সবজি উৎপাদনে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষক-কিষানিরা।’
দেশের পিছিয়ে থাকা হাওর এবং চর এলাকায় পুষ্টি ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প। এর আওতায় ৪৯ জেলার ১৫৫ উপজেলায় উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১০ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সহায়তা, প্রদর্শনী, বীজ বিতরণসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ির আঙিনায় বাগান তৈরি করে স্থানীয়দের আয় বাড়ানো হচ্ছে। ১৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৭ সালের জুনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সহযোগী সংস্থা হিসেবে আছে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)।
পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৭ হাজার ১৫৩টি বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী স্থাপন, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১৭০৫টি ফল-সবজি বাগান সৃজন করা হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার কৃষক, কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ৯টি আদর্শ রন্ধনশালা (নিউট্রিশন কিচেন) ও সাতটি মিনি নিউট্রিশন ল্যাবরেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩৫০টি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, ১৫৫টি পুষ্টি গ্রামে পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন-পুষ্টি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১৫৫টি পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ ফসল গ্রাম সৃষ্টি, ৩ লাখ ৮ হাজার ৬১৮টি কৃষক পরিবারের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মাটি কৃষির অন্যতম নেয়ামক, মাটির স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে কৃষক পর্যায়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও এর ব্যবহার বৃদ্ধি করার জন্য ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রান্তিক কৃষকের মধ্য কৃষির আধুনিকায়ন ও কৃষিকাজ সহজিকরণ এবং কৃষকের আয় বর্ধনের জন্য এ প্রকল্প থেকে কৃষক পর্যায়ে ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। সর্বোপরি জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা ও উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক(পিডি)মোহাম্মদ বনি আমিন বলেন, ‘খাদ্য চাহিদা পূরণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। প্রত্যেক নাগরিকের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রাপ্তি মৌলিক অধিকার। এখনও আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য জনগণ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দেশের পুষ্টির অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নারী ক্ষমতায়ন করতে এ প্রকল্প কাজ করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকের জিংকের চাহিদা পূরন করার জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষ ও গ্রহণ বৃদ্ধির প্রায়াশে জিংক সমৃদ্ধ ধানের প্রদর্শনি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও ভাতের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ ফসল চাষ ও তা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা জন্য কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেহেতু সংসারের মূল চালিকাশক্তি মহিলা তাই প্রশিক্ষণে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং বারটানের মাধ্যমে পুষ্টিগুন বিবেচনায় রন্ধন কলাকৌশল হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জলবাযু পরিবর্তনের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত খাদ্য শস্যের পুষ্টিমানও কমছে। সামগ্রিক বিবেচনায় টেকসই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে চর, হাওর, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার সুষম খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটানো, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি কাজ করছে।’
জলবাযু পরিবর্তনের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত খাদ্য শস্যের পুষ্টিমান কমছে : মোহাম্মদ বনি আমিন
শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইত পুর ইউনিয়নের শীতলাইপাড়া গ্রামের রুলি খাতুন। তার গড়ে তোলা হয় একটি সবজির বীজ ব্যাংক। সেখানে ৩২ রকমের শাকসবজির বীজ ও নিজ বাড়ির পাশে সবজি ক্ষেতে তৈরি করেছেন তিনি। পাশাপাশি গ্ৰামের ১২ জন নারী নিয়ে ‘আকাশী নারী দল’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করে কাজ করছেন তিনি। তারা সবজি চাষ করছেন নিজেদের বাড়ির আঙিনায়।
তারা পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে তারা এসব সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছেন। কৃষি বিভাগের ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে নিজেদের পরিশ্রমে এ সাফল্য পেয়েছে এই নারীরা। সার-কীটনাশক ছাড়াই সবজি চাষে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন তারা।
‘আকাশি নারী দল’ দলনেতা রুলি খাতুন ভেড়ামারা মহিলা অনার্স কলেজ থেকে বিএ পাস করেছেন। তার নেতৃত্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ তৈরিতে শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছেন গ্রামের নারীরা। তাদের এ সাফল্য অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।
তারা জানান, গ্রামের বাড়ির পাশে জায়গা জঙ্গল হয়ে পড়ে থাকত। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন নারীরা সেখানে বিষমুক্ত হরেক রকম শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন করেন। নিজে খান এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের দেন। এসব নারী এখন বাজার থেকে সবজি কেনেন না। বরং মাঝেমধ্যে কিছু সবজি বিক্রি করেন।
রুলি খাতুন বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আলাদা জমিতে বেড তৈরি করে চাষ করতে শিখেছেন। কৃষি অফিস তাদের জৈবসার ও ১৭ ধরনের বীজ দিয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করার জন্য শিখিয়েছে নিমপাতা ও ছাই ব্যবহার করা। তাই তারা কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন, প্রতিবেশীদের দিচ্ছেন, প্রয়োজনে বিক্রি করতে পারছেন। তাদের দেখে গ্রামের অন্য নারীরাও আগ্রহী হচ্ছেন। আকাশি নারী দলের সদস্যরা গ্রামের নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করে তোলার কাজও করছেন।’
দৌলতপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ তৈরিতে শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছেন শীতলাইপাড়া ও শশীদারপুর গ্রামের নারীরা। তাদের এ সাফল্য অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মতো ঢাকার পাশের উপজেলা মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায়ও ৭৮টি পরিবার বছরব্যাপী সবজি উৎপাদন করছে। কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ঘিওর উপেজলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপদ সবজি উৎপাদনে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষক-কিষানিরা।’
দেশের পিছিয়ে থাকা হাওর এবং চর এলাকায় পুষ্টি ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প। এর আওতায় ৪৯ জেলার ১৫৫ উপজেলায় উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১০ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সহায়তা, প্রদর্শনী, বীজ বিতরণসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ির আঙিনায় বাগান তৈরি করে স্থানীয়দের আয় বাড়ানো হচ্ছে। ১৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৭ সালের জুনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সহযোগী সংস্থা হিসেবে আছে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)।
পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৭ হাজার ১৫৩টি বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী স্থাপন, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১৭০৫টি ফল-সবজি বাগান সৃজন করা হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার কৃষক, কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ৯টি আদর্শ রন্ধনশালা (নিউট্রিশন কিচেন) ও সাতটি মিনি নিউট্রিশন ল্যাবরেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩৫০টি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, ১৫৫টি পুষ্টি গ্রামে পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন-পুষ্টি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১৫৫টি পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ ফসল গ্রাম সৃষ্টি, ৩ লাখ ৮ হাজার ৬১৮টি কৃষক পরিবারের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মাটি কৃষির অন্যতম নেয়ামক, মাটির স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে কৃষক পর্যায়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও এর ব্যবহার বৃদ্ধি করার জন্য ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রান্তিক কৃষকের মধ্য কৃষির আধুনিকায়ন ও কৃষিকাজ সহজিকরণ এবং কৃষকের আয় বর্ধনের জন্য এ প্রকল্প থেকে কৃষক পর্যায়ে ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। সর্বোপরি জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা ও উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক(পিডি)মোহাম্মদ বনি আমিন বলেন, ‘খাদ্য চাহিদা পূরণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। প্রত্যেক নাগরিকের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রাপ্তি মৌলিক অধিকার। এখনও আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য জনগণ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দেশের পুষ্টির অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নারী ক্ষমতায়ন করতে এ প্রকল্প কাজ করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকের জিংকের চাহিদা পূরন করার জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষ ও গ্রহণ বৃদ্ধির প্রায়াশে জিংক সমৃদ্ধ ধানের প্রদর্শনি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও ভাতের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ ফসল চাষ ও তা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা জন্য কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেহেতু সংসারের মূল চালিকাশক্তি মহিলা তাই প্রশিক্ষণে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং বারটানের মাধ্যমে পুষ্টিগুন বিবেচনায় রন্ধন কলাকৌশল হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জলবাযু পরিবর্তনের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত খাদ্য শস্যের পুষ্টিমানও কমছে। সামগ্রিক বিবেচনায় টেকসই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে চর, হাওর, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার সুষম খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটানো, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি কাজ করছে।’