alt

অর্থ-বাণিজ্য

ডিমের দামে ওঠা-নামা, ১২-১৩ প্রতিষ্ঠানের হাতে নিয়ন্ত্রণ, বলছেন খামারিরা

দাম বাড়াতে উৎপাদন খরচের অজুহাত

রাকিব উদ্দিন : মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ডিমের দাম খুব বেশি কমার কোন লক্ষণ নেই। গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে প্রতি একশ’ ডিমের দাম ১১৭০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করেছে।

মুরগির খাবার-ফিড, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দাম বাড়তে থাকার কারণেই ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে দাবি মুরগির খামারিদের। তাদের অভিযোগ, ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান জোটবদ্ধভাবে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর খিলগাঁও কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা বাজারে ডিমের ‘পর্যাপ্ত’ সরবরাহের কথা জানালেও একশ’ ডিমের পাইকারি দর দেখা যায় ১১৭০ টাকা। ডিমপ্রতি (লাল রঙয়ের) পাইকারি দাম ১১ টাকা ৭০ পয়সা। এক ডজন ১৪০ টাকার বেশি।

এছাড়া খিলগাঁও থানার গোড়ান ও শাহজাহানপুর এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। হালি প্রতি ৫০ টাকা।

ফার্মের ডিমের পাশাপাশি হাঁস ও দেশীয় মুরগির ডিমের দামও চড়া। খিলগাঁওয়ে মঙ্গলবার এক ডজন দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকায়। প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ১৯০ টাকা থেকে ২১০ টাকায়।

খিলগাঁও বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা মো. শফিক বলেন, ‘আমরা প্রতি একশ’ ডিমে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ করি। এর মধ্যে দু-একটি ডিম ভেঙে যায়, সেগুলো কম দামে বিক্রি করতে হয়।’

গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রতি একশ’ ডিমের দাম এক হাজার ১৭০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করেছে বলে জানান তিনি।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, কয়েকদিন ধরে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ডিমের দাম আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। কারণ বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে, দামেরও বড় নড়াচড়া নেই।

তিনি আপাতত ডিমের বাজারে বড় কোন সংকট হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখছেন না। তবে ডিমের দাম ১৩ টাকার নিচে নামলে খামারিদের লোকসানে পড়তে হবে বলে দাবি আমানত উল্লাহর।

পোল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৮৫ টাকা পড়ে। এ কারণে খুচরা মূল্য ১৩ টাকা হওয়া উচিত।

সম্প্রতি ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়ে যায়। কোথাও কোথাও ফার্মের এক ডজন ডিম ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়।

এর পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এর মধ্যে খুচরা বাজারে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২টা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগারে ২৬-২৭ টাকা) এবং প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৪-৬৫ টাকা।

কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ আশপাশের জেলা থেকে রাজধানীর খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ফার্মের মুরগির ডিম সরবরাহ করা হয় বলে পাইকাররা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে সাভার, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা ডিম রাজধানীর মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, হাজারীবাগ এলাকার বাজারে সরবরাহ করা হয়।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা ‘পোল্টি ফিড অ্যান্ড ফিগস’ ডিলারর্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া মঙ্গলবার সংবাদকে বলেন, ‘খামারেই একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকার মতো পড়ছে। প্রতি ডিমে নূন্যতম ৮০ পয়সা থেকে এক টাকা লাভ না হলে খামার ঠিকিয়ে রাখা যাবে না।’

ডিমের দাম কীভাবে কমানো সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার অকারণে খুচরা ও পাইকারি ডিম বিক্রেতাদের ধরে ধরে জরিমানা করছে। দাম বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনকারী, খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা দায়ী নয়। মূল সমস্যা পোল্ট্রি খাবারের দামে। সেখানে সরকারের নজর দেয়া উচিত।’

জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছে ‘ইউনাইটেড পোল্ট্রি ফিড অ্যান্ড ফিগস (বাচ্চা) লিমিটেডের’ স্বত্বাধিকারী মানিক মিয়া বলেন, ‘এক বছর আগে লেয়ার মুরগির ৫০ কেজির এক বস্তা ফিডের দাম ছিল দুই হাজার টাকার কম; এখন এই দাম দুই হাজার ৯৫০ টাকা। ওই সময় ব্রয়লার মুরগির এক বস্তা ফিডের মূল্য ছিল দুই হাজার তিনশ’ টাকা; এখন এই দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।’

দেশের ১২-১৩টি কোম্পানি মুরগির ফিড উৎপাদন করে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সবাই একসঙ্গে দামও বাড়ায়। বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে সাধারণ খামারি ও উৎপাদনকারীরা নিরুপায়।

এছাড়া এক বছরে মুরগির ভ্যাকসিন ও সব ধরনের ওষুধের দাম অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে মানিক মিয়া বলেন, ‘লেয়ার মুরগিকে নিয়মিত ভিটামিন ও মিনারেল ওষুধ দিতে হয়। সর্বোচ্চ ১৫ দিন ভালো থাকে। এরপর এ্যান্টিবায়োটিকও দিতে হয়।’

খামারিরা জানিয়েছেন, সাধারণত লেয়ার মুরগির বাচ্চা সাড়ে চার থেকে পাঁচ মাস পালার পর ডিম পাড়া শুরু করে। এরপর টানা ১৭ থেকে ১৮ মাস ডিম পাড়ে। এই সময়ে খাবার কম দেয়া হলে বা মুরগি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডিম কমে যায়। তখন কেজি দরে ‘লোকসান’ গুনে মুরগি বিক্রি করে দিতে হয়।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি দরে ডিম সরবরাহ করে আসছে সাভার আশুরিয়ার ‘মেসার্স ফয়সাল সরকার’। তার প্রত্যাশা ডিমের দাম কিছুটা হলেও কমবে। তবে বেশি কমে গেলে খামারিরা ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারেন।

এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফয়সাল সরকার মঙ্গলবার সংবাদকে বলেন, ‘আমি আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সরবরাহ করে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারের কাছে বিক্রি করি। আজকে প্রতিটি সাদা ডিম ১১ টাকা ১৫ পয়সা এবং লাল ডিম ১১ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি করেছি।’

ডিমের দাম আরেকটু কমা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। আবার দাম বেশি পড়ে গেলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।’

ফয়সাল সরকার বলেন, ‘প্রতি হাত বদলে একটি ডিমের দাম ৩০ থেকে ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পায়। রাজধানীর খুচরা বাজারে ডিম সরবরাহে অন্তত তিনবার হাতবদল হয়।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছে, তার ধারণা- বাজার ‘ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির’ কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় আমদানি করে সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কঠিন।

বাজারে সরবরাহের ঘাটতির কারণে পণ্য আমদানি করা হলে তা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কৃত্রিমভাবে’ বাজারে পণ্যের যোগান নিয়ন্ত্রণ করা হলে, সেরকম ক্ষেত্রে আমদানি করার পদক্ষেপ ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে।

ছবি

তেজগাঁওয়ে ডিম বিক্রি শুরু, ব্যবসায়ীদের লোকসানের অভিযোগ

ছবি

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

তিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের, চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াতে পারে ৪ শতাংশে : বিশ্বব্যাংক

ছবি

ডিমের দাম স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

ছবি

বাংলাদেশের এমএসএমই সেক্টরকে এগিয়ে নিচ্ছে প্রিয়শপ

ছবি

রিয়েলমি ১২ এর প্রি-অর্ডার ক্যাম্পেইন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা

ছবি

বাজারে আসুস আরওজি সিরিজের নতুন গেমিং মনিটর

ছবি

ব্যাংক আমানত কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা, গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ

মাত্র দুই মাস সময় দিয়েই সরকারকে ব্যর্থ বলা যায় কিনা, প্রশ্ন বাণিজ্য উপদেষ্টার

ছবি

ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত

ছবি

মেট্রোরেলের একক টিকিট ফেরত না দেওয়ায় সঙ্কট: যাত্রীদের ফেরত দেওয়ার অনুরোধ

ছবি

পাঠাও ফেস্টে গোল্ড জিতে নেয়ার সুযোগ

ছবি

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: আগামীকাল থেকে ওএমএসে সবজি বিক্রি করবে কৃষি বিপনণ অধিদপ্তর

৩৫৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ছবি

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এসএমই ফাউন্ডেশন ও ফুডপ্যান্ডা’র কর্মশালা

ছবি

শুরু হলো লিফট এন্ড এস্কেলেটর এর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ২০২৪

ছবি

কুয়াকাটায় জেলের জালে ধরা পড়েছে ৬৪ কেজি পাখি মাছ

ছবি

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস: চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি কমে হতে পারে ৪ শতাংশ

ছবি

বাংলাদেশ রিটেইল কংগ্রেস ২০২৪ অনুষ্ঠিত

ছবি

ইবিএল ও মাস্টারকার্ডের সাথে কো-ব্র্যান্ডেড কার্ড নিয়ে এলো বাংলালিংক

ছবি

আইসিএসবি কর্পোরেট গভর্নেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার

ছবি

বাজারে স্যামসাংয়ের পরিবেশবান্ধব এসি ও রেফ্রিজারেটর

ছবি

আগামী দুই বছর শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি

ছবি

ব্যাংক বন্ধ আজ

মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন পরীক্ষামূলক চালু: পরবর্তী সপ্তাহেই যাত্রী পরিবহন শুরু হতে পারে

ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে বাক্কো

ছবি

আইসিএসবি করপোরেট গভর্নেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল ইউপিজিডিসিএল

ছবি

স্পিড-বেইসড লিমিটলেস ইন্টারনেট প্যাক চালু করলো গ্রামীণফোন

ছবি

ইউরোমানি সিকিউরিটিজ হাউসেস অ্যাওয়ার্ডস জিতলো ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড

ছবি

ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-২১ উদ্বোধন

ছবি

দেশের বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়াতে ৪.৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি

ছবি

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভোমরা স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ৯ দিন বন্ধ

ছবি

ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক-কর প্রত্যাহারের পুনরায় সুপারিশ

ছবি

শ্রমিক বেতন পরিশোধে সুদবিহীন ঋণের দাবি বিজিএমইএর

ছবি

জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স গঠন: নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পদক্ষেপ

ছবি

গভীর সমুদ্রবন্দরের ব্যয় বাড়ানো হলো ৬ হাজার পাঁচশ ৭৩ কোটি টাকা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ডিমের দামে ওঠা-নামা, ১২-১৩ প্রতিষ্ঠানের হাতে নিয়ন্ত্রণ, বলছেন খামারিরা

দাম বাড়াতে উৎপাদন খরচের অজুহাত

রাকিব উদ্দিন

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ডিমের দাম খুব বেশি কমার কোন লক্ষণ নেই। গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে প্রতি একশ’ ডিমের দাম ১১৭০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করেছে।

মুরগির খাবার-ফিড, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দাম বাড়তে থাকার কারণেই ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে দাবি মুরগির খামারিদের। তাদের অভিযোগ, ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান জোটবদ্ধভাবে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর খিলগাঁও কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা বাজারে ডিমের ‘পর্যাপ্ত’ সরবরাহের কথা জানালেও একশ’ ডিমের পাইকারি দর দেখা যায় ১১৭০ টাকা। ডিমপ্রতি (লাল রঙয়ের) পাইকারি দাম ১১ টাকা ৭০ পয়সা। এক ডজন ১৪০ টাকার বেশি।

এছাড়া খিলগাঁও থানার গোড়ান ও শাহজাহানপুর এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। হালি প্রতি ৫০ টাকা।

ফার্মের ডিমের পাশাপাশি হাঁস ও দেশীয় মুরগির ডিমের দামও চড়া। খিলগাঁওয়ে মঙ্গলবার এক ডজন দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকায়। প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ১৯০ টাকা থেকে ২১০ টাকায়।

খিলগাঁও বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা মো. শফিক বলেন, ‘আমরা প্রতি একশ’ ডিমে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ করি। এর মধ্যে দু-একটি ডিম ভেঙে যায়, সেগুলো কম দামে বিক্রি করতে হয়।’

গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রতি একশ’ ডিমের দাম এক হাজার ১৭০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করেছে বলে জানান তিনি।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, কয়েকদিন ধরে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ডিমের দাম আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। কারণ বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে, দামেরও বড় নড়াচড়া নেই।

তিনি আপাতত ডিমের বাজারে বড় কোন সংকট হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখছেন না। তবে ডিমের দাম ১৩ টাকার নিচে নামলে খামারিদের লোকসানে পড়তে হবে বলে দাবি আমানত উল্লাহর।

পোল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৮৫ টাকা পড়ে। এ কারণে খুচরা মূল্য ১৩ টাকা হওয়া উচিত।

সম্প্রতি ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়ে যায়। কোথাও কোথাও ফার্মের এক ডজন ডিম ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়।

এর পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এর মধ্যে খুচরা বাজারে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২টা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগারে ২৬-২৭ টাকা) এবং প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৪-৬৫ টাকা।

কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ আশপাশের জেলা থেকে রাজধানীর খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ফার্মের মুরগির ডিম সরবরাহ করা হয় বলে পাইকাররা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে সাভার, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা ডিম রাজধানীর মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, হাজারীবাগ এলাকার বাজারে সরবরাহ করা হয়।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা ‘পোল্টি ফিড অ্যান্ড ফিগস’ ডিলারর্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া মঙ্গলবার সংবাদকে বলেন, ‘খামারেই একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকার মতো পড়ছে। প্রতি ডিমে নূন্যতম ৮০ পয়সা থেকে এক টাকা লাভ না হলে খামার ঠিকিয়ে রাখা যাবে না।’

ডিমের দাম কীভাবে কমানো সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার অকারণে খুচরা ও পাইকারি ডিম বিক্রেতাদের ধরে ধরে জরিমানা করছে। দাম বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনকারী, খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা দায়ী নয়। মূল সমস্যা পোল্ট্রি খাবারের দামে। সেখানে সরকারের নজর দেয়া উচিত।’

জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছে ‘ইউনাইটেড পোল্ট্রি ফিড অ্যান্ড ফিগস (বাচ্চা) লিমিটেডের’ স্বত্বাধিকারী মানিক মিয়া বলেন, ‘এক বছর আগে লেয়ার মুরগির ৫০ কেজির এক বস্তা ফিডের দাম ছিল দুই হাজার টাকার কম; এখন এই দাম দুই হাজার ৯৫০ টাকা। ওই সময় ব্রয়লার মুরগির এক বস্তা ফিডের মূল্য ছিল দুই হাজার তিনশ’ টাকা; এখন এই দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।’

দেশের ১২-১৩টি কোম্পানি মুরগির ফিড উৎপাদন করে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সবাই একসঙ্গে দামও বাড়ায়। বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে সাধারণ খামারি ও উৎপাদনকারীরা নিরুপায়।

এছাড়া এক বছরে মুরগির ভ্যাকসিন ও সব ধরনের ওষুধের দাম অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে মানিক মিয়া বলেন, ‘লেয়ার মুরগিকে নিয়মিত ভিটামিন ও মিনারেল ওষুধ দিতে হয়। সর্বোচ্চ ১৫ দিন ভালো থাকে। এরপর এ্যান্টিবায়োটিকও দিতে হয়।’

খামারিরা জানিয়েছেন, সাধারণত লেয়ার মুরগির বাচ্চা সাড়ে চার থেকে পাঁচ মাস পালার পর ডিম পাড়া শুরু করে। এরপর টানা ১৭ থেকে ১৮ মাস ডিম পাড়ে। এই সময়ে খাবার কম দেয়া হলে বা মুরগি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডিম কমে যায়। তখন কেজি দরে ‘লোকসান’ গুনে মুরগি বিক্রি করে দিতে হয়।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি দরে ডিম সরবরাহ করে আসছে সাভার আশুরিয়ার ‘মেসার্স ফয়সাল সরকার’। তার প্রত্যাশা ডিমের দাম কিছুটা হলেও কমবে। তবে বেশি কমে গেলে খামারিরা ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারেন।

এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফয়সাল সরকার মঙ্গলবার সংবাদকে বলেন, ‘আমি আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সরবরাহ করে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারের কাছে বিক্রি করি। আজকে প্রতিটি সাদা ডিম ১১ টাকা ১৫ পয়সা এবং লাল ডিম ১১ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি করেছি।’

ডিমের দাম আরেকটু কমা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। আবার দাম বেশি পড়ে গেলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।’

ফয়সাল সরকার বলেন, ‘প্রতি হাত বদলে একটি ডিমের দাম ৩০ থেকে ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পায়। রাজধানীর খুচরা বাজারে ডিম সরবরাহে অন্তত তিনবার হাতবদল হয়।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছে, তার ধারণা- বাজার ‘ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির’ কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় আমদানি করে সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কঠিন।

বাজারে সরবরাহের ঘাটতির কারণে পণ্য আমদানি করা হলে তা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কৃত্রিমভাবে’ বাজারে পণ্যের যোগান নিয়ন্ত্রণ করা হলে, সেরকম ক্ষেত্রে আমদানি করার পদক্ষেপ ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে।

back to top