alt

অর্থ-বাণিজ্য

ডিমের দামে ওঠা-নামা, ১২-১৩ প্রতিষ্ঠানের হাতে নিয়ন্ত্রণ, বলছেন খামারিরা

দাম বাড়াতে উৎপাদন খরচের অজুহাত

রাকিব উদ্দিন : মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ডিমের দাম খুব বেশি কমার কোন লক্ষণ নেই। গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে প্রতি একশ’ ডিমের দাম ১১৭০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করেছে।

মুরগির খাবার-ফিড, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দাম বাড়তে থাকার কারণেই ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে দাবি মুরগির খামারিদের। তাদের অভিযোগ, ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান জোটবদ্ধভাবে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর খিলগাঁও কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা বাজারে ডিমের ‘পর্যাপ্ত’ সরবরাহের কথা জানালেও একশ’ ডিমের পাইকারি দর দেখা যায় ১১৭০ টাকা। ডিমপ্রতি (লাল রঙয়ের) পাইকারি দাম ১১ টাকা ৭০ পয়সা। এক ডজন ১৪০ টাকার বেশি।

এছাড়া খিলগাঁও থানার গোড়ান ও শাহজাহানপুর এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। হালি প্রতি ৫০ টাকা।

ফার্মের ডিমের পাশাপাশি হাঁস ও দেশীয় মুরগির ডিমের দামও চড়া। খিলগাঁওয়ে মঙ্গলবার এক ডজন দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকায়। প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ১৯০ টাকা থেকে ২১০ টাকায়।

খিলগাঁও বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা মো. শফিক বলেন, ‘আমরা প্রতি একশ’ ডিমে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ করি। এর মধ্যে দু-একটি ডিম ভেঙে যায়, সেগুলো কম দামে বিক্রি করতে হয়।’

গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রতি একশ’ ডিমের দাম এক হাজার ১৭০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করেছে বলে জানান তিনি।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, কয়েকদিন ধরে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ডিমের দাম আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। কারণ বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে, দামেরও বড় নড়াচড়া নেই।

তিনি আপাতত ডিমের বাজারে বড় কোন সংকট হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখছেন না। তবে ডিমের দাম ১৩ টাকার নিচে নামলে খামারিদের লোকসানে পড়তে হবে বলে দাবি আমানত উল্লাহর।

পোল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৮৫ টাকা পড়ে। এ কারণে খুচরা মূল্য ১৩ টাকা হওয়া উচিত।

সম্প্রতি ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়ে যায়। কোথাও কোথাও ফার্মের এক ডজন ডিম ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়।

এর পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এর মধ্যে খুচরা বাজারে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২টা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগারে ২৬-২৭ টাকা) এবং প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৪-৬৫ টাকা।

কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ আশপাশের জেলা থেকে রাজধানীর খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ফার্মের মুরগির ডিম সরবরাহ করা হয় বলে পাইকাররা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে সাভার, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা ডিম রাজধানীর মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, হাজারীবাগ এলাকার বাজারে সরবরাহ করা হয়।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা ‘পোল্টি ফিড অ্যান্ড ফিগস’ ডিলারর্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া মঙ্গলবার সংবাদকে বলেন, ‘খামারেই একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকার মতো পড়ছে। প্রতি ডিমে নূন্যতম ৮০ পয়সা থেকে এক টাকা লাভ না হলে খামার ঠিকিয়ে রাখা যাবে না।’

ডিমের দাম কীভাবে কমানো সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার অকারণে খুচরা ও পাইকারি ডিম বিক্রেতাদের ধরে ধরে জরিমানা করছে। দাম বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনকারী, খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা দায়ী নয়। মূল সমস্যা পোল্ট্রি খাবারের দামে। সেখানে সরকারের নজর দেয়া উচিত।’

জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছে ‘ইউনাইটেড পোল্ট্রি ফিড অ্যান্ড ফিগস (বাচ্চা) লিমিটেডের’ স্বত্বাধিকারী মানিক মিয়া বলেন, ‘এক বছর আগে লেয়ার মুরগির ৫০ কেজির এক বস্তা ফিডের দাম ছিল দুই হাজার টাকার কম; এখন এই দাম দুই হাজার ৯৫০ টাকা। ওই সময় ব্রয়লার মুরগির এক বস্তা ফিডের মূল্য ছিল দুই হাজার তিনশ’ টাকা; এখন এই দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।’

দেশের ১২-১৩টি কোম্পানি মুরগির ফিড উৎপাদন করে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সবাই একসঙ্গে দামও বাড়ায়। বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে সাধারণ খামারি ও উৎপাদনকারীরা নিরুপায়।

এছাড়া এক বছরে মুরগির ভ্যাকসিন ও সব ধরনের ওষুধের দাম অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে মানিক মিয়া বলেন, ‘লেয়ার মুরগিকে নিয়মিত ভিটামিন ও মিনারেল ওষুধ দিতে হয়। সর্বোচ্চ ১৫ দিন ভালো থাকে। এরপর এ্যান্টিবায়োটিকও দিতে হয়।’

খামারিরা জানিয়েছেন, সাধারণত লেয়ার মুরগির বাচ্চা সাড়ে চার থেকে পাঁচ মাস পালার পর ডিম পাড়া শুরু করে। এরপর টানা ১৭ থেকে ১৮ মাস ডিম পাড়ে। এই সময়ে খাবার কম দেয়া হলে বা মুরগি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডিম কমে যায়। তখন কেজি দরে ‘লোকসান’ গুনে মুরগি বিক্রি করে দিতে হয়।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি দরে ডিম সরবরাহ করে আসছে সাভার আশুরিয়ার ‘মেসার্স ফয়সাল সরকার’। তার প্রত্যাশা ডিমের দাম কিছুটা হলেও কমবে। তবে বেশি কমে গেলে খামারিরা ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারেন।

এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফয়সাল সরকার মঙ্গলবার সংবাদকে বলেন, ‘আমি আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সরবরাহ করে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারের কাছে বিক্রি করি। আজকে প্রতিটি সাদা ডিম ১১ টাকা ১৫ পয়সা এবং লাল ডিম ১১ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি করেছি।’

ডিমের দাম আরেকটু কমা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। আবার দাম বেশি পড়ে গেলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।’

ফয়সাল সরকার বলেন, ‘প্রতি হাত বদলে একটি ডিমের দাম ৩০ থেকে ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পায়। রাজধানীর খুচরা বাজারে ডিম সরবরাহে অন্তত তিনবার হাতবদল হয়।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছে, তার ধারণা- বাজার ‘ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির’ কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় আমদানি করে সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কঠিন।

বাজারে সরবরাহের ঘাটতির কারণে পণ্য আমদানি করা হলে তা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কৃত্রিমভাবে’ বাজারে পণ্যের যোগান নিয়ন্ত্রণ করা হলে, সেরকম ক্ষেত্রে আমদানি করার পদক্ষেপ ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে।

ছবি

ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২১ মে থেকে

ছবি

এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি কমেছে, পিএমআই সূচক নামলো ৮ দশমিক ৮ পয়েন্টে

অনিবন্ধিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

বাংলাদেশ জুড়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের টেকসই নানা উদ্যোগ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করলেন এডিবি প্রেসিডেন্ট

মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

ছবি

কর প্রশাসন আধুনিকায়নে এডিবির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার

বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ

ছবি

২০৩০ সালে চালু হবে বে টার্মিনাল, কর্মসংস্থান লাখ মানুষের

ছবি

চলতি অর্থবছরের সর্বনিম্ন রপ্তানি আয় এপ্রিলে

ছবি

গ্লাস শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০৩০ সাল পর্যন্ত মওকুফ

বিজিএমইএ নির্বাচন: সম্মিলিত পরিষদের ৩৫ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা

ছবি

মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মুনাফা ৩৩০০ কোটি টাকা, যা ব্র্যাক, সিটি ও পূবালী ব্যাংকের চেয়েও বেশি

দ্বিতীয় দিনেও আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি

ছবি

ডেনিম এক্সপো শুরু হচ্ছে ১২ মে

যুদ্ধের প্রভাবে সূচক পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে, রুপিরও দরপতন

একনেকে ৩৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্য

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ঢাকার শেয়ারবাজারে বড় ধস

ছবি

পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ফের পতন শেয়ারবাজারে, সূচকের অবস্থান ৪ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে

চার খাতে এডিবির কাছে সহযোগিতা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ কোটি ইউরো ঋণ ও অনুদান দিচ্ছে ইআইবি এবং ইইউ

ছবি

এপ্রিলে তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার

ছবি

চট করে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না: অর্থ উপদেষ্টা

বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে

বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা ছয় সংস্থা একীভূত করার উদ্যোগে কমিটি গঠন

ছবি

মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ২০ ব্যাংকের

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকে অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালা

ছবি

আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন ডিএসইতে, সূচক বেড়েছে ৮ পয়েন্ট

ছবি

ঋণের দুই কিস্তি ছাড়ে ফের আলোচনায় বসছে আইএমএফ

ছবি

আইএমএফ ঋণ নিয়ে এডিবির জিজ্ঞাসা, আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ

ছবি

উদ্যোক্তাদের সুবিধায় বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে এলো জাতিক ক্যাপিটাল

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ডিমের দামে ওঠা-নামা, ১২-১৩ প্রতিষ্ঠানের হাতে নিয়ন্ত্রণ, বলছেন খামারিরা

দাম বাড়াতে উৎপাদন খরচের অজুহাত

রাকিব উদ্দিন

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ডিমের দাম খুব বেশি কমার কোন লক্ষণ নেই। গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে প্রতি একশ’ ডিমের দাম ১১৭০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করেছে।

মুরগির খাবার-ফিড, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দাম বাড়তে থাকার কারণেই ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে দাবি মুরগির খামারিদের। তাদের অভিযোগ, ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান জোটবদ্ধভাবে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর খিলগাঁও কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা বাজারে ডিমের ‘পর্যাপ্ত’ সরবরাহের কথা জানালেও একশ’ ডিমের পাইকারি দর দেখা যায় ১১৭০ টাকা। ডিমপ্রতি (লাল রঙয়ের) পাইকারি দাম ১১ টাকা ৭০ পয়সা। এক ডজন ১৪০ টাকার বেশি।

এছাড়া খিলগাঁও থানার গোড়ান ও শাহজাহানপুর এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। হালি প্রতি ৫০ টাকা।

ফার্মের ডিমের পাশাপাশি হাঁস ও দেশীয় মুরগির ডিমের দামও চড়া। খিলগাঁওয়ে মঙ্গলবার এক ডজন দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকায়। প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ১৯০ টাকা থেকে ২১০ টাকায়।

খিলগাঁও বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা মো. শফিক বলেন, ‘আমরা প্রতি একশ’ ডিমে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ করি। এর মধ্যে দু-একটি ডিম ভেঙে যায়, সেগুলো কম দামে বিক্রি করতে হয়।’

গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রতি একশ’ ডিমের দাম এক হাজার ১৭০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করেছে বলে জানান তিনি।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, কয়েকদিন ধরে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ডিমের দাম আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। কারণ বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে, দামেরও বড় নড়াচড়া নেই।

তিনি আপাতত ডিমের বাজারে বড় কোন সংকট হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখছেন না। তবে ডিমের দাম ১৩ টাকার নিচে নামলে খামারিদের লোকসানে পড়তে হবে বলে দাবি আমানত উল্লাহর।

পোল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৮৫ টাকা পড়ে। এ কারণে খুচরা মূল্য ১৩ টাকা হওয়া উচিত।

সম্প্রতি ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়ে যায়। কোথাও কোথাও ফার্মের এক ডজন ডিম ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়।

এর পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এর মধ্যে খুচরা বাজারে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২টা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগারে ২৬-২৭ টাকা) এবং প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৪-৬৫ টাকা।

কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ আশপাশের জেলা থেকে রাজধানীর খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ফার্মের মুরগির ডিম সরবরাহ করা হয় বলে পাইকাররা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে সাভার, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা ডিম রাজধানীর মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, হাজারীবাগ এলাকার বাজারে সরবরাহ করা হয়।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা ‘পোল্টি ফিড অ্যান্ড ফিগস’ ডিলারর্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া মঙ্গলবার সংবাদকে বলেন, ‘খামারেই একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকার মতো পড়ছে। প্রতি ডিমে নূন্যতম ৮০ পয়সা থেকে এক টাকা লাভ না হলে খামার ঠিকিয়ে রাখা যাবে না।’

ডিমের দাম কীভাবে কমানো সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার অকারণে খুচরা ও পাইকারি ডিম বিক্রেতাদের ধরে ধরে জরিমানা করছে। দাম বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনকারী, খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা দায়ী নয়। মূল সমস্যা পোল্ট্রি খাবারের দামে। সেখানে সরকারের নজর দেয়া উচিত।’

জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছে ‘ইউনাইটেড পোল্ট্রি ফিড অ্যান্ড ফিগস (বাচ্চা) লিমিটেডের’ স্বত্বাধিকারী মানিক মিয়া বলেন, ‘এক বছর আগে লেয়ার মুরগির ৫০ কেজির এক বস্তা ফিডের দাম ছিল দুই হাজার টাকার কম; এখন এই দাম দুই হাজার ৯৫০ টাকা। ওই সময় ব্রয়লার মুরগির এক বস্তা ফিডের মূল্য ছিল দুই হাজার তিনশ’ টাকা; এখন এই দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।’

দেশের ১২-১৩টি কোম্পানি মুরগির ফিড উৎপাদন করে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সবাই একসঙ্গে দামও বাড়ায়। বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে সাধারণ খামারি ও উৎপাদনকারীরা নিরুপায়।

এছাড়া এক বছরে মুরগির ভ্যাকসিন ও সব ধরনের ওষুধের দাম অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে মানিক মিয়া বলেন, ‘লেয়ার মুরগিকে নিয়মিত ভিটামিন ও মিনারেল ওষুধ দিতে হয়। সর্বোচ্চ ১৫ দিন ভালো থাকে। এরপর এ্যান্টিবায়োটিকও দিতে হয়।’

খামারিরা জানিয়েছেন, সাধারণত লেয়ার মুরগির বাচ্চা সাড়ে চার থেকে পাঁচ মাস পালার পর ডিম পাড়া শুরু করে। এরপর টানা ১৭ থেকে ১৮ মাস ডিম পাড়ে। এই সময়ে খাবার কম দেয়া হলে বা মুরগি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডিম কমে যায়। তখন কেজি দরে ‘লোকসান’ গুনে মুরগি বিক্রি করে দিতে হয়।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি দরে ডিম সরবরাহ করে আসছে সাভার আশুরিয়ার ‘মেসার্স ফয়সাল সরকার’। তার প্রত্যাশা ডিমের দাম কিছুটা হলেও কমবে। তবে বেশি কমে গেলে খামারিরা ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারেন।

এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফয়সাল সরকার মঙ্গলবার সংবাদকে বলেন, ‘আমি আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সরবরাহ করে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারের কাছে বিক্রি করি। আজকে প্রতিটি সাদা ডিম ১১ টাকা ১৫ পয়সা এবং লাল ডিম ১১ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি করেছি।’

ডিমের দাম আরেকটু কমা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। আবার দাম বেশি পড়ে গেলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।’

ফয়সাল সরকার বলেন, ‘প্রতি হাত বদলে একটি ডিমের দাম ৩০ থেকে ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পায়। রাজধানীর খুচরা বাজারে ডিম সরবরাহে অন্তত তিনবার হাতবদল হয়।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছে, তার ধারণা- বাজার ‘ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির’ কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় আমদানি করে সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কঠিন।

বাজারে সরবরাহের ঘাটতির কারণে পণ্য আমদানি করা হলে তা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কৃত্রিমভাবে’ বাজারে পণ্যের যোগান নিয়ন্ত্রণ করা হলে, সেরকম ক্ষেত্রে আমদানি করার পদক্ষেপ ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে।

back to top