alt

অর্থ-বাণিজ্য

অর্থঋণ আদালত

মামলা নিষ্পত্তি বাড়লেও ঋণ আদায় কম

রমজান আলী : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অর্থঋণ আদালতে মামলা বাড়ছে। বাড়ছে নিষ্পত্তি। কিন্তু ঋণের অর্থ আদায়ের পরিমাণ খুবই কম। ২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালত গঠন হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ আদালতে মামলা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ২৩৩টি। মামলার বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা ।

মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৮৮টির। নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় জড়িত অর্থের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ২১২ কোটি টাকা।

যদিও নিষ্পত্তিকৃত অর্থের অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তিকৃত মামলার বিপরীতে মাত্র ২৩ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা খেলাপি পাওনার মাত্র ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গ্রাহকরা অনেক সময় ব্যাংক থেকে নথিপত্র ছাড়াও নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে থাকে। পরে এসব ঋণ খেলাপি হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে হয় ব্যাংকের। মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পরে অর্থ আদায় হচ্ছে না। এর কারণ ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার সময় কাগজপত্রে জামানত বেশি দেখিয়েছে। পরে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে, কিংবা মালিক মারা গেছেন, তখন আর ঋণ আদায়ের সুযোগ থাকে না। তারা যে জামানত রেখে যান, তা বিক্রি করে ব্যাংক পুরো অর্থ পায় না। তাই মামলা নিষ্পত্তি হলেও ব্যাংক অর্থ আদায় করতে পারে না।

বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই অর্থ আটকা রয়েছে। এর বাহিরে বিদেশি ব্যাংকের ১০ হাজার ১৯৫ মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ২৪০ কোটি ৯৩ লাখ।

এর আগে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সারাদেশে অর্থঋণ আদালতে মামলা ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার । এতে ব্যাংকের অর্থ আটকা ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই বছর জুন পর্যন্ত এক বছরে মামলা বেড়েছে ৪ হাজার ২৩৩টি। এর বিপরীতে এক বছরে অর্থ বেড়েছে ৩৬ হাজার ২৫১ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত জুন পর্যন্ত অর্থঋণ আইনে বিভিন্ন আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকের ৮৪ হাজার মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ এক লাখ ৩৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা আটকা রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের অর্থঋণ আইনে ৯৬ হাজার ৩৮৭ মামলা। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ এক লাখ ২৬ হাজার ৯৬৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মামলার তুলনায় চেয়ে অর্থের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৩৭ হাজার ৭২৭ মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ২৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

২০২২ সালের জুনে অর্থঋণ আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকের ৮২ হাজার ৮৫৮ মামলা ছিল। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের অর্থঋণ আইনে ৮৪ হাজার ৪৩০ মামলা ছিল। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা কম। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৭৭৪ মামলা ছিল। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।

এতে এক বছরে অর্থঋণ আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকের মামলা বেড়েছে ১ হাজার ২৬১টি। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের অর্থঋণ আদালতে মামলার বেড়েছে ১১ হাজার ৯৫৭টি। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৭০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মামলা বেড়েছে ৯৫৩টি। অর্থে পরিমাণ বেড়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকগুলোর করা মোট মামলার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৮৯৬টি। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।

এর বাইরে খেলাপি ঋণ নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা রয়েছে ১০ হাজারের বেশি। এর মাধ্যমে অনেকেই আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। ফলে এসব ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ব্যাংক টাকাও ফেরত পাচ্ছে না, আবার ঋণখেলাপির তালিকায়ও তাদের নাম উল্লেখ করতে পারছে না।

শীর্ষ ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ আদালতে করা এসব রিট খেলাপি ঋণ আদায়ে একটা বড় বাধা। পাশাপাশি সার্টিফিকেট মামলা, দেউলিয়া ও ফৌজদারি আদালতেও বিচারাধীন রয়েছে হাজার হাজার মামলা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করা হলেও অর্থঋণ আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই সময়ক্ষেপণের সুযোগ রয়েছে। এ আদালতে রায় হওয়ার পরও খেলাপি গ্রাহকরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। বছরের পর বছর পার হলেও সেই প্রক্রিয়া শেষ হয় না। এজন্য দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম সমস্যা খেলাপি ঋণ। অনেকেই ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে শোধ করছে না। ঋণ খেলাপি হয়েও তারা ভোগ করছে বিভিন্ন সুবিধা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২০০৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায়ে প্রচলিত আইনের সংশোধন করে সরকার অর্থঋণ আদালত আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত আদালত ও বিচারকের অভাব, ঋণখেলাপিদের ছলচাতুরিতে আইনটির সুফল পাচ্ছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে ঢাকায় ৪টি অর্থঋণ আদালত আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে একটি করে অর্থঋণ আদালত রয়েছে। অন্য বিভাগীয় শহরে কোন সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই। এছাড়া কয়েকটি জেলায় অর্থঋণ আদালত থাকলেও বেশিরভাগ জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত নেই। যেসব জেলায় অর্থঋণ আদালত নেই সেসব জেলার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতগুলো তাদের নিজস্ব দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অর্থঋণ আদালতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে আইনে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কোন মামলাই নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কোন কোন মামলায় বছরের পর বছরও লেগে যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থঋণ আদালতে মামলায় যেসব টাকা আটকে আছে সেগুলো মূলত জনগণের টাকা। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকগুলো মন্দ ঋণের বোঝা বড় হচ্ছে। মামলা পরিচালন বাবদ খরচ বাড়ছে।

তাদের দাবি, ঢাকায় কমপক্ষে আরও দুটি এবং চট্টগ্রামে আরেকটি অর্থঋণ আদালত স্থাপন করা হোক। পাশাপাশি যেসব বিভাগীয় শহর ও জেলায় সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই সেখানে ন্যূনতম একটি করে আদালত স্থাপন করা জরুরি। এজন্য সব জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত স্থাপন ও বিচারক নিয়োগের জন্য আইন মন্ত্রণালয়েও আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো।

আইনজীবী মামুনুর রশিদ মামুনের সংবাদকে বলেন, ‘মামলার তুলনায় আদালত ও বিচারক কম থাকায় খেলাপি ঋণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। তাই মামলার রায় পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। রায় পাওয়ার পরেও আদালতের কাগজপত্র পেতে আরও কিছু সময় লাগে। এর ফলে দীর্ঘ সময় লাগে অর্থ ফেরত পেতে।’

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুছ ছালাম আজাদ সংবাদকে বলেন, বিবাদী পক্ষ নিম্ন আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলাজট থাকায় শুনানিতে দেরি হয়। আবার অনেকে রিট মামলা করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানিতেও অনেক সময় লেগে যায়। এর ফলে দীর্ঘদিন আটকে থাকে ব্যাংকের টাকা। তাই অর্থঋণ আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনের সংস্কার প্রয়োজন।

জানা গেছে, কোন গ্রাহক খেলাপি হলে শুরুতেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারে না। প্রথমে গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। এরপর নোটিশ দিতে হয়। তাতেও কাজ না হলে আইনি নোটিশ দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিতে হয়। এরপর ঋণের বিপরীতে রাখা জামানত সম্পদ নিলাম করার উদ্যোগ নিতে হবে। ওই নিলামে সম্পদ বিক্রি করতে পারলে যে টাকা পাওয়া যাবে সেই টাকা ঋণের থেকে সমন্বয় করে বাকি অর্থের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আদালতের বিষয়। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন হাত নেই।’

ছবি

ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২১ মে থেকে

ছবি

এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি কমেছে, পিএমআই সূচক নামলো ৮ দশমিক ৮ পয়েন্টে

অনিবন্ধিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

বাংলাদেশ জুড়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের টেকসই নানা উদ্যোগ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করলেন এডিবি প্রেসিডেন্ট

মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

ছবি

কর প্রশাসন আধুনিকায়নে এডিবির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার

বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ

ছবি

২০৩০ সালে চালু হবে বে টার্মিনাল, কর্মসংস্থান লাখ মানুষের

ছবি

চলতি অর্থবছরের সর্বনিম্ন রপ্তানি আয় এপ্রিলে

ছবি

গ্লাস শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০৩০ সাল পর্যন্ত মওকুফ

বিজিএমইএ নির্বাচন: সম্মিলিত পরিষদের ৩৫ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা

ছবি

মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মুনাফা ৩৩০০ কোটি টাকা, যা ব্র্যাক, সিটি ও পূবালী ব্যাংকের চেয়েও বেশি

দ্বিতীয় দিনেও আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি

ছবি

ডেনিম এক্সপো শুরু হচ্ছে ১২ মে

যুদ্ধের প্রভাবে সূচক পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে, রুপিরও দরপতন

একনেকে ৩৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্য

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ঢাকার শেয়ারবাজারে বড় ধস

ছবি

পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ফের পতন শেয়ারবাজারে, সূচকের অবস্থান ৪ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে

চার খাতে এডিবির কাছে সহযোগিতা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ কোটি ইউরো ঋণ ও অনুদান দিচ্ছে ইআইবি এবং ইইউ

ছবি

এপ্রিলে তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার

ছবি

চট করে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না: অর্থ উপদেষ্টা

বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে

বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা ছয় সংস্থা একীভূত করার উদ্যোগে কমিটি গঠন

ছবি

মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ২০ ব্যাংকের

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকে অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালা

ছবি

আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন ডিএসইতে, সূচক বেড়েছে ৮ পয়েন্ট

ছবি

ঋণের দুই কিস্তি ছাড়ে ফের আলোচনায় বসছে আইএমএফ

ছবি

আইএমএফ ঋণ নিয়ে এডিবির জিজ্ঞাসা, আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ

ছবি

উদ্যোক্তাদের সুবিধায় বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে এলো জাতিক ক্যাপিটাল

tab

অর্থ-বাণিজ্য

অর্থঋণ আদালত

মামলা নিষ্পত্তি বাড়লেও ঋণ আদায় কম

রমজান আলী

বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অর্থঋণ আদালতে মামলা বাড়ছে। বাড়ছে নিষ্পত্তি। কিন্তু ঋণের অর্থ আদায়ের পরিমাণ খুবই কম। ২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালত গঠন হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ আদালতে মামলা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ২৩৩টি। মামলার বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা ।

মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৮৮টির। নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় জড়িত অর্থের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ২১২ কোটি টাকা।

যদিও নিষ্পত্তিকৃত অর্থের অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তিকৃত মামলার বিপরীতে মাত্র ২৩ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা খেলাপি পাওনার মাত্র ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গ্রাহকরা অনেক সময় ব্যাংক থেকে নথিপত্র ছাড়াও নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে থাকে। পরে এসব ঋণ খেলাপি হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে হয় ব্যাংকের। মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পরে অর্থ আদায় হচ্ছে না। এর কারণ ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার সময় কাগজপত্রে জামানত বেশি দেখিয়েছে। পরে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে, কিংবা মালিক মারা গেছেন, তখন আর ঋণ আদায়ের সুযোগ থাকে না। তারা যে জামানত রেখে যান, তা বিক্রি করে ব্যাংক পুরো অর্থ পায় না। তাই মামলা নিষ্পত্তি হলেও ব্যাংক অর্থ আদায় করতে পারে না।

বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই অর্থ আটকা রয়েছে। এর বাহিরে বিদেশি ব্যাংকের ১০ হাজার ১৯৫ মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ২৪০ কোটি ৯৩ লাখ।

এর আগে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সারাদেশে অর্থঋণ আদালতে মামলা ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার । এতে ব্যাংকের অর্থ আটকা ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই বছর জুন পর্যন্ত এক বছরে মামলা বেড়েছে ৪ হাজার ২৩৩টি। এর বিপরীতে এক বছরে অর্থ বেড়েছে ৩৬ হাজার ২৫১ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত জুন পর্যন্ত অর্থঋণ আইনে বিভিন্ন আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকের ৮৪ হাজার মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ এক লাখ ৩৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা আটকা রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের অর্থঋণ আইনে ৯৬ হাজার ৩৮৭ মামলা। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ এক লাখ ২৬ হাজার ৯৬৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মামলার তুলনায় চেয়ে অর্থের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৩৭ হাজার ৭২৭ মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ২৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

২০২২ সালের জুনে অর্থঋণ আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকের ৮২ হাজার ৮৫৮ মামলা ছিল। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের অর্থঋণ আইনে ৮৪ হাজার ৪৩০ মামলা ছিল। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা কম। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৭৭৪ মামলা ছিল। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।

এতে এক বছরে অর্থঋণ আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকের মামলা বেড়েছে ১ হাজার ২৬১টি। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের অর্থঋণ আদালতে মামলার বেড়েছে ১১ হাজার ৯৫৭টি। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৭০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মামলা বেড়েছে ৯৫৩টি। অর্থে পরিমাণ বেড়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকগুলোর করা মোট মামলার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৮৯৬টি। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।

এর বাইরে খেলাপি ঋণ নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা রয়েছে ১০ হাজারের বেশি। এর মাধ্যমে অনেকেই আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। ফলে এসব ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ব্যাংক টাকাও ফেরত পাচ্ছে না, আবার ঋণখেলাপির তালিকায়ও তাদের নাম উল্লেখ করতে পারছে না।

শীর্ষ ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ আদালতে করা এসব রিট খেলাপি ঋণ আদায়ে একটা বড় বাধা। পাশাপাশি সার্টিফিকেট মামলা, দেউলিয়া ও ফৌজদারি আদালতেও বিচারাধীন রয়েছে হাজার হাজার মামলা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করা হলেও অর্থঋণ আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই সময়ক্ষেপণের সুযোগ রয়েছে। এ আদালতে রায় হওয়ার পরও খেলাপি গ্রাহকরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। বছরের পর বছর পার হলেও সেই প্রক্রিয়া শেষ হয় না। এজন্য দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম সমস্যা খেলাপি ঋণ। অনেকেই ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে শোধ করছে না। ঋণ খেলাপি হয়েও তারা ভোগ করছে বিভিন্ন সুবিধা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২০০৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায়ে প্রচলিত আইনের সংশোধন করে সরকার অর্থঋণ আদালত আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত আদালত ও বিচারকের অভাব, ঋণখেলাপিদের ছলচাতুরিতে আইনটির সুফল পাচ্ছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে ঢাকায় ৪টি অর্থঋণ আদালত আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে একটি করে অর্থঋণ আদালত রয়েছে। অন্য বিভাগীয় শহরে কোন সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই। এছাড়া কয়েকটি জেলায় অর্থঋণ আদালত থাকলেও বেশিরভাগ জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত নেই। যেসব জেলায় অর্থঋণ আদালত নেই সেসব জেলার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতগুলো তাদের নিজস্ব দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অর্থঋণ আদালতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে আইনে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কোন মামলাই নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কোন কোন মামলায় বছরের পর বছরও লেগে যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থঋণ আদালতে মামলায় যেসব টাকা আটকে আছে সেগুলো মূলত জনগণের টাকা। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকগুলো মন্দ ঋণের বোঝা বড় হচ্ছে। মামলা পরিচালন বাবদ খরচ বাড়ছে।

তাদের দাবি, ঢাকায় কমপক্ষে আরও দুটি এবং চট্টগ্রামে আরেকটি অর্থঋণ আদালত স্থাপন করা হোক। পাশাপাশি যেসব বিভাগীয় শহর ও জেলায় সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই সেখানে ন্যূনতম একটি করে আদালত স্থাপন করা জরুরি। এজন্য সব জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত স্থাপন ও বিচারক নিয়োগের জন্য আইন মন্ত্রণালয়েও আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো।

আইনজীবী মামুনুর রশিদ মামুনের সংবাদকে বলেন, ‘মামলার তুলনায় আদালত ও বিচারক কম থাকায় খেলাপি ঋণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। তাই মামলার রায় পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। রায় পাওয়ার পরেও আদালতের কাগজপত্র পেতে আরও কিছু সময় লাগে। এর ফলে দীর্ঘ সময় লাগে অর্থ ফেরত পেতে।’

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুছ ছালাম আজাদ সংবাদকে বলেন, বিবাদী পক্ষ নিম্ন আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলাজট থাকায় শুনানিতে দেরি হয়। আবার অনেকে রিট মামলা করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানিতেও অনেক সময় লেগে যায়। এর ফলে দীর্ঘদিন আটকে থাকে ব্যাংকের টাকা। তাই অর্থঋণ আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনের সংস্কার প্রয়োজন।

জানা গেছে, কোন গ্রাহক খেলাপি হলে শুরুতেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারে না। প্রথমে গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। এরপর নোটিশ দিতে হয়। তাতেও কাজ না হলে আইনি নোটিশ দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিতে হয়। এরপর ঋণের বিপরীতে রাখা জামানত সম্পদ নিলাম করার উদ্যোগ নিতে হবে। ওই নিলামে সম্পদ বিক্রি করতে পারলে যে টাকা পাওয়া যাবে সেই টাকা ঋণের থেকে সমন্বয় করে বাকি অর্থের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আদালতের বিষয়। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন হাত নেই।’

back to top