alt

অর্থ-বাণিজ্য

সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে আলু আমদানির সুপারিশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মুন্সীগঞ্জে হিমাগারে টাঙানো আছে ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির তালিকা। সরকার হিমাগারের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি -সংবাদ

সম্প্রতি আলুর দাম দ্রুত বাড়তে থাকায় গত বৃহস্পতিবার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না কোথাও। সরেজমিন দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ জেলায় বাড়তি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কোন কোন জেলায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘আলু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের মতো আলুও আমদানির সুপারিশ করা হবে।’ বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর নগরীর উত্তম হাজীরহাট এলাকায় আরমান কোল্ডস্টোরেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে ২৬ থেকে ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে ব্যবসায়ীরা এ দাম না মেনে হিমাগার পর্যায়ে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা কোল্ড স্টোরেজে আলুর দর ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছি। এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরেজের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে আলুর বাজার অস্থির করে তুলেছেন। আমরা এসব সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করছি। আরও ৩-৪ দিন দেখবো। এর মধ্যে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের মতো আলুও আমদানির জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে।’

এদিন রংপুর জেলার বিভিন্ন হিমাগারে অভিযান চালানো হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে রাসেল নামের এক ব্যক্তি নিজের উৎপাদিত আড়াই হাজার বস্তা আলু ও স্থানীয় কৃষকদের সাড়ে ১২ হাজার বস্তাসহ নিজের নামে রেখেছেন। এভাবে অন্যের আলু নিজের নামে রেখে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন রাসেল।’

এছাড়া কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ ব্যাংক থেকে চার কোটির বেশি টাকা ঋণ নিয়ে কৃষকদের দিয়েছেন। কী উদ্দেশ্যে লোন নিয়ে কৃষকদের দিয়েছেন সেটি খতিয়ে দেখতে এবং রাসেল ও কোল্ড স্টোরেজের জিএম রেজাউল করিম লেবুর সিন্ডিকেট বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।

সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আরমান কোল্ড স্টোরেজে এখনও পর্যাপ্ত আলু মজুদ রয়েছে। আলু বের করার সময় আর দেড় থেকে দুই মাস। এ সময়ের মধ্যে আলু বের না করা হলে আলু পচে যাবে। এরপরও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা আলু বের না করে মজুদের দিকে ঝুঁকছেন।’ কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান তিনি।

আগোরায় বাড়তি আলু বিক্রি, পেঁয়াজ-ডিমের দামও বেশি

এদিকে বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় সুপারশপ আগোরায় অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মন্ডল জানান, অতি উচ্চ মূল্যে আলু বিক্রি করছে আগোরা। পেঁয়াজ ও ডিমের দামও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়া হচ্ছে।

আবদুল জব্বার বলেন, ‘এখানে এসে আমরা দেখলাম, সরকার যেখানে আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি। এই সুপার শপে এসে দেখলাম ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা একদমই অস্বাভাবিক। অতি উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে যেখানে বলা হয়েছে, ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রি মূল্য হবে, সেখানে আমরা দেখলাম মূল্য তালিকায় লেখা আছে ৭৫ টাকা কিন্তু ক্যাশ মেমো ভেরিফাই করে দেখলাম ৭৬ টাকা। সেখানেও একটা অনিয়ম রয়েছে।’

পর্যায়ক্রমে সব সুপার শপে অভিযান চালানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে আপনারা দেখেছেন, কাঁচা মরিচের দাম যখন বেড়ে গেল, তখন সুপার শপগুলোই মূল কারিগর; যারা এক হাজারের বেশি দামে মরিচ বিক্রি করেছিল। সুপারশপ বাদে অন্য দোকানে মরিচের এত দাম ছিল না। অর্ধেকের মতো দাম ছিল।’ নওগাঁয় প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা

সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না নওগাঁর ব্যবসায়ীরা। বুধবার সকালে উপজেলা সদর কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু আগের মতোই ৫০-৫৫ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা দরে। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। দোকানদারদের দাবি, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আলু কিনতে পারেননি তারা। তাই আগের দামেই আলু বিক্রি করছেন।

নওগাঁর খুচরা আলু বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ টাকা। সেই দামে আলু আমরা কিনতেও পাইনি। এসব আলু আমার আগের কেনা। ৪০ টাকাতেও বিক্রি করার সুযোগ নেই।’

খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও মোকামগুলোতে পেঁয়াজের দাম এখনও আগের মতোই রয়েছে। মোকামে পেঁয়াজের দাম কমে গেলেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমে যাবে।’

আলু চাষি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আমরা ধার-দেনা করে আলু চাষাবাদ করি। ধার-দেনা শোধ করার জন্য মৌসুমে শুরুতেই আলু বিক্রি করতে হয়। তখন এক মণ আলু ৬০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আমরা আলু উৎপাদন করে দাম পায় না, কিন্তু ক্রেতাদের ঠিকই বেশি দামে আলু কিনে খেতে হচ্ছে। আলু ব্যবসায়ী আর কোল্ড স্টোরেজের কাছে এখন জিম্মি বাজার।’

মুন্সীগঞ্জেও আলু বিক্রি বাড়তি দামে

সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে মুন্সীগঞ্জেও। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার তিনটি হিমাগার ঘুরে ব্যবসায়ী ও হিমাগার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

খুচরা বাজারে আলুর দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় গত বৃহস্পতিবার সরকার আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং হিমাগার পর্যায়ে ২৬ থেকে ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে ব্যবসায়ীরা এ দাম না মেনে হিমাগার পর্যায়ে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার মুন্সীগঞ্জের হিমাগারে পরিদর্শনে আসেন জাতীয় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। হিমাগার পরিদর্শন শেষে রোববার থেকে পাকা রসিদের মাধ্যমে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে ৩৫-৩৬ টাকা বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে।

ভোক্তার অধিকারের মহাপরিচালকের নির্দেশনার পর প্রায় পাঁচ দিন হিমাগারে আলু বিক্রি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এতে আলুর সংকট দেখা দেয় খুচরা বাজারে। তবে কয়েকটি হিমাগার থেকে এ কয়েক দিন স্বল্প আকারে আলু বের করেন ব্যবসায়ীরা। সে আলুর দাম নির্ধারণ না করেই বরিশাল ও চট্টগ্রামের আড়তে পাঠান ব্যবসায়ীরা। বুধবার থেকে ফের আলু বিক্রি শুরু হয়েছে।

বগুড়ায় আলুর অবৈধ মজুদ, ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করতে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকায় আর এন্ড আর পটেটো কোল্ড স্টোরেজ তদারকি এবং আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

গত মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে শিবগঞ্জ উপজেলার কা?শিপুর এলাকায় আর অ্যান্ড আর পটেটো কোল্ড স্টোরেজে আলুর মজুদ, সরবরাহ পরিস্থিতি, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সকাল থেকে অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে অংশ নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘শুধুমাত্র হলুদ কাগজ আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করছে এক শ্রেণীর দালাল ও অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে সরকার আয়কর বাবদ তাদের রাজস্ব হারাচ্ছে।’

ছবি

চলতি অর্থবছরের এডিপির ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি

ছবি

অনলাইন কোরবানি হাট চালু করল বেঙ্গল মিট

ছবি

আড়াই শতাংশ কমতে পারে করপোরেট কর

ছবি

ব্রহ্মপুত্র নদে ডুবে এক জেলের মৃত্যু

ছবি

রপ্তানির প্রণোদনা কমালো সরকার

ছবি

বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি

ছবি

অর্থনীতিতে চার উদ্বেগ

ছবি

ঢাকায় সেনহাইজার ও নিউম্যান বার্লিন এর পণ্য প্রদর্শনী

ছবি

নতুন করে রিজার্ভ চুরির খবর ভুয়া : বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

মামলা নয়, সমঝোতায় খেলাপি ঋণ আদায়ে ‘জোর’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ছবি

ড্যাপ এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সংশোধন চান আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা

সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করলো বিডিবিএল

ছবি

সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করল বিডিবিএল

ছবি

বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের লন্ডনে বিজনেস গ্রোথ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ

ছবি

গরম কমলে আমরা বড় আন্দোলনে নামবো : মান্না

ছবি

বেগুনের কেজি ১২০, সোনালি মুরগির দাম উঠেছে ৪২০ টাকায়

ছবি

অর্থনীতির দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিন পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ছবি

টাকার অবমূল্যায়ন, ডলারের দাম বাড়ল ৭ টাকা

ছবি

সিঙ্গাপুর-কাতার থেকে ১৩৫০ কোটি টাকায় এলএনজি কিনবে সরকার

ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট করলেন সাংবাদিকরা

ছবি

ন্যায্যমূল্যে পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছে টিসিবি

ছবি

আধাঘণ্টায় আড়াইশ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে লেনদেন

ছবি

প্রায় ৬ মাস পর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত

ছবি

চামড়াখাতে ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ৭৭৬ টাকার প্রস্তাব সিপিডি’র

ছবি

বাজার মূলধন বাড়লো ৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

পেঁয়াজ- সবজিতে অস্বস্তি, কমেছে ব্রয়লার-ডিমের দাম

ছবি

তড়িঘড়ি করে একীভূত করা ঠিক হবে না: ফরাসউদ্দিন

ছবি

ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল

ছবি

আইএসডিবি থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছে হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন

ছবি

বিটিএমএ’র সেক্রেটারী জেনারেল হলেন জাকির হোসেন

ছবি

ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের পরামর্শ আইএমএফের

নিয়ম মেনে সময় নিয়েই হবে ব্যাংক একীভূতকরণ : এবিবি চেয়ারম্যান

ছবি

দু’টি বিদেশি এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে মে মাসে

ছবি

আবারও বিএসইসি চেয়ারম্যান হলেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

ছবি

টানা পতনে বাজার মূলধন কমলো সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

সবজির বাজার অপরিবর্তিত, তবে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম

tab

অর্থ-বাণিজ্য

সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে আলু আমদানির সুপারিশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মুন্সীগঞ্জে হিমাগারে টাঙানো আছে ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির তালিকা। সরকার হিমাগারের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি -সংবাদ

বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্প্রতি আলুর দাম দ্রুত বাড়তে থাকায় গত বৃহস্পতিবার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না কোথাও। সরেজমিন দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ জেলায় বাড়তি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কোন কোন জেলায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘আলু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের মতো আলুও আমদানির সুপারিশ করা হবে।’ বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর নগরীর উত্তম হাজীরহাট এলাকায় আরমান কোল্ডস্টোরেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে ২৬ থেকে ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে ব্যবসায়ীরা এ দাম না মেনে হিমাগার পর্যায়ে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা কোল্ড স্টোরেজে আলুর দর ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছি। এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরেজের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে আলুর বাজার অস্থির করে তুলেছেন। আমরা এসব সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করছি। আরও ৩-৪ দিন দেখবো। এর মধ্যে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের মতো আলুও আমদানির জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে।’

এদিন রংপুর জেলার বিভিন্ন হিমাগারে অভিযান চালানো হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে রাসেল নামের এক ব্যক্তি নিজের উৎপাদিত আড়াই হাজার বস্তা আলু ও স্থানীয় কৃষকদের সাড়ে ১২ হাজার বস্তাসহ নিজের নামে রেখেছেন। এভাবে অন্যের আলু নিজের নামে রেখে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন রাসেল।’

এছাড়া কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ ব্যাংক থেকে চার কোটির বেশি টাকা ঋণ নিয়ে কৃষকদের দিয়েছেন। কী উদ্দেশ্যে লোন নিয়ে কৃষকদের দিয়েছেন সেটি খতিয়ে দেখতে এবং রাসেল ও কোল্ড স্টোরেজের জিএম রেজাউল করিম লেবুর সিন্ডিকেট বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।

সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আরমান কোল্ড স্টোরেজে এখনও পর্যাপ্ত আলু মজুদ রয়েছে। আলু বের করার সময় আর দেড় থেকে দুই মাস। এ সময়ের মধ্যে আলু বের না করা হলে আলু পচে যাবে। এরপরও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা আলু বের না করে মজুদের দিকে ঝুঁকছেন।’ কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান তিনি।

আগোরায় বাড়তি আলু বিক্রি, পেঁয়াজ-ডিমের দামও বেশি

এদিকে বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় সুপারশপ আগোরায় অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মন্ডল জানান, অতি উচ্চ মূল্যে আলু বিক্রি করছে আগোরা। পেঁয়াজ ও ডিমের দামও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়া হচ্ছে।

আবদুল জব্বার বলেন, ‘এখানে এসে আমরা দেখলাম, সরকার যেখানে আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি। এই সুপার শপে এসে দেখলাম ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা একদমই অস্বাভাবিক। অতি উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে যেখানে বলা হয়েছে, ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রি মূল্য হবে, সেখানে আমরা দেখলাম মূল্য তালিকায় লেখা আছে ৭৫ টাকা কিন্তু ক্যাশ মেমো ভেরিফাই করে দেখলাম ৭৬ টাকা। সেখানেও একটা অনিয়ম রয়েছে।’

পর্যায়ক্রমে সব সুপার শপে অভিযান চালানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে আপনারা দেখেছেন, কাঁচা মরিচের দাম যখন বেড়ে গেল, তখন সুপার শপগুলোই মূল কারিগর; যারা এক হাজারের বেশি দামে মরিচ বিক্রি করেছিল। সুপারশপ বাদে অন্য দোকানে মরিচের এত দাম ছিল না। অর্ধেকের মতো দাম ছিল।’ নওগাঁয় প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা

সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না নওগাঁর ব্যবসায়ীরা। বুধবার সকালে উপজেলা সদর কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু আগের মতোই ৫০-৫৫ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা দরে। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। দোকানদারদের দাবি, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আলু কিনতে পারেননি তারা। তাই আগের দামেই আলু বিক্রি করছেন।

নওগাঁর খুচরা আলু বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ টাকা। সেই দামে আলু আমরা কিনতেও পাইনি। এসব আলু আমার আগের কেনা। ৪০ টাকাতেও বিক্রি করার সুযোগ নেই।’

খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও মোকামগুলোতে পেঁয়াজের দাম এখনও আগের মতোই রয়েছে। মোকামে পেঁয়াজের দাম কমে গেলেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমে যাবে।’

আলু চাষি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আমরা ধার-দেনা করে আলু চাষাবাদ করি। ধার-দেনা শোধ করার জন্য মৌসুমে শুরুতেই আলু বিক্রি করতে হয়। তখন এক মণ আলু ৬০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আমরা আলু উৎপাদন করে দাম পায় না, কিন্তু ক্রেতাদের ঠিকই বেশি দামে আলু কিনে খেতে হচ্ছে। আলু ব্যবসায়ী আর কোল্ড স্টোরেজের কাছে এখন জিম্মি বাজার।’

মুন্সীগঞ্জেও আলু বিক্রি বাড়তি দামে

সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে মুন্সীগঞ্জেও। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার তিনটি হিমাগার ঘুরে ব্যবসায়ী ও হিমাগার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

খুচরা বাজারে আলুর দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় গত বৃহস্পতিবার সরকার আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং হিমাগার পর্যায়ে ২৬ থেকে ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে ব্যবসায়ীরা এ দাম না মেনে হিমাগার পর্যায়ে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার মুন্সীগঞ্জের হিমাগারে পরিদর্শনে আসেন জাতীয় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। হিমাগার পরিদর্শন শেষে রোববার থেকে পাকা রসিদের মাধ্যমে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে ৩৫-৩৬ টাকা বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে।

ভোক্তার অধিকারের মহাপরিচালকের নির্দেশনার পর প্রায় পাঁচ দিন হিমাগারে আলু বিক্রি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এতে আলুর সংকট দেখা দেয় খুচরা বাজারে। তবে কয়েকটি হিমাগার থেকে এ কয়েক দিন স্বল্প আকারে আলু বের করেন ব্যবসায়ীরা। সে আলুর দাম নির্ধারণ না করেই বরিশাল ও চট্টগ্রামের আড়তে পাঠান ব্যবসায়ীরা। বুধবার থেকে ফের আলু বিক্রি শুরু হয়েছে।

বগুড়ায় আলুর অবৈধ মজুদ, ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করতে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকায় আর এন্ড আর পটেটো কোল্ড স্টোরেজ তদারকি এবং আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

গত মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে শিবগঞ্জ উপজেলার কা?শিপুর এলাকায় আর অ্যান্ড আর পটেটো কোল্ড স্টোরেজে আলুর মজুদ, সরবরাহ পরিস্থিতি, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সকাল থেকে অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে অংশ নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘শুধুমাত্র হলুদ কাগজ আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করছে এক শ্রেণীর দালাল ও অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে সরকার আয়কর বাবদ তাদের রাজস্ব হারাচ্ছে।’

back to top