উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রণীত যুক্তরাজ্যের নতুন রপ্তানি পরিকল্পে বিদ্যমান শুল্ককাঠামোর মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের কাছে লিখিত চিঠিতে এই অনুরোধ জানান তিনি।
সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন বাণিজ্য পরিকল্প বা ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) তৈরি করেছে যুক্তরাজ্য। এই পরিকল্পের সঙ্গে আগের ব্যবস্থার পার্থক্য নেই। এখন উন্নয়নশীল দেশগুলো যে শুল্ককাঠামোর অধীন যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি করছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত সেই কাঠামো বজায় থাকবে। অর্থাৎ সেই সময় পর্যন্ত বিদ্যমান শুল্ককাঠামোর অধীন বা বিনা শুল্কে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা যাবে।
বিজিএমএই সভাপতি ফারুক হাসান চিঠিতে বলেছেন, ‘আগের অনুরোধের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে বলতে চাই, এই উত্তরণকালের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হোক।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মহামারীর কারণে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প ও বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
নিজের বক্তব্যের সপক্ষে আরও কিছু কারণ তুলে ধরেন ফারুক হাসান। যেমন মহামারী-পরবর্তী বাজারের অস্থিরতা, ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের ধরন ও উৎস পরিবর্তন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে যে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার রাশ টানতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তাতে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমেছে। বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া সঠিক বিনিয়োগ ও সুযোগ-সুবিধা পুনর্বিন্যাস করে নিজেদের প্রস্তুত করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।
সময় বৃদ্ধির অনুরোধ ছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য তৈরি এই পরিকল্পের আরও কিছু দিক সম্পর্কে স্পষ্টিকরণ চাওয়া হয় চিঠিতে। এই পরিকল্পের বর্ধিত কাঠামোয় বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হবে, কিন্তু কীভাবে তা নির্ধারণ করা হবে এবং বিজিএমইএ কীভাবে সেই তথ্য পাবে, চিঠিতে সেই প্রশ্ন তোলা হয়। এছাড়া জিএসপির সঙ্গে নতুন পরিকল্পের কী পার্থক্য, বিশেষ করে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে নতুন এই পরিকল্প কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে বিশদভাবে জানতে চেয়েছে বিজিএমইএ।
যুক্তরাজ্যের বাজার বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানির গন্তব্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন বা ৫০২ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
চিঠিতে বিজিএমইএ আরও বলেছে, তৈরি পোশাক শিল্পে বেশ কিছু ব্রিটিশ বিনিয়োগ এসেছে, যারা বেশ সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিজিএমইএ মনে করে, ডিসিটিএসের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও নিবিড় হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মীদের নিরাপত্তা, মঙ্গল ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ২০২টি লিড স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব কারখানা আছে, যাদের মধ্যে ৭৩টি লিড প্লাটিনাম স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি পোশাক খাতের বিভিন্ন বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেছেন।
এছাড়া চিঠিতে আরও বলা হয়, শ্রমিকদের কল্যাণ ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। আশা করা হচ্ছে, এবার শ্রমিকদের মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। তারপর পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাগুলো অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকেরা। তবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরও যুক্তরাজ্য ও কানাডায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত।
আগস্ট মাসের শেষ দিকে এই ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া আগে থেকেই শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির সাড়ে ১৬ শতাংশের গন্তব্য এই তিন দেশ।
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রণীত যুক্তরাজ্যের নতুন রপ্তানি পরিকল্পে বিদ্যমান শুল্ককাঠামোর মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের কাছে লিখিত চিঠিতে এই অনুরোধ জানান তিনি।
সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন বাণিজ্য পরিকল্প বা ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) তৈরি করেছে যুক্তরাজ্য। এই পরিকল্পের সঙ্গে আগের ব্যবস্থার পার্থক্য নেই। এখন উন্নয়নশীল দেশগুলো যে শুল্ককাঠামোর অধীন যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি করছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত সেই কাঠামো বজায় থাকবে। অর্থাৎ সেই সময় পর্যন্ত বিদ্যমান শুল্ককাঠামোর অধীন বা বিনা শুল্কে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা যাবে।
বিজিএমএই সভাপতি ফারুক হাসান চিঠিতে বলেছেন, ‘আগের অনুরোধের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে বলতে চাই, এই উত্তরণকালের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হোক।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মহামারীর কারণে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প ও বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
নিজের বক্তব্যের সপক্ষে আরও কিছু কারণ তুলে ধরেন ফারুক হাসান। যেমন মহামারী-পরবর্তী বাজারের অস্থিরতা, ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের ধরন ও উৎস পরিবর্তন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে যে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার রাশ টানতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তাতে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমেছে। বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া সঠিক বিনিয়োগ ও সুযোগ-সুবিধা পুনর্বিন্যাস করে নিজেদের প্রস্তুত করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।
সময় বৃদ্ধির অনুরোধ ছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য তৈরি এই পরিকল্পের আরও কিছু দিক সম্পর্কে স্পষ্টিকরণ চাওয়া হয় চিঠিতে। এই পরিকল্পের বর্ধিত কাঠামোয় বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হবে, কিন্তু কীভাবে তা নির্ধারণ করা হবে এবং বিজিএমইএ কীভাবে সেই তথ্য পাবে, চিঠিতে সেই প্রশ্ন তোলা হয়। এছাড়া জিএসপির সঙ্গে নতুন পরিকল্পের কী পার্থক্য, বিশেষ করে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে নতুন এই পরিকল্প কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে বিশদভাবে জানতে চেয়েছে বিজিএমইএ।
যুক্তরাজ্যের বাজার বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানির গন্তব্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন বা ৫০২ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
চিঠিতে বিজিএমইএ আরও বলেছে, তৈরি পোশাক শিল্পে বেশ কিছু ব্রিটিশ বিনিয়োগ এসেছে, যারা বেশ সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিজিএমইএ মনে করে, ডিসিটিএসের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও নিবিড় হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মীদের নিরাপত্তা, মঙ্গল ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ২০২টি লিড স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব কারখানা আছে, যাদের মধ্যে ৭৩টি লিড প্লাটিনাম স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি পোশাক খাতের বিভিন্ন বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেছেন।
এছাড়া চিঠিতে আরও বলা হয়, শ্রমিকদের কল্যাণ ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। আশা করা হচ্ছে, এবার শ্রমিকদের মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। তারপর পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাগুলো অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকেরা। তবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরও যুক্তরাজ্য ও কানাডায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত।
আগস্ট মাসের শেষ দিকে এই ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া আগে থেকেই শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির সাড়ে ১৬ শতাংশের গন্তব্য এই তিন দেশ।