একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট রপ্তানির ২০ শতাংশের বেশি পোশাক রপ্তানি হয় এই বাজারে। বহুল আলোচিত ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে-তা নিয়ে চিন্তিত সরকারের নীতিনির্ধারক ও পোশাক রপ্তানিকারকরা। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে পোশাক রপ্তানিতে কোন প্রভাব পড়বে না।’
মঙ্গলাবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমেরিকার ভিসানীতিটা যে কারও ওপর হতে পারে। আবার আমি গত ৩০ বছর ধরে ৫ বছর করে আমেরিকার ভিসা পাই। এরপরও আমি আমেরিকা যাওয়ার পর আমাকে বলতে পারে তোমার ভিসা বাতিল করা হলো। এভাবেও কারও ভিসা বাতিল করা হয়। ব্যবসায়ীদের কারও ভিসা বাতিল হলেও তিনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা কোভিড সময়ে কোন দেশে যেতে পারিনি। এরপরও আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। সেক্ষেত্রে বলা যায়, ভিসা বাতিল হলেও বিকল্পভাবে তিনি তার ব্যবসা চালিয়ে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
আকু পেমেন্টে কিছু ব্যাংকের ওপরে স্যাংশনস বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হচ্ছে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। এর পেমেন্ট কয়েকটি ব্যাংকের ওপর স্যাংশনস হয়েছে; তবে সেটা অন্য কোনভাবে পেমেন্ট করা যাবে। সেভাবেই সরকার কাজ করবে। তবে যেকোন স্যাংশনসই শঙ্কিত হওয়ার, তবুও আশাবাদী ব্যবসায়ী তার ব্যবসায় প্রভাব পড়বে না।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ দশমিক শূন্য এক বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৮ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই বাজারে ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
এই অবস্থার মধ্যে গত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে জোনিয়েছেন, পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী এবং তাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধীরা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘গত ১০ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩২০ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২৬ লাখ কোটি টাকা। আর গত ৫ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। এই টাকাগুলো কিন্তু আমরা রপ্তানি করে আমাদের দেশের মধ্যেই এনেছি এবং এই যে রপ্তানিটা আমরা করতে পেরেছি, এটা কিন্তু সহজ কাজ ছিল না। এর জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অনেক বিনিয়োগ করতে হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘আজ আমাদের পোশাক শিল্প ৪৭ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে। শুধু বিলিয়ন ডলার না, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বৃহত্তর অর্থনীতিতে আমাদের যে আরও ট্রানজেকশনগুলো আছে সবকিছুই। এই বিষয়গুলো সব সময় গভীরভাবে দেখা হয় না। এই শিল্পের মাধ্যমে যে ক্যাপিটাল ফর্মেশন হচ্ছে, সেটি আরও অনেক সম্ভাবনাময় শিল্পের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের জারিকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। গণমাধ্যমে ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচার’, ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ১০ কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকা পাচার’ এ রকম শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের চিঠি, এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি কার স্বার্থে করা হয়েছে? আমরা মনে করি, এটা আমাদের অর্থনীতি, শিল্প, দেশ অথবা সরকার, কাউকেই সুবিধাজনক অবস্থানে নিচ্ছে না।’
‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা এখনও তদন্তই হয়নি সেগুলো নিয়ে সমগ্র শিল্প খাত নিয়ে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়’ মন্তব্য করে ফারুক হাসান বলেন, ‘যদি কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের ডাকবে, তদন্ত করবে। তারা যদি অসাধু তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিচারের আওতায় আনবে। কিন্তু বিষয়টাকে এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করাটা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এই ধরনের কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’
১০টি কারখানার বিষয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন, ‘কারখানাগুলোর মধ্যে ৪টি বিজিএমইএর এবং ২টি বিকেএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট ৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজিএমইএ/বিকেএমইএর সংশ্লিষ্টতা নেই। বিজিএমইএর ৪টি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- ফ্যাশন ট্রেড, প্রজ্ঞা ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার ও হংকং ফ্যাশনস। বিকেএমইএর দুটি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- পিক্সি নিট ওয়্যার ও ইডেন স্টাইল-টেক্স। আমরা আমাদের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর কাছে নোটিশ পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি। তারা লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। কারখানাগুলোর প্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত আছেন।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘যদি কেউ অভিযুক্ত হন, তাদের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথভাবে তদন্ত করেন, প্রমাণ করেন। তারপর তাদের শাস্তির আওতায় আনেন। আপনারা এই বিষয়টি ঢালাওভাবে মিডিয়াতে দেয়ার ফলে সামগ্রিকভাবে এই শিল্পটি হেয় হয়েছে। যেখানে আমরা এতকিছু করছি আমাদের সেক্টরের ইতিবাচক বিষয়গুলোকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জন্য সেখানে এ রকম কান্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপ মেনে নেয়া যায় না।’
এ শিল্পটিকে নিয়ে যারাই প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন, তারাও যেন দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই শিল্পটিকে বিচার করেন জানিয়ে বিজিএমইএ প্রধান বলেন, ‘আমাদের একান্ত প্রত্যাশা পোশাক শিল্পের বিষয়ে যেকোন প্রতিবেদন, যেখানে কি না অংশীজনদের মতামত নেই, কোন ভ্যালিডেশন নেই, সেই প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকবেন। একটি শিল্পের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।’
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের উপস্থিত ছিলেন, বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহিদুল্লা আজিম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শিদী, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ।
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট রপ্তানির ২০ শতাংশের বেশি পোশাক রপ্তানি হয় এই বাজারে। বহুল আলোচিত ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে-তা নিয়ে চিন্তিত সরকারের নীতিনির্ধারক ও পোশাক রপ্তানিকারকরা। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে পোশাক রপ্তানিতে কোন প্রভাব পড়বে না।’
মঙ্গলাবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমেরিকার ভিসানীতিটা যে কারও ওপর হতে পারে। আবার আমি গত ৩০ বছর ধরে ৫ বছর করে আমেরিকার ভিসা পাই। এরপরও আমি আমেরিকা যাওয়ার পর আমাকে বলতে পারে তোমার ভিসা বাতিল করা হলো। এভাবেও কারও ভিসা বাতিল করা হয়। ব্যবসায়ীদের কারও ভিসা বাতিল হলেও তিনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা কোভিড সময়ে কোন দেশে যেতে পারিনি। এরপরও আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। সেক্ষেত্রে বলা যায়, ভিসা বাতিল হলেও বিকল্পভাবে তিনি তার ব্যবসা চালিয়ে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
আকু পেমেন্টে কিছু ব্যাংকের ওপরে স্যাংশনস বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হচ্ছে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। এর পেমেন্ট কয়েকটি ব্যাংকের ওপর স্যাংশনস হয়েছে; তবে সেটা অন্য কোনভাবে পেমেন্ট করা যাবে। সেভাবেই সরকার কাজ করবে। তবে যেকোন স্যাংশনসই শঙ্কিত হওয়ার, তবুও আশাবাদী ব্যবসায়ী তার ব্যবসায় প্রভাব পড়বে না।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ দশমিক শূন্য এক বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৮ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই বাজারে ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
এই অবস্থার মধ্যে গত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে জোনিয়েছেন, পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী এবং তাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধীরা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘গত ১০ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩২০ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২৬ লাখ কোটি টাকা। আর গত ৫ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। এই টাকাগুলো কিন্তু আমরা রপ্তানি করে আমাদের দেশের মধ্যেই এনেছি এবং এই যে রপ্তানিটা আমরা করতে পেরেছি, এটা কিন্তু সহজ কাজ ছিল না। এর জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অনেক বিনিয়োগ করতে হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘আজ আমাদের পোশাক শিল্প ৪৭ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে। শুধু বিলিয়ন ডলার না, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বৃহত্তর অর্থনীতিতে আমাদের যে আরও ট্রানজেকশনগুলো আছে সবকিছুই। এই বিষয়গুলো সব সময় গভীরভাবে দেখা হয় না। এই শিল্পের মাধ্যমে যে ক্যাপিটাল ফর্মেশন হচ্ছে, সেটি আরও অনেক সম্ভাবনাময় শিল্পের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের জারিকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। গণমাধ্যমে ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচার’, ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ১০ কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকা পাচার’ এ রকম শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের চিঠি, এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি কার স্বার্থে করা হয়েছে? আমরা মনে করি, এটা আমাদের অর্থনীতি, শিল্প, দেশ অথবা সরকার, কাউকেই সুবিধাজনক অবস্থানে নিচ্ছে না।’
‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা এখনও তদন্তই হয়নি সেগুলো নিয়ে সমগ্র শিল্প খাত নিয়ে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়’ মন্তব্য করে ফারুক হাসান বলেন, ‘যদি কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের ডাকবে, তদন্ত করবে। তারা যদি অসাধু তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিচারের আওতায় আনবে। কিন্তু বিষয়টাকে এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করাটা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এই ধরনের কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’
১০টি কারখানার বিষয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন, ‘কারখানাগুলোর মধ্যে ৪টি বিজিএমইএর এবং ২টি বিকেএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট ৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজিএমইএ/বিকেএমইএর সংশ্লিষ্টতা নেই। বিজিএমইএর ৪টি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- ফ্যাশন ট্রেড, প্রজ্ঞা ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার ও হংকং ফ্যাশনস। বিকেএমইএর দুটি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- পিক্সি নিট ওয়্যার ও ইডেন স্টাইল-টেক্স। আমরা আমাদের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর কাছে নোটিশ পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি। তারা লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। কারখানাগুলোর প্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত আছেন।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘যদি কেউ অভিযুক্ত হন, তাদের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথভাবে তদন্ত করেন, প্রমাণ করেন। তারপর তাদের শাস্তির আওতায় আনেন। আপনারা এই বিষয়টি ঢালাওভাবে মিডিয়াতে দেয়ার ফলে সামগ্রিকভাবে এই শিল্পটি হেয় হয়েছে। যেখানে আমরা এতকিছু করছি আমাদের সেক্টরের ইতিবাচক বিষয়গুলোকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জন্য সেখানে এ রকম কান্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপ মেনে নেয়া যায় না।’
এ শিল্পটিকে নিয়ে যারাই প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন, তারাও যেন দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই শিল্পটিকে বিচার করেন জানিয়ে বিজিএমইএ প্রধান বলেন, ‘আমাদের একান্ত প্রত্যাশা পোশাক শিল্পের বিষয়ে যেকোন প্রতিবেদন, যেখানে কি না অংশীজনদের মতামত নেই, কোন ভ্যালিডেশন নেই, সেই প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকবেন। একটি শিল্পের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।’
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের উপস্থিত ছিলেন, বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহিদুল্লা আজিম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শিদী, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ।